বেইজিংয়ের সাংস্কৃতিক স্থানগুলো পরিদর্শনে আসা পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য বেইজিং মিউনিসিপাল ট্রান্সপোর্ট কমিশন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেইজিংয়ের মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেন্টারের তিনটি সাংস্কৃতিক স্থানের আশপাশে চালকবিহীন মিনিবাস সেবা চালু করেছে।
প্রতিটি চালকবিহীন মিনিবাস সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে, এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এতে কোনো স্টিয়ারিং হুইল, গ্যাস পেডাল বা ব্রেক পেডাল নেই। এই মিনিবাসগুলো সর্বোচ্চ ৯ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
চলতি বছরের ৩ মার্চ থেকে এই সেবা চালু করেছে চীন সরকারের সংস্থাটি। এক্ষেত্রে তারা বিদ্যমান রাস্তায় ‘বেইজিং হাই-লেভেল অটোনমাস ড্রাইভিং ডেমোনস্ট্রেশন জোন ৩.০’-এর সম্প্রসারণের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। যাত্রীরা বিনামূল্যে এই সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
বর্তমানে দর্শনার্থীরা সেন্ট্রাল গ্রিন ফরেস্ট পার্ক, হাওজিয়াফু সাবওয়ে স্টেশন ও তিনটি সাংস্কৃতিক স্থানের মধ্যে যাতায়াতের জন্য এই শাটল বাস চালু করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি পরীক্ষামূলক রুট চালু রয়েছে। প্রথম রুটটি সেন্ট্রাল গ্রিন ফরেস্ট পার্কের পি১২ পার্কিং লট থেকে বেইজিং লাইব্রেরি পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই রুটে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর বাস ছেড়ে যায়। শাংমাতুলুনান স্টেশন ও শাংমাতুলুবেই স্টেশনে বাসগুলো থামবে। দ্বিতীয় রুটটি হাওজিয়াফু সাবওয়ে স্টেশন থেকে বেইজিং লাইব্রেরি পর্যন্ত বিস্তৃত, এই রুটে বাসগুলো প্রতি ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
উভয় রুটে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ও দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলাচল করে। চালকবিহীন বাসে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে ইচ্ছুক যাত্রীরা উল্লেখিত বাস স্টেশনগুলো থেকে যাত্রা করতে পারবেন। সূত্র: বেইজিং নিউজ
নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল অটো শোতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নতুন ও আকর্ষণীয় সব মডেল নিয়ে হাজির হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের জ্যাভিটস সেন্টারে চলছে ১২৫তম ‘নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল অটো শো’। ১৮ এপ্রিল শুরু হওয়া এই মোটর গাড়ি প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম গাড়ির মেলা হিসেবে পরিচিত। এবারের আয়োজনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নতুন ও আকর্ষণীয় সব মডেল নিয়ে হাজির হয়েছে।
এবারের প্রদর্শনীতে ক্লাসিক গাড়ির পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি), স্পোর্টস কার, বিলাসবহুল সেডান ও এসইউভি এবং ভবিষ্যতের কনসেপ্ট কারগুলো স্থান পেয়েছে। ফোর্ড, জেনেসিস, বেন্টলি, লুসিডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তাদের সেরা সব বাহন প্রদর্শন করছে।
জেনেসিস এক্স গ্র্যান ইকুয়েটর। ছবি: সংগৃহীত
জেনেসিস এক্স গ্র্যান ইকুয়েটর দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনেসিসের কনসেপ্ট কার ‘জেনেসিস এক্স গ্র্যান ইকুয়েটর’-কে অনেকে এবারের প্রদর্শনীর সেরা আকর্ষণ বলছেন। এটি একটি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির অফ-রোডিং ঘরানার গাড়ি, যার দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন ও বিলাসবহুল ইন্টেরিয়ার সবার নজর কেড়েছে। জেনেসিস গাড়িটি উন্মোচন করেছে প্রদর্শনীর আগের রাতে।
ফোর্ড ব্রোঙ্কো স্ট্রোপ এডিশন। ছবি: সংগৃহীত
ফোর্ড ব্রোঙ্কো স্ট্রোপ এডিশন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের স্টলে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তাদের ‘ব্রোঙ্কো স্ট্রোপ এডিশন’। ষাট ও সত্তর দশকের বিখ্যাত মরুভূমির রেসিং কার বা ডেজার্ট রেসারগুলোর নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে ফোর্ড ব্রোঙ্কোর এই বিশেষ সংস্করণটি।
এই গাড়িটির অন্যতম আকর্ষণ হলো এর ভিন্নধর্মী রঙের ব্যবহার। অ্যাটলাস ব্লু, অক্সফোর্ড হোয়াইট ও কোড অরেঞ্জ রঙের সমন্বয়ে এর বাহ্যিক নকশা ফুটে তোলা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ছবিতে এই রঙের বিন্যাস যতটা আকর্ষণীয় লাগে, বাস্তবে তা আরও বেশি মনোমুগ্ধকর।
দুই দরজার এই গাড়িটি দেখতে বেশ শক্তিশালী গড়নের হয়ে থাকে। প্রদর্শনীতে এটি পরিষ্কার ও ঝকঝকে অবস্থায় থাকলেও, এর ডিজাইন ও অনুপ্রেরণা মনে করিয়ে দেয়, ধুলাবালি ও কাদা মাখা অবস্থায় হয়তো এর আসল রূপ আরও ভালোভাবে ফুটে উঠবে। যেমনটা মরুভূমির রুক্ষ পথে ছুটে চলা রেসিং কারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটিসি ফার্স্ট এডিশন চলমান আন্তর্জাতিক অটো শোতে নিজেদের নতুন কন্টিনেন্টাল জিটিসি ফার্স্ট এডিশন প্রদর্শন করছে ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেন্টলি। নতুন এই মডেলটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী হাইব্রিড ভি-৮ ইঞ্জিন এবং সেই সঙ্গে এর আকর্ষণীয় ডিজাইন।
বেন্টলির নতুন কন্টিনেন্টাল গাড়ির পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এনেছে এর হাইব্রিড ইঞ্জিন। বিশেষ করে এই গাড়ির ‘স্পিড’ সংস্করণটি ৭৭১ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এই হাইব্রিড প্রযুক্তি গাড়িটিকে শুধু শক্তিশালী করেনি, বরং আধুনিকতার ছোঁয়াও দিয়েছে।
বেন্টলি এই গাড়ির কনভার্টিবল সংস্করণ প্রদর্শন করছে, যার রঙ ‘রেসিং গ্রিন’। এতে কালো রঙের বিশেষ ট্রিমস ব্যবহার করা হয়েছে। প্রচলিত গ্র্যান্ড ট্যুরারের ধারণাকে আরও বিলাসী ও আধুনিক রূপে উপস্থাপন করেছে এই মডেল। শক্তি ও সৌন্দর্যের এই সমন্বয় নতুন বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটিসি-কে বিলাসবহুল গাড়ির বাজারে বিশেষ স্থান করে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিয়াট টোপোলিনো। ছবি: সংগৃহীত
ফিয়াট টোপোলিনো ইতালির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা ফিয়াটের ক্লাসিক মডেল ‘টোপোলিনো’ নতুন রূপে ফিরেছে। এটি মূলত একটি ছোট্ট ইলেকট্রিক কোয়াড্রিসাইকেল বা চার চাকার বৈদ্যুতিক যান। এটি গাড়ির জগতে ফিরিয়ে এনেছে ১৯৩০-এর দশকের ইতালীয় ঐতিহ্য ও ফ্যাশন।
ইতালীয় ভাষায় ‘টোপোলিনো’ শব্দের অর্থ ‘ছোট্ট ইঁদুর’। এটি ডিজনির বিখ্যাত চরিত্র মিকি মাউসেরও ইতালীয় নাম। ১৯৩৬ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উৎপাদিত মূল ফিয়াট টোপোলিনো গাড়িটি তার অত্যন্ত ছোট আকার ও সাশ্রয়ী দামের জন্য এই নাম পেয়েছিল। তৎকালীন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম গাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। আধুনিক ফিয়াট টোপোলিনো মূলত সিট্রোয়েন অ্যামি এবং ওপেল রকস-ই গাড়িগুলোর মতো একই প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা হয়েছে। এটি ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর শহুরে রাস্তায় স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
গাড়িটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ২.৫৩ মিটার (প্রায় ৮.৩ ফুট), যা এটিকে অত্যন্ত কমপ্যাক্ট করে তুলেছে। এতে রয়েছে ৫.৫ কিলোওয়াট-আওয়ারের একটি ছোট ব্যাটারি এবং ৮ বিএইচপি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম একটি বৈদ্যুতিক মোটর। এটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। একবার চার্জে এটি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারে। ব্যাটারি শূন্য থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা।
এর ছোট আকার, কম গতি এবং বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি বিকল্প হতে পারে স্কুটার বা গলফ কার্টের মতো ছোট বাহনের। নিউইয়র্ক অটো শোতে ফিয়াট টোপোলিনোর মিন্ট-গ্রিন রঙের সংস্করণ প্রদর্শন করা হচ্ছে। এর গোল হেডলাইট, পুরোনো দিনের আদলে তৈরি চাকার হাবক্যাপস এবং সামগ্রিক ডিজাইন এর রেট্রো বা ক্লাসিক লুক ফুটিয়ে তুলেছে।
ফিয়াট টোপোলিনো দুটি প্রধান সংস্করণে পাওয়া যায়। এর একটি ‘ক্লোজড’ সংস্করণ, যাতে সাধারণ গাড়ির মতো দরজা ও স্থায়ী ছাদ রয়েছে। অন্যটি হলো ‘ওপেন’ ডলচে ভিটা সংস্করণ, যা দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। এই সংস্করণে প্রচলিত দরজার পরিবর্তে রয়েছে দড়ির বেষ্টনী ও বড় ক্যানভাসের ছাদ, যা খোলা যায়।
আকারে ছোট হওয়ায় ফিয়াট টোপোলিনো এবারের অটো শোতে প্রদর্শিত সবচেয়ে ক্ষুদ্র গাড়ি হিসেবেও দর্শকদের বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
আটলান্টায় উবার ব্যবহারকারীরা অ্যাপের মাধ্যমে ওয়েমোর রোবোট্যাক্সি ব্যবহার করতে পাবেন।
জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবার ও গুগলের অটোনোমাস বা স্বচালিত গাড়ি প্রকল্প ওয়েমো তাদের রোবোট্যাক্সি সেবা যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি নতুন শহরে চালু করছে। এই রোবোট্যাক্সিগুলো চালকবিহীন হয়ে থাকে। নতুন এই পদক্ষেপে আটলান্টায় উবার ব্যবহারকারীরা অ্যাপের মাধ্যমে ওয়েমোর রোবোট্যাক্সি ব্যবহার করতে পাবেন।
স্বচালিত ট্যাক্সি সেবা খাতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে উবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ওয়েমোর সঙ্গে এই অংশীদারত্ব। ফলে ব্যবহারকারীরা চালকবিহীন গাড়িতে চড়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিনিক্সে প্রথম উবার অ্যাপে ওয়েমোর চালকবিহীন জাগুয়ার আই-পেস গাড়ির (যা ‘ওয়েমো ড্রাইভার’ নামে পরিচিত) ব্যবহার শুরু হয়। ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার হয়। এবার অস্টিন ও আটলান্টার নির্দিষ্ট অঞ্চলে একচেটিয়াভাবে উবারের মাধ্যমে ওয়েমোর সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মায়ামিতেও এ সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, আটলান্টায় উবার ব্যবহারকারীরা এখন ওয়েমোর রোবোট্যাক্সিতে চড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেন। চলতি বছরের গ্রীষ্মে এই সেবা আরও ব্যাপকভাবে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে উবারের কর্মীরা পরীক্ষামূলকভাবে ওয়েমো ট্যাক্সি ব্যবহার করছেন।
এই সেবা নিতে হলে উবার অ্যাপ আপডেট করে অ্যাকাউন্ট > সেটিংস > রাইড প্রেফারেন্সেস > অটোনোমাস ভেহিকলস-এ গিয়ে ‘জয়েন ইন্টারেস্ট লিস্ট’-এ ক্লিক করতে হবে।
স্বচালিত যানবাহনকে অনেকে পরবর্তী প্রজন্মের যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে ট্যাক্সি পরিষেবায় চালকহীন প্রযুক্তি বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্যাক্সি সেবাগুলো এই প্রযুক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে, কারণ চালকের প্রয়োজন না থাকায় পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এছাড়া মুনাফা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়েমো ও টেসলা স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকলেও তাদের পদ্ধতি ভিন্ন। টেসলার রোবোট্যাক্সি সেবা যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনে জুন মাসে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, ওয়েমো বেশ কয়েক বছর ধরেই নির্দিষ্ট কিছু শহরে এই সেবা দিয়ে আসছে।
উবারের জন্য ওয়েমো একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করলেও, এটিই একমাত্র বিকল্প নয়। উবারের প্রধান নির্বাহী দারা খোসরোশাহী টেসলার আসন্ন রোবোট্যাক্সি সেবাও তাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও প্রাথমিকভাবে টেসলা তাদের রোবোট্যাক্সি সেবা স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এ দুটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে অটোনোমাস ট্যাক্সি খাতে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে টেসলার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের অটোমোবাইল জায়ান্ট বিওয়াইডি। সম্প্রতি তারা এমন এক অত্যাধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তি সম্পন্ন গাড়ি এনেছে, যা মাত্র পাঁচ মিনিটের চার্জে ৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ২৪৯ মাইল) পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। নিজেদের নতুন ‘হ্যান এল’ সেডান ও ‘ট্যাং এল’ এসইউভি মডেলে এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি যুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রযুক্তি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে চলেছে।
চীনের এই অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের নতুন ‘সুপার ই-প্ল্যাটফর্ম’ প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যাটারি এই দ্রুত চার্জিংয়ের সুবিধা দেবে। এর চার্জিং গতি ১ হাজার কিলোওয়াট, যা টেসলার ২৫০ কিলোওয়াটের সুপার চার্জারের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি। দ্রুত চার্জিংয়ের পাশাপাশি দামের দিক থেকেও নতুন মডেল দুটি বেশ সাশ্রয়ী।
বিওয়াইডির নতুন হ্যান এল সেডান গাড়ির দাম শুরু হচ্ছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৮০০ ইউয়ান থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এই দাম টেসলার সবচেয়ে সাশ্রয়ী মডেল থ্রি-এর চেয়েও প্রায় ১০ হাজার ডলার কম। অন্যদিকে বিওয়াইডির ট্যাং এল এসইউভি মডেলের দাম শুরু হচ্ছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ ইউয়ান থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
গত মাসে এই সুপার ই-প্ল্যাটফর্ম চার্জিং প্রযুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল বিওয়াইডি। তখন তারা দাবি করেছিল, এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের ভ্রমণের সময় গাড়ির রেঞ্জ বা কত দূর চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা পুরোপুরি দূর করবে। কারণ, প্রচলিত পেট্রল বা ডিজেল গাড়িতে জ্বালানি ভরতে যে সময় লাগে, প্রায় একই সময়ে এই গাড়িগুলো চার্জ দেওয়া সম্ভব হবে। আপাতত এই দুটি নতুন মডেল শুধু চীনে পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দ্রুত চার্জিংয়ের জন্য দেশটিতে ৪ হাজার ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
বিওয়াইডি বর্তমানে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। দেশটির মোট ইভি বিক্রির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাদের দখলে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার পর সংস্থাটি সম্প্রতি বৈশ্বিক সম্প্রসারণে জোর দিয়েছে। গত বছর তারা টেসলাকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারকের খেতাব অর্জন করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।
বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা মেটাতে বিওয়াইডি বর্তমানে হাঙ্গেরিতে একটি কারখানা নির্মাণ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছরের শেষ নাগাদ কারখানাটি উৎপাদনে যাবে। এতে বছরে ৩ লাখ গাড়ি উৎপাদনের সক্ষমতা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণাও দিয়েছে বিওয়াইডি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপে টেসলার ইভি বিক্রি কমে যাওয়া এবং শেয়ারের দরপতনের মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিওয়াইডির এই অত্যাধুনিক চার্জিং প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং তুলনামূলক কম দামের নতুন মডেলগুলো বাজারে আসায় বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
টয়োটা জিআর৮৬-এর বিশেষ সংস্করণ ‘ইউজু’। ছবি: সংগৃহীত
অটোমোবাইল প্রেমীদের জন্য এক নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়েছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সিয়ন ব্র্যান্ডের স্পিরিট আবারও ফিরিয়ে আনছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৬ সালের জিআর৮৬ ইউজু স্পেশাল এডিশন বাজারে আনার মাধ্যমে সেই স্মৃতিকে উদযাপন করছে টয়োটা। এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের জিআর৮৬ স্পোর্টস কুপের চতুর্থ সীমিত সংস্করণের মডেল।
নতুন এই ইউজু সংস্করণটি মূলত ২০১৫ সালের সিয়ন এফআর-এস রিলিজ সিরিজের ১.০ থেকে অনুপ্রাণিত। এর উজ্জ্বল হলুদ রং ও গ্লসি ব্ল্যাক অ্যাক্সেন্টস গাড়িটিকে দিয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও স্পোর্টি লুক। সামনের সিটগুলোতে হলুদ রঙের কাভার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া স্টিয়ারিং হুইল, হ্যান্ডব্রেক ও দরজায় পর্যন্ত হলুদ রঙের ছোঁয়া রয়েছে।
স্পেশাল এডিশনের সঙ্গে থাকছে অতিরিক্ত আনুষঙ্গিক প্যাকেজ, যা ব্যবহারকারীদের ‘স্ট্রিট রেসিং’ ঘরানার অভিজ্ঞতা দেবে। এর মধ্যে রয়েছে আকর্ষণীয় বডি কিট ও চারটি বিশাল সিলভার রঙের টেলপাইপযুক্ত ক্যাট-ব্যাক এক্সজস্ট সিস্টেম, যেখানে জিআর লোগোও রয়েছে।
অন্যান্য দিক থেকে ইউজু মূলত পারফরম্যান্স প্যাকযুক্ত একটি উন্নত জিআর৮৬ প্রিমিয়াম মডেল। পারফরম্যান্স প্যাকেজে স্যাক্স ড্যাম্পার ও শক্তিশালী ব্রেমবো ব্রেক রয়েছে। এই পারফরম্যান্স প্যাকটি ২০২৫ সালের টয়োটা জিআর৮৬-এর দামের সঙ্গে ১৫০০ থেকে ২০২০ ডলার পর্যন্ত যোগ করতে পারে, যা মডেলের ওপর নির্ভর করে।
ইউজুর ইঞ্জিনে রয়েছে ২২৮ হর্সপাওয়ারের ২ দশমিক ৪ লিটারের ফ্ল্যাট-ফোর ইঞ্জিন, যা জিআর৮৬-এর অন্যান্য মডেলেও ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রান্সমিশনের জন্য থাকবে ছয় গতির ম্যানুয়াল বা অটোমেটিক অপশন।
টয়োটা যুক্তরাষ্ট্রে ইউজু স্পেশাল এডিশনের মাত্র ৮৬০টি ইউনিট বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। ২০২৬ সালের জিআর৮৬ মডেলের দাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আমদানি শুল্কের কারণে সামনের দিনে দাম বাড়তে পারে। তবে সম্প্রতি আরোপিত বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে এর দাম ৩৬ হাজার ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। শুল্কের প্রভাব পড়লে টয়োটাকে সেই খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপাতে হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বাইরে থাকা বিখ্যাত ব্রিটিশ গাড়ি প্রস্তুতকারক জাগুয়ার সম্প্রতি তাদের পুরোনো লোগো বাদ দিয়ে উন্মোচন করেছে নতুন এক মিনিমালিস্ট লোগো। নতুন লোগো ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। এর পর জাগুয়ার সম্প্রতি তাদের ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে একটি নতুন ইলেকট্রিক কনসেপ্ট গাড়ি উন্মোচন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘টাইপ ০০’ নামের এই কনসেপ্ট কার প্রকাশ্যে এনেছে, যা তাদের বর্তমান উৎপাদন মডেলগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
গাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক এর লম্বা সম্মুখভাগ এবং নিচু ছাদ। সরল প্রান্ত থেকে দেখলে এটিকে একটি অসম্পূর্ণ থ্রি-ডি মডেলের মতো মনে হতে পারে। অন্য ডিজাইন বৈশিষ্ট্যগুলো বেশ আধুনিক এবং কিছুটা কল্পনাপ্রসূত। যেমন গাড়ির মাঝ বরাবর ও পাশে পিতলের বার, ডিম্বাকৃতির স্টিয়ারিং হুইল, ভাঁজ করা যায় এমন ডিসপ্লে, বাটারফ্লাই দরজা এবং যাত্রী ও চালকের স্থানকে পৃথককারী ট্র্যাভারটিন পাথরের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে ভারতের টাটা মোটরসের মালিকানাধীন জাগুয়ার জানিয়েছে, এই কনসেপ্টের উৎপাদন সংস্করণে একবার চার্জে ৪৩০ মাইল পর্যন্ত রেঞ্জ পাওয়া যাবে। মাত্র ১৫ মিনিটের চার্জেই মিলবে ২০০ মাইলের রেঞ্জ। যদিও গতি, অ্যাকসেলারেশনসহ অন্যান্য পারফরম্যান্সসংক্রান্ত বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, উৎপাদন সংস্করণে কনসেপ্ট মডেলের অনেক চমকপ্রদ ফিচার বাদ পড়তে পারে।