ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

আগ্রহ বাড়ছে ই-বুক, অডিও বুকে

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১১ পিএম
আগ্রহ বাড়ছে ই-বুক, অডিও বুকে

পেপারব্যাক বা হার্ড কাভারের বইয়ের পাশাপাশি তরুণ পাঠকদের একটি অংশ এখন ঝুঁকছে ই-বুক আর অডিও বুকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে কাগুজে বইগুলো তারা অবিকল পড়ছেন পিডিএফ বা অডিও ভার্সনে। যারা ছাপা হরফে বই পড়তে নারাজ, সাহিত্যপাঠে তারা বেছে নিচ্ছেন অডিও বুক।

এ বছরের বইমেলায় ই-বুক এবং অডিও বুকের ৫টি স্টল রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে রয়েছে ‘কাহিনীক’ অডিও বুক, বাংলা একাডেমিতে রয়েছে ‘কাব্যিক’, ‘শুনো বই’। রকমারি ই-বুক চড়ুই ডটকমের বইঘরও রয়েছে বইমেলায়। এ ছাড়া ই-বুক এবং অডিও বুক-দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বইঘরের স্টলও রয়েছে বইমেলায়। 

কাহিনীক অডিও বুকের অন্যতম কর্ণধার ইমরাদ জুলকারনাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করি। যেহেতু আমাদের কাজ অডিও বুক নিয়ে, একজন পাঠক কীভাবে অডিও বই পাঠ করবেন, এ নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতে লাগলাম। সাহিত্যের তো রূপ, রস থাকে। এটি কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেই ভাবনা থেকে আমরা নিজস্ব ব্যাকরণ পর্যন্ত তৈরি করলাম, যার মাধ্যমে সৃষ্টি করলাম কীভাবে অডিও একটি বই পড়তে হবে; হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এটি লিপিবদ্ধ করাও হতে পারে।

অডিও বুক যেন একেবারে শ্রুতিনাটক হয়ে না যায়, সে ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করছে কাহিনীক। ইমরাদ জুলকারনাইন বলেন, ‘আমরা বইকে শ্রুতিনাটক করতে চাই না, চরিত্র করে নাটক বানানো, একেবারেই নাটক বানানো আমাদের উদ্দেশ্য না। নারী-পুরুষের বিভেদের বিষয়টিও আমরা রাখিনি। যেন একজন অডিও বুক পাঠকও মনে করেন তিনি  বই পড়ছেন, আমরা সেটিরই চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, কাহিনীকে ৪০টি বই রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫০টি বই অডিও বুক হিসেবে প্রকাশের চুক্তি রয়েছে। মূল বইয়ের তুলনায় অডিও বুক অর্ধেক দামে কেনা যাবে বলে জানান তিনি।

অডিও বইয়ের স্টল শুনো বই- এর বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিন আক্তার শিমু ও জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শুনো বইয়ে এখন তিন শতাধিক বই রয়েছে। তিন হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে তাদের। হরর, থ্রিলার, রোমান্স, অ্যাডভেঞ্চার, মোটিভেশন, ক্লাসিক, রিলিজিয়াস, বায়োগ্রাফি, গল্প, কবিতা, বিশেষ শিশুতোষ বইগুলোই ই-বুক হিসেবে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। 

অডিওবুকের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা রয়েছে কাব্যিকের। কাব্যিকের সিটিও অমিত বিশ্বাস জানান, ৯০টির বেশি দেশে কাব্যিকের গ্রাহক রয়েছে। সাড়ে ৭০০ অডিও বুকের পাশাপাশি এ বছর  বিভিন্ন বইয়ের অংশবিশেষ নিয়ে আড়াই হাজারের মতো কনটেন্ট রয়েছে। অমিত বলেন, ‘স্বল্প মূল্যে বই আমরা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি চেষ্টা করেছি। আমরা মাসিক, অর্ধবার্ষিক এবং বার্ষিক প্যাকেজ রেখেছি। যেন একজন পাঠক একেবারে সব বইয়ের অ্যাকসেস পেয়ে যান। আমাদের সর্বোচ্চ প্যাকেজ বার্ষিক ৪০০ টাকা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন পাঠক আমাদের সব বই, পডকাস্টসহ সব কনটেন্ট ১ বছরে অ্যাকসেস করতে পারবেন। আমাদের সব ধরনের বই রয়েছে। তবে ধর্মীয়, আত্ম-উন্নয়নমূলক ও বাংলা ক্লাসিকের পাঠক বেশি।’

নতুন বই প্রকাশের বিষয়ে অমিত বিশ্বাস বলেন, ‘ইচ্ছে করলে নতুন লেখকরা এখান থেকে বই প্রকাশ করতে পারেন। বই প্রকাশের পুরো খরচ কাব্যিক বহন করবে। ভয়েস দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর খরচ আমাদের। যদি বইটি ভালো সাড়া ফেলে, অবশ্যই লেখকের সঙ্গে আমরা মুনাফা শেয়ার করব।’

ই-বুক এবং অডিও বুক-দুটি দিক নিয়েই কাজ করছে বইঘর। বইঘরের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ই-বুক এবং অডিও বুক দুটোই রয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজারের কাছাকাছি হবে। আমাদের বই পড়তে হলে অন্য অডিও এবং ই-বুকের মতো কিছু প্ল্যানও রয়েছে; তবে পাঠক চাইলে প্রতি বই কিনতে পারবে।’

হায়দার মোহাম্মদ জিতুর লেখা ‘তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা: শেখ হাসিনা’ বইটি এনেছে শব্দশৈলী। সংকলিত গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানুষের অনুভূতি হয়ে ওঠার পট চিত্রিত করে, ভবিষ্যৎকে ইঙ্গিত দেয়। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ইস্যু, দেশের উন্নয়ন, অর্জন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিকতায় দেশের অবস্থান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছুটে চলা উঠে এসেছে বইটির প্রবন্ধগুলোতে। 
শেষ শিশুপ্রহরে জমজমাট বইমেলা 

গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন। বইমেলার নিয়ম অনুযায়ী ছিল শেষ শিশু প্রহর। শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে শিশু প্রহর। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃষ্টির পানিতে বইমেলা প্রাঙ্গণ বেশ কর্দমাক্ত ছিল। এতে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হলেও প্রিয় বইটি কিনতে খুদে পাঠকদের ঢল নেমেছিল গতকাল সকালে। স্টল থেকে স্টলে ঘুরে রংবেরঙের বই বেশ সময় নিয়ে নিরীক্ষা করলো তারা। পরে বাবা-মায়ের কাছে পছন্দসই বই কিনে দিতে বায়না জুড়ল।
  
গতকাল সকালে ঢাকার রামপুরা থেকে এসেছিল দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মাহিন, সঙ্গে ছিলেন তার বাবা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাজু আহমেদ। রাজু বলেন, সন্তান যেন ডিভাইস ছেড়ে বইমুখী হয়, তাই প্রতি শুক্রবার তাকে নিয়ে মেলায় আসি। মাহিন বই নেড়ে-চেড়ে দেখছে, দেখুক। এরপর যদি ভালো লাগে সে কিনুক। কেননা, ওই ভালো লাগা থেকে যখন সে বই কিনবে একটা সময় গিয়ে তার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।’ মাহিন জানাল, সে বিজ্ঞানীদের নানা আবিষ্কারের মজার গল্পের বই কিনেছে। সে পড়তে ভালোবাসে কমিকস। এমন কিছু বইও কিনেছে সে। 

ময়ূরপঙ্খী প্রকাশক মিতিয়া ওসমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছোটদের বই তৈরি অনেক ব্যয়বহুল; এখানে আর চারটে বইয়ের মতো শুধু লেখা থাকে না। এর পাশাপাশি ছবিও থাকে। যার ফলে লেখকের পাশাপাশি একজন আর্টিস্টেরও প্রয়োজন হয়। যখন একজন আর্টিস্ট আঁকবেন সেখানেও তো একটি বাড়তি খরচ হবে। অনেকটা বলতে পারেন, শিশুদের বই তৈরি একটি অনেক বড় বিনিয়োগ। বই তৈরিতে মূল্যবৃদ্ধিও একটি কারণ হতে পারে।’

মেলার নতুন বই
শনিবার বইমেলায় নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ১৩৮টি বই। এর মধ্যে দ্বিমত প্রকাশনী থেকে এসেছে খোকন দাসের বই ‘পাহাড় ও সমতলের গল্প’। এদিকে বই মেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘মাদকের সাতসতেরো’ ও ‘কিশোর গ্যাং- কীভাবে এলো, কীভাবে রুখবো’ বই দুটি। কর্মক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সচেতনতামূলক বই ২টি লিখেছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গতকাল শনিবার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বই দুটি এবার মেলায় ব্যাপক সারা পাচ্ছে। পাঠকেরা আমাকে খুব আশ্বস্ত করছে এবং বইটি কিনছে বলে জানাচ্ছেন।’

মেলার নানা আয়োজন 
শনিবার বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মোহাম্মদ রফিক এবং স্মরণ : খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিকের কবিতার মধ্যে স্মৃতির ভাগই বেশি। স্মৃতি আর কবির চারপাশের সত্তা তার কবিতায় মিলেমিশে আছে।

তারুণ্যের প্রথম প্রহরে বামপন্থি রাজনৈতিক সক্রিয়তা আর কৈশোরে সংঘটিত দেশভাগ এবং দেশভাগের ফলে ভিটামাটি তথা দেশ ছেড়ে মানুষের দেশান্তরি বা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনার মধ্যে যে বেদনাবোধ নিহিত, সেই বেদনাতুর স্মৃতিই তাকে কবিতা রচনায় প্রেরণা দিয়েছে।

অন্যদিকে যে কজন শিশুসাহিত্যিক প্রতিভার দীপ্ত আলোয় আমাদের শিশুসাহিত্যকে উদ্ভাসিত করেছেন, খালেক বিন জয়েনউদদীন তাদের মধ্যে অন্যতম। মূলত শিশুসাহিত্যিক হলেও তিনি জীবনী-প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদি রচনার ক্ষেত্রেও রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। লোকসাহিত্যের ঐতিহ্যকে ধারণ করে খালেক বিন জয়েনউদদীন গড়ে তুলেছেন ছড়ার আধুনিক অবয়ব। 

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন তাদের সাহিত্যপ্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে তারা এই দেশ ও গণমানুষের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পালনের চেষ্টা করেছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা ও ইতিবাচক মনোগঠনে তাদের সাহিত্যকর্ম অপরিসীম ভূমিকা রাখবে। 

শনিবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক শাহনাজ পারভীন, কবি ও অনুবাদক সাইফুল ভূঁইয়া, কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন স্মৃতি এবং গবেষক মনিরুজ্জামান শাহীন। 

বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজনে গতকাল মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ এএম
ভাঙল প্রাণের মেলা, ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি

একুশে বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। গত বছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। মেলার শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে নতুন ১৪৯টি বই। এবার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫১। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০। গতকাল  শনিবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ।

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ আর রহস্য-রোমাঞ্চ; কথাসাহিত্যের নানা শাখার কবি-গল্পকার-কথাসাহিত্যিকদের নানা বইয়ের সম্ভার নিয়ে মাসজুড়ে বাঙালি পাঠকের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ভাব বিনিময়, মিথস্ক্রিয়ায় এই বইমেলা হয়ে উঠেছিল বাঙালির প্রাণের মেলা। 

গতকাল ৩১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনে তেমন ভিড় না থাকলেও বইপ্রেমী পাঠকের হাতে ছিল বই। শেষ দিনে তারা প্রিয় বইটি কিনে নিয়েছেন। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে জমে ওঠে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের প্রাণময় আড্ডা।

রীতি অনুযায়ী গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। প্রকাশকদের অনুরোধে মেলার সময় দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। এরই মধ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সেই শোকের আবহ ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণেও। বিষণ্নতার শোকার্ত পরিবেশ থাকায় মিইয়ে পড়ে শেষ দিনের মেলা।

সমাপনী আয়োজনে বইমেলা স্থানান্তরের ইস্যু 
বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানেই রাখার ব্যবস্থা করব।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে।  অভিভাবকদের বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন।’ সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘বইমেলার স্থায়ী কাঠামোর নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলছে। কোনো একটি স্থায়ী জায়গায় বইমেলা করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন।’

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা।’

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বাংলা একাডেমি। গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে এই পুরস্কারগুলো তুলে দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। 

২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
এ বছর অমর একুশে বইমেলা নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট); নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার); অন্যপ্রকাশ পায় কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। 

কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
ছবি : খবরের কাগজ

কাজ করেই নিজেকে প্রমাণ করতে চান নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। এ জন্য সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাইলেন তিনি৷ 

শনিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷ 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন৷ 

পরে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি আমি বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে এসেছিলাম৷ জীবনে চিন্তাও করিনি আমি বইমেলার সমাপনী আয়োজনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হাজির হবো৷
 
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিশ্রুতি করতে চাই না৷ আমি কোনো প্রমিজে বিশ্বাস করি না৷ আমি কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই৷ প্রতিশ্রুতি তো ভঙ্গ হয়ে যায়৷ আমরা সবাই মিলে যদি একটি টিমওয়ার্ক করতে পারি, তাহলে কাজটি ভালো হবে৷’

বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে৷ এই বইমেলা প্রস্থানের বিষয়ে কথা উঠেছে৷ কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার চেষ্টা করা হবে৷’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে৷ অভিভাবকদের উদ্দেশে বলব, প্রতি সপ্তাহে শিশুদের হাতে অন্তত একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন৷ 

জয়ন্ত সাহা/অমিয়/

পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
পর্দা নামল চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার
ছবি: খবরের কাগজ

দীর্ঘ বাইশ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলায় চলা অমর একুশে বইমেলার। 

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিরীষতলায় আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রাণের বইমেলার জন্য আরও এক বছরের অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো। 

তবে শেষ দিনের মতো আগামীকাল শনিবারও বইমেলা চলবে। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত শুক্রবারের সমাপনী অনুষ্ঠান লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।  

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন দেশ গড়ার ইচ্ছা বাঙালির মনে জন্ম নিয়েছিল। অনেক দেশে গিয়েছি। কোনো দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড কেবল বিদেশি কোনো ভাষায় লিখতে দেখিনি। আমরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে ভাষাপ্রেমের চেতনা যেন আমাদের অনেকের মাঝে কমে গেছে। আমি কিছুটা হতাশাবোধ করতাম। তবে এবার বইমেলায় তরুণদের যে সাড়া দেখেছি তাতে আমি আশাবাদী। তরুণরা জাগলে বাংলা ভাষা বাঁচবে, বাঙালি বাঁচবে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে বাঙালি জাতি। আসুন আমরা বাঙালি হই।’ 

এ সময় আগামী বছর আন্তর্জাতিক মানের চট্টগ্রাম বইমেলা আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মেয়র।

মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ এএম
আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ০২:২১ পিএম
মনিপুরী ভাষায় সাহিত্য চর্চা বেগবান নয়
শুভাশিস সিনহা

এবারের বইমেলায় মাছরাঙা প্রকাশনী থেকে এসেছে আমার দীর্ঘ কবিতার বই ‘কাহার বাতাস আসি লাগে।’ দীর্ঘ কবিতার বিষয়ে আমি বলব, আমাদের দেশে কবিতার ধারণা এসেছে অনেক পরে। পাঁচালি, গীতি, রামায়ণ, মহাভারত বা বিষাদসিন্ধু-যা কিছু ছিল আমাদের দেশে, তার সবই ছিল দীর্ঘকাব্য বা মহাকাব্য। কবিতায় সাধারণত ছোট আকারে আমরা নিজের মনের ভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। তবে দীর্ঘ কবিতার মধ্যে একটা ভ্রমণ থাকে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত করেন কবি। কোনো গল্পের মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে এগোই, কবিতায় তো আমেজ বা ব্যঞ্জনা সেভাবে থাকে না। সেখানে দীর্ঘ কবিতায় পাঠককে অনেক সময় ধরে রেখে নিজের কথা বলার চেষ্টা করেছি।

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’ বইটির নামকরণে ‘কাহার’ শব্দটি সাধু ভাষা। চলতি ভাষার অনেক কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ সাধু শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আর ‘বাতাস’ শব্দটির যোজনা হলো, এটি করে কবিতায় একটি আমেজ তৈরির চেষ্টা করেছি। অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এটি প্রেমের কবিতা কি না। আমি বলছি, এটি প্রেমের কবিতা নয়। 

‘কাহার বাতাস আসি লাগে’-দীর্ঘ কবিতা আমাদের যাপিত জীবনের গল্প বলে। আমাদের মন এমন এক পরিবর্তন চায়, যাতে আমরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সময়ের সঙ্গে মেলাতে পারি। সব মানুষের ভেতরে একটা অবরুদ্ধ সময় কাটে। ওই জড় সময়ে আমরা আশা করি কোনো একটা বাতাস আসবে। স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’তে আমরা দেখি, একটা গডো আসবে। এখানে আমি সেই আবহ নিয়ে এসেছি। এখানে আমি আলোড়িত হয়েছি, শিহরিত হয়েছি নতুন ভাবনায়। অনুরণিত হয়েছি ওই বাতাসের আকাঙ্ক্ষায়।

আমি মণিপুরি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি। মণিপুরি সাহিত্যের চর্চার বিষয়ে বলব, তা খুব বেশি বেগবান হয়নি। ওখানে কৃতবিদ্য শিল্পকলার ব্যাপারটি যেমন শক্তিশালী, তেমনিভাবে কিন্তু লিখিত সাহিত্যের চর্চা বেশ দুর্বল। তারপরও আমরা বেশ কজন চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, মণিপুরি ভাষায় কবিতা ও গল্প অপ্রতুল। উপন্যাসও সেভাবে নেই। মণিপুরি ভাষায় আমার ৯টি বই আছে। আমার ইচ্ছা আছে, আমি মণিপুরিদের নিয়ে একটি বৃহৎ উপন্যাস লিখব। বাংলা ভাষায় লেখা হলেও আমার উপন্যাসের চরিত্র, গল্প সব কিছুর পটভূমি হবে মণিপুরি সমাজ ব্যবস্থা।

কবি, নাট্যকার

অনুলিখন: জয়ন্ত সাহা

শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ এএম
শোকের আবহ, ভাঙছে মিলনমেলা

বসন্তবিকেলে সব উচ্ছ্বাস থেমে গেছে, প্রাঙ্গণজুড়ে সব মুখ বিবর্ণ-পাণ্ডুর। বাঙালি পাঠকের বৃহৎ মিলনোৎসব অমর একুশে বইমেলার শেষ বেলায় গতকাল শুক্রবার বইপ্রেমীদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। গতকাল বেলা ১১টায় দুয়ার খোলে অমর একুশে বইমেলার। ছুটির দিনে দুপুর গড়াতেই বইমেলা লোকারণ্য হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা।

প্রকাশকরা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তার ছাপ পড়েছিল অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণেও। অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীবাসী থমকে গেছেন। তারা শোকে স্তব্ধ। যারা বই কিনতে এসেছিলেন, তাদের সবার মুখে কেমন বিষাদ, কেমন এক আতঙ্ক দেখেছি। বইমেলার শেষভাগে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা নেই। অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘শনিবার বইমেলা শেষ হয়ে যাবে। আজ যে উচ্ছলতা প্রত্যাশা করেছিলাম তরুণ পাঠকদের, তা নেই। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে বইমেলায়।’ অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা তার মোবাইলে ধারণ করা এক ভিডিও দেখিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) বেলা ৩টা পর্যন্ত মেলায় তেমন কোনো দর্শক-পাঠক ছিলেন না। হাতে গোনা যারা এসেছেন, তারা অবশ্য কিছু বই কিনেছেন।’

অমর একুশে বইমেলা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রকাশকদের অনুরোধে বইমেলার সময় আরও দুই দিন বাড়িয়ে দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বইমেলার শেষ দিন আজ শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, শেষ হবে রাত ৯টায়। 

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টির বেশি। প্রকাশকরা জানান, নতুন বইয়ের সংখ্যা আদতে আরও বেশি। নতুন-পুরোনো বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি বইমেলায় পাঠক তার পছন্দের মানসম্মত বইটি খুঁজে পেলেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তর জানতে খবরের কাগজের প্রতিবেদক কথা বলেন বেশ কজন পাঠকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘মেলায় গুটিকয়েক প্রকাশনী মানসম্মত বই প্রকাশ করে। তাদের বুকলিস্ট দেখে বই কিনেছি বেশ কিছু। কিছু প্রকাশনীতে আমার প্রিয় লেখকদের বই রয়েছে। সেসব বই খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে।’ একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক লতিফুল হক বলেন, ‘ছোট প্রকাশক হিসেবে যাদের অনেকে অবজ্ঞা করেন, সেসব প্রকাশনীতেও কিন্তু তরুণ লেখকদের ভালো মানের বই থাকে। তাদের বইয়ের প্রচার হয়তো একটু কম। তবে একটু খোঁজ করলে সেখানে বইগুলো পাওয়া যায়।’ 

বই বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

বইমেলার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকাশকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ান রহমান জুয়েল বলেন, ‘গতবারের মেলার চেয়ে এবার বই বিক্রি ২০ শতাংশ কমে গেছে। শুক্রবার বই বিক্রির পরিমাণ একটু বেশি হওয়ার আশা করলেও তা হয়নি। পাঠক বইমেলা থেকে না, অনলাইন বুকশপে বই কিনতে এখন বেশি আগ্রহী।’ অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘শুরুর দিকে বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো থাকলেও শেষ দিকে এসে তা হঠাৎ কমে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, বই বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তবে ব্যাপার হলো মানুষ তার আর্থিক সংকট সামলে যে বই কিনতে আলাদা অর্থ ব্যয় করবে, সেদিন নেই।’ অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন, ‘অনুপমের মিলন নাথ, আকাশের আলমগীর শিকদার লোটন, কাকলীর এ কে নাছির আহমেদ সেলিম জানান, তাদের প্যাভিলিয়নে বই বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। নাছির আহমেদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনীতে বই বিক্রির পরিমাণ ভালো হওয়ার কারণ হলো হুমায়ূন আহমেদ। তার রচনাবলির বিশাল সম্ভার রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামের আলাদা পাঠক রয়েছে। তাদের বইয়ের চাহিদাও তুমুল ছিল।’ 

জার্নিম্যান বুকসের স্বত্বাধিকারী কবি তারিক সুজাত বলেন, বইমেলায় আগত দর্শক-পাঠক সংখ্যা কত, তা জানতে বাংলা একাডেমি একটি ডেটাবেজ করতে পারে। সেখানে আগতরা নাম নিবন্ধন করে আসবেন। নিবন্ধিতদের কাছে বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্যগুলো জানিয়ে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠানো যেতে পারে। মেলাকে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিয়ে আসতে হবে। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বইমেলায় বিশ্বের নানা দেশ থেকে লেখক-প্রকাশক ও অনুবাদকদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলা ভাষার বইগুলো কীভাবে তারা অনুবাদ করবেন, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে আলোচনা হতে পারে, কপিরাইট ইস্যু নিয়েও কথা হতে পারে।’ অনুপমের স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বলেন, ‘বইমেলার কাঠামোগত পরিবর্তন করা দরকার। আয়োজক হলো বাংলা একাডেমি, প্রকাশকরা হলেন অংশগ্রহণকারী। বইয়ের মান, সাহিত্যের বাজার এসব নিয়ে যদি কাজ করতেই হয়, তবে বাংলা একাডেমিকে একটি আলাদা বিভাগ খুলতে হবে। তারা শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক কাজগুলো করবে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস না, বইমেলা নিয়ে বছরজুড়েই কাজ করতে পারেন তারা।’

বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, এবার ভালো বইয়ের পাঠকের সংখ্যা অনেক। মেলায় সিরিয়াস পাঠক বাড়ছে। তারা গল্প, কবিতা ছেড়ে সমকালীন সাহিত্য, সমালোচনা বা ইতিহাসের বইয়ের যে চাহিদার কথা আমাদের জানিয়ে গেলেন, সন্তানদের হাতে যেসব বই তুলে দিলেন, তাতে আমরা জানলাম যে সামনে আমাদের কী ধরনের বই প্রকাশ করতে হবে।’

মেলার নতুন বই 

গতকাল বইমেলার নতুন বইয়ের স্টলে জমা পড়েছে ২১৯টি বই। কথাপ্রকাশ এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর ‘উনিশ শ একাত্তর’; অবসর এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হাসান হাফিজ, আলী রীয়াজ ও অন্যান্যর ‘স্কুলদিনের বই পড়া’; গণপ্রকাশ এনেছে পাভেল রহমানের ‘সেইসব দিনগুলি’; গ্রন্থিক এনেছে তোফায়েল আহমেদের ‘সংস্কার সংলাপ: সূচনা সূত্র’; সৌম্য প্রকাশনী এনেছে মেসবাহ কামালের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা’; নান্দিক এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘সে এক ঘটনা বটে’ ও পবিত্র সরকারের ‘খেয়ালিমেরিক’।

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্যসচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।