প্রাচীন বাংলার চর্যাপদের গান পরিবেশনা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে ইউনেস্কো ঘোষিত প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস উদযাপন করেছে ভাবনগর ফাউন্ডেশন।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাবনগর সাধুসঙ্গের ৫১৮তম আসরে ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল-ফকির সাধকরা সমবেত কণ্ঠে লুইপা রচিত ‘কাআ তরুবর’ শীর্ষক চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন। এরপর সূচনা বক্তব্য দেন নাট্যকার ও গবেষক ড. সাইমন জাকারিয়া। তিনি বলেন, ভাবনগর ফাউন্ডেশনের ভাবনগর সাধুসঙ্গের আয়োজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে ইউনেস্কো কনভেনশন ২০০৩-এর বাস্তবিক প্রয়োগ করেছে। ভাবনগর সাধুসঙ্গের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শক্তি ও ঐশ্বর্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ভুসুকুপা রচিত ৪৯ সংখ্যক চর্যাপদের গান পরিবেশন করেন সাধিকা সৃজনী তানিয়া। অন্যদের মধ্যে চর্যাপদের গান পরিবেশন করেন বরিশালের শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের বাউল অন্তর সরকার, শরিয়তপুরের শিলা মল্লিক, পঞ্চগড়ের রবিউল হক, জামালপুরের হেলাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের সিদ্দিক ফকির ও জিল্লুর সরকার, ঝিনাইদহের জ্ঞানহীন নাইম, ফতেহ কামাল, রতন মিয়া প্রমুখ। গানের পাশাপাশি বক্তব্য দেন সুফি সাধক কামাল শাহ, গবেষক ও শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম নির্জন। কবিতা পাঠ করেন কবি সেলিনা শেলী। গবেষক রেজাউল ইসলাম নির্জন বলেন, ‘ভাবনগর প্রাচীন বাংলার চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে পুনর্নিমাণ করেছে।’
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাই সমবেত কণ্ঠে লালনের ‘আমার মনের মানুষের সনে’ গানটি পরিবেশন করেন।
বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার জন্য ইউনেসকো ২০০৩ সালে ইউনেসকো কনভেনশন প্রণয়ন করে। তারপর থেকে বিশ্বব্যাপী ইউনেসকো বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে তার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭-২২ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর সাধারণ অধিবেশনে প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণায় এই দিবস উদযাপনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইন্টেনসিবল কালচারাল হেরিটেজের সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ইনটেনসিবল কালচারাল হেরিটেজ সংরক্ষণের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
জয়ন্ত/এমএ/