
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’ এর সমাপনী আয়োজনে সভাপতির বক্তব্য দিতে এসে তিনি এই ঘোষণা দেন।
জামিল আহমেদের পদত্যাগের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমিতে ভিড় করতে শুরু করেন নাট্যাঙ্গণের অভিনেতা, অভিনেত্রী, নির্দেশকরা।
মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের পেছনে পড়ে থাকতে হবে, ১০ বার করে ফোন দিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করতে হবে। এরা (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়) তো আমাদের কাজ করতে দেবে না। এভাবে বোধ হয় কাজ করা সম্ভব হয় না।’
এই কথা বলে তিনি মঞ্চে আসীন শিল্পকলা সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে নিজের পদত্যাগপত্র তুলে দেন।
তবে ওয়ারেস হোসেন জানান, পদাধিকারবলে এই পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করতে পারেন না। এটি তিনি আজ শনিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সব সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকেই হবে।
মঞ্চে নাটক শেষ হওয়ার পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী, নাট্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ সময় তিনি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সৈয়দ জামিল আহমেদ অভিযোগ করেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের জন্য শিল্পকলা একাডেমি থেকে অর্থ নিতে চেয়েছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি শিল্পকলা একাডেমিকে তিনি দিতে নারাজি জানান। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজের অনড় অবস্থানের কথা উপদেষ্টাকে জানান জামিল আহমেদ।
এরপর শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে যেতে থাকে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ সচিব পদমর্যাদায় আসীন। শিল্পকলা একাডেমির সচিব ওয়ারেছ হোসেন তার অধীনস্ত কর্মকর্তা হলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সব কর্মকাণ্ড ওয়ারেছকে দিয়েই পরিচালনা করতে চাইছে। এই কর্মকাণ্ডকে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমাকে বাইপাস করার জন্য এখন সব কথা সেক্রেটারিকে দিয়ে বলাবে। সে (ফারুকী) চাইছে শিল্পকলা একাডেমি চলবে তার নির্দেশে। শিল্পকলা একাডেমিতে থাকতে গেলে তার নির্দেশ মেনে চলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমি যে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান তা সে মানে না। শিল্পকলা একাডেমিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভাগ করে রাখতে চায়।’
এ সময় সৈয়দ জামিল আহমেদ জানান, দুই দিন আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় তিনি মোট বাজেটের শূণ্য দশমিক ৫ ভাগ অর্থ এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ চান, টাকার অংকে যা ১৭৫ কোটির টাকার কাছাকাছি। কিন্তু অর্থ বিভাগ তা কেটে ১১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনছে। এ নিয়ে ওই সভায় আপত্তি জানিয়ে এসেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘তারা এমনভাবে টাকা বিতরণ করছে যেন তারা পৈত্রিক সম্পত্তি বিতরণ করছে। আামি বুঝে গেলাম এরা আমাকে কাজ করতে দেবে না। টাকা দেবে না। প্রকল্প কর্মকর্তাকে আটকে রাখবে। নানাভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করবে।’
সৈয়দ জামিল আহমেদ জানান, শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সভার একটি কার্যপত্র (রেজুলেশন) স্বাক্ষর করতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ৫ সপ্তাহ সময় নিয়েছেন।
সৈয়দ জামিল আহমেদকে নাট্যকর্মীরা শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যেতে থাকেন। তখন অনুজপ্রতিম নাট্যকর্মী ও নিজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘কেবল চারটি শর্তে আমি শিল্পকলায় থাকতে রাজি।
(১) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিতে হবে যে তারা শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। এ প্রতিষ্ঠানেক স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা কাজ করতে দেবেন। আমরা আইনগত সমস্যায় পড়লে অবশ্যই তাদের পরামর্শ নেব।
(২) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
(৩) শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা রাখা যাবে না।
(৪) আদিবাসী শব্দ বলার অধিকার দিতে হবে।
এসব প্রসঙ্গ নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিবেদকরা সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বরত অতিরিক্ত সচিব মফিদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি।
শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা সম্মিলিতভাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সৈয়দ জামিল আহমেদকে স্বপদে বহাল রাখতে তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করবেন।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/