
ঋতুবৈচিত্র্যে স্থান ও কালের চিত্র নিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনে বদলে যায় জীবনের রং। প্রকৃতির সঙ্গে যাপিত জীবনের এই গল্প নিয়ে কথক, মণিপুরী, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও লোকজ নৃত্যের নানা গল্প মঞ্চস্থ হলো রাজধানীর এক মিলনায়তনে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে ‘নৃত্যসুধা’ শিরোনামে নৃত্য সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংগঠন নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্রের প্রধান তামান্না রহমান জানান, আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে এবারের ‘নৃত্যসুধা’ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জস নুভেরের জন্মদিন ২৯ এপ্রিল। এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৮২ সালে ইউনেসকো ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৫ সাল থেকে।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। শুরুতে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নৃত্য প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী তামান্না রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব’ গানের সঙ্গে মণিপুরী নৃত্যে তিনি চিত্রিত করেন শিল্পীর প্রতিবাদ।
পরে দলীয় পরিবেশনার পর্বে তামান্না রহমান ও তার দল মঞ্চায়ন করেন ‘রোমান গিটার’। এই প্রযোজনাটি ব্রুনো চেরুবিনি, এলডো ডি লাহাবো রচিত ইতালির লোকজ সংগীতের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। নৃত্য দলটি পরে হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জের ‘হুলা’ নৃত্যও পরিবেশন করে।
রাগ মালকোষ ও তাল দ্রুত তিন তালে কথকে ‘তারানা’ পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ ও তার দল। জাপানের বসন্তের রূপবৈচিত্র্য নিয়ে জনপ্রিয় লোকসংগীত অবলম্বনে একটি নৃত্যও মঞ্চস্থ করে তারা। পরে জার্মানির লোকনৃত্য ‘থুরিংগিয়ান’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তারা শ্রমিকের বিনোদন পর্বের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেন।
রাগ নটভৈরবী ও তাল আদিতে ভরতনাট্যমে ‘তিল্লানা’ পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন খান ও তার দল। অভিনয়-নির্ভর এই নৃত্য প্রযোজনার পরে তারা পরিবেশন করেন ‘অ্যারাবিয়ান ড্যান্স’।
ওড়িশি নৃত্যে ‘মেঘপল্লবী’ পরিবেশনায় মঞ্চে আসেন প্রমা অবন্তী। পরে তার দল দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পাখা নৃত্য ‘বুচাইচুম’ পরিবেশন করেন।
নৃত্যের মুদ্রায় নেপালের শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন স্থান-কালের ঐতিহ্য। একইভাবে ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবি জনগোষ্ঠীর ‘ভাঙরা’ নাচে ফুটে ওঠে লোকজীবনের নানা অধ্যায়। প্রতিবেশী দুই দেশের দুই জনপ্রিয় ধারার নৃত্য পরিবেশন করে শাওন খান ও তার সহশিল্পীরা। নৃত্য পরিচালনা করেন কবিরুল ইসলাম রতন।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়্যাং হুই ও তার দল চীনের ঐতিহ্যবাহী এবং সমকালীন নৃত্য পরিবেশন করেন।
এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান, নৃত্যশিল্পী সেলিনা হক এবং সরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন।