ঢাকা ৩ ফাল্গুন ১৪৩১, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া সবাই বা অধিকাংশ হিন্দু এমন দাবি বিভ্রান্তিকর

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া সবাই বা অধিকাংশ হিন্দু এমন দাবি বিভ্রান্তিকর
প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়াদের নিয়ে ভারতীয় মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের গত ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনের সবাই কিংবা অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী শীর্ষক দাবিগুলো সঠিক নয় বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ।

প্রতিষ্ঠানটি তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আরও জানায়, ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনই হিন্দু কিংবা অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এ  দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

এর আগে ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রথম প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে নতুন প্রজ্ঞাপনটিতে বাদ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে অন্তত ১২০ জনই বা অধিকাংশই (অন্তত ৫৭ শতাংশ) ইসলাম ধর্মাবলম্বী। একইসঙ্গে প্রথম প্রজ্ঞাপনটিতে বাদ পড়া এমন প্রায় ৪১ জনকে নতুন করে যোগ করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৫ জন হিন্দু বা সংখ্যালঘুও রয়েছেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করে অনলাইন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ শনিবার (৪ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানায়।

রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানায়, গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রথম দফায় ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ৪৩তম বিসিএসে ২০৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে, পরবর্তী সময়ে উক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে গত ৩০ ডিসেম্বরে নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে ১৮৯৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সাময়িকভাবে ২১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে সুপারিশ প্রেরণ করে। BCS Recruitment Rules, 1981 এর Rule-4 এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে প্রার্থীগণের প্রাক-চরিত্র যাচাই-বাছাই শেষে সুপারিশকৃত ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জন মোট ৯৯ জন বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ২১৬৩-৯৯=২০৬৪ জন প্রার্থীর অনুকূলে ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে Clean image এর প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে ৪৩তম বিসিএস এর সুপারিশপ্রাপ্ত ২১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই এবং ডিজিএফআই এর মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এনএসআই এবং ডিজিএফআই হতে ২১৬৩ জন প্রার্থীর উপযুক্ততা/অনুপযুক্ততা বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক-চরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য (আপত্তি/অসুপারিশকৃত) পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয় এবং তাদের বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। বর্ণিতাবস্থায়, সুপারিশকৃত ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্য হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জন মোট (৪০+২২৭)=২৬৭ জন বাদ দিয়ে অবশিষ্ট (২১৬৩-২৬৭)= ১৮৯৬ জন প্রার্থীর অনুকূলে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা সত্ত্বেও ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নাম বাদ যাওয়াদের একটি তালিকা করে ফেক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিম। তাদের তালিকায় দেখা যায় ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে নাম থাকা এমন ২০৯ জনকে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছে। অতঃপর বাদ যাওয়া উক্ত ২০৯ জনের পূর্ণ নাম অনুসারে ইসলাম ধর্মাবলম্বী এমন অন্তত ১২০ জন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। যারা গত বছরের ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়ার পর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারিয়েছেন। অর্থাৎ, নতুন প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারানো প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৫৭ শতাংশ প্রার্থী মুসলিম।

অপরদিকে রিউমর স্ক্যানার টিম লক্ষ্য করে এমন ৪১ জনের নাম নতুন করে ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে যুক্ত করা হয়েছে যাদেরকে ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বাদ দেওয়া হয়েছিল। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এমন ৪১ জনের মধ্যে নামানুসারে প্রায় ৫ জন হিন্দু বা সংখ্যালঘুও রয়েছেন। 

অর্থাৎ, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত ২০৬৪ জন থেকে ২০৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে ৪১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে যার ফলে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৬৪-২০৯+৪১=১৮৯৬ জন।

উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যেকেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত আছে জানিয়ে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ১৬৮ জনই হিন্দু কিংবা অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

ভালোবাসাবাসির দিন আজ

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
ভালোবাসাবাসির দিন আজ
ছবি: সংগৃহীত

‘ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি, দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়, বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টি লাল পদ্ম’। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় একজন প্রেমিকপুরুষ তার ভালোবাসার মানুষের জন্য কী কী করতে পারে, তার বর্ণনা এভাবেই দিয়েছেন।

কিশোর কুমার গেয়েছেন, ‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী…’। সত্যিই তো ভালোবাসা ছাড়া এই জগৎ-সংসার অর্থহীন। আসলে পৃথিবীটা টিকে আছে ভালোবাসার ওপর। পৃথিবীতে এত হানাহানি, হিংসা-যুদ্ধ, সংঘাত। তার পরও পৃথিবী টিকে আছে কী করে? সে তো এই ভালোবাসার জোরেই।

যদিও প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে বছরের সব দিনই ভালোবাসার দিন। তার পরও ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ তাদের কাছে বিশেষ দিন হিসেবেই ধরা দেয়। ভালোবাসার মানুষকে আরেকটু বেশি করে ভালোবাসার, আরেকটু বেশি করে কাছে পাওয়ার জন্য যেন এই দিন। অনেক প্রেমিকপুরুষ এই দিনটির অপেক্ষা করে তার প্রেয়সীকে মনের কথাটি বলার জন্য।

আজ সেই ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই দিনটিকে খুব ঘটা করে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এই দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কয়েক বছর আগ পর্যন্তও বিশ্বব্যাপী ঘটা করে পালন করা হতো না। দিবসটি পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশে আনন্দ-উন্মাদনার সঙ্গে পালন করা হয়।

প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানি জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারও কারও মতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিষ্টাব্দে দেশে বিয়েপ্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনো যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ।

তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে, তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে ক্ষেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এই দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। তবে এটিও সর্বজনস্বীকৃত নয়। এখানেও দ্বিমত আছে।

কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।

প্রাচীন রোমে খ্রিষ্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারাপ্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়।

ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিষ্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারাপ্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল, কারণ এরই মধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দুই চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালোবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিবসটিকে মানুষেরা পালন করে আসছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডের উৎপত্তির বিষয়ে কয়েকটি সম্পূর্ণ আলাদা মত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন, ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন, মধ্যযুগের শেষ দিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এই দিনে।

৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন শুরু হলেও এটি বিশ্বব্যাপী প্রথম দিকে তেমন প্রচার ও প্রসার লাভ করেনি। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সর্বক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য।

তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা বিরত থাকে না। খ্রিষ্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইনস উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা নিষিদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি জনগণ ও সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

এখন কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস দিবসের কদর প্রবল। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এ দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনে প্রায় তিন কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

ভালোবাসা দিবস পালন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। এই দিবসের পক্ষে ও বিপক্ষে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তার পরও সব বিতর্ক পেছনে ফেলে আজ অনেকে দিবসটি উদযাপন করবে, প্রকাশ করবে মনের মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি। গাইবে ভালোবাসার জয়গান।

জয় হোক ভালোবাসার। জয় হোক ভালোবাসা দিবসের।

সরস্বতী পূজা আজ

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
সরস্বতী পূজা আজ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ সোমবার। হিন্দু ধর্মীয় বিধান অনুসারে শ্বেত হংসের পিঠে চড়ে পৃথিবীতে নেমে আসবেন বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী। কৃপা লাভের আশায় দেবীকে আহ্বান করবেন ভক্তরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে পূজার। ঢাকঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ।

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। শ্বেত-শুভ্র বসনা স্বরসতী দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতিবছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আঁধার হিসেবে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করা হয়। তিনি বাগদেবী। বাগদেবী অর্থে তিনি নব হৃদ পবিত্র করেন। তিনি সুন্দর ও মর্ত্যবাক্যের প্রেরণকাত্রী। তিনি মহাসমুদ্রের মতো পরমাত্মার প্রকাশ করেন। তিনি সমুদয় মানব-মানবীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। পরমাত্মার মুখ থেকে তার আবির্ভাব।

মধ্যরাতে প্রতিমা প্রতিষ্ঠার পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সকালে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা। এসবের পরে হবে বাণী অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তুতে’ এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। এরপর ভক্তরা দেবেন পুষ্পাঞ্জলি। সকাল থেকে উপবাস থেকে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তরা প্রার্থনা জানাবেন বিদ্যাধিষ্ঠাত্রীর।

সারা দেশের পূজামণ্ডপ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি। দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হবে অনেক স্থানে। 

ঢাবির জগন্নাথ হলের ৭৩ বিভাগ-ইনস্টিটিউটের মণ্ডপে এবারের আরাধনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে ৭৩ বিভাগ-ইনস্টিটিউটের মণ্ডপে এবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল রবিবার হল প্রাঙ্গণে ১৫ বছর ধরে ঢাবির জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার প্রতিমা নির্মাণকাজে নিয়োজিত থাকা কারিগর বিষু পালের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, এ বছর সব মিলিয়ে ৫০টির মতো প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে ছোটটির নির্মাণ খরচ পড়েছে ২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, ‘সরস্বতী পূজা ঘিরে সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের মোট ১১টি উপকমিটি কাজ করছে। আগত পুণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে সমগ্র হল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’

জবির ৩৯ মণ্ডপে সরস্বতী পূজা
জবি প্রতিনিধি জানান, বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রতিবছরের মতো এবারও নানা আয়োজনে জবিতে হতে যাচ্ছে সরস্বতী পূজা। ৩৯টি মণ্ডপে পালিত হবে সরস্বতী পূজা। চলছে প্রতিমা বানানোর কাজ।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল এসব বিষয় জানান। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমাদের মণ্ডপ সংখ্যা বেড়েছে। মোট ৩৯টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন হবে। ছাত্রী হলের মণ্ডপটি হলের ভেতরেই করা হবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রাতের মধ্যেই সব মণ্ডপ প্রস্তুতির কাজ শেষ করবেন সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলার বিষয়েও সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গেও আমাদের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।’

রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল আরও বলেন, ‘পূজা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। রাত ৮টায় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকার মানুষ এই পূজায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। আশা করছি সম্মিলিত অংশগ্রহণে জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে আমরা পূজা সম্পন্ন করতে পারব।’

‘চা না খাইলে জুইত পাই না’

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:০৭ পিএম
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
‘চা না খাইলে জুইত পাই না’
‘চা না খাইলে জুইত পাই না’ মিলনমেলায় আসা চা-প্রেমীরা। ছবি: খবরের কাগজ

তারা সবাই ভিন্ন পেশার। কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ উদ্যোক্তা, কেউ গৃহিণী। কিন্তু চা-প্রেমী হিসেবে তাদের পরিচয় অভিন্ন। আনন্দ, বেদনা, উৎসব, আড্ডা- সবকিছুতেই চা সবার আগে রাখেন তারা। তাই চা-প্রেমী সবাই মিলে করেছেন ‘চা না খাইলে জুইত পাই না’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। এ গ্রুপের সদস্যরা প্রতি বছরই গেটটুগেদারের আয়োজন করেন। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগানে চতুর্থবারের মতো আয়োজন করা হয় চা-প্রেমীদের মিলনমেলা। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নাম দিয়েছেন ‘চা না খাইলে জুইত পাই না!’

‘জুইত’ শব্দটি বাংলা জুতসই থেকে এসেছে। সিলেটের আঞ্চলিক উচ্চারণে ‘জুইত’ মানে সুবিধা না পাওয়া। চায়ের পেয়ালায় সবাই সুবিধা পেতে ফেসবুক গ্রুপে একাত্ম। ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন সিলেট কোতোয়ালি থানার পুলিশ সদস্য সোলেমান খান। 

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, এই গ্রুপের যারা সদস্য, সবাই রক্তদান করেন এবং রক্ত সংগ্রহে কাজ করেন। সিলেটের চৌহাট্টার রেডক্রিসেন্টে রক্তদান করে সবাই একসঙ্গে বসে চা খেতেন। এর পর ২০১৮ সালে সোলেমান খান চা-প্রেমীদের নিয়ে ফেসবুকে একটি প্রাইভেট গ্রুপ খোলেন। এই গ্রুপে সারা দেশের প্রায় ৪ হাজারের বেশি সদস্য আছেন। এই গ্রুপের সিলেটের সদস্যরাই মিলনমেলার আয়োজন করেন। 

গেটটুগেদারে আসা সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা ও অনলাইন ব্যবসায়ী অভিজিৎ রায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখানে যারা এসেছেন সবাই চা-প্রেমী। যেকোনো সিচুয়েশনে আমাদের চা লাগে। তাই চায়ের দেশ সিলেটে বছরে একবার আমরা একত্রিত হই। রক্তদান নিয়ে কাজ করতে গিয়েই আমরা সব চা-প্রেমী এক হয়েছি। তাই এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশে রক্তদানের বিষয়টি নিয়েও কাজ করি।’

গেটটুগেদারে আসা সাংস্কৃতিক কর্মী মো. জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘চা আমাদের সিলেটের ঐতিহ্য। আমি তো দিনে রাতে বেশ কয়েকবার চা পান করি। প্রতিদিন তো ৮ থেকে ৯ কাপ চা পান করতেই হয়। চা-প্রেমীদের এই মিলনমেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসেছেন। কিন্তু এই চা-প্রেমীদের বিশেষ আরেকটি গুণ হলো তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা।’

শহিদ ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জহির পাটোয়ারি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বাড়ি কুমিল্লা। সিলেটে এসেছি কয়েক দিন হলো। আমার কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে এই গ্রুপে যুক্ত হয়েছি। পানীয়ের মধ্যে আমি চা পান করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। তাই সব চা-প্রেমীদের সঙ্গে আনন্দ করতে আজকে এসেছি।’

গেটটুগেদারে আসা বেশ কয়েকজন নারী খবরের কাগজকে জানান, তারা সবাই চা-প্রেমী। সবাই দিনে অন্তত তিনবার চা পান করেন। অনেক সময় চার থেকে ছয়বারও চা পান করেন। 

এক নারী বলেন, ‘আমরা দুঃখে আছি- চা খেতে হবে, সুখে আছি- চা খেতে হবে, ঠাণ্ডা লেগেছে- চা খেতে হবে, গরম লেগেছে- চা খেতে হবে। মোট কথা, আমরা যেকোনো কারণে চা খাই।’

‘জুইত পাই না’ বলে নিছক হাস্যরসে তারা মিলিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নিয়ে সরব ছিলেন সবাই। বিষয়টি হচ্ছে রক্তদান। ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’, ‘তুচ্ছ নয় রক্ত দান, বাঁচতে পারে একটি প্রাণ’ স্লোগানে দিনব্যাপী এই আয়োজন শুরু হয় শুক্রবার বেলা ১১টায়। এর পর চা-প্রেমীরা বিভিন্ন খেলায় অংশ নেন। চা পানের সঙ্গে চলে ফটোশুট, কুইজ, ফটো কনটেস্ট, আলোচনা সভা, খেলাধুলা ও পুরস্কার বিতরণ। র‍্যাফেল ড্র ও লটারির মাধ্যমে বিকেল ৫টায় শেষ হয় এ আয়োজন।

পপি/

সাইফের হামলাকারী সন্দেহে আটক, চাকরি-বউ সবই গেল আকাশের

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
সাইফের হামলাকারী সন্দেহে আটক, চাকরি-বউ সবই গেল আকাশের
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান-আকাশ কৈলাশ কানৌজিয়া

বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর হামলাকারী সন্দেহে আটক হয়েছিলে ৩১ বছর বয়সি আকাশ কৈলাশ কানৌজিয়া। পরবর্তীতে মুম্বই পুলিশ জানায়, তাকে ভুল করে আটক করা হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে যা ঘটার তাই ঘটে গেছে আকাশের জীবনে। আটকের খবরে চাকরি, বউ সবই হারিয়েছেন তিনি।

মুম্বইয়ের কোলাবার বাসিন্দা আকাশ এই অভিযোগ তুলে ধরেন ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে।

গত ১৭ জানুয়ারি জ্ঞানেশ্বর এক্সপ্রেসে মুম্বই থেকে বিলাসপুর যাচ্ছিলেন আকাশ। তখন তাকে সাইফের বাড়িতে হামলাকারী সন্দেহে আটক করা হয়।

অভিনেতার অ্যাপার্টমেন্টে চুরির চেষ্টার পিছনে তিনি ছিলেন বলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরপিএফকে সতর্ক করেছিল মুম্বই পুলিশ।

আকাশ সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, ‘আরপিএফের কর্মীরা শুধু আমাকে গ্রেপ্তারই করেনি, আমার ছবিসহ সংবাদ বিবৃতিও দিয়েছে, যা টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। এর ফলে কনের পরিবার আমার সঙ্গে দেখা করেনি। তাছাড়া আমার নিয়োগকর্তা আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন।’

মুম্বই পশ্চিম রেলওয়েতে একটি ট্যুর সংস্থার গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আকাশ। ১৭ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তারের আগে মুম্বই পুলিশ ফোনে তার অবস্থান জেনে নেন। পরের দিন মুম্বই থেকে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে উঠে ছত্তিশগড়ে তার পৈত্রিক বাড়ি নেহলায় অসুস্থ দাদীমার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন আকাশ। দাদীমার সঙ্গে দেখা করার পর তার হবু স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল আকাশের।

১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্গ জংশনে পৌঁছালে আরপিএফ কর্মীরা তাকে আটক করে মুম্বই পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

আকাশের কথায়, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম যে সাইফ আলী খানের ওপর হামলার সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। তাদেরকে আমার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। আমি তাদের আরও বলেছিলাম যে, তারা তাদের সন্দেহ পরিষ্কার করার জন্য আমার বাড়ির কাছে লাগানো সিসিটিভি থেকে ফুটেজও পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু তারা আমার কোনো কথা শুনেননি, উল্টো তারা আমার ছবি তুলে গণমাধ্যমে প্রচার করে দাবি করে যে আমিই হামলাকারী।’

এরপর ১৮ জানুয়ারি রাতে পুলিশ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে থানে থেকে গ্রেপ্তার করে এবং দাবি করে যে তিনিই ডাকাতির উদ্দেশ্যে অভিনেতার বাড়িতে ঢুকেছিলেন।

পরের দিন সকালে পুলিশ আকাশকে ছেড়ে দেয়।

‘‘মুক্তি পাওয়ার পর যখন আমি আমার মায়ের সঙ্গে (মুম্বইয়ে) কথা বলি, তখন তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। কারণ সব নিউজ চ্যানেলে আমার ছবি দেখানো হয়েছিল এবং আমাকে অবিলম্বে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন মা। পরের দিন, যখন আমি আমার নিয়োগকর্তাকে ফোন করি, তখন তিনি আমাকে কাজের জন্য রিপোর্ট করা বন্ধ করতে বলেন। তার কথায়, ‘আপনি আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছেন। আপনার কারণে আমি সমস্যায় পড়তে চাই না’। আমি তাকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার কথা শুনতে রাজি ছিলেন না।’’

এর পর তিনি তার দাদির কাছ থেকে ফোনে জানতে পারেন, নিউজ চ্যানেলে তার ছবি দেখে হবু কনের পরিবার বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছে।

আকাশ বলেন, ‘যা ঘটেছে তার পর আমি নিশ্চিত নই যে ভবিষ্যতে বিয়ে করতে পারব কি না।’

আপাতত আকাশের দাবি, তাকে আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করে প্রকাশ করা সব ছবি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক। তবে আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় নিজের জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করার মতো ক্ষমতাও তার নেই।

‘পুলিশ একটি সাধারণ জিনিস খেয়াল করেনি - আমার গোঁফ আছে, আর সইফ আলি খানের বিল্ডিংয়ে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যক্তির গোঁফ নেই’, হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন আকাশ।

অমিয়/

সচেতনতামূলক প্রচার ১০ তরুণের সাইকেল-যাত্রা

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ এএম
আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম
১০ তরুণের সাইকেল-যাত্রা
মানুষকে নানা বিষয়ে সচেতন করতে দেশজুড়ে সাইকেল-যাত্রায় অংশ নেওয়া ১০ তরুণ। ছবি: খবরের কাগজ

‘স্টার্ট রেভল্যুশন ব্যাক টু বাইক’ স্লোগানকে ধারণ করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন ১০ তরুণ। ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নিয়ে দেশের ৬৪ জেলার মানুষকে সচেতনতামূলক বার্তা দিতে ৩০ দিনের এই ভ্রমণ শুরু করেছেন তারা। তাদের এই ভ্রমণে প্রতিটি জেলার জন্য থাকবে আলাদা বার্তার প্ল্যাকার্ড। চলতি পথে চলবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়।

গ্রুপের অ্যাডমিন শামীম মাশুক আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে গত শুক্রবার রাত ১২টায় তারা বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। দেশের সব জেলা ঘুরে কক্সবাজার এসে ভ্রমণ শেষ করবেন তারা। ভ্রমণে অংশ নেওয়া সবাই ইউনিয়ন সাইক্লিস্ট অব বাংলাদেশের সদস্য। সাইকেল একটি পরিবেশবান্ধব বাহন। তাই তারা সাইকেল নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে চান।’ 

তিনি জানান, সবার জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো গ্লোবাল ওয়ার্মিং। মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের অধিক নিঃসরণের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি। পৃথিবীতে অতিবৃষ্টি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া, নদী-নালা, খাল-বিল পলিথিন, প্লাস্টিকে ভরে বন্যার তীব্রতা বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিল সমস্যায় পড়ছে বিশ্ব। এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের গাছ লাগাতে হবে, পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। ভ্রমণের সময় ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণ ও প্রতিকার’ নিয়ে মানুষকে সচেতন করবেন তারা। এই ভ্রমণ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষকে উৎসর্গ করবেন তারা। 

দলের অন্য সদস্যরা হলেন রিদওয়ানুল রিদু, মিউ নাই মং, বোরহান উদ্দিন রাফি, মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, অর্ণব কুমার রায়, সাগর নাথ, সুমিত নাথ ও মুহাম্মদ।

এই ১০ তরুণ তাদের ভ্রমণে বেশ কয়েকটি বার্তার কথা বলেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি ট্রেনের ব্যবস্থা করুন, অভিভাবকহীন বয়স্কদের জন্য বয়স্ক ভাতা চালু করুন, চা-শ্রমিকদের মজুরি ও জীবনমান বৃদ্ধি করুন, সুদকে না বলুন, সৎ ও হালাল জীবন গড়ুন, স্ট্যান্ড ফর হিউম্যানিটি-স্ট্যান্ড ফর ফিলিস্তিন, পরিবেশবান্ধব কলকারখানা ও মোটরগাড়ি ব্যবহার করুন, রক্ত দিন জীবন বাঁচান, একমাত্র প্রবাল দ্বীপ রক্ষা করুন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ও জীবনমান বৃদ্ধি করুন ইত্যাদি।