
অনবদ্য সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে দুইশ বছর পরও অমর হয়ে আছেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। প্রয়াণের দেড়শ বছর পর এখনো তিনি প্রাসঙ্গিক। তার জন্মস্থান যশোরের সাগরদাঁড়ি এখন তীর্থভূমি। মহাকবির ২০১তম জন্মদিন উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে এখন লাখো প্রাণের উচ্ছ্বাস।
গত ২৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া স্মরণানুষ্ঠান ও সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা ঘিরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুপল্লী। প্রতিদিন দেশবরণ্যে কবি, সাহিত্যিকদের আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মেলার বাহারি আয়োজনে উৎসবপল্লীতে রূপ নিয়েছে কবির জন্মস্থান।
মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাকবির পুণ্যভূমি সাগরদাঁড়িতে লাখো প্রাণের উচ্ছ্বাস। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলা ও স্মরণোৎসবে যোগ দিচ্ছেন হাজারও মানুষ। নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, মোটরসাইকেল ও কার রেসের মতো আয়োজনকে ঘিরে মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে।
সেই সঙ্গে মেলার অন্যতম অনুষঙ্গ হরেক রকমের মিষ্টি, প্রসাধনসামগ্রী, খেলনা ও নিত্যপণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা পছন্দের পণ্য কিনছেন। উপভোগ করছেন বিনোদন। এ ছাড়াও মহাকবির বাড়ি ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। স্মৃতিচিহ্নি ও নানা স্মরণিকা থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে জানার সুযোগ পাচ্ছে নতুন প্রজন্মও।
খেলনার স্টলের মালিক ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার রাশেদ শেখ বলেন, ‘২০ বছর ধরে মেলায় দোকান দিচ্ছি। এবারও এসেছি। মেলার জায়গা বরাদ্দ পেতে বেশি টাকা গুনতে হয়। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। আশা করছি আরও ভালো হবে।’
আরেক দোকানের মালিক শরিফ মোল্লা বলেন, ‘মেলায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর বেশি লোক সমাগম হচ্ছে। আশা করছি এবার ভালো ব্যবসা হবে।’
সাতক্ষীরা থেকে আসা আসমা খাতুন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কবির বাড়ি ঘুরতে এসেছি। তার নানা স্মৃতি ও স্মারক দেখছি। তার কবিতার বই পড়েছি। এখানে এসে আরও বিস্তারিত জানতে পারছি। এর সঙ্গে মেলার আয়োজন রয়েছে। সবমিলিয়ে খুবই ভালো লাগছে।’
আরেক দর্শনার্থী জেলা শহরের শাহরিন সুলতানা নিশি বলেন, ‘আধুনিক কবিতার জনক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার স্মরণে জন্মভূমিতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। মধুপল্লীরও উন্নয়ন হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’
রাকিবুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘পরিবারের লোকজন নিয়ে মেলায় এসেছি। শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন রাইডে চড়েছি। খুবই মজা করলাম। এখন কেনাকাটা করছি।’
এ ছাড়াও মেলায় জুলাই বিপ্লবের গৌরবময় চিত্র তুলে ধরে একটি কর্নার করা হয়েছে। সেখানে জায়গা পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের বীর শহিদদের গৌরবগাঁথা। স্মরণ করা হয়েছে বিপ্লবে শহিদ আবু সাঈদসহ নিহত ও আহতদের। জুলাই বিপ্লবে নিহত যশোরের কেশবপুরের ভালুকঘরের তৌহিদুর রহমানের ছবি ও সংক্ষিপ্ত সংগ্রামের ইতিহাস জায়গা পেয়েছে এ কর্নারে।
৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। বর্ণনা করা হয়েছে তার গৌরবগাঁথা। আন্দোলনে কেশবপুর ও যশোরের স্থিরচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় আন্দোলনের সেইসব দিনগুলো ফুটে উঠেছে আলোকচিত্রে। জুলাই বিপ্লব কর্নারে এসে দর্শনার্থীরা যেন স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের গভীরচিত্তে স্মরণ করছেন।
সাগরদাঁড়ি গ্রামের শামসুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে সাগরদাঁড়ি মিউজিয়ামে কাজ করছি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে জানানোর জন্যই এ মিউজিয়াম চালু আছে। কবির লেখা বই, স্মরণিকা ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে তাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরছি। বিশেষ করে যারা মধুসূদনকে নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের আমরা সহযোগিতা করছি।’
মেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সপ্তাহব্যাপী মেলা চলছে। কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকা আছে গোটা অঞ্চল। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাকি দিনগুলোও ভালোভাবে শেষ হবে বলে আশাবাদী।’