সমকালীন বাংলা কবিতায় মেহনতি মানুষের প্রতিচ্ছবি এঁকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর হয়েছিলেন কবি অসীম সাহা। তার কবিতায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার। গণমানুষের সেই কবি অসীম সাহা গত মঙ্গলবার দুপুরে চিরবিদায় নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রেখে গেছেন সহধর্মিণী অঞ্জনা সাহা ও তার দুই ছেলে অভ্র সাহা, অর্ঘ্য সাহাসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী, স্বজন ও অনুরাগী। গত ২১ মে থেকে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, পারকিনসনসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে অসীম সাহাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ বিষয়ে কবির ছোট ছেলে অর্ঘ্য সাহা বলেন, হাসপাতালের হিমঘরে থাকা বাবার শবদেহ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। শেষকৃত্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা তার মরদেহ দান করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন। এ বিষয়ে আমারও সমর্থন রয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। আমার বড় ভাই অভ্র সাহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বুধবার রাতে দেশে ফেরার পর তার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অসীম সাহা। পিতৃপুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রাম হলেও শিক্ষক বাবা অখিল বন্ধু সাহার কলেজের চাকরিসূত্রে তারা থাকতেন মাদারীপুরে। মাদারীপুরের নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। অসীম সাহার লেখালেখি শুরু ১৯৬৪ সালে। ঢাকার পত্রিকায় ছোটদের জন্য লেখা ছাপা হয় ১৯৬৫ সালে। সেই থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান রচনা করে গেছেন তিনি। এ পর্যন্ত কবির ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’, ‘কালো পালকের নিচে’, ‘পুনরুদ্ধার’, ‘উদ্বাস্তু’, ‘মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি’, ‘অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব’, ‘মুহূর্তের কবিতা’, ‘সৌর-রামায়ণ’, ‘কবর খুঁড়ছে ইমাম’, ‘প্রেমপদাবলি’, ‘পুরোনো দিনের ঘাসফুল’ তার উল্লেখযোগ্য কবিতার বই।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান অসীম সাহা। ২০১৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ-গবেষণা, অভিধানচর্চা এবং কাব্য অনুবাদেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার শোক বার্তায় তিনি বলেন, অসীম সাহার মৃত্যুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। অসীম সাহার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।