
বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এবার যদি আইনশঙ্খলাব্যবস্থা একটু ভালো হতো তাহলে বইমেলার আমেজটা আরও বাড়ত। মেলায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো না হলে আরও ভালো লাগত।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে গবেষণাধর্মী বই বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করে থাকি। এবার ইউপিএল থেকে বেশির ভাগই নন-ফিকশন ও গবেষণাধর্মী বই বের হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের থিসিস বই ‘পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়া’-এর বাংলা সংস্করণ মেলায় প্রকাশ করতে পেরেছি। এই বইটির ক্ষেত্রে পাঠকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ডাচ গবেষকের আরেকটি বই, যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসের ওপর লেখা, যা সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে, তা হলো ‘হিস্ট্রি অব বাংলাদেশ’-এর বাংলা সংস্করণ। সারা দেশের গ্রাফিতির ওপর কাউসার হাসানের বই ‘৩৬ শে জুলাই’ প্রকাশিত হয়েছে, যা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।
ভালো সম্পাদনা না করতে পারলে ভালো প্রকাশক হওয়া যায় না। বইয়ের সম্পাদনা করতে না পারলে মুদ্রণশিল্পে কেন আপনি প্রকাশক? সম্পাদনা ছাড়া যখন বই প্রকাশ করছি, তখন পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করছি। পাঠক তার কষ্টের অর্জিত টাকা দিয়েই বই কিনছেন, তাহলে পাঠককে কেন আমি ঠকাব। আমাদের প্রকাশনা থেকে সম্পাদনার কারণে বই প্রকাশ হতে দেরি হয়। একটা বইয়ের সম্পাদনা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পাঠকের হাতে পৌঁছে দিতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। সঠিক সম্পাদনার অভাবে বই প্রকাশে দেরি হওয়ায় লেখকেরও মন খারাপ হয়। তার জন্য আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতিও হয়। যে বাস্তবতায় আমাদের প্রকাশনা জগৎটা তৈরি হয়েছে, এটা একটা সাপ্লাই-ডিমান্ডের ব্যাপার। বইয়ের সঠিক সম্পাদনা প্রকাশকের দায়বদ্ধতার ব্যাপার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বইয়ের কাছে দায়বদ্ধতা। আমরা বইয়ের প্রতি অবিচার করতে চাই না। লেখক হয়তো তার এক ধরনের আবেগ বা তাড়না থেকেই বই প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রকাশকের কাজ পেশাদারত্বের সঙ্গে সম্পাদনা করা। সেটা না করলে আমরা পাঠককে ঠকাব, হয়তো শেষ পর্যন্ত আমরাও ঠকে যাব। আমি মনে করি, যারা বইয়ের সঠিক সম্পাদনা করছেন, তারা ভালো প্রকাশক। পাঠকের হাতে সুসম্পাদিত বই তুলে দিতে পারলেই প্রকাশকের প্রতি পাঠকের আস্থা তৈরি হয়।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়। আমাদের প্রকাশনা থেকে একটি ছাকনি দিয়ে ছেকে দেওয়ার মতো করেই বই প্রকাশ করা হয়। ভালো পাণ্ডুলিপি তৈরির জন্য লেখককেও ভালো পরিবেশ দিতে হয়। লেখকের মধ্যেও বইকে সর্বোচ্চ লেভেলে নেওয়ার জন্য এক ধরনের ইচ্ছা থাকে, তাকে সেই সময়টা দিতে হবে। প্রকাশনা এখন হেলাফেলার বিষয় হয়ে গেছে। অনেক কনটেন্ট তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকাশকের কাজ ভালো কনটেন্ট খুঁজে বের করা।
কিছু পাঠক অনলাইনে বই পড়বে, তা ধরেই নিতে হবে। বাংলাদেশে কোনো সঠিক ই-বুক অ্যাপস নেই, যেটা খুব জরুরি। কনটেন্টটাকে সিকিউরড করতে হবে, যাতে পাইরেসি না হয়। ডিজিটাল পাইরেসির মতো এমন একটা বিষয় আমাদের দেশে তৈরি হয়েছে। এখন অনেক বই অনলাইনে প্রকাশ হয়, অথচ তার কোনো নীতিমালা নেই। এটা এক ধরনের ডিজিটাল পাইরেসি। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপরও মুদ্রিত বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়বে।
বইমেলার নীতিমালা ও বই নিয়ে আলোচনা থাকা দরকার। বইমেলায় বইকে ঘিরেই নানান রকম কার্যক্রম থাকা উচিত। বইমেলা অবশ্যই লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মিলনমেলা হতে হবে।
লেখক: স্বত্বাধিকারী, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)
অনুলিখন: সানজিদ সকাল