ঢাকা ২৫ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

শরৎ উৎসবে সম্প্রীতির জয়গান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
শরৎ উৎসবে সম্প্রীতির জয়গান
শরৎ উৎসবে নৃত্য পরিবেশনায় স্পন্দনের শিল্পীরা ছবি : জয়ন্ত সাহা, খবরের কাগজ

ঋতুচক্রের আবর্তনে এ বঙ্গে এসেছে শরৎ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর প্রান্তরজুড়ে কাশের গুচ্ছ হৃদয়ে জাগায় প্রাণের স্পন্দন। কথা, কবিতা ও গানে সত্য ও সুন্দরের এ ঋতুর বন্দনা করলেন রাজধানীর শিল্পীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশজুড়ে এখনো যে সহিংসতা বিরাজমান, তার বিপরীতে শিল্পীরা গাইলেন সম্প্রীতির গান। প্রীতি-বন্ধনে মিলনের বার্তা ছড়িয়ে দিলেন নৃত্যশিল্পীরা। 

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শরৎ উৎসব। 

এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় যন্ত্রসংগীতশিল্পী মো. ইউসুফ খানের সরোদ বাদনে শুরু হয় এ উৎসব। ততক্ষণে বকুলতলায় এসে হাজির হয়েছে একদল শিশু-কিশোর। পরনে নীলাভ শুভ্র বসন, কিশোরীরা কানে গুঁজেছেন কাঁঠালচাপা। শরতের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনায় খুদে শিল্পীদের মুখাবয়বে তখন রাজ্যের আঁধার- এই বুঝি এল বৃষ্টি! একপশলা দমকা বাতাস বয়ে গেলেও বৃষ্টি হয়নি। প্রাঙ্গণজুড়ে আসে স্বস্তি।

এ সময় সুরবিহারের শিল্পীরা শোনান ‘ওগো শেফালি বনে মনের কামনা’৷  সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ এবং নজরুল সংগীত ‘এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায়’ গান দুটি। সীমান্ত খেলাঘর আসরের শিশুরা পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথের ‘আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়’ গানটি। শিল্পবৃত্তের শিশুরা পরিবেশন করে দলীয় আবৃত্তি প্রযোজনা ‘শরৎ রাণী’। দলীয় সংগীত পরিবেশনায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’৷ নির্ঝরণী সংগীত একাডেমি পরিবেশন করে ‘এসো হে সজল শ্যামল ঘন দেয়া’৷ সমস্বরের শিল্পীরা শোনায় ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’।

শরৎ উৎসবে নৃত্য পরিবেশনায় ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীরা। ছবি : জয়ন্ত সাহা, খবরের কাগজ

এদিন একক সংগীত পরিবেশন করেন জ্যেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াংকা গোপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অনিমা রায়, শিল্পী তানভীর আলম সজীব, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, স্নিগ্ধা অধিকারী, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, ফেরদৌসী কাকলী ও রোমানা আক্তার। 

দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দন, ধৃতি নর্তনালয়, বাংলাদেশি একাডেমি অব ফাইন আর্টস, নৃত্যাক্ষ, কথক নৃত্য সম্প্রদায়ের শিল্পীরা।

বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম আবৃত্তি করেন কবি জীবনানন্দ দাশের ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতাটি।

শরৎ উৎসবের শরৎ কথনপর্বে অংশ নেন চারুশিল্পী অধ্যাপক সুশান্ত অধিকারী, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। শরৎ উৎসবের ঘোষণা পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী।

দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি বলেন, ‘চিরন্তন শারদীয় উৎসবে এবার মিশে আছে বেদনার সুর। আমরা সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করি নবপ্রভাতের স্বপ্নবহ ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আত্মাহুতি-দানকারী শহিদদের, ব্যথিত চিত্তে লক্ষ্য করি ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ও হিংসার বিস্তারে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু। বৈষম্যহীন মুক্ত স্বাধীন সম্প্রীতির সমাজের স্বপ্নবহ আন্দোলন জীবনে নানাভাবে পল্লবিত হোক, সেই প্রত্যাশাও মিশে থাকে শরৎ-আবাহনে।’

সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে মানজার চৌধুরী বলেন, ‘শারদোৎসব মেলবন্ধন রচনা করে মানবের সঙ্গে প্রকৃতির, জীবনের সঙ্গে মহাজীবনের, সমকালের সঙ্গে চিরকালের। বাংলার মাটির ও প্রকৃতির এমন উৎসব তাই নব-আনন্দে জেগে-ওঠার বাণীমন্ত্র যেমন শোনায়, তেমনি আমাদের দায়িত্ববান করে তোলে প্রকৃতি-সংহারী পদক্ষেপ প্রতিরোধে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে, সেই সঙ্গে মানবসমাজ ও জীবনের চালচিত্রে বিভিন্নতার রঙ-রূপ-রস রক্ষা করে সম্প্রীতির জয়গান গাইতে। শরৎ উদযাপন হোক মানবিক মিলনোৎসবে মুখরিত, আন্দোলিত, জীবনের জয়গান ধ্বনিত।’

জয়ন্ত সাহা/সালমান/ 

বায়োস্কোপের ‘চিনি কম লিকার বেশি’

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
বায়োস্কোপের ‘চিনি কম লিকার বেশি’
ব্যান্ড বায়োস্কোপ

সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে বাংলা গানের ব্যান্ড বায়োস্কোপ। ইতোমধ্যে তাদের প্রথম মৌলিক গান ‘চিনি কম লিকার বেশি’ নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে এই গান প্রকাশ করেন তারা।

ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে গানটি। টিএসসির জনপ্রিয় চা বিক্রেতা স্বপন মামাকে উৎসর্গ করে গানটি প্রকাশ করেছে বায়োস্কোপ।

ব্যান্ডের সদস্য শিল্পী সাহস মোস্তাফিজ বলেন, ‘বায়োস্কোপের ভাবনাটা আমরা ভাবি ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। শ খানেক নামের লিস্ট রেডি করে সেখান থেকে বায়োস্কোপ নামটা বেছে নিতেই লেগে যায় মাসখানেক। ব্যান্ড করব ভাবা যত এক্সাইটিং, এর চেয়ে ঢের বেশি কঠিন শেষ পর্যন্ত পথে নামা এবং সেটা কন্টিনিউ করা। সেই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য একে একে যুক্ত হন তারেক আহসান, অরণ্য আকন, বাপ্পী নবী, আবীর দাস ও লোবান।’

ব্যান্ডের আরেক সদস্য অরণ্য বলেন, ‘ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসে দিনের পর দিন গিটার-পিয়ানিকা হাতে আমরা গলা মিলিয়েছি। শুরুতেই ব্যান্ডের নিজের গান থাকবে সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই একদম প্রথম দিন থেকেই নতুন গান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করি।’

বায়োস্কোপ কেমন ব্যান্ড হবে জানতে চাইলে সাহস বলেন, ‘আমরা কী ধরনের গান করব, তা ভাবতে ভাবতেই মাথায় আসে, আমরা লোক-আঙ্গিকের গান করব, কিন্তু তা হবে সমকালীন গল্প নিয়ে। চারপাশে যা দেখছি তারই বায়োস্কোপ দেখাব আমরা।’

চিনি কম লিকার বেশি, তোমায় আমি ভালোবাসি- এরকম অদ্ভুত একটা লিরিক্স কোথায় পেলেন জানতে চাইলে ব্যান্ডের সদস্য তারেক বলেন, ‘এক বন্ধুর ফেসবুক ওয়ালে পাওয়া এই লাইনটা হুট করেই মনে গেঁথে যায়। এরপর কানেক্ট করি টিএসসির জীবন ইতিহাস স্বপন মামাকে। ভাবতে ভাবতে পুরো ক্যাম্পাসের গল্পের একটা লোক-আঙ্গিক দাঁড়িয়ে গেল।’

বায়োস্কোপ চায় শহরের নানা গল্প গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে। তাই নাগরিক জীবনের দৈনন্দিন গল্পের লোকজ প্রকাশই হবে এই ব্যান্ডের মূল উপাদান। 

বায়োস্কোপ আরও কিছু মৌলিক গানের কাজ করছে বলে জানান ব্যান্ডের সদস্যরা। ‘হেলায় ফেলায়’ ও ‘বিসিএস’ নামে দুটি গান দ্রুতই প্রকাশ পাবে তাদের নিজেদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

সাদিয়া নাহার/অমিয়/

শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় শিল্পী কলিম শরাফীকে স্মরণ

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ পিএম
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় শিল্পী কলিম শরাফীকে স্মরণ
ছবি: সংগৃহীত

শিল্পী কলিম শরাফীর ১৪তম প্রয়াণ বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। উপমহাদেশের বরেণ্য বহুমুখী সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কিংবদন্তী রবীন্দ্রসঙ্গীত ও গণসঙ্গীত শিল্পী এবং বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কলিম শরাফীর প্রয়াণ বার্ষিকীতে শনিবার (২ নভেম্বর) স্মরণসভার আয়োজন করে সংস্থাটি।

তার স্মরণে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর জিগাতলার ধানমন্ডির বেসরকারি ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ।

অনুষ্ঠানে বরেণ্য এই শিল্পীকে স্মৃতিচারণ আর গানে গানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তারই প্রতিষ্ঠিত সংস্থা। সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সংস্থার বর্তমান সভাপতি আরেক জীবন্ত কিংবদন্তি, একাত্তরের  স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী তপন মাহমুদ সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে স্মৃতিচারণে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে সরাসরি আরও অংশগ্রহণ করেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি শিল্পী আমিনা আহমেদ, সহসভাপতি শিল্পী খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, শিল্পী  কাজল মুখার্জি এবং সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিল্পী পীযূষ বড়ুয়াসহ সংস্থার অন্যান্য শিল্পীবৃন্দ। 

স্মৃতিচারণ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা শিল্পী কলিম শরাফীর কর্মময় জীবন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে আজীবন বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে তার অবদান, দেশপ্রেম, শিল্পী সমাজের প্রতি তার দায়বোধ ইত্যাদি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। 

পরে শিল্পী কলিম শরাফী স্মরণে অনুষ্ঠানে  রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশ করেন সংস্থার আজীবন সম্মানিত সদস্য, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশের আধুনিক গানের প্রথিতযশা শিল্পী  রফিকুল আলম, শিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন, শিল্পী সুস্মিতা মন্ডল, শিল্পী সিমু দে, শিল্পী খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, শিল্পী তানজিনা তমা, শিল্পী আমিনা আহমেদ, শিল্পী পীযূষ বড়ুয়াসহ আরও অনেকে। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিল্পী অনিকেত আচার্য। এদিন সংস্থার একটি সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সব সদস্যরা সংস্থার বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ আগামী এপ্রিল ২০২৫ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করার অনুমোদন করে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সামাজিক বিপ্লব গড়তে বইয়ের ভূমিকা মুখ্য: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম
সামাজিক বিপ্লব গড়তে বইয়ের ভূমিকা মুখ্য: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ চত্বরে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের দুই যুগ পূর্তিতে ঐতিহ্য বই উৎসবে বক্তব্য রাখছেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান

পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা হটিয়ে দেশের সম্পদের সর্বজনীন মালিকানা প্রতিষ্ঠায় দেশে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে বইয়ের ভূমিকা মুখ্য বলে জানিয়েছেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ চত্বরে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের দুই যুগ পূর্তিতে ‘ঐতিহ্য বই উৎসব-২০২৪’ উদ্বোধনের আগে তিনি এ কথা বলেন। 

২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বই উৎসব চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। 

প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের পাশে ঐতিহ্যের স্টলে মিলবে বাংলা সাহিত্যের নানা আঙ্গিকের বই। 

উৎসব চলার সময়ে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ে ঐত্যিহ থেকে প্রকাশিত বইগুলো কিনতে পারবেন পাঠকরা। 

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসকরা আমাদের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত। বাংলাদেশের ধনীরা এখন সেই কাজ করছে। বাংলাদেশ এখন ধনীদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সমস্ত পৃথিবী রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এ জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার। সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।’ 

পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে সে লড়াই বাংলাদেশেও অব্যাহতভাবে পরিচালনা করতে গেলে সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্বারোপ করতে হবে বলে জানান তিনি। 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে এ লড়াই চালাতে হলে সংস্কৃতির চর্চাটা খুব জরুরি। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বইয়ের ভূমিকাই মুখ্য ভূমিকা। সেজন্য বইয়ের কাছে যেতে হবে, বাঁচার জন্য যেতে হবে। বাঁচার অর্থ মানুষের মতো বাঁচা, মানুষের মনুষ্যত্বকে রক্ষা করে বাঁচা।’  

বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বইয়ের মধ্যে দিয়ে মানুষ সচেতন হবে, বইয়ের মধ্যে দিয়ে মানুষ পথ খুঁজে পাবে, বইয়ের মধ্যে মানুষের হৃদয় শিক্ষিত হবে। মানুষের যে বুদ্ধি সেই বুদ্ধি সংকীর্ণ থাকবে না, স্বার্থপর থাকবে না। সেই বুদ্ধি অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হবে না। সেই বুদ্ধি মানুষের সামগ্রিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করবে।’

এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক-গবেষক শারমিন আহমেদ, তরুণ অনুবাদক মাহীন হক। 

এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাঈম। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যের ২৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। 

জয়ন্ত/পপি/

এ যেন ক্ষুদে বই পোকাদের মিলনমেলা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
এ যেন ক্ষুদে বই পোকাদের মিলনমেলা
ছবি: খবরের কাগজ

সময়টা শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা। হেমন্তের সকালের সূর্যটা সবেমাত্র প্রখরতা ছড়াতে শুরু করল। তবে মেঘেদের ছোটাছুটি থাকায় আকাশটা ঘোমট বেঁধে ছিল। যেন বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। এরই মধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগরের নিউ মার্কেট সংলগ্ন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল এণ্ড কলেজ প্রাঙ্গনে একে একে আসতে শুরু করল শিক্ষার্থীরা। কেউ অভিভাবকের সঙ্গে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে। সবার চোখে মুখে সে কী উচ্ছ্বাস, আনন্দ। সারিবদ্ধভাবে সবাই আসন গ্রহণ করল। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। এরপর অতিথিদের বক্তব্য। তারপরই শুরু হলো কাঙ্খিত সেই মুহুর্তের পালা। 

এক এক করে শিক্ষার্থীরা ডাক পাচ্ছে মঞ্চে। তাইতো লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই কানে কানে কথা বলছে। কার পুরস্কার কী হতে পারে এসব যেন তাদের ভাবনার বিষয় হয়ে পড়েছে। দেশবরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ মঞ্চ অলঙ্কিত করেছেন অতিথিরা। তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করছেন শুভেচ্ছা অভিনন্দন ও সেরা পাঠক পুরস্কার। পুরস্কার পেয়েই শিক্ষার্থীরা বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন। কেননা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নানা বিষয়ে পছন্দের সব বই, ক্রেষ্ট আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সনদ। যেখানে লেখা আছে তাদের বই পড়ে কৃতিত্ব অর্জনের কথা। 

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন আয়োজিত স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ-২০২৪ এ এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর মিলন ঘটেছে। পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে নগরের ৯৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মিউনিসিপ্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের মাঠ। 

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সমাজকর্মী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি পারভীন মাহমুদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী, রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল, গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। 

কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বইপড়া কর্মসূচিতে কৃতিত্বের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরের ৫ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করেছে  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ছেচল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা। গতবছরও সমসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সবসময় আলোকিত মানুষ তৈরি করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। 

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, সুন্দর স্বপ্নে ভরা বই আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এসব বই একেকটি জ্ঞানের আধার। উন্নত জাতি গঠনে নতুন নতুন জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান ছাড়া একটি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে যাচ্ছে। 

কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরাপাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি পর্বে একজন অভিভাবককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। 

এম কে মনির/মাহফুজ/এমএ/

ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের উৎসব

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৯ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের উৎসব
ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের উৎসবে পারফর্মরত দুই শিল্পী। ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামবাংলার পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের উৎসব শুরু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর কার্তিক মাসে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বছরের পর বছর ধরে ধামের গানে সমাজের অসঙ্গতি এবং পরিবারের সুখ দুঃখের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়। 

এই অনুষ্ঠানে ছেলে শিল্পীরা মেয়ে সেজে অভিনয় করে মজাদার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এতে আনন্দ ও বিনোদনের পাশাপাশি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরের আকঁচা, ঢোলারহাট, রহিমানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে কিংবা শামিয়ানার নিচে মাটিতে বসে মানুষজন রাতভর উপভোগ করছেন এই ধামের গান।

এক দর্শক গীতা রায় বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে এই উৎসবগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
 
বৃদ্ধ দর্শক শাহীন হোসেন বলেন, ছেলেবেলা থেকেই ধামের গান দেখে আসছি। এবারও এসে খুব ভালো লাগছে।
 
তবে স্থানীয় শিল্পীরা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে এই আয়োজনের পরিসর দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।

ধামের গানের শিল্পী ভুপেন চন্দ্র জানান, আমরা ছোটবেলা থেকেই ধামের গানে পারফর্ম করছি। কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্যে এখন অনেকেই এর পেছনে সময় দিতে পারছেন না। সরকারি সহযোগিতা পেলে এটি আরও বড় পরিসরে করা সম্ভব।

আরেক শিল্পী সুকুমার বলেন, এই চর্চা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেক কষ্ট করে এই উৎসব আয়োজন করি। যদি সহযোগিতা পেতাম, তাহলে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিটা আরও সমৃদ্ধভাবে উপস্থাপন করতে পারতাম।

এই উৎসব সম্পর্কে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, সুস্থ ধারার এই গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

নবীন হাসান/সুমন/অমিয়/