
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্মরত হাবিবুর রহমানের 'মেঘ বালিকার লোচনে জলতরুঙ্গ'র মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার এই মোড়ক উন্মোচন করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম ও শহিদ আবু সাঈদ বইমেলার আহ্বায়ক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।
কথা হারিয়ে গেলেও তার ছোঁয়া রয়ে যায়, তার বাচনভঙ্গি মুগ্ধতা ছড়ায়। এভাবেই মেঘ বালিকার লোচনে জলতরুঙ্গর কাব্যগ্রন্থে কবিতার নানান পঙক্তি ফুটে উঠেছে।
এ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা ও পঙক্তি কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়ে মানব-মানবীর আকুতি-মিনতি, প্রেম-বিরহ, মান-অভিমান শিল্পের তুলিতে চিত্রিত হয়েছে। কখনো কখনো মনের ক্যানভাসে আঁকা ছবি, আবার কখনো মোনালিসা ও পাবলো পিকাসো ক্যানভাসে হারিয়ে গিয়ে কাব্যজগতে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে।
আবার কখনো কোনো কবিতায় কপোত-কপোতীর মিলন ও বিরহের সমীকরণের মধ্যে যথাক্রমে বঁধুয়ার হাতের চা ও রান্নার কৌশল দেখে উপলব্ধি করে নানান দৃশ্য উপমিত হয়েছে। এ কাব্যের রোমান্টিক ও বিয়োগান্তক ছন্দ কোনো বাস্তব ঘটনা বা চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচিত হয়নি। লেখক, কবিরা যেহেতু কথাসাহিত্যিক এবং দার্শনিক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাই কোনো পঙক্তি, শব্দ বা বাক্য কারও জীবনের সঙ্গে মিলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কবিতাকে প্রাঞ্জল, ছন্দ ও শ্রুতিমধুর করার জন্য বিভিন্ন ঘটনাকে কল্পনার জগতে উপলক্ষ করা হয়েছে মাত্র। কাউকে ঠিক কেন্দ্র করে রচিত নয়।
পাঠক বইটি পড়ার সময় কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আসীন করলে সেটা লেখক ও কবির জন্য অনেক প্রাপ্তির বিষয়। কবিতার পাঠকসংখ্যা কম হলেও কবিতা সবার নিকট পছন্দনীয় বটে।
তাই কবিতার প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ অব্যাহত থাকবে। আবৃত্তিকার ও পাঠক এ কবিতার সঙ্গে কণ্ঠ ও সুর মেলাবে বলে মো. হাবিবুর রহমান এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এ কাব্যগ্রন্থের লেখক মো. হাবিবুর রহমান। এ বইটি আইডিয়া প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির দাম ৩০০ টাকা মাত্র। বইটি অমর একুশে বইমেলা, শহিদ আবু সাঈদ বইমেলা এবং রকমারি ডটকম থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এ কাব্যগ্রন্থে মোট ৬৬টি কবিতা রয়েছে।
নব্বই দশক ছিল নানাবিধ কারণে আলোচিত ও সমালোচিত। জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তনের কারণে মানুষের সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক জগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
মো. হাবিবুর রহমান নানান কারণে আলোচিত এ নব্বই দশকের শেষের দিকে ইলিশের শহরখ্যাত চাঁদপুরের মুসলিম পরিবারের সম্ভ্রান্ত মীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মূলত মো. হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং ছদ্মনামেও মসির তুলিতে তার চিন্তার নির্যাস ও সমসাময়িক বিষয় তুলে ধরেন। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্মাতক ও স্মাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে তিনি বেসরকারি, সরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে (স্পীঞ্জার ন্যাচার) রিসার্চ আর্টিকেল ও বইয়ের অনুচ্ছেদ রয়েছে।
দেশে-বিদেশ যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কাতার এবং বাংলাদেশের নামকরা নানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ও বিভিন্ন গ্রন্থে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। গুগল স্কলার ও রিসার্চগেটে তার গবেষণাধর্মী লেখা অধ্যয়ন ও উদ্ধৃত (সাইটেশন) করা হয়।
তার লেখা মূলত জাগোনিউজ২৪ ডটকম, দ্য নিউ ন্যাশন, দ্য এশিয়ান এইজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বার্তা২৪ ডটকম ইত্যাদি জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার লেখায় সমসাময়িক বিষয়াবলি, চিত্তের আকুতি ও মিনতি, বিবিধ টানাপোড়েন, সংকট ও আশার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
তার কাব্যগ্রন্থে ছন্দের মিল, আধুনিক ও জীবনঘনিষ্ঠতার ছোঁয়া, রোমান্টিকতা, আবেগ-অনুভূতির মিশ্রণ ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। তবে কোথায়ও কোথায়ও আবার ছন্দের পতন ঘটলেও গদ্যকাব্যের রূপ অটুট রয়েছে।
তার এ কাব্যগ্রন্থে যথাক্রমে বাসন্তী, দূরে প্রিয়জন, অচেনা মুখ, কাব্য লেখার জওয়াব, অবহেলার প্রতিউত্তর, ভগ্ন হৃদয়, হিমালয় দুহিতার বক্র রেখা, সাড়াদান, আলপনায় প্রতিচ্ছবি, গহীনে প্রস্থান, নীড়ে ফেরা, গহীনের স্পন্দন, আলোর দিশারী, দিশেহারা সারথি, শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি, মহাপ্রলয়ের নীরব দর্শক, কাঞ্চনজঙ্ঘা-মহানন্দার অভিসার, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, পড়ন্ত বেলায় উপলব্ধি, লেখার কৈফিয়ত, ভালোবাসায় গহীনের শব্দমালা, সাক্ষাতে বাহানা, চাঁদনী, দন্ত প্রীতি, প্রযুক্তির ছোঁয়া, প্রভাতে তোমায় দেখি, ভগ্নরশ্মি, প্রীতির গল্প, অনুরাগের চিহ্ন, মেঘ বালিকার লোচনে জলতরঙ্গ, সিঁড়িতে আরোহণ, স্বর-ব্যঞ্জনবৃত্তের কথন, ফেইসবুক, বৃক্ষ-মানব প্রেমের সমীকরণ, জীবনের রহস্যময় পরিধি, জীবনের মুহূর্ত, অপরূপ কেশী বঁধুয়া, গোলাপী পুষ্প, পুষ্পের নিয়তি, পলাশ ফুল, পাহাড়ি দুহিতার পুষ্প প্রীতি, হিমালয় দুহিতা, বিস্ময়কর কাঞ্চনজঙ্ঘা, অগ্রসরমাণ সারথি, বন্ধন, বন্ধুত্ব, স্মৃতির ক্যানভাস, স্পর্শ, বসন্তের ছোঁয়া, আলোকিত মানব, জন্মদিনে শুভেচ্ছা, মহাপ্রয়াণ, নিঃশ্বাসের লোকান্তর, অনিশ্চিত গন্তব্য, সম্পর্কের সমীকরণ, মাটির ঘর, মনের পাখি, স্মৃতির রশ্মি, স্বর -ব্যঞ্জনবর্ণে মানবজীবন, মুগ্ধ বিকেল, মানব পরিচয়, কাঁচের দেয়ালে প্রতিচ্ছবি, প্রযুক্তি ব্যবহারে সংকট, দুর্যোগের ঘনঘটা, স্মৃতি রোমন্থন, এবং জড় পদার্থ নামক কবিতা রয়েছে।
আজম/মেহেদী/