
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অক্সফোর্ড বুক স্টোরে এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসব এবং ছায়ানট (কলকাতা) যৌথভাবে আয়োজন করে নজরুল-শব্দবাজি।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নজরুল সম্পর্কিত শব্দ নিয়ে বাংলা শব্দের খেলা ও আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মইনুল হাসান, পণ্ডিত মল্লার ঘোষ, শ্রী চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং শ্রীমতী মল্লিকা ঘোষ।
খেলা, আড্ডা ও পুরস্কারময় নজিরবিহীন এক নজরুল সন্ধ্যায় তরুণ প্রজন্মের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০১০ সালের ২ মার্চ যাত্রা শুরু করে শব্দবাজি। এর প্রতিষ্ঠাতা রেডিও জকি রয়ের (তন্ময় রায়চৌধুরী) রেডিও অনুষ্ঠান ‘মনে রয়’এ বাংলা শব্দ নিয়ে কয়েকটা মজার খেলার মাধ্যমে এর পথচলা শুরু। তবে, আনুমানিক ২০০০ সাল থেকে কিছু ইংরেজি শব্দের খেলার উপর ভিত্তি করে শব্দবাজির খেলাগুলো তৈরি করা শুরু হয়।
২০১২ সাল থেকে ফেসবুক পেজ আর শব্দবাজির ওয়েবসাইট একইসঙ্গে শুরু করা হয়। শব্দবাজির বাংলা শব্দের খেলাগুলো নিয়ে প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে, দে’জ পাবলিশিং থেকে। একই বছর কলকাতা বইমেলা থেকে শুরু হয় শব্দবাজির সরাসরি অনুষ্ঠান- বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, পাড়ায় কুইজের আদলে বাংলা শব্দ নিয়ে মজার খেলা আর আড্ডার আসর।
পরে ২০১৪ সালে শব্দবাজির অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল গেম তৈরি করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন মীর আফসার আলি।
২০২২ সাল থেকে শব্দবাজি ও আনন্দবাজার অনলাইনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে সারা বাংলা আন্তঃবিদ্যালয় বাংলা শব্দের খেলার প্রতিযোগিতা ‘শব্দ-জব্দ’। সারা বছর ধরে ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য সমাজমাধ্যমে বাংলা ভাষার নানান মজার শব্দের খেলা ও বাঙালিয়ানার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এই মুহূর্তে ২৫ জনেরও বেশি শব্দকর্মী, বাংলা ভাষাপ্রেমী ও বাঙালি, ‘শব্দবাজি’তে একসঙ্গে কাজ করছেন বাংলা ভাষা ও বাঙালিয়ানার নানা বিষয় নিয়ে।
মানবতাবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে এ ধরণের আয়োজন কলকাতায় প্রথম। ২০০৮ সালের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ছায়ানট (কলকাতা) পথচলা শুরু করে। কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে কলকাতার বুকে কয়েকজন নজরুলপ্রেমী একত্রিত হয়ে শুরু করেছিল ছায়ানট (কলকাতা)। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার। শুধুমাত্র কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী কিংবা প্রয়াণ দিবস পালন করা নয়, সারা বছর ধরেই তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চর্চা করাই ছায়ানটের উদ্দেশ্য।
প্রতিবছর কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা ছাড়াও প্রতিমাসে বৈঠকি আড্ডা, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করার একমাত্র উদ্দেশ্য কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে আরও বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
ছায়ানট প্রথমবারের মতো কলকাতায় শুরু করে নজরুল মেলা। এছাড়া হায়দ্রাবাদেও নজরুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ উর্দু একাডেমিতে ১৪টি ভাষায় নজরুল কবিতা উৎসবের আয়োজন করে ছায়ানট। নজরুল স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নজরুলপ্রেমীদের অবগত করাও ছায়ানটের কার্যক্রমের অংশ।
আলিপুর জেল মিউজিয়ামে ছায়ানট (কলকাতা)-এর উদ্যোগে নজরুল কক্ষ নির্মাণ, কলকাতার কফি হাউসে নজরুল স্মরণ, নৈহাটী স্টেশনে নজরুল স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, নজরুল স্মৃতিবিজড়িত গ্রেস কটেজে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন, দার্জিলিং-এ নজরুল স্মৃতিকে ফিরে দেখা, রাঁচিতে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব সাইক্রিয়াটিতে (সিআইপি) নজরুল স্মরণে অনুষ্ঠান - এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নবদ্বীপে নজরুল স্মৃতিকে সবার সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই ছায়ানট শ্রী শ্রী রাধামদনমোহন জিউর মন্দিরে নজরুল স্মৃতিফলক স্থাপন করে।
ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিকের পরিচালনায় নজরুলের জীবন ও সৃষ্টি সম্পর্কিত ১৩টি অডিও অ্যালবাম তৈরি করেছে ছায়ানট।
নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার ওপর একটি ৫৫ মিনিটের তথ্যচিত্র তৈরি করেছে এই সংস্থা।
এভাবেই নজরুলপ্রেমীদের সঙ্গে নিয়ে ছায়ানটের দীর্ঘ ১৭ বছরের যাত্রা। গত আগস্ট মাসে এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসবের সঙ্গে যৌথভাবে ছায়ানট (কলকাতা) নজরুল কুইজের আয়োজন করে।
শব্দবাজি ছাড়াও ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করে তাপস চৌধুরীর পরিচালনায় বৈখরীর শিশুশিল্পীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সোমঋতার পরিচালনায় নজরুলের লেখা হিন্দি গান পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা।
নজরুল কবিতা পাঠে ছিলেন সুকন্যা রায়, দেবযানী বিশ্বাস, তিস্তা দে, ইন্দ্রানী লাহিড়ী, শাশ্বতী ঘোষ, সিন্ধুজা গাঙ্গুলী, আর্য্যদ্যুতি ঘোষ, অর্ঘদ্যুতি ঘোষ।
অমিয়/