
২৬ দিনব্যাপী চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলার ১৬ দিন পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে মেলায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য রাখা কর্নারে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে মাত্র ১১টি। অথচ মেলায় অংশ নেওয়া স্টলগুলোতে প্রতিদিন কোনো না কোনো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে।
লেখকদের অভিযোগ, চট্টগ্রামের বইমেলায় মোড়ক উন্মোচনের জন্য যে কর্নার রাখা হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। অন্যদিকে, ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে উন্মোচন ফি রাখা হয়েছে বেশি।
একাধিক লেখকের সঙ্গে আলাপকালে খবরের কাগজকে তারা জানান, সাংস্কৃতিক ও আলোচনা মঞ্চের বিপরীত দিকে রাখা হয়েছে মোড়ক উন্মোচনের কর্নার। সব দর্শক মেলার মঞ্চের দিকে চেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অথবা আলোচনা সভা উপভোগ করছে। তাদের পেছনে কেউ কোনো বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলে সেদিকে কারও দৃষ্টি থাকে না। এ কারণে ওই জায়গায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন না করে স্টলেই তারা কাজটি করে ফেলছেন।
লেখক অভীক ওসমান খবরের কাগজকে জানান, ঐতিহ্য প্রকাশনা থেকে তার একটি আত্মজীবনী ‘আমি অকৃতী অধম’ প্রকাশ করেছে। তবে এখনো মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান করেননি তিনি। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি আলাদা জায়গায় করলে সেখানে লেখকরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের বই এবং বর্তমান লেখালেখি নিয়ে নিজেদের মনোভাব তুলে ধরতে পারেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে এবং সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এই মেলার আয়োজন হচ্ছে। এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে তাদের দৃষ্টি দিতে হবে। ভবিষ্যৎ তথা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার মতো আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করতে হবে।
যেখানে বাঙালি জাতির ইতিহাস, ’৫২ থেকে ’৭১ হয়ে ’২৪ পর্যন্ত সব কিছু তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে। অতীতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম থাকত। যেখানে সাংবাদিকরা লেখকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পেতেন। তাতে মেলার প্রচার-প্রসার বাড়তো। তা ছাড়া মেলার মঞ্চে ঘোষণা দেওয়া যায়, কোন কোন নতুন বই মেলায় আসছে।
আরেক লেখক শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের বইমেলার মূল মঞ্চের বিপরীতে মোড়ক উন্মোচনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে শব্দের জন্য মোড়ক উন্মোচন করা সম্ভব নয়। আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘দ্বিচারিতা’র মোড়ক উন্মোচনের জন্য ফরম সংগ্রহ করেও পরে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোড়ক উম্মোচন উপযোগী জায়গা নির্ধারণ করতে না পারলে মেলা কর্তৃপক্ষ মূল মঞ্চে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় আলাদা সময় বরাদ্দ করতে পারেন। এতে লেখকরা অনুপ্রাণিত হবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি সাহাব উদ্দিন হাসান বাবু খবরের কাগজকে জানান, এ পর্যন্ত ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মেলার নির্ধারিত কর্নারে হয়েছে। সাংস্কৃতিক ও আলোচনা মঞ্চের বিপরীতে এই কর্নার করার কারণে মোড়ক উন্মোচনের পরিবেশ নেই।’
লেখকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলার মাঠটা ছোট। এই কারণে আলাদা করে কর্নার করা যায়নি। তবে কোনো লেখক চাইলে বিকেল ৩টার আগে সাংস্কৃতিক ও আলোচনা মঞ্চে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে পারবেন। যোগাযোগ করলে তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে।’ ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে মোড়ক উন্মোচন ফি বেশি নেওয়ার কারণে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই তো মোড়ক উন্মোচন করে টাকা না দিয়ে চলে যায়।’