
বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যের জনক ও স্থাপত্যগুরু মাজহারুল ইসলাম। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্থপতিও বলা হয় তাকে। মাজহারুল ইসলামের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রকাশনা ‘মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩-১০১২: অ্যা ফোলিও অফ বিল্ট ওয়ার্কস’ প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার ধানমন্ডিতে ‘স্থপতি মাজহারুল ইসালম ট্রাস্ট’ এর আয়োজনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কাজী খালিদ আশরাফ, লুভা নাহিদ চৌধুরী, কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, সাইফ উল হক, এহসান খান এবং নুরুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ‘স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ট্রাস্ট’-এর সাথে অনুষ্ঠানটির আয়োজক হিসেবে আরও ছিল ‘বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার’ এবং ‘ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টস বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’।
বাংলাদেশের স্থাপত্যের পথিকৃৎ স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলাম দেশে আধুনিক স্থাপত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন এবং স্থাপত্যকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন গনমানুষের বিচরণের আওতায়। প্রবন্ধ সংকলন এবং নির্বাচিত ছবি ও ড্রইং এর মধ্য দিয়ে ‘মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩-২০১২: অ্যা ফোলিও অফ বিল্ট ওয়ার্কস’ বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার কাজের সামগ্রিকতা, আদর্শ ও তৎকালীন স্থাপত্যের প্রেক্ষাপট।
স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের কাজের ব্যাপ্তি ১৯৫০ এর দশকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। স্থাপত্যে আধুনিকতা, পাশ্চাত্যায়ন, ঐতিহ্য এবং জাতি গঠনের আলোচনায় তার জীবন ও কাজ দীর্ঘকাল ধরে প্রাসঙ্গিক এবং বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গনে মানদণ্ড হিসেবে সমাদৃত।
১৯৫০-এর শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে স্থাপত্য-সংস্কৃতির বিস্তার এই পুরো সময়টায় সরাসরি বা পরোক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশে স্থাপত্যচর্চায় আধুনিকতা, আধুনিকীকরণ, পাশ্চাত্যায়ন, ঐতিহ্য ও জাতি গঠনের মতো জরুরি বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে চেয়েছেন। আধুনিক অথচ বাঙালি ঘরানার স্থাপত্যচর্চা প্রতিষ্ঠা করতে মাজহারুল ইসলাম বহু বড় পরিসরের কাজ হাতে নিয়েছিলেন। আধুনিকতা বলতে তিনি বুঝতেন দেশের সামাজিক অসমতাগুলো মোকাবেলা করার একটি নৈতিক এবং যৌক্তিক পন্থা। বাংলাদেশে শক্তিশালী ডিজাইন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য তার সংকল্প এবং জাতি গঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়ের জায়গায় তার যে গভীর সম্পৃক্ততা দুটোই ছিল সমান্তরালে। মাজহারুল ইসলাম সবসময় বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য সঠিক অঞ্চল পরিকল্পনা এবং বৃহৎ পরিসরে ভৌত পরিকল্পনা ও স্থানিক-বিন্যাস তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে স্থাপত্য একটি দীর্ঘ, নিরলস সংগ্রাম। তার জীবন ছিল সেই সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক।
হাসান