ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

যথাসময়ে বইমেলা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১২ পিএম
যথাসময়ে বইমেলা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা
অমর একুশে বইমেলা। ফাইল ছবি

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের অংশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে বইমেলার আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। বইমেলা পরিচালনা কমিটি বলছে, অমর একুশে বইমেলার আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করা হলে যথাসময়ে বইমেলা শুরু করা যাবে না। বিষয়টি উল্লেখ করে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। 

চিঠিতে মোহাম্মদ আজম লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ আয়োজনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বরাদ্দ পেয়েছে। বইমেলার প্রস্তুতি, বিশেষত স্টল নির্মাণের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর একই সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্যান্য সমাবেশ ও কার্যক্রম আয়োজনের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। এতে বইমেলা হুমকির মুখে পড়েছে। একই সময়ে অন্য কোনো সমাবেশ উদ্যানে হলে বইমেলা আয়োজন করা অসম্ভব।’

এবারের অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বইমেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া স্থানে অন্য কোনো সভা_সমাবেশের অনুমতি থাকলে তা বাতিল করতে বলেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

বইমেলা ২০২৫-এর পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন জানান, বইমেলার স্টল নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা গণপূর্ত সার্কেলের এক চিঠি থেকে জানা গেছে, আজ শুক্রবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিকের অংশ (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রান্তে) ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুব কনভেনশন আয়োজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে সেখানে বইমেলার স্টল নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। 

বাংলা একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে বইমেলার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলেন একদল ব্যক্তি। তারা সম্মেলনের জন্য উদ্যান ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলেন। এরপর কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তরকে জানায় মেলা পরিচালনা কমিটি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, ‘আমাদের সম্মেলন হয়ে গেলে এর পর থেকে কাজ করার জন্য তো আরও সময় থাকবেই। বইমেলা আয়োজনে সমস্যা হবে না।’

দর্শনার্থীর পদচারণে মুখর বইমেলা

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
দর্শনার্থীর পদচারণে মুখর বইমেলা
চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর। ছবি: খবরের কাগজ

সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর। বিকেল থেকে মেলায় ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার দিকে প্রতিটি স্টল ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীতে ঠাসা। প্রকাশনা সংস্থার মালিকরা ছিলেন খুশি।

মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনূসের সঙ্গে। তিনি জানান, কিছু বই কেনার জন্য তিনি মেলায় এসেছেন। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হলেও আজ প্রথমবার তিনি মেলায় আসার সময় পেয়েছেন। মেলা ঘুরে যদি কোনো বই পছন্দ হয় তাহলে পরিকল্পনা করা বইয়ের পাশাপাশি তিনি সেগুলোও কিনবেন।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেলার স্বাধীন প্রকাশনা স্টলে দেখা মেলে দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বীর প্রতীকের। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বই কেনা-না কেনা এটা বড় কথা নয়। মেলায় এলে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। কয়েকটি বই ঘেঁটে দেখলে বই কেনার আগ্রহ জন্মে।’ মেলার পরিবেশ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সুফিবাদ ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘আমি প্রতিবার মেলায় আসি। এবারও এসেছি। বই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। বই পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তা কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারে না। বইয়ের সঙ্গে থাকলে মন ভালো থাকে।’

স্বাধীন প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন হাসান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘মেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণে আমরা খুশি। কেনা-বেচা ধীরে ধীরে বাড়ছে। দিন যত গড়াবে মেলায় পাঠকের আনাগোনা তত বাড়বে। এতে বিক্রিও বাড়বে।’

ছুটির মেজাজে তৃষ্ণার্ত পাঠক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ এএম
ছুটির মেজাজে তৃষ্ণার্ত পাঠক
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

গতকাল শুক্রবার ছিল বইমেলার সপ্তম দিন। ‘মেলায় যাইরে… মেলায় যাইরে… / লেগেছে রমণীর খোঁপাতে/ বেলি ফুলের মালা/ বিদেশি সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা/ বাসন্তী-রং শাড়ি পরে ললনারা হেঁটে যায়।’ বেলি ফুলের মালা এ সময়ে দুর্লভ। কিন্তু গতকাল মেলায় অন্য নানা মৌসুমি ফুলে সাজুগুজু করা বাসন্তী-রং শাড়ি পরা ললনাদের দেখা পেয়েছি। সেই সঙ্গে উৎসবের পোশাকে পুরুষ-শিশু-প্রৌঢ় মানুষের দেখা মিলেছে। সবাই ছিলেন উৎসবের মেজাজে। পাঠতৃষ্ণার্ত পাঠকের সংখ্যাও ছিল উল্লেখ করার মতো। এটা আমার অনুমান নয়, প্রকাশকদের ভাষ্য।

আগেই ঠিক ছিল, খবরের কাগজের সম্পাদক কথাশিল্পী মোস্তফা কামাল মেলায় যাবেন। সঙ্গী হব আমি, খবরের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন আর ইভেন্ট ব্যবস্থাপক আতিয়া সুলতানা। কিন্তু পথে নেমেই গত বৃহস্পতিবারের মতোই অবস্থা হলো। শাহবাগের চারদিক ঘিরে যানজট। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রভাবে এই দুর্দশা।

কিছুটা হেঁটে দোয়েল চত্বর দিয়ে মেলায় ঢুকতেই মেলার মেজাজ বোঝা গেল। লোকে লোকারণ্য। প্রথম লক্ষ্য ছিল বাংলা একাডেমি প্রান্তের ‘খবরের কাগজে’র স্টল। সময় বিকেল পাঁচটা। বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে তখন সেমিনার চলছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে খুব বেশি জনসমাগম চোখে পড়েনি। আসলে এই এলাকায় প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, সেবামূলক বা মিডিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি শাখারও স্টল থাকে। এবারও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। গতকালও ওদিকটাতে লোকজনের আগমন তাই তেমন একটা চোখে পড়েনি।

লেখক মোস্তফা কামাল বইমেলা নিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে চমৎকার কিছু কথা বললেন। ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। সর্বজনীন মেলা। এখানে অনেকে দর্শক হিসেবে আসেন। বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়। মেলা তো এমনই হয়। এর মাঝেই মানুষ বই কিনছে। পাঠক যদি মননশীল ও সৃজনশীল হয় তাহলে আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে, মানুষে মানুষে যে হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায়, সেসব কমবে। বই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।’ 

মেলার মূলকেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেখানে যখন আমরা চারজন পৌঁছুলাম, তখন সন্ধে ছয়টা। থইথই করছে মানুষ। গণসমাবেশের চেয়েও লোকসমাগম বেশি। এ রকমটাই হওয়া স্বাভাবিক। বইমেলার প্রথম শুক্রবার। এবার লেখক মোস্তফা কামালের পাঁচটি নতুন বই বেরিয়েছে অনন্যা থেকে। বইগুলো হচ্ছে ‘পারমিতার সুখ-দুঃখ’, ‘কবি ও একজন নর্তকী’, ‘ফটকুমামা গোয়েন্দাসমগ্র-২’, ‘ফার্স্ট বয়’ এবং ‘গুপ্তধন ও অপু’। এই শেষের বইটিই কিনছিল খুদে পাঠক ওয়াসিফ। সে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে রাজশাহী থেকে মেলায় এসেছে। ওয়াসিফের বাবা এম এ বশির রাজশাহী কলেজের লাইব্রেরিয়ান। প্রতিবছর তিনি সন্তানদের নিয়ে রাজশাহী থেকে বইমেলায় আসেন। পুত্রের বই পড়ার আবদার মেটান সানন্দে। ওয়াসিফ লেখক মোস্তফা কামালের অটোগ্রাফ নিল। দেখলাম সে আরও দুটি বই কিনল- মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ত্রিনিতি রাশিমালা’ ও ‘বিজ্ঞানী সাফকাত আলীর আজব আজব আবিষ্কার’। অনন্যা এবার ব্যতিক্রমী দু-তিনটি বই প্রকাশ করেছে। গতকাল সেই বইয়ের একটি ‘দ্রোহের গ্রাফিতি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ মেলায় এনেছে তারা। এই বইটি রয়্যাল সাইজে চার রঙে ছাপা। গ্রাফিতির ছবি দিয়ে সাজানো। ছবিগুলো তুলেছেন রাজিব হোসেন। তিনিই বইটির স্বত্বাধিকারী। 

অনন্যাতেই দেখা হয়ে গেল অন্বয় প্রকাশের হুমায়ুন কবির ঢালির সঙ্গে। ঢালি নিজে শিশুসাহিত্যিক। শিশু-কিশোরদের বই প্রকাশ করেন। এবার অন্বয় মেলায় এনেছে ৫টি বই। ঢালি বললেন, ‘বইমেলার অবস্থা আগের মতো রমরমা নেই। স্টলের সংখ্যা বেশি বলে লোকজন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। তেমন জনপ্রিয় লেখকও নেই। তরুণ লেখকরা এখন ওয়ানটাইম লেখক। একটা বই বের করল তো শেষ। আর সেই লেখককে খুঁজে পাওয়া যায় না। মৌসুমি লেখক বলা যায় এদের। এর অবশ্য একটা ইতিবাচক দিক আমি দেখছি।’ ঢালি বললেন, ‘নতুন ভালো বইয়ের অভাবে জনপ্রিয় ক্লাসিক বা চিরায়ত বইয়ের প্রতি একশ্রেণির পাঠকের আগ্রহ বাড়ছে। এখন আর আগের মতো নির্দিষ্ট কোনো লেখককে কেন্দ্র করে বই পাচ্ছে না পাঠক। এ রকম কোনো লেখকের কথা আপনি বলতে পারবেন না।’ তবু এর মাঝে অনন্যার বিক্রি ভালো হচ্ছিল গতকাল। জানালেন অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক।

অনন্যা থেকে বেরিয়ে ঢুকে পড়লাম সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে। অনন্যার মতোই সময়ের প্যাভিলিয়ন ঘিরে পাঠকদের ভিড়। লেখক মোস্তফা কামাল উপস্থিত হয়েছেন। উপস্থিত প্রকাশক ফরিদ আহমেদ, এনাম আবেদীন, আমি ও অভিনেতা ডা. এজাজ। হুমায়ূন আহমদের নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতিমান এজাজের তিনটি বই বেরিয়েছে মেলায়। সবগুলোই হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে লেখা। ডা. এজাজকে রসিকতা করে বললাম, ‘আপনি তো তিন শ টাকার ডাক্তার। আপনার কাছে আমাকে নিয়মিত যেতে হবে চিকিৎসা করাতে।’ তিনি স্মিত হাসলেন। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল হুমায়ূন আহমদের লেখাই তাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করেছে। লিখেছেনও হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে। সবই স্মৃতিচারণা। আরও অনেক কথা হলো তার সঙ্গে। সেই কথাগুলো আপনারা আমার গ্রহণ করা ভিডিও সাক্ষাৎকারে শুনতে পারবেন। ভিডিওটি খবরের কাগজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে (ফেসবুক) আপলোড করা হবে। আগ্রহীরা দেখতে পারেন।

আগের দিন অবরোধের প্রভাবে মেলা থেকে বেরিয়েছিলাম অনেকটা নির্ভার হয়ে। লোকসমাগম তেমন ছিল না। ভিড়ও ছিল না। কিন্তু গতকাল রীতিমতো জনসমুদ্র ঠেলে যেমন মেলায় ঢুকেছিলাম, তেমনি জনস্রোতের সঙ্গে মেলা থেকে বেরোতে রীতিমতো বেগ পেতে হলো। 

আজ শনিবার। আরেকটি ছুটির দিন। আমি নিশ্চিত  আজও মেলায় মানুষের ঢল নামবে। পাঠক কত শতাংশ থাকবে বলা মুশকিল। এ নিয়ে একটা জরিপ হতে পারে। কিন্তু আজ এই ত্রিশ বছরেও বইমেলা নিয়ে এ রকম কোনো জরিপ হয়নি। এত এত জরিপ হয়, বইমেলা নিয়ে হয় না কেন? তাহলে অন্তত বোঝা যেত আমাদের পাঠাভ্যাস কেমন। কী ধরনের পাঠক আসেন। কী ধরনের বই তারা কেনেন।

সারা বছরই বই প্রকাশ করি

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২২ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ এএম
সারা বছরই বই প্রকাশ করি
মনিরুল হক

প্রতিবছর মেলার প্রথম দিকে পাঠক সমাবেশ কম হয়। প্রথম সপ্তাহটা একটু ঢিলেঢালা থাকে। মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে ভিড় বাড়ে। কিন্তু এবার শুরু থেকেই ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। এর একটা কারণও থাকতে পারে। এবার অনেক স্টল হয়েছে। কনজাসটেড হয়ে গেছে জায়গাটা। তাই লোকজন বেশি বেশি মনে হতে পারে। তবে শুক্রবার (গতকাল) ছুটির দিন থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর পাঠক-দর্শনার্থী এসেছেন।

আমরা তো সারা বছর বই প্রকাশ করি। আমরা ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে প্রায় ৬০টির মতো বই প্রকাশ করেছি। সারা বছরে প্রকাশ করেছি প্রায় ১০০টি। এই বইগুলোর সবই আমরা মেলায় নিয়ে এসেছি। দু-একটা বই, আমার ধারণা, দু-এক দিনের মধ্যে চলে আসবে। বইমেলায় এবার আমরা সব ধরনের বই প্রকাশ করেছি। 

উপন্যাস আছে বেশ কয়েকটি। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আছেন মোস্তফা কামাল ও ইমদাদুল হক মিলন। এর বাইরে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই প্রকাশ করেছি। জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতির ওপর একটা বই প্রকাশ করেছি। বিষয় ভাগ করে করেছি। ম্যাট পেপারে চার রঙে ছাপা। কে এম রাজিব ছবি তুলে বইটির পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই করেছি। খালেদা জিয়ার ওপর গবেষণামূলক বই। লিখেছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই আছে আমাদের এই মেলাতেই। নৃতত্ত্বের ওপর একটি বই আসছে। স্বকৃত নোমানের ‘নির্বাচিত গল্প’ করেছি। ইমদাদুল হক মিলনের ছোটদের একটা বই আছে, ভালো। 

একটা কথা বলি। এখন প্রকাশনার ধরনটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে আমরা খাপ খাওয়াতে পারছি না। ধরেন, আমরা যখন প্রকাশনা করি তখন বিষয় নিয়ে ভাবি। সারা বছর সাজাই। কিন্তু এখন যারা প্রকাশক হয়েছেন, তরুণ বন্ধুরা আমার, তারা শুধু ফেসবুককেন্দ্রিক বই প্রকাশ করেন। এগুলোকে আমরা লেখাও বলি না, লেখকও বলি না। জাস্ট এল, বিক্রি হলো, শেষ হলো। আসলে একজন প্রকাশকের দায়িত্ব হচ্ছে লেখকের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করা। আমি আরেকটি বইয়ের কথা ভুলে গিয়েছিলাম বলতে। এবার আমাদের মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনল, নারী ফুটবলাররা, তাদের নিয়ে একটা বই করেছি- ‘স্বপ্নছোঁয়া আমাদের কন্যারা’। লেখক সুদীপ্ত আনন্দ। তিনি একজন স্পোর্টস রিপোর্টার। আমি মনে করেছি, এই মেয়েদের ইতিহাসের অংশ করে রাখা উচিত। হতদরিদ্র এবং খুব কষ্ট করে যে মেয়েরা ফুটবল খেলে আমাদের জাতীয় গৌরব বয়ে এনেছে, তাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। সেই ত্যাগী, লড়াকু মেয়েদের কথা ভেবে বইটি করেছি। একজন প্রকাশের কাজই তো হচ্ছে এই ধরনের বই করা। দেখুন, আপনি কথা বলেন, দেখবেন, হুট করে একজন বই বিক্রি করে চলে গেল, কী বই প্রকাশ করছেন, কেন করছেন, ভাবলেই কষ্ট হয়। 

আমার প্রকাশনী থেকে একই সঙ্গে গবেষণামূলক ও সৃজনশীল বই বের করি। এই ধরনের লেখাই আমরা চাই। এটাই আমাদের কাজ। হয়তো আমরা থাকব না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থাকবে। তাদের জন্যই আপনাদের মতো লেখকদের বই করে যেতে চাই। আলু-পটোলের ব্যবসা করলে অনেক হয়তো লাভ হতো, কিন্তু বই প্রকাশেই আমার আনন্দ।

চট্টগ্রাম বইমেলায় ছুটির দিনে দর্শনার্থীর ঢল

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২২ এএম
চট্টগ্রাম বইমেলায় ছুটির দিনে দর্শনার্থীর ঢল
চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: খবরের কাগজ

গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নামে। মেলার প্রতিটি স্টল এবং গলি মানুষে ঠাসা। গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এই মেলার উদ্বোধন হয়। মেলার শুরু হওয়ার পর প্রথম শুক্রবার পান ক্রেতা-বিক্রেতারা। এ কারণে বিকেল থেকে প্রচুর মানুষ আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যার সময় মেলা প্রাঙ্গণে পা ফেলার জায়গা ছিল না। 

সরেজমিনে একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী এসেছেন। এ কারণে তাদের বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। 

বইমেলায় আসা দর্শনার্থী প্রকৌশলী ফজলুল কাদের খবরের কাগজকে জানান, তিনি পুরো মেলা ঘুরে দেখেছেন। গতকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ার সুবাদে মেলায় দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। যে হারে মেলায় মানুষ এসেছে, তার অর্ধেকও যদি বই কিনত তাহলে স্টলকর্মীদের হাহাকার করতে হতো না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত এই প্রকৌশলী পাঠকদের বইবিমুখতার জন্য স্মার্ট মোবাইলের অপব্যবহারকেই দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, ‘সব বয়সী মানুষ আজ মোবাইলে ডুবে থাকে। টিকটক দেখে। নানা ভিডিও দেখে। এসব দেখে তাদের সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ মোবাইল অতিপ্রয়োজনীয় একটি জিনিস। এর চরম অপব্যবহারের কারণে সবাই বই বিমুখ হয়ে পড়ছি। মোবাইল হওয়া উচিত শুধু কথা এবং বার্তা আদান-প্রদানের অন্যতম অনুষঙ্গ। এর বাইরে গেলেই মন-মগজ দুটিই নষ্ট করবে।’ 

বইমেলায় স্টল নিয়ে আসা সিয়ান প্রকাশনার কর্মী আবু কায়সার খবরের কাগজকে জানান, তাদের স্টলের প্রায় সব বই ধর্মীয়। তাদের স্টলে হজ-ওমরা বিশ্বকোষ নামে যে বইটি রয়েছে, তাতে হজের সব ধরনের নিয়ম-কানুন বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ এই বই পড়লে তার জন্য হজ করা অত্যন্ত সহজ হবে। 

বইয়ের কাটতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, খুব বেশি কাটতি আছে, সেটা বলা যাবে না। তবে তারা যেসব বই বিক্রি করেন, তার কাটতি সারা বছর থাকে।

‘অনুবাদ’ নামে স্টলের কর্মী মোশাররফ হোসেন খবরের কাগজকে জানান, অনুবাদ বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। তারা বেশ কিছু থ্রিলার ধর্মী বই বিক্রি করেছেন। আর শিশুদের বেশ কিছু কার্টুন ও ছড়ার বই তাদের রয়েছে। শিশুদের বইয়েরও কিছুটা কাটতি আছে। 

মোশাররফ আরও জানান, গতকাল প্রচুর দর্শনার্থী এসেছেন। সবাই বই ঘেঁটে দেখছেন। ছবি তুলছেন। কিন্তু কেনার আগ্রহ কম। যে পরিমাণ দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন তার একটি বড় অংশও যদি বই কিনে নিয়ে যেতেন, তাহলে তাদের অনেক ভালো ব্যবসা হতো। তবে তিনি আশাবাদী। যেহেতু দর্শনার্থীরা আসা শুরু করেছেন, বিক্রিও হবে।

মন খারাপের শিশু প্রহর!

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ এএম
মন খারাপের শিশু প্রহর!
ছবি: খবরের কাগজ

গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনেই ছিল প্রথম শিশু প্রহর। সেই দিনের শিশু প্রহরে শিশুদের পদচারণা আর কলতানে মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এ ছাড়া ছিল সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে খুদে পাঠক-দর্শনার্থীদের খুনসুটি। 

শুক্র ও শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকে শিশু প্রহর। আজ শুক্রবার এবারের গ্রন্থমেলার সপ্তম দিন। আজ বন্ধ রয়েছে শিশু প্রহরের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা কারণে এদিন শিশু প্রহর বন্ধ রাখে মেলা কর্তৃপক্ষ। একই কারণে শনিবারও থাকছে না শিশু প্রহর। ফলে শনিবার বেলা ২টায় গ্রন্থমেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

এদিকে এবারের গ্রন্থমেলায় শিশুদের বই নিয়ে শিশু কর্নার থাকলেও থাকছে না সিসিমপুরের আয়োজন। এর ফলে শুক্রবার মেলায় গিয়ে আশাহত হয় খুদে পাঠক-দর্শনার্থীরা। তাই তারা প্রথম শিশু প্রহর কাটায় অনেকটা মন খারাপ নিয়ে। 

শিশু প্রহর আর সিসিমপুরের আসরের অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে বাবা-মা-নানুর সঙ্গে মেলা এসেছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিতি দেবনাথ। তবে এবার সিসিমপুরের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না করতে পারায় তার ভীষণ মন খারাপ। 

অদিতি খবরের কাগজকে বলে, ‘আমি কুমিল্লার ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ি। সিসিমপুর আর শিশু প্রহরের টানেই প্রতিবছরই বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় আসি। এখানে বই কেনা হয়। সিসিমপুরের ইকরি-সিকু-হালুম-টুকটুকির সঙ্গে অনেক মজা করি। এবার একটু মন খারাপ, যদি তাদের সঙ্গে একটু আড্ডা দিতে পারতাম! তারপরও বই কিনতে পেরে ভালো লাগছে।’

অদিতির বাবা অমৃত কুমার দেবনাথ। তিনি পেশায় চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা শেষের দিকে মেলায় এসেছিলাম, তখন অনেক বই মিস করে ফেলেছিলাম। এবার সে (অদিতি) বায়না ধরেছে, যেন আমরা আগে আসি। এবার আগে এসেছি। তবে সিসিমপুরের স্টল নেই। সে জন্য অদিতি কিছুটা আশাহত। ও যখন নার্সারিতে পড়ত, তখন থেকেই আমরা নিয়মিত এ মেলায় আসছি। আমরা আশা রাখি, শিশুদের বই ও মেলামুখী করতে সিসিমপুরসহ অন্য উদ্যোগগুলো চলমান রাখা উচিত।’

এদিকে বইমেলা ও অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শুক্রবার শিশু-কিশোরের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে আসে নার্সারিতে পড়া মেহেরিমা নূর ও আরিয়ান আহমেদ। 

খবরের কাগজকে এই খুদে দুই পাঠক জানায়, সিসিমপুরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না পেয়ে তাদেরও মন খারাপ। তবে প্রতিযোগিতাতে অংশ নিতে পেরে তাদের ভালো লেগেছে। 

কথা হয় মেহেরিমা-আরিয়ানের মা মনিকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিসিমপুরের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করে। তারা এখানে খেলতে পারে। এতে বাচ্চাদের মন বেশ প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। আমরা মনে হয়, এবারের মেলায় সিসিমপুর না থাকায় বাচ্চারাও কম আসবে। তবে এমন আয়োজন রাখতে বাংলা একাডেমি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

এদিকে সিসিমপুরের অনুপস্থিতির কারণে শিশুদের বই বিক্রিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকাশনীসংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে ময়ূরপঙ্খি প্রকাশনীর ম্যানেজার চন্দনা মণ্ডল খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথম শিশু প্রহরে আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, যেহেতু মেলায় সিসিমপুরের আয়োজন থাকছে না, তাই বিক্রিতে হয়তো এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। অনেকেই বই কিনতে এসে সিসিমপুরের কথা জিজ্ঞেস করছেন। যদি বাংলা একাডেমি এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিত, হয়তো সেই আকর্ষণে খুদে-পাঠক-দর্শনার্থীরা মেলা আসার বায়না ধরত।’

এদিকে সার্বিক বিষয়ে কথা হয় অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার দুই দিন শিশু প্রহর থাকছে না। আর সিসিমপুরের বিষয়টি হলো, তারা আমাদের কাছে এবার আবেদন করেনি। তবে আমরা অভিভাবকদের বলব, তারা যেন শিশুদের বইমেলা নিয়ে আসেন। আর বাচ্চার পছন্দের বইগুলো যেন কিনে দেন। তবে সিসিমপুর নেই বলে বই বিক্রিতে প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তবে আয়োজনটি থাকলে ভালো হতো।’