ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ভুয়া তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্টগুলোর ৭২ শতাংশই ভারতের

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ এএম
ভুয়া তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্টগুলোর ৭২ শতাংশই ভারতের
ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্টধারীর ৭২ শতাংশই ভারতের। ছবি : রিউমর স্ক্যানার

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থবিরতার সুযোগে বেশ কিছু রাজনৈতিক হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সময় সংখ্যালঘুরাও আক্রান্ত হন। তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক পরিচয় বা আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এসব হামলার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করা হয়। আর এসব অপপ্রচারে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারত থেকে পরিচালিত এক্স অ্যাকাউন্ট ও ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধ্যম। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো এসব অ্যাকাউন্টধারীর ৭২ শতাংশই ভারতে থাকেন।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। 

বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট ৫ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে এমন ৫০টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করেছে, যেখানে আগস্টের ঘটনাবলির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ও তথ্যকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে প্রচার করা হয়।

রিউমর স্ক্যানার ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যমের তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচার করেছে।

গণমাধ্যমের পাশাপাশি অপতথ্যের এই প্রবাহে ভূমিকা রেখেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনীতিবিদ শুভেন্দু অধিকারী ও অগ্নিমিত্রা পাল, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া, সুইডেনে একাধিকবার কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্ত সালওয়ান মোমিকা, দীর্ঘদিন ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন, ভারতীয় গণমাধ্যম অপি ইন্ডিয়ার সম্পাদক নূপুর শর্মার মতো ব্যক্তিরা।

আগস্টে যেসব অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে তার মধ্যে ৫৯টি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে ৪টি, অক্টোবরে ৭টি এবং নভেম্বরে ৩১টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত ১৯টিসহ এই সময়কালে মোট ১২০টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্স অ্যাকাউন্টগুলোর প্রতিটির অন্তত একটি পোস্টে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রচারিত পোস্টগুলো ১ কোটি ৫৪ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে।

আরও একাধিক অ্যাকাউন্ট ও ভারতীয় গণমাধ্যমের কল্যাণে এসব অপতথ্য সেই সময় ১০ থেকে ১২ গুণ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বলে অনুমান করে রিউমর স্ক্যানার।

নিয়মিত ভুয়া তথ্যের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি যোগ দেয় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও। ড. ইউনূসের শারীরিক অসুস্থতা কিংবা ট্রাম্পের জয়ে ড. ইউনূস দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন শীর্ষক ভুয়া দাবি প্রচার করে ভারতের গণমাধ্যম।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে হিযবুত তাহরীরের নেতা হিসেবে গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ আল মাহফুজকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। রিউমর স্ক্যানার পরবর্তী সময়ে নিশ্চিত করে যে দুজন ব্যক্তি আলাদা।

১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ শহিদ নূর হোসেন দিবস পালনের ঘোষণা দিলে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ভাইরাল হয় এক্সের অসংখ্য অ্যাকাউন্টে। পোস্টগুলো প্রায় আট লাখের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আসলে এমন কিছুই ঘটেনি বলে প্রমাণ পায় রিউমর স্ক্যানার।

নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পাকিস্তানের জাহাজ আসার ভুয়া দাবি করে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণার পদ্ধতিতে একটি স্বতন্ত্র প্যাটার্ন লক্ষ করেছে রিউমর স্ক্যানার। যার মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আক্রান্তের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক ঘটনা দাবি, রাজনৈতিক সহিংসতাকে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হিসেবে দেখানো, আক্রান্ত হওয়া মুসলিম বা তাদের সম্পত্তির ভিডিওকে হিন্দুদের ওপর হামলার ভিডিও হিসেবে প্রচার, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে একটি জঙ্গি বা ইসলামিক শাসনের উত্থান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দাবি উল্লেখযোগ্য।

অন্য যেকোনো কারণেই কোনো হিন্দু ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হলে ইচ্ছাকৃতভাবেই সেটাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।

রিউমর স্ক্যানার তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এই অপতথ্যের প্রচার শুধু ভারতের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল, এমন বলা যাবে না। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও এই প্রবাহে অবদান রেখেছে। তাদের রিপোর্ট প্রায়ই অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকর হওয়ার পরও বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটের জন্য তথ্যের সূত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই পরিষদ ৯টি সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের দাবি করে। নেত্র নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই দাবিকে অসত্য বলা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে মৃত্যুর কোনো ঘটনাই ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এর পরিবর্তে সাতটি ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ, জনতার সহিংসতা বা অপরাধমূলক বিরোধের জন্য দায়ী করা হয়েছিল।

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, এক্সে আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার। এসব অপতথ্য গণমাধ্যমের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও প্রচার করা হয়েছে টেলিভিশন ও প্রিন্ট সংস্করণেও। ফলে অগণিত মানুষের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা গেছে।

আজহারীর মাহফিলের জন্য মন্দির ঢাকার ভুল তথ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
আজহারীর মাহফিলের জন্য মন্দির ঢাকার ভুল তথ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

সিলেট মহানগরীর এমসি কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে গত ১১ জানুয়ারি জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বয়ান করেন। ওই মাহফিলের কারণে গোপাল টিলা শিব মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮ বাংলা

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ দাবিতে বেশকিছু পোস্ট লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ দাবি সঠিক নয় বলে উঠে এসেছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই মন্দির প্রাঙ্গণে সরস্বতী প্রতীমা তৈরি করা হচ্ছে, যা কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।  

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী হাসান আল মাহমুদের অ্যাকাউন্টে আজ সোমবার একটি পোস্ট দেওয়া হয়।

পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সিলেটের গোপাল টিলা মন্দিরের। মূলত সরস্বতীর প্রতিমা তৈরি উপলক্ষে মন্দিরটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কুয়াশায় প্রতিমাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

তিনি জানান, ওয়াজের ৩ দিন আগ থেকেই প্লাস্টিক টাঙানো হয়েছে, ওয়াজ মাহফিল শেষ হয়ে গেলেও প্লাস্টিকগুলো এখনো সেখানে আছে এবং আরও কয়েকদিন থাকবে। 

পাশাপাশি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ মাহমুদকে জানান, আলোচিত দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রতিমা তৈরির জন্য কারিগর নিজেই এই প্লাস্টিক টাঙিয়েছেন।

পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হাসান আল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে ওই মন্দিরের একাধিক ছবি ও পূজামণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের একটি ভিডিওবার্তা দেন। যেখানে পূজামণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে একই কথা বলতে শোনা যায়।

 

এ বিষয়ে গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ বলেন, ইন্টারনেটে যে দাবিটি করা হয়েছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই ভিত্তিহীনভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। মূলত, স্থানীয় একজন কারিগর নামমাত্র মজুরিতে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে আশপাশের পূজামণ্ডপগুলোতে সেগুলো বিক্রি করেন। যেহেতু আমাদের মন্দিরে নিরাপত্তা ভালো, তাই আমরা তাকে এখানে প্রতিমা তৈরির জন্যে জায়গা দিয়েছি। কুয়াশার কারণে প্রতিমা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কারিগর নিজেই মন্দিরের চারপাশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, মাহফিলের মাইকের কারণে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না সেটি জানতে চেয়ে বরং তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। প্রয়োজনে মাইক সরিয়েও দিতে চেয়েছেন তারা। সেখানে এমন দাবি উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।

অর্থাৎ, পূজামণ্ডপ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সঙ্গে মাহফিলের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ নিয়ে ইন্টারনেটে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর।

 

রিপাবলিক বাংলার অপপ্রচার: ভারতের ফসল নষ্ট করছে বাংলাদেশিরা

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
রিপাবলিক বাংলার অপপ্রচার: ভারতের ফসল নষ্ট করছে বাংলাদেশিরা
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিপাবলিক বাংলা

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে লাগাতার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বেড়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ‘ভারতের মালদহ সুকদেবপুর সীমান্তে কিছু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করে রাতের আঁধারে কৃষিজমির ফসল নষ্ট করেছে’ দাবিতে একটি ভিডিও রিপাবলিক বাংলা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছে।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমর স্ক্যানার টিম। তাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বারা ভারতীয় কৃষিজমির ফসল নষ্ট করার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি বাংলাদেশের মেহেরপুরে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কৃষকদের নিজ জমির ফুলকপি নষ্ট করার দৃশ্য।

দাবি করা ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে, মাছরাঙা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে গত ১ জানুয়ারি ‘দাম না পেয়ে ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করছেন মেহেরপুরের কৃষকরা’ ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি পোস্টে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেহেরপুরের কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ক্ষোভে নিজেদের জমির ফুলকপি নষ্ট করছেন। ভিডিওতে উপস্থিত কৃষকদের সাক্ষাৎকারেও তারা জানান, ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার হতাশা থেকেই ফসল নষ্ট করেছেন তারা।

নাগরিক টিভির ফেসবুক পেজে গত ২ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওটির বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওটি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় ধারণ করা হয়েছে। সেখানে প্রতি পিস ফুলকপি মাত্র ১ টাকায় বিক্রি হওয়ায় ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ কৃষকরা প্রতিবাদস্বরূপ নিজেদের জমির ফুলকপি নিজেরাই নষ্ট করতে বাধ্য হন।

এছাড়া, মেহেরপুরে কৃষকদের ফুলকপি নষ্ট করার ঘটনাটি নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়টি আবারও প্রমাণ করে যে রিপাবলিক বাংলা আগের মতোই বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটি ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়।

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া সবাই বা অধিকাংশ হিন্দু এমন দাবি বিভ্রান্তিকর

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া সবাই বা অধিকাংশ হিন্দু এমন দাবি বিভ্রান্তিকর
প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়াদের নিয়ে ভারতীয় মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের গত ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনের সবাই কিংবা অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ।

প্রতিষ্ঠানটি তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আরও জানায়, ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনই হিন্দু কিংবা অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এ  দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

এর আগে ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রথম প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে নতুন প্রজ্ঞাপনটিতে বাদ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে অন্তত ১২০ জনই বা অধিকাংশই (অন্তত ৫৭ শতাংশ) ইসলাম ধর্মাবলম্বী। একইসঙ্গে প্রথম প্রজ্ঞাপনটিতে বাদ পড়া এমন প্রায় ৪১ জনকে নতুন করে যোগ করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৫ জন হিন্দু বা সংখ্যালঘুও রয়েছেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করে অনলাইন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ শনিবার (৪ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানায়।

রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানায়, গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রথম দফায় ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ৪৩তম বিসিএসে ২০৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে, পরবর্তী সময়ে উক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে গত ৩০ ডিসেম্বরে নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে ১৮৯৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সাময়িকভাবে ২১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে সুপারিশ প্রেরণ করে। BCS Recruitment Rules, 1981 এর Rule-4 এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে প্রার্থীগণের প্রাক-চরিত্র যাচাই-বাছাই শেষে সুপারিশকৃত ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জন মোট ৯৯ জন বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ২১৬৩-৯৯=২০৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে Clean image এর প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে ৪৩তম বিসিএস এর সুপারিশপ্রাপ্ত ২১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই এবং ডিজিএফআই এর মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এনএসআই এবং ডিজিএফআই হতে ২১৬৩ জন প্রার্থীর উপযুক্ততা/অনুপযুক্ততা বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক-চরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য (আপত্তি/অসুপারিশকৃত) পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয় এবং তাদের বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। বর্ণিতাবস্থায়, সুপারিশকৃত ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জন মোট (৪০+২২৭)=২৬৭ জন বাদ দিয়ে অবশিষ্ট (২১৬৩-২৬৭)= ১৮৯৬ জন প্রার্থীর অনুকূলে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা সত্ত্বেও ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম বাদ যাওয়াদের একটি তালিকা করে ফেক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিম। তাদের তালিকায় দেখা যায় ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছে। অতঃপর বাদ যাওয়া উক্ত ২০৯ জনের পূর্ণ নাম অনুসারে ইসলাম ধর্মাবলম্বী এমন অন্তত ১২০ জন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। যারা গত বছরের ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়ার পর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারিয়েছেন। অর্থাৎ, নতুন প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারানো প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৫৭ শতাংশ প্রার্থী মুসলিম।

অপরদিকে রিউমর স্ক্যানার টিম লক্ষ্য করে এমন ৪১ জনের নাম নতুন করে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে যুক্ত করা হয়েছে যাদেরকে ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছিল। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এমন ৪১ জনের মধ্যে নামানুসারে প্রায় ৫ জন হিন্দু বা সংখ্যালঘুও রয়েছেন। 

অর্থাৎ, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত ২০৬৪ জন থেকে ২০৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে ৪১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে যার ফলে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৬৪-২০৯+৪১=১৮৯৬ জন।

উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যেকেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত আছে জানিয়ে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনই হিন্দু কিংবা অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

আ.লীগ সরকারের আমলের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের বলে অপপ্রচার

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪২ পিএম
আ.লীগ সরকারের আমলের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের বলে অপপ্রচার
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বীভৎস প্রাণী হত্যার ছবি প্রচার করা হচ্ছে। যেটাকে বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের গরু হত্যার দৃশ্য। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা ‘ড. ইউনূস এক দুর্বৃত্তের নাম সে মানুষকে তো হত্যা করছেই কিন্তু পশুকেও নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যা করতে ছাড়ছে না...’ 

এই পোস্টটি নিয়ে তথ্যানুসন্ধান চালিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গরু হত্যার ঘটনা ও ছবিটি ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের। পুরনো এই ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আবুল হাসানাত  নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৩ জুলাইয়ের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এতে মৃত গরুর একই ছবিটি যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ওই পোস্টের সূত্রে জানা যায়, গরু হত্যার ঘটনাটি গত ২০২৩ সালের ২ জুলাই রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনীমোহন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে। গরুটি করাতিরহাট এলাকায় দুদু মিয়া সর্দারের ছিল। পেটে বাছুর থাকা জীবন্ত গাভীকে কুপিয়ে পার্শ্ববর্তী বাদশা মোল্লার বাড়ির পাশে রেখে যাওয়া হয়। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ আখতার আলমের ফেসবুক পোস্ট থেকেও একই তথ্য জানা যায়। পোস্টটির কমেন্টে তিনি জানান, তিনি এই পোস্ট করার পর পশুর প্রতি পাশবিকতার ঘটনাস্থল চররমনীমোহন ইউনিয়নের করাতির হাট এলাকা পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার, লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি সঙ্গে ছিলেন। সে সময় পুলিশ সুপার এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেন।

২০২৩ সালের পুরোনো এই ছবিটি ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

মায়ানমারের ঘটনাকে বাংলাদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর দাবি করে প্রচার

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
মায়ানমারের ঘটনাকে বাংলাদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর দাবি করে প্রচার
ছবি কৃতজ্ঞতা: রিউমর স্ক্যানার

যশোরের জামিয়া ইসলামিয়া নামের একটি মাদরাসায় গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর বার্ষিক অনুষ্ঠানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়বস্তুর ওপর নাটিকা মঞ্চস্থ করে শিক্ষার্থীরা। এর একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে এটি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রায় একই সময়ে আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। এটিকে ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীর’ ভিডিও বলে প্রচার করা হয়।

ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার এই ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো আরেকটি ভিডিও। সুদখোর দেশটাকে জঙ্গিদের অভয় অরণ্য বানিয়ে ফেলেছে’ শিরোনামে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে মুখ ঢাকা কিছু ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং তাদের বক্তব্যে ‘মুজাহিদীন’ ও ‘জিহাদ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়। ভিডিওটি প্রচারের মাধ্যমে মূলত দাবি করা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও।

রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, যশোরের ওই মাদরাসার নাটিকায় শিক্ষার্থীদের একজন ফিলিস্তিনি নেতার চরিত্রে অভিনয় করে এবং এতে প্লাস্টিকের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বরং এটি মায়ানমারের আরাকান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এএনডিএফ) নামের একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও।

অনুসন্ধানে মায়ানমারের গণমাধ্যম ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপের (ডিএমজি) ওয়েবসাইটে গত ১৩ ডিসেম্বর “New Muslim armed group emerges in Arakan State” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত করা ছবির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ডিএমজির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের মংডু শহর দখলের পর আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরাকান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এএনডিএফ) নামের একটি নতুন মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এএনডিএফের এক সদস্য তাদের উপস্থিতি প্রকাশ করে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন।

তাছাড়া, মায়ানমারের আরেকটি গণমাধ্যম এরাস আই (Era’s Eye) গত ১৪ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে, এই প্রতিবেদনগুলোর সূত্রে ‘Rohingya Knowledge World’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওটির দুই মিনিট ১৯ সেকেন্ডের একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। ওই ইউটিউব চ্যানেলের বর্ণনায়ও ভিডিওটি এএনডিএফর বলে দাবি করা হয়।

মায়ানমারের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভিডিও বাংলাদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে; যা ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ।