
উত্তর আমেরিকার বাজারে আত্মপ্রকাশ করেছে হোনডের (হুন্দাই) বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) এসইউভি ‘হোনডে আইওনিক ৯’। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ির মধ্যে অন্যতম এসইউভি ঘরানার গাড়ি। রিভিয়ান আর১এস বা মার্সিডিজ-বেঞ্জ ইকিউএস এসইউভির মতো উচ্চমূল্যের মডেল ছাড়া এই ধরনের গাড়ি খুব বেশি ছিল না। তবে কিয়া ইভি৯ দিয়ে সেই শূন্যতা আংশিক পূরণ করেছে।
নজরকাড়া ডিজাইন
হোনডের নতুন আইওনিক যে বিশাল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৯ ইঞ্চি লম্বা এই গাড়িটি হোনডে পালিসেডের চেয়ে তিন ইঞ্চি বড়, যা এখন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় বৃহত্তম এসইউভি। শুধু আকার নয়, নকশাতেও নজরকাড়া এক নতুনত্ব এনেছে হোনডে। গাড়িটির পেছনের অংশে রয়েছে সূক্ষ্ম টেপার আকৃতি, যা একদিকে বায়ুরোধ কমায়, অন্যদিকে গাড়িটিকে দেখতেও ছোট মনে হয়। বডির বায়ুরোধের মাত্রা ০.২৬৯, যা এমন বড় এসইউভির জন্য প্রশংসনীয়।
আরাম ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ
আইওনিক ৯-এ রয়েছে তিন সারির আসন। তৃতীয় সারিতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও পর্যাপ্ত মাথার ও পায়ের জায়গা আছে। প্রতিটি সারিতে ১০০ ওয়াট ইউএসবি-সি পোর্ট থাকায় যাত্রাপথে ডিভাইস চার্জ নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন পড়বে না।
আইওনিক ৯ লিমিটেড বা ক্যালিগ্রাফি সংস্করণে থাকছে ছয় আসনের ক্যাপটেন চেয়ার ও ম্যাসাজ সুবিধাসহ দীর্ঘ যাত্রায় আরামের জন্য বাড়তি লেগ রেস্ট। গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমে দুটি ১২.৩ ইঞ্চির ডিসপ্লে রয়েছে, যাতে অ্যান্ড্রয়েড অটো ও অ্যাপল কারপ্লে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
ক্ষমতা ও চার্জিং প্রযুক্তি
আইওনিক ৯ নির্মিত হয়েছে হোনডের ই-জিএমপি প্ল্যাটফর্মে। এতে রয়েছে ৮০০ ভোল্ট আর্কিটেকচার ও ৩৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত দ্রুত চার্জিং ক্ষমতা। মাত্র ২৪ মিনিটে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ করা সম্ভব। এতে যুক্ত আছে টেসলা স্টাইলের এনএসিএস প্লাগ, যা সুপারচার্জার ব্যবহারের সুযোগ দেয়। যদিও টেসলার অনেক চার্জার এখনো এই গতিকে সমর্থন করে না।
গাড়িতে ব্যবহৃত হয়েছে ১১০.৩ কিলোওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি, যার ১০৪ কিলোওয়াট-আওয়ার ব্যবহারযোগ্য। একবার চার্জে সর্বোচ্চ ৫৩৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে, যা নির্ভর করবে সংস্করণের ওপর। ডুয়েল মোটর সংস্করণে সর্বোচ্চ ৪২২ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন হয়।
প্রশান্তি ও সীমাবদ্ধতা
দৈনন্দিন শহুরে যাত্রায় আইওনিক ৯ বেশ আরামদায়ক। শহরের গতিতে কিছুটা শক্ত সাসপেনশন অনুভব হলেও গতিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেটি মসৃণ হয়ে ওঠে। সাউন্ড-ইনসুলেটিং গ্লাস ও অ্যাকটিভ সাউন্ড ক্যানসেলিং প্রযুক্তি যাত্রাকে করে তোলে আরামদায়ক। তবে তৃতীয় সারিতে কিছুটা বাতাস ও মোটরের শব্দ প্রবেশ করতে পারে। পেছনে ২১.৯ ঘনফুট মালপত্র রাখার জায়গা থাকলেও, দুই সারি ভাঁজ করলে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬.৯ ঘনফুটে। সামনের ছোট ফ্রাংকে চার্জার ও টুলকিট রাখা হয়েছে।
মূল্য ও বাজার সম্ভাবনা
আইওনিক ৯-এর প্রাথমিক দাম ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৫৫ ডলার থেকে সর্বোচ্চ সংস্করণের দাম ৭৯ হাজার ৫৪০ ডলার পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিয়া ইভি৯ তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও হোনডের বাড়তি নকশা ও ফিচার অনেককে আকৃষ্ট করবে বলেই ধারণা অটোমোবাইল বিশ্লেষকদের।