
বাণিজ্যিক যানবাহন খাতে বড় অগ্রগতি আনছে জার্মান ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমএএন ট্রাকস। প্রতিষ্ঠানটি তাদের জার্মানির মিউনিখ কারখানায় শুরু করেছে বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাকের ধারাবাহিক উৎপাদন।
পাঁচ বছর আগেও বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক ছিল একটি ভবিষ্যতের ধারণা। ধারণা করা হতো, বেশির ভাগ যাত্রীবাহী গাড়ি বৈদ্যুতিক হওয়ার পর হয়তো ভারী পণ্য পরিবহনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। বর্তমানে একাধিক ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লাইনআপে শুধু একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক ভারী পণ্যবাহী যানের মডেল রয়েছে। এমনকি বৈদ্যুতিক ট্রাকের জন্য বিশেষভাবে চার্জিং স্টেশনও তৈরি হচ্ছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো এমএএন ট্রাকস, যারা তাদের বৈদ্যুতিক মডেলগুলোর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু করেছে।
২০২৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু মডেল তৈরি ও সরবরাহের পর এবার পূর্ণ উৎপাদনে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিজেলচালিত ট্রাকের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ব্যাটারিচালিত সংস্করণও। এমএএন ২০২১ সালে তাদের মিউনিখে একটি ই-মোবিলিটি সেন্টার তৈরি ও চালু করেছে।
উৎপাদন প্রক্রিয়া
এমএএন জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০০টি ট্রাক তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে। একেকটি ট্রাক তৈরি হতে সময় লাগছে প্রায় আট ঘণ্টা। এই বৈদ্যুতিক ট্রাকে থাকছে ছয়টি মডুলার নিকেল-ম্যাঙ্গানিজ-কোবাল্ট (এনএমসি) ব্যাটারি, মোট সক্ষমতা ৫৩৪ কিলোওয়াট-আওয়ার। একবার চার্জে এটি ৩১০ মাইল পর্যন্ত চলতে পারে। অতিরিক্ত ব্যাটারি প্যাক যুক্ত করলে এই রেঞ্জ বেড়ে দাঁড়াবে ৪৬০ মাইলে। প্রতি ৬২ মাইল চালাতে প্রয়োজন পড়ছে গড়ে ৯৭ কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ।
গ্রাহক সাড়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উৎপাদন শুরুর আগেই ২০০টি প্রি-সিরিজ ট্রাক গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করেছে এমএএন। এই ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে ২০ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। নতুন করে আরও ৭০০টি ট্রাকের অর্ডার এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী বোর্ড সদস্য মাইকেল কোব্রিগার বলেন, ‘ডিজেল ও বৈদ্যুতিক ট্রাক একই লাইনে উৎপাদন হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী গাড়িগুলো ঠিক সেই ক্রমে তৈরি করা সম্ভব।’
এই দশকে বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য কারখানাগুলো রূপান্তরে এক বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে এমএএন। এর মধ্যে কয়েক বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো ইতোমধ্যে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১ হাজার বৈদ্যুতিক ট্রাক সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। শুধু লজিস্টিকস নয়, শহরাঞ্চলের বর্জ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন পৌর সেবার উপযোগী ট্রাকও তৈরি করছে তারা।
বৈদ্যুতিক ড্রাইভট্রেনসহ এমএএনের প্রথম উৎপাদিত মডেলগুলো অবশ্য বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক ছিল না। বেশ কয়েক বছর আগে পোল্যান্ডের স্টারাকোভাইচে এমএএন বৈদ্যুতিক সিটি বাস তৈরি শুরু করেছিল। এই বাসের সংখ্যা এখন ইউরোপ জুড়ে ২ হাজার ৫০০।
চ্যালেঞ্জ
যদিও এই খাতে অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো, তবে পুরো ইউরোপে ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রাকের সংখ্যা মোট ভারী ট্রাকের ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গ্রাহক ও দেশভেদে বাহন বেছে নেওয়ার হার বেশ ভিন্ন রকম। তাই আপাতত এটি সব পণ্য পরিবহনকারী বা পৌর পরিষেবাগুলোর জন্য একটি সমাধান নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদ্যুতিক ট্রাক ব্যবহারে এখনো বড় বাধা চার্জিং অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা। তবে নির্ধারিত রুটে নিয়মিত চলাচলকারী ট্রাক ও বাসে এই সীমাবদ্ধতা তুলনামূলক কম।
এমএএনের এই উদ্যোগ ভারী যানবাহনের বৈদ্যুতিকীকরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমএএন ট্রাকস এখন তাদের বৈদ্যুতিক মডেলগুলো আইসিই সংস্করণের পাশে তৈরি করছে, তবে তাদের এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে।