
আশ্বিনের বিকেলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অফিস শেষে ঘরমুখো যাত্রায় ভিজে চুপসে গেছেন নগরবাসী। বর্ষণমুখর বিকেলে নগরে ভিজেছে গগনশিরীষ, ছাতিম, শেফালি-শিউলি। এমন বৃষ্টিমুখর দিনে নগরীর সংগীতপিপাসুদের হৃদয় আর্ত হলো রবীন্দ্রসংগীতের সুরে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৩তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় সংগীত-সন্ধ্যার। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রবীন্দ্রপ্রেমীদের আনাগোনায় এদিন বিকেল হতেই মুখর হয়ে ওঠে ছায়ানট মিলনায়তন।
শিল্পীদের একক ও দলীয় পরিবেশনায় সাজানো হয়েছিল ছায়ানটের সংগীতসন্ধ্যা। এই আসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম-প্রকৃতি-স্বদেশ-পূজা পর্যায়ের গানে শ্রোতাদের বিমোহিত করেন শিল্পীরা। রাগ-বেহাগে, তাল-দাদরায় ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’ গানে পরিবেশনায় শুরু হয় ছায়ানটের এই সংগীতসন্ধ্যা। শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে প্রণতি জানান বিশ্বকবির প্রতি। পরে পূজা পর্যায়ে ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে’ গানটি পরিবেশন করেন মাকসুরা আখতার অন্তরা। পরে স্বদেশ পর্যায়ের ‘আপনি অবশ হলি’ গানটি গেয়ে শোনান এ টি এম জাহাঙ্গীর। পূজা পর্যায়ের ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’ ও ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ গান দুটি গেয়ে শোনান সত্যম কুমার দেবনাথ ও তানিয়া মান্নান। স্বদেশ পর্যায়ের ‘নিশি-দিন ভরসা রাখিস’ গানটি গেয়ে শোনান অভিজিৎ দাস।
১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি সম্পূর্ণভাবে বিদেশি বস্ত্র বর্জনের ডাক দিলেন। মহাত্মা গান্ধী বিদেশি বস্ত্র অগ্নিদগ্ধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কর্মসূচির বিরোধিতা করে লিখেছিলেন তার প্রবন্ধ ‘সত্যের আহ্বান’। সেই প্রবন্ধের অংশবিশেষ পাঠ করেন সুমনা বিশ্বাস। রাবীন্দ্রিক-সন্ধ্যায় বিশ্বকবির গীতিনাট্য ‘শিশুতীর্থ’ থেকে আবৃত্তি করে শোনান ছায়ানটের সহ-সম্পাদক জয়ন্ত রায়।
এদিন সন্ধ্যায় স্বদেশ পর্যায়ের গান ‘তবু, পারি নে সঁপিতে প্রাণ’ শোনান অসীম দত্ত, একই পর্যায়ের গান ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’ শোনান আইরিন পারভীন। এদিন সন্ধ্যায় আরও সংগীত পরিবেশন করেন মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য, অমী দেবনাথ, তাহমিদ ওয়াসীফ ঋভু, আজিজুর রহমান তুহিন। অনুষ্ঠানের শেষভাগে ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি’ ও ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে’ গান দুটি সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠান শেষ হয় জাতীয়সংগীত পরিবেশনায়।
এই অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সঙ্গে তবলায় সংগত করেন সুবীর ঘোষ ও মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার, সেতারে ছিলেন ফিরোজ খান, কিবোর্ডে রবিন্স চৌধুরী, মন্দিরায় ছিলেন প্রদীপ কুমার রায়।
জয়ন্ত সাহা/এমএ/