ভরতনাট্যম, ওড়িশি, মণিপুরি, কথক নৃত্যে স্রষ্টার বন্দনায় নিমগ্ন রইলেন শিল্পীরা। পৌরাণিক কাহিনিনির্ভর নৃত্যে শাস্ত্রীয় সংগীতের নানা রাগ, তালে স্রষ্টার স্বরূপ অন্বেষণের পাশাপাশি সামাজিক জীবনের নানা প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।
প্রদোষের সময় অর্থাৎ সন্ধ্যাকালে ত্রিশূল ধারণকারী ভগবান শিব প্রচণ্ড তাণ্ডবলীলা শুরু করেন। দেবী গৌরী যিনি তিন জগতের জননী, তিনি অমূল্য রত্ন দিয়ে জড়ানো সোনার আসনে বসেন। নিজে নাচতে প্রস্তুত হন এবং সব দেবতা তার প্রশংসায় গান করেন। পৌরাণিক সেই কাহিনি অবলম্বনে রাগম- পূরবী কল্যাণী, তালাম- আদিতে নির্মিত হয়েছে নৃত্য প্রযোজনা ‘শিব পদম’। ভরতনাট্যমে সে প্রযোজনা পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী।
রাগ মিশ্র, তাল আদিতে জুয়েইরিয়াহ মৌলি পরিবেশন করেন ‘পঞ্চরাগ তিল্লানা’। তিল্লানা হলো দক্ষিণ ভারতীয় সংগীতের একটি ছন্দময় অংশ, যা সাধারণত ভরতনাট্যম মার্গমের শেষে পরিবেশিত হয়।
মহাভারতে কৃষ্ণের লীলাময় রূপের দ্বারা কালিয় নাগকে বশ করার আধ্যাত্মিক ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে মণিপুরি নৃত্য ‘কালিয় দমন’। নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস চৌধুরী সপতো তালে পরিবেশন করেন এ নৃত্য। মণিপুরি জাতিসত্তার নানা উৎসব মুখরিত জীবন এবং সামাজিক জীবনের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি মণিপুরি নৃত্য। আদি প্রবাহে বহমান মণিপুরি নৃত্যের ভাবভক্তি উঠে আসে এই প্রযোজনায়।
নৃত্য-উৎসবের সন্ধ্যায় ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করে চট্টগ্রামের ওড়িশি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার। প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় এদিন তারা পরিবেশন করে ওড়িশি নৃত্যের সর্বশেষ ধাপ ‘মোক্ষ্য’। ভারতীয় দর্শন মতে ‘নির্বাণ’ লাভই হলো মনুষ্য জীবনের চরম পথ। সেই উদ্দেশ্যে সারা জীবনের সাধনার মাধ্যমে মনুষ্য জীবন পৌঁছে যেতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত বা অভীষ্ট লক্ষ্যে। বিশুদ্ধ নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শিল্পী ছন্দ, গতি, লয় ও তাল, এই চতুষ্টয়ের সমন্বয়ে ফুটিয়ে তোলেন মোক্ষ্য বা নির্বাণের আকাঙ্ক্ষা। শিল্পী মুক্তি লাভের চরম পর্যায়ে পৌঁছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আত্মোৎসর্গ করেন স্রষ্টার চরণে। রাগ বাগেশ্রী, তাল একোতালিতে নির্মিত ‘মোক্ষ্য’ পরিবেশনায় অংশ নেন ময়ূখ সরকার, দিয়া দাশগুপ্তা, অর্জিতা সেন চৌধুরী, ঈশিকা দাশ ও প্রমা অবন্তী। ওড়িশি নৃত্যে ‘মঙ্গলাচরণ’ পরিবেশন করে বেনজীর সালামের দল নৃত্যছন্দের সদস্য জসিম উদ্দিন ও আফিয়া ইবনাত হালিম। রাগ মেঘ, কেদার ও তাল একতালিতে নির্মিত এই প্রযোজনায় তারা উপস্থাপন করেন গণেশ বন্দনা। পরে নৃত্যছন্দ রাগ হংসধ্বনি ও তাল একতালিতে ‘হংসধ্বনি পল্লবী পরিবেশন করে।
গৌড়ীয় নৃত্যে ‘শিবনামাবলি’ পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিস। বাংলা সাহিত্যের অনন্য মঙ্গলকাব্য ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের শিবের বহুনামসংবলিত নামাবলির খণ্ডিত অংশ এ নৃত্যে উপস্থাপিত হয়। রাগ শুদ্ধবঙ্গাল, তাল- বাংলার তাল দাশপাহারিতে পরিবেশিত হয় এ নৃত্য প্রযোজনা।
পাখোয়াজ অঙ্গের ১৪ মাত্রার তাল ধামারে কথক পরিবেশন করেন হাসান ইশতিয়াক ইমরান। ‘মেলবন্ধন’ শিরোনামে ওই প্রযোজনায় উত্তর ভারতের কথকের জয়পুর ও লক্ষ্ণৌ ঘরানার উভয় শৈলীর বিভিন্ন উপাদান পরিবেশিত হয়। জয়পুর ও লক্ষ্ণৌ ঘরানার বোলের সমন্বয়ে নির্মিত ঠাট, আমদ, টুকরা, তেহাই, পরন, লাড়ি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই নৃত্যশৈলী।