জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা তাদের বৈদ্যুতিক ক্রসওভারের নতুন সংস্করণ ‘টয়োটা বিজেড’ নিয়ে আসছে। আগের নাম ‘টয়োটা বিজেড৪এক্স’ বাদ দিয়ে ২০২৬ সালে ‘টয়োটা বিজেড’ নামে আসছে নতুন মডেলটি। টয়োটা তাদের ইলেকট্রিক গাড়ির নতুন সংস্করণে শুধু নাম নয়, বদলে ফেলেছে অনেক কিছু। গাড়িটির উন্নত ব্যাটারি, বাড়তি রেঞ্জ ও অভ্যন্তরীণ নকশায় এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
বদলেছে ভেতরের দিক
নতুন বিজেড সংস্করণটি বাইরের দিক থেকে ২০২৫ সালের বিজেড৪এক্স-এর মতো দেখালেও ভেতরে রয়েছে বড় পরিবর্তন। গাড়িটিতে থাকছে ১৪ ইঞ্চির মাল্টিমিডিয়া টাচস্ক্রিন। আগের থেকে ভালোভাবে দেখার জন্য নতুন স্ক্রিনটি আরও উঁচু অবস্থানে স্থাপন করা হয়েছে। পুরোনো স্ক্রিনে ভলিউম বাড়ানো-কমানোর জন্য নিচে ছোট ছোট বাটন ছিল, যা চলন্ত অবস্থায় ব্যবহার করা কঠিন ছিল। তাই আরও ভালোভাবে ভলিউম নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা নব যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আগের ছোট বাটনের পরিবর্তে এখন বড় ডায়াল দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
বিজেড৪এক্সের ডিজিটাল গেজ ক্লাস্টারটি খুব নিচু ছিল। তবে নতুন সংস্করণে গেজ ক্লাস্টারও উঁচুতে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা দেখতে সহজ হয়েছে। পুরোনো নকশা বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইন এখন অনেকটা পরিষ্কার ও প্রিমিয়াম লুক তৈরি করেছে।
শক্তিশালী ব্যাটারি
২০২৬ সালের বিজেড মডেলে থাকছে মোট চারটি সংস্করণ। মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর একটি সংস্করণে থাকছে ৭৪.৭ কিলোওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি, যা সর্বোচ্চ প্রায় ৫০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ দিতে পারে। অল-হুইল ড্রাইভ সংস্করণে এই রেঞ্জ কিছুটা কমে ২৭৮ মাইল হবে। এ ছাড়া একটি ফ্রন্ট-ড্রাইভ এক্সএলই ট্রিমে ৫৭.৭ কিলোওয়াট আওয়ার ব্যাটারি যুক্ত করা হয়েছে। এই সংস্করণের রেঞ্জ হবে ২৩৬ মাইল, যার হর্সপাওয়ার হবে মাত্র ১৬৮। এই সংস্করণটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাবে।
স্পেক শিট অনুযায়ী, বিজেড৪এক্স মডেলের এইডব্লিউডি সংস্করণে প্রতি ঘণ্টা ০ থেকে ৬০ মাইল গতিতে পৌঁছাতে ৬.৫ সেকেন্ড লাগত। সেখানে নতুন বিজেড মডেলের ৩৩৮ হর্সপাওয়ারের এইডব্লিউডি সিস্টেমে এটি ৪.৯ সেকেন্ডে সম্ভব হবে।
অফ-রোড সক্ষমতা
২০২৬ সালের শুরুর দিকে বাজারে আসবে ‘২০২৬ বিজেড উডল্যান্ড এডিশন’। এতে থাকবে সর্বোচ্চ ৩৭৫ হর্সপাওয়ার সক্ষমতা, ৮.৩ ইঞ্চি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং ৩ হাজার ৫০০ পাউন্ড ওজন বহনের ক্ষমতা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হয়েছে।
চার্জিং
নতুন বিজেড মডেলের সব সংস্করণে যুক্ত হচ্ছে টেসলার ডিজাইন করা নর্থ আমেরিকান চার্জিং সিস্টেম (এনএসিএস) পোর্ট, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার ডিসি ফাস্ট চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করা যাবে। তবে আগের কম্বাইন্ড চার্জিং সিস্টেম (সিসিএস) পোর্ট ব্যবহারকারী চার্জারগুলোর জন্য ফ্রি অ্যাডাপ্টার পাবেন।
ব্যবহার আরও সহজ
২০২৬ সালের মডেলটিতে স্টিয়ারিং হুইলে এবার যুক্ত হয়েছে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং কন্ট্রোল প্যাডেল, যা আগে ছিল না। এক প্যাডেল দিয়ে ব্রেকিং শক্তি বাড়ানো যাবে, অন্যটি দিয়ে কমানো যাবে। বিজেড৪এক্সের সেন্টার কনসোলে ওয়্যারলেস ফোন চার্জিংয়ের জন্য একটি পোর্ট ছিল। তবে নতুন বিজেড মডেলে ফোন চার্জিংয়ের দুটি পোর্ট রয়েছে। গিয়ার শিফটারের অবস্থানও বদলে চালকের আরও কাছে আনা হয়েছে।
দাম
‘২০২৫ বিজেড৪এক্স’-এর দাম শুরু হয়েছিল ৩৮ হাজার ২০৫ মার্কিন ডলার থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে নতুন বিজেড মডেলের দাম কী হবে, তা জানা যাবে এই গ্রীষ্মে এক্সএলই ও লিমিটেড ট্রিমগুলো শোরুমে এলে। বিজেড৪এক্স জাপান ও চীনে তৈরি করে টয়োটা।
উল্লেখ্য, বিজেড৪এক্স মডেলটি তিন বছর ধরে বাজারে ছিল। এ সময়ে এর কিছু ত্রুটিও ধরা পড়ে। গাড়িটি ২০২২ সালে বাজারে এলে নড়বড়ে হাব বোল্টের কারণে চাকা খুলে যাওয়ার মতো বিব্রতকর ঘটনায় রিকল করা হয়েছিল। ২০২২ সালে গাড়িটি মাত্র ১ হাজার ২০০ ইউনিট বিক্রি হয়েছে। তবে বিজেড৪এক্স যথেষ্ট ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ হাজার ৩২৯ ইউনিট এবং ২০২৪ সালে আরও ১৮ হাজার ৫৭০ ইউনিট বিক্রি হয়েছে।
তবে ২০২৪ সালে বিএমডব্লিউ আই৪, ক্যাডিলাক লাইরিক ও রিভিয়ান আর১এসের মতো উচ্চমূল্যের বিলাসবহুল ইভিগুলো বিজেড৪এক্সের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। একইভাবে মাস্টাং ম্যাক-ই, নিশান আরিয়া ও হোন্ডা প্রলগের মতো মূলধারার ইভিগুলোও এগিয়ে ছিল। তাই টয়োটার এখনো পুরোপুরি বৈদ্যুতিক গাড়ির বিভাগে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, টয়োটা এবার তাদের ‘বিয়ন্ড জিরো’ কৌশলকে আরও বাস্তবমুখী ও ব্যবহারবান্ধব করতে নানা দিক থেকে চেষ্টা করছে। ২০২৬ সালের নতুন বিজেড সেটাই প্রমাণ করে।