ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন ১০ গুণী

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন ১০ গুণী
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত ১০জন

চাঁদপুরে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন দেশের ১০ গুণী ব্যক্তি।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন চর্যাপদ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক অ্যাডভোকেট রফিকুজ্জামান রণি।

এ উপলক্ষে দুপুর ১২টার দিকে চাঁদপুর শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির সভাপতি আয়েশা আক্তার রুপা। 

এতে বক্তব্য দেন পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে গঠিত উপকমিটির সদস্য সচিব শিউলী মজুমদার, চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির সহকারী পরিচালক ফেরারী প্রিন্স, নির্বাহী পরিচালক আইরিন সুলতানা লিমা, প্রচার ও প্রকাশনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম এবং নির্বাহী সদস্য কামরুন্নাহার বিউটি।

রফিকুজ্জামান রণি বলেন, আমরা দুই বছরের পুরস্কার এক সঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার-২০২৩-এর জন্য মনোনীত করা হয়েছে কবিতায় আশরাফ আহমদ, কথাসাহিত্যে নাহিদা আশরাফী, গবেষণা সাহিত্যে হাসান আলী, সংগীতে শহীদুল্লাহ ফরায়জী ও চারুকলায় মোহাম্মদ আজাদ হোসেনকে। এ ছাড়া ২০২৪-এর জন্য মনোনীতরা হলেন কবিতায় হোসেন দেলওয়ার, সংগীতে মিল্টন খন্দকার, শিশুসাহিত্যে হাসনাত আমজাদ, সংগঠনে গৌরাঙ্গ সাহা, বিপ্লব ও গণমিছিলের কণ্ঠস্বর বিভাগে রকিব লিখন। 

সংগঠনের সভাপতি আয়শা আক্তার রুপা বলেন, ‘এ মাসের মধ্যেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। 

২০১৯ সাল থেকে চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি নিয়মিত পুরস্কার দিয়ে আসছে। এর আগে জামসেদ ওয়াজেদ, মজিদ মাহমুদ, হামিদ কায়সার, তপন বাগচী, মনি হায়দার, বীরেন মুখার্জী, শাহেদ কায়েস, মিলু শামস, স্বরূপ রতন দত্ত, ফারহানা রহমান, রকিবুল হাসান, মাসুদুল হক, ফারুক সুমন, পারভীন সুলতানা, হেনরী স্বপন, নিলুফা আক্তার, মামুন রশীদ, প্রত্যয় হামিদ, সৈয়দ শিপুল, রহমান হাবিবসহ অনেক গুণীজনের হাতে উঠেছে এ পুরস্কার।

আমার জীবনটাই যুদ্ধের: জন্মদিনে হাশেম খান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
আমার জীবনটাই যুদ্ধের: জন্মদিনে হাশেম খান
হাশেম খান

বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খানের ৮৪তম জন্মদিন আজ ১৬ এপ্রিল। ১৯৪১ সালের এ দিনে তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

জন্মদিনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি গত ৫ বছর আগে আমার পরিবার পরিজন আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলেছিলাম, কেউ যেন আমার জন্মদিন উদযাপন না করেন। জন্মদিন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি এটা উদযাপন করি না। কারণ বাবা-মাও আমার জন্মদিন উদযাপন করতেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশাখের ৩ তারিখ জন্মেছিলাম আমি। মায়ের যখন প্রসব বেদনা ওঠে তখন বাইরে প্রচণ্ড কালবৈশাখী বইছিল। যখন আমি ভূমিষ্ঠ হলাম, তখন ঝড় থেমে গেল। ছোটবেলা থেকেই কত ঝড়ঝাপ্টার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে উঠলাম। সারাটা জীবন আমি যুদ্ধই করে গেলাম। যে যুদ্ধ নিজের সঙ্গে, অন্যের সঙ্গে।’ 

ষাটের দশক থেকে শিল্পচর্চা ও সংস্কৃতির বিকাশে হাশেম খান বাংলাদেশের অগ্রজ ব্যক্তিত্ব। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চারুকলা অনুষদে পড়িয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ইমেরিটাস অধ্যাপকের পদেও তিনি আসীন হয়েছেন। 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে রাজপথ যখন উত্তাল, হাশেম খান তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। সেই কিশোর বয়সে তিনি চাঁদপুর শহরে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ছয়-দফার লোগো তৈরি করেছিলেন। তৎকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোটেল ইডেনের সামনে যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন, তার নকশাও করেছিলেন হাশেম খান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে তিনি আঁকেন ঐতিহাসিক পোস্টার ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’। 

বাংলাদেশের সংবিধান গ্রন্থের প্রতি পৃষ্ঠায় যে নকশা খচিত রয়েছে, তাতে প্রধান শিল্পী হিসেবে তিনি কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রের তিনটি অ্যালবাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শিল্পকলা সংগ্রহ অ্যালবামের তিনি যুগ্ম সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ঢাকা জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। 

হাশেম খান ঢাকা নগর জাদুঘরের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত স্বাধীনতা স্তম্ভের জুরিবোর্ড ও বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

শিল্পকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য হাশেম খান ১৯৯২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০১১ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। 

২০২৪ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহায়তায় হাশেম খানের সারা জীবনের নানা চিত্রকর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬-২০২৩’ শীর্ষক অ্যালবাম। 

বর্ষবরণে ডিএসসিসিতে নানা আয়োজন

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
বর্ষবরণে ডিএসসিসিতে নানা আয়োজন
ছবি: খবরের কাগজ

তুমুল হর্ষে, আড়ম্বরে নববর্ষ বরণ করল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাংলা ভাষাভাষী ও বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা এ আয়োজনে অংশ নেন। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে নগরভবন প্রাঙ্গণে বৈশাখী বর্ণাঢ্য র‍্যালি, পান্তা ইলিশ উৎসব এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রধান অতিথি হিসেবে বৈশাখী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।  

এদিন সকাল ৮ টায় নগর ভবন থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালি বের হয়ে গোলাপশাহ মাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় নগর ভবনে এসে শেষ হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন মনোজ্ঞ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন ডিএসসিসি পরিচালিত  বিভিন্ন সংগীত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী প্রশিক্ষকরা। 

রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, আজকের এই আনন্দ র‍্যালিতে আমরা যেমন ধর্ম, বর্ণ,পদবি নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছি, ঠিক তেমনিভাবে সবাই মিলে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। 

পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দশটি প্রশাসনিক অঞ্চলের ঐতিহ্য উপজীব্য করে নির্মিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন এবং পান্তা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। উৎসবে স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.জিল্লুর রহমান, সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা উপস্থিত ছিলেন।

জয়ন্ত/মেহেদী/ 

নববর্ষ বার্তা দেয় নবপ্রত্যয়ের: অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
নববর্ষ বার্তা দেয় নবপ্রত্যয়ের: অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
ছবি: খবরের কাগজ

জীর্ণ পুরাতনের পথ ছেড়ে এসে জাতীয় জীবনে শুভবোধ সঞ্চারের পথ অন্বেষণেই নববর্ষের সার্থকতা খুঁজে পান অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। শান্তি, সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেশ গঠনের কথা বলেছেন তিনি।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষবরণ সংগীত, নববর্ষ বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  এ আয়োজনে সভাপ্রধান ছিলেন একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক। 

তিনি  বলেন, নববর্ষ আমাদের নবপ্রত্যয়ে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বার্তা দেয়। জীর্ণ পুরাতনের পথ পরিহার করে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে শুভবোধ সঞ্চারের কথা বলে। এবারের বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশ ও বিশ্বে বয়ে আনুক শান্তি সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 'জাতিবাদের দ্বন্দ্ব সমাসে বাংলা বর্ষের ধর্ম পরীক্ষা' শীর্ষক নববর্ষ বক্তৃতা দেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আমরা জনগোষ্ঠী হিসেবে ভাগ্যবান যে, আমাদের নিজস্ব একটি নববর্ষ আছে, নিজস্ব একটি বর্ষপঞ্জি আছে। বাংলা নববর্ষ আমাদের ঋতুচক্রের সঙ্গে যেমন সম্পর্কিত তেমনি আমাদের উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গেও সম্পর্কিত। প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গে বৈশাখকে আমরা নানাভাবে আবিষ্কার করে চলি। 

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, উৎসব মূলত তারুণ্যের প্রাণের শক্তিতে বেঁচে থাকে। আর তরুণেরা যুগে যুগে পুরাতনের মধ্যে নতুনকে মেশায় বলেই পুরাতনও বেঁচে থাকে নতুনের মধ্যে।  

সাংস্কৃতিক পর্বে সাঁঝ হিন্দোলের পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে। পরে সংগীত পরিবেশন করেন  সাইদুর রহমান বয়াতী, পিয়াল হাসান, এটিএম আশরাফ হোসেন, আশরাফুজ্জামান, ড. মাহবুবা রহমান, এলাহী মাসুদ, নাসরিন ফেরদৌস চমন, মনিরুল ইসলাম, সাকিব সুলেরী ও আবীর বাঙালি।  

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ছাড়ে বইয়ের আড়ং চলছে।  এখানে এসে স্বল্পমূল্যে মানুষ বই কিনতে পারবেন।

জয়ন্ত/মেহেদী/

আমরা নতুনের জয়গান গাইব: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
আমরা নতুনের জয়গান গাইব: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
ছবি: খবরের কাগজ

বাঙালি যত মত ও পথেই বিশ্বাস করুক না কেন, বাংলা নববর্ষে এসে তারা পুরোপুরি বাঙালি হয়ে ওঠেন। আর সে বাঙালি সত্তার শক্তিতে ভর করেই পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে 'হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ' অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে ভোর ৬টায় যন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। এর পর শিল্পী স্বাতী সরকারের পরিচালনায় সুরের ধারার শিল্পীদের সম্মেলক পরিবেশনায় শুরু হয় এ বৈশাখী আয়োজন।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, 'আমাদের সময়ে উদ্‌যাপন যে খুব আলাদা ছিল তা না। আমাদের সময়ে অনেক কিছু নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু বাঙালির নববর্ষ নিয়ে মতপার্থক্য ছিল, এটা আমি দেখিনি। আমরা এভাবেই পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতাম। '

বাঙালি জাতীয় জীবনে পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, 'অনেক পথ আছে, অনেক মত আছে।অনেক জীবনের বিশ্বাস আছে এখানে। একটা জায়গায় বিশ্বাসের ব্যতিক্রম নেই, সেটা হল নববর্ষ। নববর্ষে আমরা পুরোপুরি বাঙালি হই।' 

বাঙালি সত্তার মাহাত্ম্য নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যে পথেরই হই, যে বিশ্বাসেরই মানুষ হই না কেন, আজ আমরা সবাই বাঙালি হয়ে যাই।  বাঙালিকে যদি তার পায়ে দাঁড়াতে হয় তবে তাকে বাঙালি হয়েই দাঁড়াতে হবে। আমরা যেন চিরদিন বাঙালি হয়েই থাকি।' 

কৈশোরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, 'তখন ঢাকা শহরে মানুষ কম ছিল।আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে একা একা আবৃত্তি করতাম, চলে যেতাম। তখন আমায় কেউ পাগল বলবে কি? সে মানুষই তো ছিল না। রাস্তায় এত কম লোক ছিল। সে স্বাধীনতা নিয়েছি।'

এখন দিন বদলেছে, রাজধানীতে নাগরিক উৎসব মানে লোকে লোকারণ্য। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন,  'এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। শুধু শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।' তবুও নগর জীবনে আজ যে উৎসব তাকে নানা উপচারে বরণ করে নিতে তো হবেই। 

তিনি বলেন, 'নব মানে নতুন, আমরা আজ নতুনের জয়গান গাইব।'

অনুষ্ঠানে হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ' অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা, ফাহিম হোসেন, কিরণ চন্দ্র রায়, প্রিয়াংকা গোপ, অনন্যা আচার্য, শারমিন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশনায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়।

জয়ন্ত/মেহেদী/

সিলেটে বৈশাখের ঐতিহ্য চড়ক পূজা

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ পিএম
সিলেটে বৈশাখের ঐতিহ্য চড়ক পূজা
সিলেটের লাক্কাতুড়া চা-বাগানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর পালন করেন চড়ক পূজা। ছবি: মামুন হোসেন

সবুজ চা বাগান ও উঁচু টিলার মাঝখানে খালি জায়গায় বসানো হয়েছে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার চড়ক গাছ। পিঠে বড়শির গেঁথে এতে ঝুলছেন কেউ। কেউ আবার জ্বলন্ত অঙ্গারে হাঁটছেন। উলুধ্বনি আর ঢাক, কাসর, শাঁখের শব্দে মুখরিত চারপাশ। পাঠকরা অবশ্যই বুঝে গেছেন এখানে চড়ক পূজার বর্ণনা করা হচ্ছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠান হলেও প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের দিন সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানে এই বিচিত্র আয়োজন দেখতে হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের ঢল নামে।

৪৫ বছর যাবত পহেলা বৈশাখের দিন লাক্কাতুরা চা বাগানে এই চড়ক পূজা হয়ে আসছে। লাক্কাতুরা চা বাগান দুর্গা মন্দিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চড়ক পূজা করা হয়। 

মূলত শৈব্য সম্প্রদায় বা শিব উপাসকরা এই পূজা করেন। পূজার নেতৃত্ব দেন একজন গুরু সন্ন্যাসী। তাই প্রতিবছরই পূজার ১৫ দিন আগে গুরু সন্ন্যাসী তার দলবল নিয়ে এসে মন্দিরের আশপাশে অবস্থান নেন। লাক্কাতুরা চা বাগানের চড়ক পূজার জন্য মৌলভীবাজার থেকে গুরু সন্ন্যাসী মতিলাল শব্দকরের নেতৃত্বে ১৩ জন সন্ন্যাসী লাক্কাতুরা চা বাগানে এসেছেন। এই সন্ন্যাসীরা ১৫ দিন নিরামিষ খাবেন। তাদের খাবার জোগাড় করতে হয় বাড়ি বাড়ি ‘মাঙন’ (মাগন) করে। এই সন্ন্যাসী দল চা বাগানে বাড়ি বাড়ি শিব-পার্বতী বা কালী সেজে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে পূজার তহবিল ও নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেন।

লাক্কাতুরা চা বাগানের চড়ক পূজার গুরু সন্ন্যাসী মতিলাল শব্দকরের স্ত্রী স্বপ্না রানী কর খবরের কাগজকে বলেন, ‘চার সন্তান নিয়ে মৌলভীবাজার সরকার বাজার থেকে স্বামীর সঙ্গে এখানে এসেছি। আমি বিয়ের পর এসে শুনেছি আমার শ্বশুর ও তার বাবা চড়ক পূজার নেতৃত্ব দিয়েছেন। বংশ পরম্পরায় আমার স্বামীর পরিবার যুগ যুগ ধরে চড়ক পূজা করছেন।’ 

সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র সংক্রান্তিতে অর্থাৎ বাংলা বছরের শেষ দিনে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা পহেলা বৈশাখের দিনই সনাতন পঞ্জিকায় চৈত্রের শেষদিন। তাই পহেলা বৈশাখেই এই পূজার আনুষ্ঠানিকতা করা হয়। লাক্কাতুরা চাবাগানে চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে পহেলা বৈশাখের দিন মেলার আয়োজনও করা হয়। চা বাগানের মানুষ ছাড়াও শহরের সব ধর্মের মানুষ এই মেলায় আসেন বৈশাখের প্রথম দিনটি উদযাপন করতে।

চড়ক পূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে ‘চড়ক ঘুরানো’। প্রায় ২৫-৩০ ফুট উঁচু সোজা একটি বৃক্ষকে বলা হয় ‘চড়ক গাছ’। সারা বছর এই গাছকে পূজা স্থলে আশপাশের পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে তা ঢাকঢোল পিটিয়ে গাছটি উঠানো হয়। এরপর মাঠে চড়ক গাছটি পুঁতে পূজা আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। গাছের আগায় কাঠের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়। সন্ন্যাসীরা স্নান করে নতুন ধুতি পরে মূল সন্ন্যাসীর কাছে মন্ত্র নেন। মন্ত্র শেষ হলে তাদের পিঠে লোহার বড়শি গেঁথে দেওয়া হয়। এরপর সে অবস্থায় তাকে বেঁধে রাখা কাঠের দুই প্রান্তে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। 

শিবের নাম নিয়ে পিঠে বড়শি গেঁথে সন্ন্যাসীকে শূন্যে চারপাশে ঘুরানো হয়। এ সময় নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তরা তার দিকে ফুল, বাতাসা ছুঁড়ে দেন। একাধিক সন্ন্যাসী এই কাজ করেন। নারীদের উলুধ্বনি দিতে থাকেন। অপরদিকে সন্ন্যাসীরা শিব সতী সেজে নৃত্য করেন। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা বাজিয়ে শিব সতীর বিয়ে সম্পন্ন করেন ভক্তরা।

লাক্কাতুরা চা বাগান দুর্গা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রক্ষা বিজয় ভট্টাচার্য খবরের কাগজকে বলেন, কবে কখন চড়ক পূজার প্রচলন হয় এর সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা প্রথম এই চড়ক পূজার আয়োজন করেন। এরপর থেকে শিব উপাসকরা এই পূজা করে আসছেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে একবার চড়ক পূজা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও কেউ তা মানেনি। সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানে ৪৫ বছর যাবত এই পূজা করা হচ্ছে। এই পূজা নির্দিষ্ট বর্ণ-সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সকল বর্ণ-মতের হিন্দুরা চড়ক পূজায় অংশগ্রহণ করেন। আর পহেলা বৈশাখের দিনে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মানুষজন এসে চড়ক পূজা দেখেন। পূজাকে কেন্দ্র করে এখানে মেলার আয়োজনও হয়। তাই এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও এখন চড়ক পূজা ও মেলা সবার কাছে উৎসবে রূপ নিয়েছে।

অমিয়/