ঢাকা ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
English

বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক উৎপাদনে এমএএন ট্রাকস

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১১:০০ এএম
বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক উৎপাদনে এমএএন ট্রাকস

বাণিজ্যিক যানবাহন খাতে বড় অগ্রগতি আনছে জার্মান ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমএএন ট্রাকস। প্রতিষ্ঠানটি তাদের জার্মানির মিউনিখ কারখানায় শুরু করেছে বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাকের ধারাবাহিক উৎপাদন।

পাঁচ বছর আগেও বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক ছিল একটি ভবিষ্যতের ধারণা। ধারণা করা হতো, বেশির ভাগ যাত্রীবাহী গাড়ি বৈদ্যুতিক হওয়ার পর হয়তো ভারী পণ্য পরিবহনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। বর্তমানে একাধিক ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লাইনআপে শুধু একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক ভারী পণ্যবাহী যানের মডেল রয়েছে। এমনকি বৈদ্যুতিক ট্রাকের জন্য বিশেষভাবে চার্জিং স্টেশনও তৈরি হচ্ছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো এমএএন ট্রাকস, যারা তাদের বৈদ্যুতিক মডেলগুলোর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু করেছে।

২০২৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু মডেল তৈরি ও সরবরাহের পর এবার পূর্ণ উৎপাদনে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিজেলচালিত ট্রাকের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ব্যাটারিচালিত সংস্করণও। এমএএন ২০২১ সালে তাদের মিউনিখে একটি ই-মোবিলিটি সেন্টার তৈরি ও চালু করেছে।

উৎপাদন প্রক্রিয়া
এমএএন জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০০টি ট্রাক তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে। একেকটি ট্রাক তৈরি হতে সময় লাগছে প্রায় আট ঘণ্টা। এই বৈদ্যুতিক ট্রাকে থাকছে ছয়টি মডুলার নিকেল-ম্যাঙ্গানিজ-কোবাল্ট (এনএমসি) ব্যাটারি, মোট সক্ষমতা ৫৩৪ কিলোওয়াট-আওয়ার। একবার চার্জে এটি ৩১০ মাইল পর্যন্ত চলতে পারে। অতিরিক্ত ব্যাটারি প্যাক যুক্ত করলে এই রেঞ্জ বেড়ে দাঁড়াবে ৪৬০ মাইলে। প্রতি ৬২ মাইল চালাতে প্রয়োজন পড়ছে গড়ে ৯৭ কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ।

গ্রাহক সাড়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উৎপাদন শুরুর আগেই ২০০টি প্রি-সিরিজ ট্রাক গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করেছে এমএএন। এই ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে ২০ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। নতুন করে আরও ৭০০টি ট্রাকের অর্ডার এসেছে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী বোর্ড সদস্য মাইকেল কোব্রিগার বলেন, ‘ডিজেল ও বৈদ্যুতিক ট্রাক একই লাইনে উৎপাদন হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী গাড়িগুলো ঠিক সেই ক্রমে তৈরি করা সম্ভব।’

এই দশকে বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য কারখানাগুলো রূপান্তরে এক বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে এমএএন। এর মধ্যে কয়েক বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো ইতোমধ্যে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১ হাজার বৈদ্যুতিক ট্রাক সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। শুধু লজিস্টিকস নয়, শহরাঞ্চলের বর্জ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন পৌর সেবার উপযোগী ট্রাকও তৈরি করছে তারা।

বৈদ্যুতিক ড্রাইভট্রেনসহ এমএএনের প্রথম উৎপাদিত মডেলগুলো অবশ্য বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক ছিল না। বেশ কয়েক বছর আগে পোল্যান্ডের স্টারাকোভাইচে এমএএন বৈদ্যুতিক সিটি বাস তৈরি শুরু করেছিল। এই বাসের সংখ্যা এখন ইউরোপ জুড়ে ২ হাজার ৫০০।

চ্যালেঞ্জ
যদিও এই খাতে অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো, তবে পুরো ইউরোপে ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রাকের সংখ্যা মোট ভারী ট্রাকের ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গ্রাহক ও দেশভেদে বাহন বেছে নেওয়ার হার বেশ ভিন্ন রকম। তাই আপাতত এটি সব পণ্য পরিবহনকারী বা পৌর পরিষেবাগুলোর জন্য একটি সমাধান নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদ্যুতিক ট্রাক ব্যবহারে এখনো বড় বাধা চার্জিং অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা। তবে নির্ধারিত রুটে নিয়মিত চলাচলকারী ট্রাক ও বাসে এই সীমাবদ্ধতা তুলনামূলক কম।

এমএএনের এই উদ্যোগ ভারী যানবাহনের বৈদ্যুতিকীকরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমএএন ট্রাকস এখন তাদের বৈদ্যুতিক মডেলগুলো আইসিই সংস্করণের পাশে তৈরি করছে, তবে তাদের এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে।

রিভিয়ান আনল নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
রিভিয়ান আনল নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি
রিভিয়ান উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নতুন একটি গাড়ি উন্মোচন করেছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভিয়ান উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নতুন একটি গাড়ি উন্মোচন করেছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের ‘আর১’ মডেলের এই কোয়াড-মোটর সংস্করণটি মূলত অফ-রোড বা দুর্গম পথে চলার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। তবে এর বিস্ময়কর ক্ষমতা ও উচ্চমূল্যের কারণে গাড়িটি সাধারণ ক্রেতাদের চেয়ে ব্র্যান্ড ও পারফরম্যান্স-সচেতন ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি উন্মোচিত এই গাড়ির কোয়াড-মোটর ‘আর১টি’ (ট্রাক) মডেলের দাম শুরু হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৯০ ডলার থেকে। অন্যদিকে ‘আর১এস’ (এসইউভি) মডেলের দাম শুরু হবে ১ লাখ ২১ হাজার ৯৯০ ডলার থেকে।

রিভিয়ানের নতুন এই কোয়াড-মোটর সংস্করণে চারটি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্মিলিতভাবে ১ হাজার ২৫ হর্সপাওয়ার এবং ১ হাজার ১৯৮ পাউন্ড-ফুট টর্ক উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে গাড়িটি শূন্য থেকে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় নেয় মাত্র ২.৫ সেকেন্ড। এক কোয়ার্টার মাইল বা প্রায় ৪০০ মিটার পথ পাড়ি দিতে এর সময় লাগে মাত্র ১০.৫ সেকেন্ড।

রেঞ্জ ও চার্জিং সুবিধা
রিভিয়ান জানিয়েছে, একবার সম্পূর্ণ চার্জে গাড়িটি প্রায় ৬০২ কিলোমিটার (৩৭৪ মাইল) পর্যন্ত চলতে পারবে। তবে ‘কনজার্ভ’ মোডে চালালে এর রেঞ্জ বেড়ে ৬৪৪ কিলোমিটার (৪০০ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে। চার্জিং সুবিধার জন্য এতে টেসলার সুপারচার্জার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের উপযোগী এনএসসিএস পোর্ট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য চার্জিং স্টেশনে ব্যবহারের জন্য একটি সিসিএস ডিসি অ্যাডাপ্টারও সঙ্গে থাকবে, যা ব্যবহারকারীকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

বিশেষ অফ-রোড ফিচার
দুর্গম পথে গাড়ি চালানোর সুবিধার জন্য রিভিয়ান এতে ‘কিক টার্ন’ নামে একটি বিশেষ ফিচার যুক্ত করেছে। এই ফিচারের মাধ্যমে কাদা বা পাথুরে রাস্তায় গাড়িটি না এগিয়েও নিজের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে বা তীক্ষ্ণ মোড় নিতে পারবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে একটি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ফিচারটি চালু করা হবে।

এ ছাড়া ‘র‌্যাড টিউনার’ নামে আরেকটি নতুন ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজ পছন্দ অনুযায়ী গাড়ির চালনা অভিজ্ঞতা কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এতে থাকছে ‘ডেজার্ট র‌্যালি’ ও ‘হিল ক্লাইম্ব’ মোড।

ভেতরের সাজসজ্জা
গাড়ির ভেতরের সাজসজ্জাতেও রয়েছে প্রিমিয়াম ছোঁয়া। এতে আরামদায়ক কুইল্টেড সিট, বাড়তি সেলাইয়ের কারুকাজ ও ড্যাশবোর্ড, দরজা ও স্পিকার গ্রিলজুড়ে ব্রোঞ্জ রঙের কারুকাজ রয়েছে।

রিভিয়ান জানিয়েছে, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য তারা ২০২৬ সালের শুরুতে ‘আর২’ মডেলের একটি সাশ্রয়ী গাড়ি বাজারে আনবে, যার দাম হতে পারে প্রায় ৪৫ হাজার ডলার।

নজরকাড়া ডিজাইনের বৈদ্যুতিক এসইউভি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম
নজরকাড়া ডিজাইনের বৈদ্যুতিক এসইউভি
হোনডে আইওনিক ৯। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর আমেরিকার বাজারে আত্মপ্রকাশ করেছে হোনডের (হুন্দাই) বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) এসইউভি ‘হোনডে আইওনিক ৯’। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ির মধ্যে অন্যতম এসইউভি ঘরানার গাড়ি। রিভিয়ান আর১এস বা মার্সিডিজ-বেঞ্জ ইকিউএস এসইউভির মতো উচ্চমূল্যের মডেল ছাড়া এই ধরনের গাড়ি খুব বেশি ছিল না। তবে কিয়া ইভি৯ দিয়ে সেই শূন্যতা আংশিক পূরণ করেছে।

নজরকাড়া ডিজাইন
হোনডের নতুন আইওনিক যে বিশাল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৯ ইঞ্চি লম্বা এই গাড়িটি হোনডে পালিসেডের চেয়ে তিন ইঞ্চি বড়, যা এখন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় বৃহত্তম এসইউভি। শুধু আকার নয়, নকশাতেও নজরকাড়া এক নতুনত্ব এনেছে হোনডে। গাড়িটির পেছনের অংশে রয়েছে সূক্ষ্ম টেপার আকৃতি, যা একদিকে বায়ুরোধ কমায়, অন্যদিকে গাড়িটিকে দেখতেও ছোট মনে হয়। বডির বায়ুরোধের মাত্রা ০.২৬৯, যা এমন বড় এসইউভির জন্য প্রশংসনীয়।

আরাম ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ
আইওনিক ৯-এ রয়েছে তিন সারির আসন। তৃতীয় সারিতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও পর্যাপ্ত মাথার ও পায়ের জায়গা আছে। প্রতিটি সারিতে ১০০ ওয়াট ইউএসবি-সি পোর্ট থাকায় যাত্রাপথে ডিভাইস চার্জ নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন পড়বে না।

আইওনিক ৯ লিমিটেড বা ক্যালিগ্রাফি সংস্করণে থাকছে ছয় আসনের ক্যাপটেন চেয়ার ও ম্যাসাজ সুবিধাসহ দীর্ঘ যাত্রায় আরামের জন্য বাড়তি লেগ রেস্ট। গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমে দুটি ১২.৩ ইঞ্চির ডিসপ্লে রয়েছে, যাতে অ্যান্ড্রয়েড অটো ও অ্যাপল কারপ্লে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

ক্ষমতা ও চার্জিং প্রযুক্তি
আইওনিক ৯ নির্মিত হয়েছে হোনডের ই-জিএমপি প্ল্যাটফর্মে। এতে রয়েছে ৮০০ ভোল্ট আর্কিটেকচার ও ৩৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত দ্রুত চার্জিং ক্ষমতা। মাত্র ২৪ মিনিটে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ করা সম্ভব। এতে যুক্ত আছে টেসলা স্টাইলের এনএসিএস প্লাগ, যা সুপারচার্জার ব্যবহারের সুযোগ দেয়। যদিও টেসলার অনেক চার্জার এখনো এই গতিকে সমর্থন করে না।
গাড়িতে ব্যবহৃত হয়েছে ১১০.৩ কিলোওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি, যার ১০৪ কিলোওয়াট-আওয়ার ব্যবহারযোগ্য। একবার চার্জে সর্বোচ্চ ৫৩৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে, যা নির্ভর করবে সংস্করণের ওপর। ডুয়েল মোটর সংস্করণে সর্বোচ্চ ৪২২ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন হয়।

প্রশান্তি ও সীমাবদ্ধতা
দৈনন্দিন শহুরে যাত্রায় আইওনিক ৯ বেশ আরামদায়ক। শহরের গতিতে কিছুটা শক্ত সাসপেনশন অনুভব হলেও গতিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেটি মসৃণ হয়ে ওঠে। সাউন্ড-ইনসুলেটিং গ্লাস ও অ্যাকটিভ সাউন্ড ক্যানসেলিং প্রযুক্তি যাত্রাকে করে তোলে আরামদায়ক। তবে তৃতীয় সারিতে কিছুটা বাতাস ও মোটরের শব্দ প্রবেশ করতে পারে। পেছনে ২১.৯ ঘনফুট মালপত্র রাখার জায়গা থাকলেও, দুই সারি ভাঁজ করলে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬.৯ ঘনফুটে। সামনের ছোট ফ্রাংকে চার্জার ও টুলকিট রাখা হয়েছে।

মূল্য ও বাজার সম্ভাবনা
আইওনিক ৯-এর প্রাথমিক দাম ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৫৫ ডলার থেকে সর্বোচ্চ সংস্করণের দাম ৭৯ হাজার ৫৪০ ডলার পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিয়া ইভি৯ তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও হোনডের বাড়তি নকশা ও ফিচার অনেককে আকৃষ্ট করবে বলেই ধারণা অটোমোবাইল বিশ্লেষকদের।

বৃষ্টিতে গাড়ির যত্ন

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৩০ এএম
বৃষ্টিতে গাড়ির যত্ন
ছবি: সংগৃহীত

বর্ষাকাল মানেই প্রকৃতিতে এক সতেজ আর স্নিগ্ধ পরিবেশ। তবে যারা গাড়ি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য বৃষ্টি তৈরি করে বাড়তি কিছু চ্যালেঞ্জ। বৃষ্টির দিনে গাড়ির সঠিক যত্ন না নিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা গাড়ির আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয় ও চালকের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়ায়। তাই বর্ষায় প্রিয় গাড়ির সুরক্ষায় কিছু বাড়তি মনোযোগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।

টায়ারের দিকে বিশেষ নজর
বৃষ্টিভেজা রাস্তায় টায়ারের গ্রিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার আগে টায়ারের অবস্থা পরীক্ষা করুন। টায়ারের ট্রেড গভীরতা পর্যাপ্ত না থাকলে ভেজা রাস্তায় চাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া টায়ারের বায়ুচাপ সঠিক মাত্রায় আছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজনে চাকার অ্যালাইনমেন্ট ও ব্যালেন্স করিয়ে নিন। ভালো মানের টায়ার ভেজা রাস্তায় উন্নত গ্রিপ দেয়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।

ব্রেক সিস্টেমের কার্যকারিতা
বৃষ্টিতে ব্রেক ভেজা থাকার কারণে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ব্রেকপ্যাড ও ডিস্কের অবস্থা পরীক্ষা করুন। মরিচা পড়া বা ক্ষয়প্রাপ্ত ব্রেকপ্যাড পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যদি ব্রেক করার সময় অস্বাভাবিক শব্দ হয় বা ব্রেক ধরতে বেশি সময় লাগে, তবে দ্রুত মেকানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ভেজা রাস্তায় মসৃণ ও দ্রুত ব্রেক করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।

ওয়াইপার ব্লেড পরিবর্তন
বৃষ্টির সময় ওয়াইপার ব্লেড অপরিহার্য হয়ে যায়। পুরোনো বা ফাটা ওয়াইপার ব্লেড কাচ পরিষ্কার করতে পারে না, যা দৃষ্টিসীমা সীমিত করে। বর্ষা শুরুর আগে ওয়াইপার ব্লেড পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে নতুন ভালো মানের ব্লেড লাগান। এ ছাড়া উইন্ডশিল্ড ওয়াশার ফ্লুইড ট্যাংক ভর্তি রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে ওয়াশার সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করছে।

গাড়ির বাইরের সুরক্ষা
বৃষ্টির পানি গাড়ির বডিতে লেগে মরিচা ধরতে পারে। গাড়িকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং ভালো মানের ওয়াক্স বা পলিশ ব্যবহার করুন। এটি গাড়ির পেইন্টকে সুরক্ষা দেয় ও দাগ পড়তে দেয় না। গাড়ির নিচের অংশে যাতে কাদা বা পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ এটি চেসিসের ক্ষতি করতে পারে।

ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম পরীক্ষা
বৃষ্টির কারণে গাড়ির ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে সমস্যা হতে পারে। হেডলাইট, টেললাইট, ইন্ডিকেটর ও ফগলাইটগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করুন। ভিজে যাওয়া তার বা ঢিলে সংযোগ শর্টসার্কিট ঘটাতে পারে। ব্যাটারি এবং তারের সংযোগগুলো পরীক্ষা করে দেখুন এবং প্রয়োজনে মরিচা পরিষ্কার করুন।

গাড়ির অভ্যন্তরের যত্ন
বৃষ্টির দিনে গাড়ির ভেতরে আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যা দুর্গন্ধ বা ছাতা পড়ার কারণ হতে পারে। ম্যাট ও সিট কাভার পরিষ্কার রাখুন। এ ছাড়া নিয়মিত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজন হলে কার ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। বৃষ্টির দিনে গাড়িতে ওঠার আগে জুতার কাদা পরিষ্কার করে নিন, এতে গাড়ির ভেতরটা পরিষ্কার থাকবে। বর্ষায় গাড়ির প্রতি এই বাড়তি মনোযোগ শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে না, বরং গাড়ির আয়ুষ্কালও বাড়াবে। 

নিউইয়র্কের রাস্তায় ওয়েমোর স্বচালিত গাড়ি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
নিউইয়র্কের রাস্তায় ওয়েমোর স্বচালিত গাড়ি
নিউইয়র্ক শহরে আবারও দেখা যাবে স্বচালিত গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আবারও দেখা যাবে স্বচালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েমোর গাড়ি প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, চলতি মাস থেকে তারা নিউইয়র্কে নতুন করে পরীক্ষা চালাবে তবে এই পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে গাড়িগুলো স্বচালিত না হয়ে মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, অনেকটা ২০২১ সালে ওয়েমো পরিচালিত ম্যাপিং পরীক্ষার মতো

ওয়েমো জানিয়েছে, সান ফ্রান্সিসকো, ফিনিক্স লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো নিউইয়র্কেও স্বচালিত রাইড-শেয়ারিং সেবা চালু করতে চায় তারা তবে পথে একটি বড় বাধা হচ্ছে নিউইয়র্কের বর্তমান আইন, যেখানে চালকবিহীন গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই

ওয়েমো এই সমস্যার সমাধানে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন-এর কাছে একটি পারমিটের আবেদন করেছে, যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অপারেটরের তত্ত্বাবধানে গাড়িগুলো স্বচালিতভাবে চালানো যায় অনুমোদন পেলে এটিই হবে নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবারের মতো স্বচালিত গাড়ির পরীক্ষামূলক চলাচল

২০২১ সালের পরীক্ষায় ওয়েমোর মূল লক্ষ্য ছিল শহরের জটিল ট্রাফিক পরিস্থিতি এবং বরফ বা তুষারপাতের পরিবেশে গাড়ি চালানোর সক্ষমতা যাচাই করা প্রতিষ্ঠানটি আগে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ শুষ্ক আবহাওয়ার শহরে সেবা দিয়েছে তবে নিউইয়র্কের মতো ঘনবসতিপূর্ণ বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে স্বচালিত গাড়ির কার্যকারিতা প্রমাণ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ

নিউইয়র্কের বাইরে ওয়েমোর কার্যক্রম সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে সম্প্রতি সান ফ্রান্সিসকো লস অ্যাঞ্জেলেসে সেবা এলাকা আরও বাড়ানো হয়েছে মার্চে উবারের সহযোগিতায় ওয়েমো অস্টিনেও প্রবেশ করেছে আগামী এক বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি শহরে পরীক্ষামূলক চালনা বা অর্থের বিনিময়ে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে

তবে নিউইয়র্কের মতো শহরে পূর্ণমাত্রায় স্বচালিত ট্যাক্সি সেবা চালু করা এখনো বড় এক ধাপ বাকি, যা আইনি অনুমোদন স্থানীয় ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করছে

হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য কিয়া ইভি ভ্যান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১০:৩০ এএম
হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য কিয়া ইভি ভ্যান
কিয়া উন্মোচন করেছে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক ভ্যানের একটি বিশেষ সংস্করণ। ছবি: সংগৃহীত

সহজ ও টেকসই যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ কোরীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিয়া তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক ভ্যানের একটি বিশেষ সংস্করণ উন্মোচন করেছে, যা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ‘পিভি৫ ডব্লিউএভি’ নামের মডেলটিতে রয়েছে একাধিক সুবিধা, যা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।

প্রবেশ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা
পিভি৫ ডব্লিউএভি মডেলটিতে রয়েছে সাইড অ্যান্ট্রি সিস্টেম, যার মাধ্যমে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা রাস্তার পাশ থেকে সরাসরি গাড়িতে উঠতে পারেন। এতে রয়েছে ৩০০ কেজি ভার বহনক্ষম দ্রুত ব্যবহারের উপযোগী র‌্যাম্প, যা ভাঁজ করে সহজে রাখা যায়।

তৃতীয় সারিতে একটি টিপ-আপ সিট সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে অন্য যাত্রীরা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীকে পাশ থেকে সহায়তা করতে পারেন। এ ছাড়া যুক্ত হয়েছে বিশেষায়িত হুইলচেয়ার বেল্ট-ফাস্টেনিং সিস্টেম, যা চলাচলের সময় যাত্রীকে স্থির রাখতে সহায়তা করে।

পিভি৫ ডব্লিউএভি মডেলটি তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যের মবিলিটি অপারেশনসের সহযোগিতায়। মবিলিটি অপারেশনস যুক্তরাজ্যের যানবাহন লিজ পরিকল্পনায় কিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহজলভ্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

কিয়ার পিবিভি বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সাং-ডে কিম বলেন, ‘অত্যাধুনিক পিবিভি প্রযুক্তিকে মানবিক ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করে আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে সবার জন্য টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। মবিলিটি অপারেশনসের সঙ্গে আমাদের অংশীদারি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।’ গত এক বছরে সিইএস ২০২৪-সহ কিয়ার বেশ কয়েকটি নতুন গাড়ির উন্মোচনের কেন্দ্রে ছিল এই পিবিভি প্রযুক্তি।

দাম
পিভি৫ মডেলের স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ যুক্তরাজ্যে প্রি-অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। যদিও ডব্লিউএভি সংস্করণের দাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সাধারণ সংস্করণটির দাম শুরু হচ্ছে প্রায় ৪৪ হাজার ডলার থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ উদ্যোগ কিয়াকে বৈদ্যুতিক যানবাহনের বাজারে একটি সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্র্যান্ড হিসেবে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে।