
‘দেশে বেশ কিছু ঘটনার বিচার হলেও যশোরের উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বিচার করতে না পারা রাষ্ট্রকাঠামোর দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগেই মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। ২৬ বছর ধরে বিচারহীনতার আবর্তে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। শুরুতেই যদি উদীচী ট্র্যাজেডির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচন করা যেত, তাহলে পরবর্তী ঘটনা হয়তো ঘটত না।’
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ‘এসো প্রতিবাদী, এসো সংগ্রামী, বলো হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’ স্লোগানে যশোরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলার ২৬ বছর উপলক্ষে স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্মরণসভাটির আয়োজন করে যশোর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সংগঠনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় স্মৃতিচারণ করেন ওই বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস। ঘটনার সময় তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের বুলি দিয়ে যারা বছরের পর বছর ক্ষমতায়; তারা বিচার করতে পারেনি। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়; সরকারের পর সরকার যায়, কোনো সরকারই বিচার করতে পারেনি। যেকোনো সরকারই সদিচ্ছা দেখালে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হতো।’
উদীচী যশোর সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু বলেন, ‘উদীচী প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। আর তাই উদীচীর ওপরই নেমে এসেছিল বোমা হামলা। শুধু উদীচী নয়, এর পরবর্তী সময়ে একে একে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপাসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালায় মৌলবাদী অপশক্তি।’ এ মামলার সব ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে অবিলম্বে শিল্পী-কর্মীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
স্মরণসভায় বক্তব্য দেন উদীচী যশোর সংসদের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায়, আজিজুল হক মনি, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সহসভাপতি খন্দকার রজিবুল ইসলাম টিলন।
এর আগে সকালে টাউন হল ময়দানে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিল্পী-কর্মীদের স্মৃতিতে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় উদীচী যশোর সংসদ, জেলা জাসদ, সিপিবি যশোর, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবর্তন যশোর, মুন্সী রইস উদ্দিন সংগীত একাডেমি, চারুপীঠ যশোর, উদীচী যশোর সরকারি এমএম কলেজ, অক্ষর শিশু শিক্ষালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল মাঠে স্মৃতিস্তম্ভে মশাল প্রজ্বালন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে রেখে দেওয়া দুর্বৃত্তদের বোমার। এতে প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা মানুষ।