ঢাকা ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সংগ্রহশালা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী আজ
নড়াইলে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সংগ্রহশালা। ছবি: খবরের কাগজ

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মস্থানে অবস্থিত নড়াইলে শিল্পীর সংগ্রহশালাটি আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তোলার দাবি সুলতান ভক্তানুরাগীদের। এস এম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুর পর তার নিজের হাতে আঁকা আন্তর্জাতিক মানের অনেক চিত্রকর্ম হারিয়ে যায়।

সেগুলো জেলার বিভিন্ন ব্যক্তিদের বাড়িতে ছিল। পরে এস এম সুলতান সংগ্রহশালা তৈরির পর শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম বিভিন্নজনের বাড়িতে ও সংগ্রহ থেকে সেগুলো সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া তার ব্যবহৃত রং-তুলি, বোর্ড, হারমোনিয়াম, লাঠি, পাঞ্জাবি, জুতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রও সংগ্রহশালায় রয়েছে। তবে শিল্পী এস এম সুলতান শত শত ছবি আঁকালেও সংগ্রহশালায় রয়েছে তার মাত্র ২৩টি চিত্রকর্ম।

সংগ্রহশালা সূত্র জানায়, সংগ্রহশালায় শিল্পী এস এম সুলতানের আঁকা মোট ৭৬টি চিত্রকর্ম রয়েছে। এর মধ্যে শিল্পীর আঁকা ছবি রয়েছে ২৩টি। এ ছাড়া রেপ্লিকা রয়েছে ৫৩টি।

এদিকে অযত্নে শিল্পীর আঁকা ছবিসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র নষ্ট হতে যাচ্ছে। তাই দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের দাবি, নড়াইলে আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হোক। তা না হলে এস এম সুলতানের আঁকা চিত্রকর্ম বা ব্যবহৃত জিসিনপত্র নষ্ট হয়ে গেলে তা অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

এস এম সুলতান শিশুস্বর্গের প্রধান শিক্ষক বলদেব অধিকারী বলেন, ‘এস এম সুলতানের আঁকা চিত্রকর্মগুলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কিছু ছবি সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সুলতানের আঁকা চিত্রকর্মগুলো একবার নষ্ট হয়ে গেলে এসব অমূল্য ছবি আর কোথাও পাওয়া যাবে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ছবিগুলো সংরক্ষণ করে একটি উন্নতমানের সংগ্রহশালা করে সংরক্ষণ করার দাবি জানান।

এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ (অব.) অনাদীবালা বৈরাগী বলেন, ‘এস এম সুলতান ছিলেন বিশ্বমানের চিত্রশিল্পী। তার আঁকা চিত্রকর্মগুলো প্রতিনিয়ত দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সুলতানভক্তরা আসেন। এস এম সুলতানের যে সংগ্রহশালা রয়েছে, তা সংকীর্ণ। এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি সংগ্রহশালা করা হলে সুলতানের ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ আঁকা ছবিগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।’

নড়াইল এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি বলেন, ‘সুলতানের আঁকা ছবি ২০১৪-১৫ সালে পেইন্ট রেস্টুরেশন (দীর্ঘস্থায়ী) করা হয়। ২৩টি ছবির মধ্যে দুটি ছবি পেইন্ট রেস্টুরেশন করা হয়নি। একবার পেইন্ট রেস্টুরেশন করা হলে প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্তু ভালো থাকে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালাটিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহশালা হলে ভালো হবে।’

এদিকে শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার কোরআনখানি, শিল্পীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মাজার জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ভাটি অঞ্চলের প্রবাদ পুরুষ

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ এএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ এএম
ভাটি অঞ্চলের প্রবাদ পুরুষ
আজ সুনামগঞ্জের প্রবাদ পুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ছবি: খবরের কাগজ

চলিতে চরণ চলে না, দিনে দিনে অবশ হই.../ আগের বাহাদুরি এখন গেল কই?
মাথায় চুল পাকিতেছে, মুখের দাঁত নড়ে গেছে / চোখের জ্যোতি কমেছে, মনে মনে ভাবি চশমা লই.../ মন চলে না রঙ তামাশায়, আলস্য এসেছে দেহায় / কথা বলতে ভুল পড়ে যায়, মধ্যে মধ্যে আটক হই.../ আগের বাহাদুরি এখন গেল কই?

মানবজনমের আয়ুরেখার শেষের দিকে এসে মানুষের আত্মোপলব্ধির কঠিন কথাগুলো এভাবেই সহজ-সরল ভাষায় লিখে গেছেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। একইভাবে ‘তুমি মানুষ আমি মানুষ- সবাই এক মায়ের সন্তান- এসব নিয়া দ্বন্দ্ব কেন, কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান’। অথবা ‘গাড়ি চলে না চলে না চলে না রে গাড়ি চলে না’। ‘বসন্ত বাতাসে সই হো’। এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি।

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘুণে ধরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে জন্ম নিলেও আলো জ্বালিয়েছেন গানের মাধ্যমে। গানে গানে তুলে ধরেছেন মেহনতি মানুষের কথা, মানবতার কথা, মানুষে মানুষে প্রেমের কথা। প্রায় এক যুগ আগে এই পৃথিবী থেকে ভাটি বাংলার এই প্রবাদ পুরুষ বিদায় নিলেও তার সৃষ্টিকর্ম আজও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী আলো ছড়াচ্ছে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের কালনী নদীর তীর থেকে তার সুর ভেসে বেড়াচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকায়। 

আজ বৃহস্পতিবার সেই প্রবাদ পুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

সুনামগঞ্জ একটি হাওরবেষ্টিত জনপদ। এই জনপদে বর্ষায় এক রূপ আবার শীতকালে অন্য রূপ। বর্ষায় সুনামগঞ্জের হাওরের থইথই জলরাশি বাতাসে আছড়ে পড়ার সুর যেমন আছে আবার তেমনি শীতকালে এই একই হাওরে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠে সুর ভাসে, তাল-লয় ভেসে বেড়ায় একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। ভৌগোলিক কারণেই সুনামগঞ্জের আলো, বাতাস, হাওর, ফসলের মাঠ সুর, তাল, লয় সর্বোপরি লোকগানের জন্য উর্বর ভূমি। তাইত এই জনপদে কালে কালে জন্ম নিয়েছেন বৈষ্ণব কবি রাধা রমণ দত্ত, মরমী কবি হাছনরাজা, দুর্বিণ শাহ। শাহ আব্দুল করিম তাদেরই একজন। তবে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম তাদের থেকে স্বতন্ত্র এবং আলাদা তিনি তার সৃষ্টিকর্মে পরিচয় দিয়েছেন। 

উজানধল গ্রামটি বর্ষাকালে চারদিকে থইথই পানি থাকে। দূর থেকে দেখলে অনেকটা দ্বীপের মতো দেখায়। বর্ষাকালে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে নৌকা ছাড়া যাওয়ার আর কোনো পথ থাকে না। ২০২৩ সালে এসেও দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রাম এখনো অনেকটা দুর্গম এলাকা অথচ প্রায় এক শ বছর আগে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি নানান অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠলেও নিজের সৃষ্টিকর্ম দিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পরিবারের অভাব অনটনের কারণে গ্রামে রাখালের কাজ করতেন। তার বয়স যখন ১২ বছর তিনি রাখালের কাজ ছেড়ে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ধলবাজারের এক মুদির দোকানে কাজ করেন। মূলত জীবনের চরম বাস্তবতা থেকে তিনি গান রচনা ও গাওয়ার অনুপ্রেরণা পান। তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। 

 প্রথম জীবনে তিনি গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এলাকায় এলাকায় ঘুরে বাউলা গান গাইতেন। তার সহজ সরল ভাষার গান, মাটি ও মানুষের মনের কথা খুব সহজে আপামর মানুষের মনে জায়গা করে নেয় এবং পরে পুরো ভাটি অঞ্চলে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তার গানে মুগ্ধ হয়ে জনতা ও বাউলরা তাকে বাউল সম্রাটের উপাধি দেন। 

আব্দুল করিম ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণসংগীত গেয়ে লাখো তরুণকে উজ্জীবিত ও সংগঠিত করেছেন। একটা সময় এই বাউল সম্রাট গান গাওয়ার জন্য ধর্মান্ধদের হাতে বারবার নির্যাতিত হয়েছিলেন, হয়েছেন গ্রাম ছাড়া, ঘর ছাড়া। 

সুনামগঞ্জের কবি ও গবেষক সুখেন্দু সেন বলেন, ‘আব্দুল করিম ভাটি অঞ্চলের প্রবাদ পুরুষ। তিনি প্রায় এক শ বছর আগে সুনামগঞ্জের একটি দুর্গম এলাকায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছেন বিশ্বময়। তবে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আব্দুল করিমকে পরিচয় করাতে হবে। পরিচয় করাতে হবে তার গানগুলোকে শুদ্ধভাবে। তিনি তার গান, গানের কথা যেভাবে লিখে গেছেন, গেয়ে গেছেন সেগুলো চর্চা করাতে হবে। 

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, ‘এ বছর বাবার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বাবার মাজারে ফুল দেওয়া, মিলাদ মাহফিল এবং ভক্তরা গানের আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার জন্মভিটায় প্রতি বছর বাবার ভক্তরা আসেন। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ঠিকমতো বসতে বা থাকতে দিতে পারি না। বাবার নামে একটি একাডেমি হওয়ার কথা ছিল সেটাও হচ্ছে না। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, আব্দুল করিম একাডেমি এবং ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য থাকার একটি ভবন বানিয়ে দিলে মানুষের উপকার হতো এবং বাবার প্রতি সম্মান জানানো যেত। 

সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, ‘তার স্মৃতি রক্ষার্থে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকার চলতি বছরই এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি সুনামগঞ্জ আগামীকাল (আজ) সংগীতের ক্লাসে গানে গানে আব্দুল করিমকে স্মরণ করবে।

জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ উদীচীর

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ উদীচীর
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাধারণ আবৃত্তিশিল্পীর ব্যানারে জাতীয় সংগীত পরিবেশন। ছবি: মাসুদ মিলন

একই সময়ে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানী ছাড়াও জেলায় জেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে নিরাপত্তাহীনতায় সিলেট ও বরিশালে এ কর্মসূচি পালিত হয়নি।

ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে উদীচীর কেন্দ্রীয় শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

এ ছাড়া তারা সমবেত কণ্ঠে একাত্তরের রণাঙ্গনের গান করেন। এ কর্মসূচিতে জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।

এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে অংশ নেন।

গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তনের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি প্রশ্ন তোলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়েও। বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করারও দাবি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। 

এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে উদীচী।

শুক্রবার সকালে জেলায় জেলায় ও বিদেশে উদীচীর শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ একসঙ্গে এই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বলেও জানায় সংগঠনটি। 

ঢাকায় কেন্দ্রীয় আয়োজনে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এ ছাড়া শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে একে একে গেয়ে শোনান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ প্রভৃতি। আবারও জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনো আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব। আমাদের জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা কারও দানে পাওয়া নয়। লাখো শহিদের রক্তে পাওয়া এ আমাদের অর্জন। এ অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতে আঘাত করবে। আমরা তার প্রতিবাদ করবই।’

নিরাপত্তাহীনতায় সিলেটে গাওয়া হয়নি জাতীয় সংগীত 
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়নি।

আয়োজকদের একজন নাট্যকর্মী অরূপ বাউল বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা শহিদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাইতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই দিন নিরাপত্তাহীনতার কারণে আয়োজনটি করতে না পেরে ৬ সেপ্টেম্বর (গতকাল) কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু আমরা পারিনি।’

অরূপ বাউল আরও বলেন, ‘আমরা কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে এই আয়োজনের ঘোষণা দিইনি। অনেক নারী ও শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত গাইতে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফেসবুকে এই আয়োজনকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজন বলে প্রোপাগান্ডা চালায় কিছু মানুষ। আমরা জানতে পারি আমাদের আয়োজনে হামলা করতেও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা ছিল। এসব কারণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার এ আয়োজন স্থগিত করেছি।’

এদিকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একযোগে সারা দেশে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করতে আমরাও ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জাতীয় সংগীতের আয়োজন করতে পারিনি।’

বরিশালে জাতীয় সংগীত গায়নি কোনো সংগঠন
বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার দাবির প্রতিবাদে বরিশালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়নি। এর কারণ হিসেবে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ নিরাপত্তার কথা বলেছে।

উদীচী বরিশাল শাখার সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় সমবেত কণ্ঠেই জাতীয় সংগীত গেয়ে থাকি। জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে কে কী বলল, তা বিবেচ্য কোনো বিষয় নয়। তবে জাতীয় সংগীত  পরিবর্তনের দাবির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’   

অপরদিকে বরিশালের সাংস্কৃতিক সংগঠনের মোর্চা বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘গোলাম আযমের ছেলে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি করায় বরিশালে সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

মাগুরায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ এএম
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম
মাগুরায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন
আজ সকালে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মাগুরা জেলা শাখা জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে। ছবি: খবরের কাগজ

‘জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও, পথে নামো, কন্ঠে ধরো’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মাগুরায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মাগুরা জেলা শাখা।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে এই কর্মসূচি পালন করে তারা। 

কর্মসূচিতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি বিকাশ মজুমদার, সাবেক সভাপতি ডা. তারিফুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বিল্লাহসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ৬৪ জেলার মতো মাগুরায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি- এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এখনই আমাদের একত্রিত হতে হবে। তা না হলে আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের জাতীয় সংগীত, আমাদের পতাকা কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারব না।’

কাশেমুর শ্রাবণ/সাদিয়া নাহার/

বন্যার্তদের পাশে আলোকচিত্রী আসাদ রাসেল

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
বন্যার্তদের পাশে আলোকচিত্রী আসাদ রাসেল
আগামী শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ছবি: বিজ্ঞাপন

দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। প্রদর্শনীতে আসাদ রাসেলের তোলা ২ টি ছবি স্থান পেয়েছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রদর্শনী চলবে বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

প্রদর্শনীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শিত এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো স্থান পেয়েছে। প্রিন্টেড ও ফ্রেমে বাঁধানো এ সব ছবির বিক্রিত সমুদয় অর্থ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদেরকে দান করা হবে। এতে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া ২০ জন পেশাদার আলোকচিত্রীদের তোলা ৩২ টি ছবি প্রদর্শিত হবে। 

আলোকচিত্রী আসাদ রাসেল বলেন, ‘বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, প্রদর্শনীতে ছবি দুটি যে দামে বিক্রি হবে সম পরিমাণ অর্থ তিনি বন্যার্তদের সাহায্যার্থে দান করবেন।’

পেশাগতভাবে আসাদ রাসেল একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর-অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশনস হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। 

এ পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০ টির বেশি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছেন তিনি। তার তোলা ছবি ছাপা হয়েছে ইউনেস্কো, ইউএনএফপিএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএসএআইডি, সুইডেন দূতাবাস, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, চাইল্ড রাইটস কানেক্ট, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশনায়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। প্রদর্শনীতে আসাদ রাসেলের তোলা এই ২ টি ছবি স্থান পেয়েছে।  ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রদর্শনী চলবে বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত।

বিজ্ঞপ্তি/সাদিয়া নাহার/

রাষ্ট্র মেরামতে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব: বর্তমান সময়ের প্রাসঙ্গিকতা

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
রাষ্ট্র মেরামতে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব: বর্তমান সময়ের প্রাসঙ্গিকতা

স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল থেকে ‘গণতন্ত্র’ বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। সে লক্ষ্যে নাগরিকের মৌলিক ও মানবিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র সর্বতোভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা খুব বেশি টেকসই হয়নি। তাছাড়া যুগের পরিবর্তনে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তাই সংবিধানের মূল চেতনাকে সামনে রেখে সময় ও বাস্তবতার নিরিখে রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থায় টেকসই সংস্কার প্রয়োজন। আমি মনে করি সেই ধরনের টেকসই সংস্কার করার জন্য এটাই উৎকৃষ্ট সময়। কারণ, দলীয় সরকারগুলো তাদের স্বার্থ বিবেচনায় সংস্কার করে থাকে। দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের নানা প্রসঙ্গ ও প্রস্তাব রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক, সিভিল সমাজ এমনকি বৃহত্তর জনপরিসরে ঘুরেফিরে আলোচিত হচ্ছে। সে নিরিখে অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’ শিরোনামের বইটি মধ্যে দেওয়া পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্রায়ণ ও রাষ্ট্র মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস এবং তা সাধারণ নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অনেকাংশে সহায়ক হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

যে প্রস্তাবগুলো ড. তোফায়েল আহমেদ তার রচনায় তুলে ধরেছেন তা হলো- ১) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান; ২) দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন; ৩) জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতি প্রণয়ন ও তার আলোকে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস; ৪) একটি একীভূত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন ও একক তফসিলে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠান; ও ৫) ভোটার অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি’ চালু এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ দান। প্রস্তাবগুলো সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হল। 

প্রস্তাব এক: সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান
বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতি খুব একটা সুখের নয়। বাংলাদেশে চলমান নির্বাচন পদ্ধতি ‘মেজরিটারিয়ান’ নামে পরিচিত এবং এ পদ্ধতির নির্বাচনই আইন সম্মতভাবে বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিগত ৫০ বছরেও বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন ঘটেনি, বরঞ্চ পরিস্থিতি ক্রমাবনতিশীল। তাছাড়া নির্বাচনে ব্যবস্থাপনাগত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিগত সীমাবদ্ধতা, যা ছিল তা এখন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। তাই এখন নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন না করে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলে লেখক মনে করেন। লেখকের মতে বিশ্বের প্রায় ৮৭টি রাষ্ট্র সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে অধিকতর যুক্তিসংগত ও সমতাভিত্তক সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যার সুফল তারা ভোগ করছে। সেই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে লেখক বাংলাদেশে প্রচলিত সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভিত্তিক (Simple Majoritarian) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার পূর্বক অধিকতর যুক্তিসংগত ও সমতাভিত্তক সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (Proportional Representation)-এর নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করার প্রস্তাব করেছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে অনুসৃত সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নির্বাচন পদ্ধতির সমস্যা ও সীমাবদ্ধতাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য একটি উত্তম প্রস্তাব বলে মনে হয়েছে। কারণ, এ পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়। 

কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় পৃথক পৃথকভাবে নির্বাচনি এলাকাভিত্তিক একক প্রার্থীর সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিজয়কে সংযুক্ত করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন হিসাব করে সরকার গঠন করা হয়, যা মোট ভোটের হিসাবে সংখ্যালঘিষ্ঠেরই শাসন। অথচ গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী আমরা চাই সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। যেহেতু নির্বাচনি গণতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার জন্য আধুনিক বিশ্বের অনেক দেশ এ পদ্ধতি চালু করে সুফল পেয়েছে, তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন পদ্ধতির এই ধারণাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। লেখকের এই মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। ড. আহমদ তার বইতে এর বিস্তৃত বিশ্লেষণ করেছেন এবং বিশ্বের প্রায় ৯৭টি দেশে কী কী পদ্ধতিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব প্রয়োগ হয় তার একটি তালিকা সংযোজন করেছেন।

প্রস্তাব দুই: দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন
বর্তমান বিশ্বের আইনসভার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধ ধারণকারী দেশগুলো অর্থাৎ যেখানে আইনসভা সত্যিকার অর্থে কার্যকর সেখানকার আইনসভাগুলো দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। এমনকি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও নেপালের আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। পৃথিবীর সব উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে দুটি কক্ষের মাধ্যমে সংসদীয় কর্মপ্রক্রিয়ায় ভারসাম্য আনয়ন করা হয়। গবেষকরা বলছেন, সাধারণত দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাজনক। সব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশেও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা প্রবর্তনের চিন্তা করা যায়। লেখক বাংলাদেশে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় পদ্ধতি চালু করে, এতে এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেছেন। আমার কাছে এই প্রস্তাব খুবই যুক্তিসংগত মনে হয়েছে। কারণ, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন এবং দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা প্রবর্তন হলে জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা ও কাজের ধারায় আমূল পরিবর্তন আসবে, যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অনেক বেশি কার্যকর হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া, এই ধারণার প্রবর্তন হলে জাতীয় সংসদ সদস্যদের সব কাজ হবে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে, দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থ বিবেচনায় আসবে না। ফলে রাজনীতি ও দলীয় ব্যবস্থায় তথা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন উপাদান সংযুক্ত হবে আমি বিশ্বাস করি, যা আমাদের মতো দেশের জন্য খুবই দরকার। 

প্রস্তাব তিন: জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতি প্রণয়ন ও তার আলোকে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস 
বর্তমান আধুনিক সময়ে ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ রাষ্ট্রীয় শাসন, সেবা-সরবরাহ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নতুন ধারণা ও দিগন্তের উন্মোচন করেছে। কিন্তু সনাতনী রাজনীতি ও লোকপ্রশাসন ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ শুধু ‘সরকারের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে ওপর থেকে নিচে হস্তান্তরকে’ নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নির্বাহী ও রাজনৈতিক কাঠামো অতি কেন্দ্রায়িত। এখানে প্রদেশ না থাকলেও রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সীমিত প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন বি-পুঞ্জিভূতকৃত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সুবিশাল একটি সাংগঠনিক কাঠামো, যা সনাতনী বিকেন্দ্রীকরণ ধারণায়পুষ্ট। কিন্তু বর্তমান আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে সুশাসনের কথা এবং আইনের শাসনের কথা জোরেসোরে উচ্চারিত হয়, সেখানে পরিপূর্ণ ‘বিকেন্দ্রায়ণ’ অতীব জরুরি। বাংলাদেশে কেন্দ্রায়ণ এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, তা আর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, ব্যক্তির খেয়াল-খুশিনির্ভর হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছতা আর জনজবাবদিহি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সর্বত্র এর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই একটি জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতি প্রণয়ন করা অতীব জরুরি, যা প্রশাসনিক কেন্দ্রায়ণ নিরসন করে সরকারের ক্ষমতা ও কর্মযজ্ঞকে দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গে সঞ্চালিত করবে এবং সব কাজের সুষম ও স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনবে। আমিও এই প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত। লেখকের মতে, জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতিকে হতে হবে দেশের রাজনীতি, শাসন কাঠামো এবং নানান ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সামষ্টিক রূপরেখা হিসেবে। সংবিধানের মূলনীতি ও অন্যান্য নির্দেশনা এ নীতিতে প্রতিফলিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের সংবিধান কেন্দ্রায়িত শাসনের নীতিকে উৎসাহিত করে। তাই বিকেন্দ্রায়ণের সবগুলো ধরন ও ধারণার যুগপৎ প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতির প্রবর্তন করা দরকার। 

বিকেন্দ্রায়ণের বেসরকারীকরণ নীতিমালা সুচিন্তিতভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সরকার দৈনন্দিন অনেক কাজের ভারমুক্ত হয়ে অনেক বেশি নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তদারকি কাজে মনোযোগী হতে পারবে, জনবল কমিয়ে সরকারের আকার ছোট ও স্মার্ট করতে পারবে এবং সমাজের সর্বত্র ক্ষমতায়ন হবে ও সমাজের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমিও এই বক্ত্যব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তাছাড়া আইনের শাসন নিশ্চিত করার একটি প্রধানতম হাতিয়ার হলো ক্ষমতার সুষম বিকেন্দ্রীকরণ এবং আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের কাজের পৃথকীকরণ। রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার লক্ষ্যে সংবিধানের চিহ্নিত নানা সীমাবদ্ধতা সংশোধন করে তার আওতায় নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করেই জাতীয় বিকেন্দ্রায়ণ নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ এখানে প্রথম দুটি পদক্ষেপ তৃতীয় পদক্ষেপের পূর্বশর্ত। লেখকের মতো আমাদের অনেকেরও বিশ্বাস এই তিনটি নীতিগত সংস্কার বাংলাদেশে একটি টেকসই, নাগরিক বান্ধব, বৈষম্যহীন, ও জনকল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পুনর্গঠনকে নির্বিঘ্ন করবে।

প্রস্তাব চার: একটি একীভূত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন ও একক তফসিলে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠান 
লেখকের মতে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন নানা কারণে জটিল, ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া বর্তমান চলমান স্থানীয় সরকার কাঠামো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা চর্চার অনুকূল না হওয়ায় একদিকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে তা ইতিবাচক অবদান রাখতে পারছে না, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা চর্চায় থাকছে না যুগোপযোগী ভারসাম্য। প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে দুর্বল। তাই আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাঠামোকে সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতি সহজীকরণ এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করা প্রয়োজন। আমিও মনে করি বিষয়টি বর্তমান নির্ধারকদের গভীর মনোযোগ দাবি করে। লেখক স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি ‘একক তফসিলে’ সর্বাধিক এক মাস বা ৪৫ দিন সময়ে শেষ করার একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি মনে করি স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশে এবং সময় ও ব্যয় সংকোচনে এই প্রস্তাব খুবই সহায়ক হবে এবং স্থানীয় জবাবদিহি বৃদ্ধি করবে। 

প্রস্তাব পাঁচ: ভোটার অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি’ চালু এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ দান।

বাংলাদেশে পোস্টাল ব্যালট ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়েগের কোনো সুযোগ নেই। আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চায় এ দুটি বিষয়ে বিপুল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তাই ভোটার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য উদারভাবে ‘পোস্টাল ব্যালট’ ব্যবস্থা এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দানের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। লেখকের মতে বাংলাদেশেও সীমিতভাবে ডাকযোগে ভোটদানের আইন আছে (অনুচ্ছেদ ২৭, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, যা ২০১৯ সনে সংশোধিত, অনুচ্ছেদ ৮(৩) ও (৫), ভোটার তালিকা আইন ২০০৯, যা ২০১৯ সালে সংশোধিত)। সশস্ত্র বাহিনী, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য কর্মীদের জন্য এ অধিকার সংরক্ষণ করা হলেও পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে কেউ খুব এটা আগ্রহ দেখা যায় না, তাই বাস্তব চর্চা খুবই সীমিত। এ বিষযে নানা সেমিনারের আলোচনায় বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী লেখকের সঙ্গে এই বিষয়ে একমত এবং এই ব্যবস্থা সবার জন্য প্রযোজ্য করে চালু করা দরকার বলে মনে করে। 

সারকথা
বাংলাদেশকে প্রথমত উন্নয়নশীল ও পরে উন্নত দেশে উত্তরণের উপযোগী উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক স্থানীয় শাসন কাঠামো বিনির্মাণের স্বার্থে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্বিন্যাস ও আধুনিকায়ন করা খুবই প্রয়োজন। এই পুনর্বিন্যাস ও আধুনিকায়নের জন্য যে ৫টি বিষয়ের প্রতি লেখক মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, আমিও তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। বিশেষ করে, স্থানীয় সরকারে গ্রাম ও নগরের বিভক্তি ও স্তর সংখ্যা হ্রাস, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের একটি একক আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রপতি আদলের পরিবর্তে সংসদীয় আদলের স্থানীয় সরকার কাঠামোর প্রবর্তন, নারীর আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আবর্তন পদ্ধতির প্রবর্তন, একক তপসিলে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন এবং গ্রামীণ পৌরসভাগুলোর বিলুপ্তি। প্রতিটি প্রস্তাব অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং যুগোপযোগী বলে মনে হয়। 

তবে, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় পর্যায়ে কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। রয়েছেন একজন বিভাগীয় কমিশনার। এখানে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতো একজন নির্বাচিত বিভাগীয় পরিষদ চেয়ারম্যান থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। এতে করে মাঠ পর্যায়ের শাসন ও প্রশাসনে ভারসাম্য আসবে। অন্যদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসনের কোনো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নেই। যেহেতু ইউনিয়ন হলো বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের এবং স্থানীয় শাসনের কেন্দ্রবিন্দু, সেহতু, এখানে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থাকাও দরকার বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি স্থানীয় শাসন ও প্রশাসন ব্যবস্থায় এই দুই সংযোজন বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পরিপূরণে খুবই কার্যকর হবে। তাছাড়া গণতন্ত্রের ভীত অধিকতর টেকসই হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আমরা বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। কিন্তু এখনো গণতন্ত্র আমাদের দেশে পরিপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাইনি। যুগে যুগে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছে। তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম যাকে আমরা জেনারেশন-জি বলছি, তারা যে উদ্দেশে জুলাই বিপ্লব সাধন করেছে তার বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। তারা রক্ত দিয়েছে একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও উন্নত বাংলাদেশের জন্য। যেখানে আমাদের দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। আর তাদের এই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দানের জন্য টেকসই গণতন্ত্র অত্যাবশ্যকীয়। আমরা মনে করি, আমাদের এখন সময় এসেছে পারস্পরিক সামঞ্জস্যহীন ও প্রায় অকার্যকর চলমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচনি ব্যবস্থার কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত সংস্কার করার। আমাদের আরও মনে হয় উল্লেখিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো যদি বর্তমান সরকার বিবেচনায় রাখেন তাহলে আমরা একটি টেকসই গণতন্ত্র চর্চার সোনালি দিনে ফিরে যেতে পারব, পারব, জন আকাঙ্ক্ষার পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে এবং পারব একটি বৈষম্যহীন, ক্ষুধামুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে।

(এ রচনাটি প্রফেসর তোফায়েল আহমেদের ‘গ্রন্থিক প্রকাশনী’ থেকে ২০২৪ এ প্রকাশিত ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’ গ্রন্থটির প্রথমাংশ অবলম্বনে রচিত)

লেখক: অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।