শেষ পর্যন্ত না গেলে আমরা আসলে বুঝতে পারব না, মেলায় পাঠক বেড়েছে নাকি কমেছে। তবে করোনার আগে পর্যন্ত আমাদের বই বিক্রির যে একটা রেঞ্জ ছিল, তার চেয়ে কিছুটা মন্থর।
পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে আমাদের। খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। একজন লোকের বেতন কিন্তু বাড়ছে না, আয় বাড়ছে না। বইটা হচ্ছে পরের অপশন। আমার সখ হচ্ছে বই পড়া, আমার টাকা থাকলে তো আমি পড়ব।
যারা পাঠক, তারা বইয়ের লোভে আসেন মেলার মাঠে। যখন দামটা দেখেন, তারা হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের দোষ নেই যে তারা কিনতে পারছেন না। যে কাগজের দাম গত বছর ছিল ১৮০০ টাকা রিম, ৫০০ শিট কাগজ, এখন সেটি ৩৪০০ টাকা। বইয়ের দাম তাই বেড়েছে। অন্যান্য উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এ কারণে বইয়ের দাম বাড়তি। পাঠকের তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে কেনার। আগে যে পাঠক এসে ৫ হাজার টাকায় ১২টি বই কিনে নিতেন, এখন হয়তো তিনি ৫ বা ৬টি বই নিতে পারছেন। পাঠককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি এটার জন্য দায়ী।
আগে একটা বিষয় কাজ করত যে আমার ভাষা, আমি পড়তে পারি, আমি পড়ছি, ওই নেশা থেকেই আমার চলে আসা এই পেশায়। এখন দেখি খুব সুন্দর জায়গায় এসেছি, যেটা নিয়ে গর্ব করতে পারি। আমি যে প্রকাশক হলাম বা এখানে এলাম, সেটা একটা টান থেকেই এসেছি। তখনকার যে মেলাটা বাংলা একাডেমির ভেতরে হতো ওটা বেশ জমজমাট হতো। তখন মেলাটা খুব আঁটসাঁট ছিল। সে সময় অল্প জায়গায় মানুষ এলে বেশ ভিড় হতো। তখন ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা লিটল ম্যাগ করত, আরও অনেক কিছু করত। আমরাও অনেক কিছু করেছি। ওই ইমেজটা কিন্তু এখন আর দেখি না।
মেলা নিয়ে আবেগ তো কিছু থাকবেই। তার ওপরে কথা হচ্ছে এটা পেশা। আমি চাইব যে, আবেগ থাকবে আবেগের জায়গায়, ব্যবসা থাকবে ব্যবসার জায়গায়। এই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। সবমিলিয়ে আমরা একটি স্বতঃস্ফূর্ত মেলা দেখতে চাই।
এবার পার্ল থেকে আমরা অনেক কম বই করেছি। মানে বলার মতো না। ৭-৮টি বই করেছি। একটা গুজব ছড়িয়েছিল আগে, নির্বাচনের সময়, জানুয়ারি মাসে আমরা মেলার আগে যে পে-অর্ডার জমা দেই তার নোটিশ পেয়েছিলাম। তার আগে পর্যন্ত আমরা জানতাম না, শেষ পর্যন্ত মেলা হবে কি হবে না। কারণ একবার গুজব ছড়িয়েছিল যে, মেলা এখানে করতে দেবে না, ওটা নাকি চলে যাবে বাণিজ্যমেলার ওখানে। এসব নিয়ে আমরা প্রোডাকশন কিন্তু অফ করে দিয়েছি। আমি তো নতুন জায়গা চিনি না। ওখানে গেলে আমার ইনভেস্টমেন্ট নষ্ট হবে। এ জন্য খুব সিলেক্টিভ হয়েছি, কম বই করেছি এবার।
তরুণ বা বৃদ্ধ, এ বিষয়গুলো আমরা হিসাব করি না। আমার কথা হলো পাণ্ডুলিপি জমা দেবে, পড়ব। যদি মনে হয় যে, পাণ্ডুলিপির মধ্যে সাহিত্য আছে বা ছাপার যোগ্য, পাবলিক ডিম্যান্ড আছে। তাহলে আমরা ওই বইটা ছাপব, যা ইচ্ছে লিখে নিয়ে এলে আমি ছাপব, এটা কেন করব? এতে তো পাঠককে ঠকানো হবে। আমি যখন এটা বিক্রি করতে যাব, পাঠককে বলতে হবে এটা। যদি এটাতে কোনো সাহিত্যমান না থাকে, আমাকে মিথ্যা বলতে হবে। পাঠক ঠকবেন। এতে তারা বইয়ের প্রতি বিমুখ হবেন। কেন এই কাজ করব? এ জন্য আমরা মান যাচাই করি।