একই সময়ে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানী ছাড়াও জেলায় জেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে নিরাপত্তাহীনতায় সিলেট ও বরিশালে এ কর্মসূচি পালিত হয়নি।
ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে উদীচীর কেন্দ্রীয় শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
এ ছাড়া তারা সমবেত কণ্ঠে একাত্তরের রণাঙ্গনের গান করেন। এ কর্মসূচিতে জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।
এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে অংশ নেন।
গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি প্রশ্ন তোলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে উদীচী।
শুক্রবার সকালে জেলায় জেলায় ও বিদেশে উদীচীর শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একসঙ্গে এই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বলেও জানায় সংগঠনটি।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এ ছাড়া শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে একে একে গেয়ে শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ প্রভৃতি। আবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনো আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা কারও দানে পাওয়া নয়। লাখো শহিদের রক্তে পাওয়া এ আমাদের অর্জন। এ অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতে আঘাত করবে। আমরা তার প্রতিবাদ করবই।’
নিরাপত্তাহীনতায় সিলেটে গাওয়া হয়নি জাতীয় সংগীত
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়নি।
আয়োজকদের একজন নাট্যকর্মী অরূপ বাউল বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা শহিদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাইতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই দিন নিরাপত্তাহীনতার কারণে আয়োজনটি করতে না পেরে ৬ সেপ্টেম্বর (গতকাল) কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু আমরা পারিনি।’
অরূপ বাউল আরও বলেন, ‘আমরা কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে এই আয়োজনের ঘোষণা দিইনি। অনেক নারী ও শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত গাইতে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফেসবুকে এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রোপাগান্ডা চালায় কিছু মানুষ। আমরা জানতে পারি আমাদের আয়োজনে হামলা করতেও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা ছিল। এসব কারণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার এ আয়োজন স্থগিত করেছি।’
এদিকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একযোগে সারা দেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করতে আমরাও ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জাতীয় সংগীতের আয়োজন করতে পারিনি।’
বরিশালে জাতীয় সংগীত গায়নি কোনো সংগঠন
বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার দাবির প্রতিবাদে বরিশালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়নি। এর কারণ হিসেবে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ নিরাপত্তার কথা বলেছে।
উদীচী বরিশাল শাখার সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় সমবেত কণ্ঠেই জাতীয় সংগীত গেয়ে থাকি। জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে কে কী বলল, তা বিবেচ্য কোনো বিষয় নয়। তবে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
অপরদিকে বরিশালের সাংস্কৃতিক সংগঠনের মোর্চা বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘গোলাম আযমের ছেলে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি করায় বরিশালে সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’