ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

সিলেটে নাচে-গানে আবিরের রঙে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
সিলেটে নাচে-গানে আবিরের রঙে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ
ছবি : খবরের কাগজ

সিলেটে নাচে-গানে আবিরের রঙে বরণ করা হয় ঋতুরাজ বসন্তকে। 

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ১ ফাল্গুন সকাল ১০টায় সিলেট নগরী চাঁদনীঘাটস্থ সারদা হলের সামনে শিশু-কিশোরদের সংগঠন পাঠশালা এই বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘রঙের রথে চড়ে এলো ঋতুরাজ’ স্লোগানে বসন্ত ঋতুকে বরণ করে নেয় পাঠশালার শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকরা। 

সিলেটে প্রতিবছরই ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে নানা আয়োজন। তবে এবার তেমন কোনো আয়োজন হয়নি। খুব স্বল্প পরিসরে শিশু-কিশোরদের সংগঠন পাঠশালা আয়োজন করে বসন্ত বরণের।

‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে’ গানের সঙ্গে পাঠশালার সদস্য জয়িতা জেহেন প্রিয়তীর নাচে শুরু হয় বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান। এর পর বসন্ত বাতাসে সইগো, আহা আজি এ বসন্তে, বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইলো পাগলা, এমন যদি হত আমি পাখির মত... সহ বসন্তের গানের পাশাপাশি গাওয়া হয় দেশাত্মবোধক ও লোকগান। 

এই আয়োজনে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন পাঠশালার শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকরা এবং সিলেটের কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। 

সংগীতশিল্পী বাসবী চৌধুরী লিলির পরিচালনায় গান পরিবেশন করেন ব্রতচারী বিমান তালুকদার, সুমা রায় ঘোষ, রুবি বেগম, যুয়াইরিয়া রাফিদ ইয়াশা, দীপিকা সেন তিথি, সমর্পিতা দে তুন্না, স্বপ্নিল দাস, অপূর্ব গোস্বামী, রোহিত কান্তি কর, সানজা, প্রয়াস, দৃষ্টি রায়। তবলায় ছিল গায়ত্রী রায়। নৃত্য পরিবেশন করে জয়িতা জেহেন প্রিয়তী। 

নাচ গানের পাশাপাশি পাঠশালার সদস্য ও তাদের অভিভাবকরা আবিরের রঙ একে অপরকে লাগিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। সবাই মিলে খই, মুড়ালি খেয়ে শেষ হয় পাঠশালার বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান।

পাঠশালার পরিচালক নাজমা পারভিন খবরের কাগজকে বলেন, 'আমাদের সংগঠন শিশু-কিশোরদের। তাই পাঠশালা থেকে সব সময় আমাদের জাতীয় দিবসগুলোসহ পহেলা বৈশাখ, বসন্ত বরণ, পিঠা উৎসবসহ নানা ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান করি। এই অনুষ্ঠানগুলোর আগে যখন আমরা মহড়া করি, তখন আমাদের শিশু-কিশোরদের মাঝে এসব বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন জাগে। তখন আমরা তাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি। কারণ আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার এই শিশু-কিশোররা। তাদের মধ্যে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বীজ বুনে দিলে আগামীর বাংলাদেশ হবে সুন্দর ও ভালোবাসার। ঋতুরাজ বসন্ত হলো সুন্দরের, ভালোবাসার। আমরা আমাদের ঐতিহ্য লালন করে সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই।'

শাকিলা ববি/জোবাইদা/

শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রকৃতি ও জনজীবন

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম
শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রকৃতি ও জনজীবন
ছবি: খবরের কাগজ

ঋতুবৈচিত্র্যে স্থান ও কালের চিত্র নিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনে বদলে যায় জীবনের রং। প্রকৃতির সঙ্গে যাপিত জীবনের এই গল্প নিয়ে কথক, মণিপুরী, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও লোকজ নৃত্যের নানা গল্প মঞ্চস্থ হলো রাজধানীর এক মিলনায়তনে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে ‘নৃত্যসুধা’ শিরোনামে নৃত্য সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংগঠন নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্রের প্রধান তামান্না রহমান জানান, আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে এবারের ‘নৃত্যসুধা’ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জস নুভেরের জন্মদিন ২৯ এপ্রিল। এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৮২ সালে ইউনেসকো ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৫ সাল থেকে।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। শুরুতে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নৃত্য প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী তামান্না রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব’ গানের সঙ্গে মণিপুরী নৃত্যে তিনি চিত্রিত করেন শিল্পীর প্রতিবাদ।

পরে দলীয় পরিবেশনার পর্বে তামান্না রহমান ও তার দল মঞ্চায়ন করেন ‘রোমান গিটার’। এই প্রযোজনাটি ব্রুনো চেরুবিনি, এলডো ডি লাহাবো রচিত ইতালির লোকজ সংগীতের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। নৃত্য দলটি পরে হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জের ‘হুলা’ নৃত্যও পরিবেশন করে।

রাগ মালকোষ ও তাল দ্রুত তিন তালে কথকে ‘তারানা’ পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল। জাপানের বসন্তের রূপবৈচিত্র্য নিয়ে জনপ্রিয় লোকসংগীত অবলম্বনে একটি নৃত্যও মঞ্চস্থ করে তারা। পরে জার্মানির লোকনৃত্য ‘থুরিংগিয়ান’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তারা শ্রমিকের বিনোদন পর্বের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেন।

রাগ নটভৈরবী ও তাল আদিতে ভরতনাট্যমে ‘তিল্লানা’ পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন খান ও তার দল। অভিনয়-নির্ভর এই নৃত্য প্রযোজনার পরে তারা পরিবেশন করেন ‘অ্যারাবিয়ান ড্যান্স’।

ওড়িশি নৃত্যে ‘মেঘপল্লবী’ পরিবেশনায় মঞ্চে আসেন প্রমা অবন্তী। পরে তার দল দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পাখা নৃত্য ‘বুচাইচুম’ পরিবেশন করেন।

নৃত্যের মুদ্রায় নেপালের শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন স্থান-কালের ঐতিহ্য। একইভাবে ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবি জনগোষ্ঠীর ‘ভাঙরা’ নাচে ফুটে ওঠে লোকজীবনের নানা অধ্যায়। প্রতিবেশী দুই দেশের দুই জনপ্রিয় ধারার নৃত্য পরিবেশন করে শাওন খান ও তার সহশিল্পীরা। নৃত্য পরিচালনা করেন কবিরুল ইসলাম রতন।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়্যাং হুই ও তার দল চীনের ঐতিহ্যবাহী এবং সমকালীন নৃত্য পরিবেশন করেন।

এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান, নৃত্যশিল্পী সেলিনা হক এবং সরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন।

স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর সৃষ্টির ভুবন

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর সৃষ্টির ভুবন
গৌতম রায়

বাংলা কথাসাহিত্যে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এক বিস্ময়। গত শতকের নয়ের দশক থেকে যখন আমরা তার রচিত কথাসাহিত্য পড়তে শুরু করি, তার আগে তাকে মূলত আমরা জানতাম একজন কবি হিসেবে। বহু পত্রপত্রিকায় স্মরণজিতের কবিতা আমরা পড়েছি। মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়েছি। পড়ে মন ভালো হয়েছে। দুঃখের তিমিরের উজানে বওয়া এক ফল্গুধারা মনে হয়েছে তার কবিতা।

মুগ্ধচিত্তে যখন তার ছোটগল্প এবং উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম। তার গদ্য পড়ার প্রথম দিকেই আমরা ভেবেছিলাম, বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে একটা নতুন ধারার সংযোজন হতে চলেছে। আমাদের সেই প্রত্যাশা আজ অবধি পূরণ করে চলেছেন স্মরণজিৎ। সময়োচিত বিন্যাসে সময়কে ধরার এক অদ্ভুত জাদুকাঠি লুকিয়ে আছে তার কলমে।

গত শতকের নয়ের দশকে স্মরণজিতের লেখা যখন আমরা প্রথম পড়ি, তখনো সময়ের বদলকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের ভ্রুকুটি বেশ বড় রকমেরই ছিল। সাতের দশক বা আটের দশকেরও যে বাঙালি সমাজের প্রেম, বিশেষ করে শহুরে মানুষজনের প্রেম, সেখানে সমাজের ভাঙাগড়ার এক অদ্ভুত বিন্যাস ছিল। যে বাঙালিসমাজ নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক ঘূর্ণাবর্তের মধ্যদিয়ে প্রেমের জয়গান গাইছে, কিন্তু সেই জয়গান গাওয়ার জন্য কুশীলবদের যে সংগ্রাম বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠা প্রেম বা শরীর-  এসব নিয়ে লিখতে গেলে সমাজ তখন নাক শিটকোচ্ছে। লেখককে দূর দূর করেছে। আদালত পর্যন্ত টানাটানি হয়েছে। বুদ্ধদেব বসু থেকে সমরেশ বসু- এই সময়কালটাও আমরা দেখেছি।

তাই যখন নয়ের দশকের গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক অদল-বদলের সমসাময়িকতায় আমরা স্মরণজিৎতের লেখা পাচ্ছি, যে খোলা হাওয়া স্পন্দন তার লেখার মধ্যদিয়ে আমাদের মনের গহিন কুঠুরিকে আনন্দে মাতাচ্ছে, তা যেন সত্যিই এক অভিনব। তখন মনে হচ্ছে; সময়ের বদলকে যদি লেখক ধরতে না পারেন, তাহলে তো সেই চার্লস ডিকেন্সে সময়ের বর্ণনার প্রেক্ষিত, লেখায় অনুল্লিখিতই থেকে যাবে।

সময়কে ধরতে পারাই তো লেখকের সব থেকে বড় মুনশিয়ানা। আর এই মুনশিয়ানা প্রকাশের ক্ষেত্রে সময়ে অবস্থান করে, সময়ের কুশীলবদের যদি উপলব্ধিতে লেখক না আনতে পারেন- তবে সেই লেখার মধ্যে ‘সময়’ নামক মহাকালটি আদৌ ধরা দেয় না। সময়ের প্রেক্ষিত ঘিরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন ‘সেই সময়’ বা ‘প্রথম আলো’র মতো মহাকাব্য রচনা করছেন, তখন তো পড়তে পড়তে আজও আমাদের মনে হয় লেখক বোধ হয় সেই সময়কালে অবস্থান করা কোনো ব্যক্তিত্ব।

আবার যখন ‘ছিন্নবাধা’ থেকে ‘যুগ যুগ জীয়ে’ হয়ে ‘প্রজাপতি’, ‘পাতক’, ‘বিবর’ রচনা করছেন সমরেশ বসু, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদের মনে হয় যেন স্বকালে অবস্থান করেই সেই সময়কে সাহিত্যের প্রতিবিম্বে বিম্বিত করছেন লেখক।

স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

স্মরণজিৎ ভাবীকাল বা অতীতকাল ঘিরে খুব লেখেন না। তার লেখায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার নিজের সময়টা নানা বর্ণিল রূপ নিয়ে ফুটে ওঠে। যেখানে দুঃখ আছে। যন্ত্রণা আছে। কষ্ট আছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে আছে এক অপার আনন্দ। দুঃখের সাম্রাজ্যই যে মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়, আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়া- সেটাই হলো দুঃখকে অতিক্রম করার মহৌষধ- স্মরণজিৎ তার প্রতিটি লেখাতেই যেন নিত্যনতুন করে সেই বার্তাই আমাদের সামনে তুলে ধরছেন। সে বার্তাটি যেমন কিশোর, তরুণ, সদ্য যুবকদেরও উদ্ভাসিত করছে। ঠিক তেমনিই যৌবন উপান্তে এসে কিংবা প্রৌঢ়ত্বে ভাসতে ভাসতে একজন মানুষ, নিজেকে কান্না-হাসির দোল দোলানোর মধ্যদিয়ে নতুন করে উপলব্ধি করবেন, জীবনযন্ত্রণাকে বইয়ে যাওয়ার মধ্যে ‘হতাশা’ এই শব্দটির কোনো জায়গা নেই। এই বোধ থেকেই যেন স্মরণজিৎ তার সৃষ্টির পাল তুলে দিয়েছেন।

নতুন প্রজন্মের যেন হৃদস্পন্দন উপলব্ধি করতে পারেন স্মরণজিৎ। তার লেখার প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে সদর এবং মফস্বলের এক অদ্ভুত শব্দ যেন আমরা শুনতে পাই। শাকিন কলকাতা, মহানগরের একদম প্রাণকেন্দ্রে থাকা একজন কিশোর-তরুণ-যুবক, তার ভাবনার খেয়াতরী, আবার শহরতলির সমবয়স্ক মানুষের আঙ্গিকের সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য। আবার যেন একটি দূর কোন দিকশূন্যপুরের এক শ্যামলা কিশোরীর মনের কথা। বেঁচে থাকার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ের মধ্যে সব সময় একটা প্রাণস্পন্দন। কোনো হতাশা নয়। হতাশাকে অতিক্রম করতে পারার এক অদ্ভুত মৃতসঞ্জীবনী সুধা- এটাই হলো স্মরণজিৎতের লেখার একটা নির্যাস।

যারা বেঁচে থাকার আনন্দে আনন্দ পান না- তাদের কারও কারও কাছে এই বেঁচে থাকার আনন্দের মধ্যে এক ধরনের পুনরুক্তির ধারণা মালুম হয়। আসলে বেঁচে থাকাটাই যে নিত্যনতুন আনন্দের আনাগোনার মধ্যদিয়ে, দিনের পরে দিনকে কাটিয়ে দেওয়া- এ উপলব্ধি যারা করতে পারেন না, তাদের মনে হয় সময়ের কথকথা হলো থোরবরি খাড়া। তারা সময়কে কল্পনার জগতে রঞ্জিত করে, সময়ের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে, এক ধরনের কৌতুকে করুণায় অবসর বিনোদনের উপকরণ হিসেবে নিজেকে দেখতে ভালোবাসেন। তাই তাদের কাছে মনে হয় স্মরণজিৎতের লেখায় রিপিটেশন।

আসলে জীবনের রিপিটেশনকে বোঝার মতো মন যে সেই মানুষগুলোর থাকে না। যে সত্তর-উত্তীর্ণ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা, শচীনকর্তার গান- ‘তুমি এসেছিলে পরশু, কাল কেন আসনি, তুমি কি আমায় বন্ধু, কাল ভালোবাসনি’, শুনে আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় কোমর দোলাতে না পারলেও, মনটা দোলাতে পারেন, তিনি কিন্তু জীবনের রূপ-রস-গন্ধকে যথার্থভাবে অনুভব করতে পারেন। উপলব্ধি করতে পারেন।

এভাবেই আমরা স্মরণজিতের সামগ্রিক সৃষ্টিকে বর্ণনা করতে পারি। এখানেই স্মরণজিতের লেখকসত্তার সব থেকে বড় সাফল্য। টিনএজারদের কাছেও যেমন তার লেখা এক ধরনের মনের প্রাণের জিনিস হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনিই আবার জীবন উপান্তে চলে আসা একজন মানুষের কাছেও স্মরণজিৎতের লেখা হয়ে ওঠে মনের আনন্দ, প্রাণের আরাম।

স্মরণজিৎতের সৃষ্টির আরেকটি বড় উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শব্দের প্রয়োগ। সমসাময়িকতার সঙ্গে এত সাযুজ্যপূর্ণ শব্দ তার লেখায় গাঁথা হয় যে, লেখা পড়লে মনে হয় না আলাদা করে আমরা একটা কিছু দেখছি। আলাদা করে আমরা একটা কিছু পড়ছি। আমাদের মনে হয় যেন, চলমান জীবনের মধ্যদিয়ে একটি আলেখ্য একেবারে যেন স্লাইডের পর স্লাইড হিসেবে লেখক আমাদের সামনে তুলে ধরছেন। যে ভাষায় আমরা কথা বলি, যে ভাষায় আমরা ঝগড়া করি, যে ভাষায় আমরা স্বপ্ন দেখি, যে ভাষায় আমরা কাঁদি, আনন্দ করি, বিষণ্ন হই, রেগে যাই- তার প্রতিটির এত যথার্থ প্রতিফলন- এটা সমসাময়িক বাংলা ভাষায় কথাসাহিত্যের চর্চার ক্ষেত্রে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী একটি নতুন ধারা সংযোজন করেছেন, একথা বললে মনে হয় না খুব ভুল হবে।

সমসাময়িকতাকে ধরতে পারাই তো একজন লেখকের সব থেকে বড় কৃতিত্ব। আর এ কৃতিত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালের বাংলা সাহিত্যের কথাকারদের মধ্যে স্মরণজিৎ যেভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, তা এক কথায় বিশেষ রকমের উল্লেখের দাবি রাখে। স্মরণজিৎ এপার বাংলায় তার নিজের সমসাময়িক কিছু লেখকের মতো তত্ত্বনির্ভর, জীবনবিমুখ, অভিধান-নির্ভর শব্দাবলির ভারে আকীর্ণ সাহিত্য সৃষ্টি করেন না। নিজেকে পণ্ডিত হিসেবে দেখানোর কোনো মন-মানসিকতা স্মরণজিৎতের মধ্যে নেই। তাই তেমন দৃষ্টিভঙ্গি তিনি কখনোই নিজের সৃষ্টির মধ্যে জোর করে চাপিয়ে দেন না। এই যে বৈশিষ্ট্যটা স্মরণজিৎতের লেখার মধ্যদিয়ে ফুটে ওঠে, এটা এপার বাংলায়, নয়ের দশকের লেখক বা যাদের জন্ম সাতের দশকে বা পরবর্তী সময়ে, তাদের প্রায় সবার মধ্যেই দুর্লভ।

এখানেই স্মরণজিৎ একটা বিশেষ ধরনের ব্যতিক্রম। নিজেকে বা নিজের সৃষ্টিকে অহেতুক বিতর্কিত করে তোলে, বইয়ের বিক্রি বাড়ানো বা টিআরপি বাড়ানোর সস্তা পথে স্মরণজিৎ কখনো হাঁটেন না। আর সেই কারণেই হয়তো সমসাময়িক কারও কারও তিনি চক্ষুশূল, তা সত্য! যে কথা বারবার বলতে হয়- সাম্প্রতিককালের বাংলা কথাসাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী ধারার জনক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। যে ব্যতিক্রমী ধারার সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- শত দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত জীবন যে মৃত্যুর থেকেও অনেক অনেক বড়, বেঁচে থাকা যে হতাশার থেকে অনেক অনেক ধ্রুব সত্য- তা যেন একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে স্মরণজিৎতের সৃষ্টির মধ্যে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গল্পকার
[email protected]

হুমায়ুন আজাদের ৭৮তম জন্মদিন

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
হুমায়ুন আজাদের ৭৮তম জন্মদিন
হুমায়ুন আজাদ

কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ৭৮তম জন্মদিন আজ ২৮ এপ্রিল। ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি বিক্রমপুরের (এখন মুন্সীগঞ্জ জেলা) কামারগাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে চাঁচাছোলা বক্তব্যের জন্য আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন বোদ্ধামহলে। 

৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোর সাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধ সংকলন মিলিয়ে ৬০টির অধিক বই রচনা করে গেছেন তিনি। ১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ ‘নারী’ প্রকাশের পর তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। এ ছাড়া তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি পাঠকমহলে আলোড়ন তুলেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে ‘হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ’ নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোর সাহিত্য ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ এবং ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। 

হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য পল্লিপ্রেম, নর-নারীর প্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করতেন তিনি। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। 

২০০৩ সালে ইত্তেফাক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি ছাপা হয়। ২০০৪ সালে একুশে বইমেলায় বই আকারে প্রকাশিত হয়। এতে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয় এই উপন্যাসে। এর জেরে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতক দল তাকে আক্রমণ করে। 

২০০৪ সালের ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান হুমায়ুন আজাদ। ওই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানির বাসায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার আর নেই

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৩ এএম
নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার আর নেই
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার। ছবি: সংগৃহীত

‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ কবিতার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) জার্মানির স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে বার্লিনের একটি রিহ্যাবিলিটেশন হোমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। 

লন্ডন প্রবাসী অভিনেতা স্বাধীন খসরু গণমাধ্যমকে বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করেন।

জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন কবি। এ কারণে বেশ কয়েক মাস জার্মানির বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার মরদেহ বার্লিনেই দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। তবে কোথায় এবং কখন হবে তা কবির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং বার্লিনে তার সব ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর দাউদ হায়দার বার্লিনে তার ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে নয়েকোলনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে তাকে ‘কৃত্রিম কোমায়’ রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ কবিতার জন্য ১৯৭৩ সালে কবিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ১৯৭৪ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় জেল থেকে মুক্তি দিয়ে পরদিন কলকাতাগামী একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাকে তুলে দেওয়া হয়। তারপর ভারত সরকারও তাকে বহিষ্কার করলে নোবেল লরিয়েট জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের বিশেষ চেষ্টায় ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে আশ্রয় নেন দাউদ হায়দার।

দাউদ হায়দারের জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনায়। সত্তর দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি দাউদ হায়দারের কোনো এক কবিতাকে ‘দ্য বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া’ সম্মানে ভূষিত করে। সর্বশেষ তি‌নি বাংলা ট্রিবিউনে নিয়‌মিত কলাম লিখতেন।

তিনি বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি এবং সত্তর দশকের অন‌্যতম প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত। তার একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’।

মেহেদী/অমিয়/

আনন্দ পুরস্কার পেলেন লেখক স্মরণজিত চক্রবর্তী

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
আনন্দ পুরস্কার পেলেন লেখক স্মরণজিত চক্রবর্তী
স্মরণজিত চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

আনন্দ পুরস্কার পেলেন জনপ্রিয় লেখক স্মরণজিত চক্রবর্তী। ‘শূন্য পথের মল্লিকা’ উপন্যাসের জন্য তিনি এ পুরস্কারে ভূষিত হন। 

শনিবার (২৬ এপ্রিল) কলকাতায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

১৪৩১ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কারের বিচারক ছিলেন সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী, অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার, শিল্পী ও প্রাবন্ধিক সুশোভন অধিকারী, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল এবং দেশ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক লেখক হর্ষ দত্ত।

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের এই উল্লেখযোগ্য লেখকের লেখালিখি কবিতা দিয়ে শুরু করলেও তার মূল জায়গা কথাসাহিত্য।

স্মরণজিতের লেখালিখি শুরু গত শতকের শেষের দিকে। উপন্যাস ‘পাল্টা হাওয়া’ যখন দেশ-পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছিল তখন থেকেই পাঠকের মনে স্থান করে নিতে থাকেন তিনি।

সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী, অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার, প্রাবন্ধিক সুশোভন অধিকারী, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল এবং লেখক হর্ষ দত্ত। (বাঁ থেকে)

বিশ্বায়ন যখন বাঙালির মূল্যবোধ, সামাজিক কাঠামো এমনকী প্রেমের ব্যাকরণ বদলে দিয়েছে ঠিক তখনই আবির্ভাব স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর। মোবাইল, ইন্টারনেটের ভিড়ে অ্যালবাট্রসের মতো ডানা ছড়িয়েছেন তিনি। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেখানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল সেই আধিপত্যকে ঠেলে সাহিত্যকে সামনে তুলে ধরার জন্য দরকার ছিল এক নতুন ভাষা, নতুন ভঙ্গি, নতুন দেখার চোখ। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীই সেই লেখক, যিনি প্রথম এই সময়কে যথাযথ ভাবে বাংলা সাহিত্যে নিয়ে এসেছেন।

পুরস্কার পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আশাতীত পাওয়া। আশাতীত পাওয়ার এক স্বতন্ত্র আনন্দ থাকে। আনন্দ পুরস্কার সেই আনন্দ এনে দিয়েছে আমায়। আনন্দবাজার সংস্থা ও আনন্দ পুরস্কার বিচারকমণ্ডলীর কাছে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

তার উপন্যাস শূন্য পথের মল্লিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। আইডিয়া না ঘটনা, এই উপন্যাসের মল্লিকার উৎসমুখ কোনটি? এমন প্রশ্নে স্মরণজিৎ বলেন, ‘দুটোই। এই উপন্যাস লেখা হয়েছিল কোভিডের সময়। লকডাউন তখন কিছুটা উঠেছে, কিছুটা ওঠেনি। ফার্স্ট ওয়েভ শেষ হয়েছে, সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হচ্ছে। কোভিড, লকডাউন, মানুষের অনিশ্চিত জীবন, অকস্মাৎ পাল্টে যাওয়া জীবনে সবের ভিতর দিয়ে যেতে-যেতে আমার মনে হচ্ছিল এমন একটি কাহিনি লিখব যার সমাপ্তি ঘটবে বিশ্বজোড়া লকডাউন ঘোষণার সময়।’ 

‘শূন্য পথের মল্লিকা উপন্যাসের চারটি ভাগ। আমি প্রথমে লিখতে শুরু করেছিলাম যা এখন তৃতীয় ভাগ। লিখতে-লিখতে মনে হলো এর একটা আগের পর্ব থাকলে ভাল হয়। লিখলাম। সেটা লিখতে গিয়ে মনে হলো, তারও আগে একটা পর্ব দরকার। তাও লিখলাম। এরপর ফের তৃতীয় পর্বে ঢুকে, প্রথম দুই পর্বের সঙ্গে সেটাকে মিলিয়ে লিখলাম। শেষে, একটা কনক্লুডিং এপিসোডও দিলাম’, বলেন স্মরণজিৎ।

স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন,১৯৭৬ কলকাতায়। তিনি নঙ্গী হাইস্কুল থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন। কিন্তু কিছুদিন পর পড়া ছেড়ে দেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হন। সূত্র: আনন্দবাজার

অমিয়/