
বই বলতেই যে জিনিসটি মাথায় চলে আসে সেটি হলো কাগজের অনেকগুলো পৃষ্ঠা একসঙ্গে বাঁধাই করে, একটি হার্ডপেপারে মুড়িয়ে তাতে প্রচ্ছদ দিয়ে বেশ নান্দনিক উপস্থাপন থাকবে। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টেছে। কাগজ থেকে স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনে চলে এসেছে কাগজের সেসব বই। শুধু তা-ই না, বই এখন আর পড়তেও হবে না! কাগজ কিংবা স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অসংখ্য বই এখন মোবাইলের হেডফোন কানে গুঁজে শোনা যাবে। এসব বই পরিচিতি পেয়েছে অডিও বুক নামে। অন্যদিকে স্ক্রিনে যে বই পড়া যায়, তা পরিচিতি পেয়েছে ই-বুক নামে। তবে নামে কি আসে যায়; বই তো বই-ই!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের বইমেলায় ই-বুক ও অডিও বুক মিলিয়ে অংশ নিয়েছে চারটি ডিজিটাল বইয়ের স্টল। পাঠক-দর্শনার্থীরা এখন কাগুজে বইয়ের পাশাপাশি অ্যাপসভিত্তিক ডিজিটাল বই পড়ার স্বাদ নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও দিনকে দিন মেলায় অংশ নেওয়া এমন বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, গত বছরের বইমেলায় এই সংখ্যা ছিল পাঁচটি। তার আগে ছিল অনেকটাই বেশি। এবার মেলায় অংশ নেয়নি শুনবই এবং সেই বই নামে প্রতিষ্ঠান দুটি। এ ছাড়া চড়ুইডটকম নতুনত্ব আনতে এবারের মেলায় ই-বুক নিয়ে আসতে পারেনি।
কাহিনীক নামে একটি প্রকাশনা এবার অডিও বুকের স্টল দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রহিসুল তমাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছরের বইমেলায় আমাদের ৪০টির মতো বই ছিল। এবার ৩০০টি অডিও বুক স্টোর করা হয়েছে এবং এই ৩০০ বইয়ের পুরোটিই রয়েছে। আমরা সাহিত্য নিয়ে কাজ করছি, এখনো অনেকে জানেনই না অডিও বুক নামে একটি বিষয় রয়েছে। আমরা এখনো মার্কেটিংয়ে নামিনি; আমরা চাই, সবাই অডিও বুকের বিষয়টি জানুন। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই রয়েছে, শিগগিরই হয়তো আর্জেন্টাইন লেখকদের অনুবাদের বই প্রকাশ করা হবে।’
গড়ে প্রত্যেক দিন ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারী বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাহিনীক অডিও বুকে সময় ব্যয় করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আমাদের ব্যবহারকারী প্রায় দ্বিগুণ, গত বছর সেটি ছিল মাত্র আট হাজার। এ বছর ১৫ হাজার। প্রতিদিন বাংলাদেশসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলাভাষী মানুষ নিয়মিত কাহিনীকের অডিও বুকের সঙ্গে সময় পার করছেন।’
মাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক তিন প্যাকেজে সাবস্ক্রিপশন রয়েছে কাহিনীক অডিও বুকের। নির্ধারিত পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর বই শোনার স্বাদ পাবেন বইপ্রেমীরা। অন্যদিকে কাহিনীকের পাশেই রয়েছে রকমারি ই-বুকের স্টল। কাহিনীক থেকে রকমারি ই-বুক বইপ্রেমীদের কাছে তুলে দিচ্ছেন ডিজিটাল পড়ার বই। মুঠোফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপেই পাবেন বই পড়ার স্বাদ।
রকমারি ই-বুকের বিক্রয়কর্মী সোহাগ প্রামাণিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে মেলায় আমরা নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছি। দিন দিন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশ বাড়ছে। আমাদের নির্ধারিত কোনো সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ না থাকায় পাঠককে বই কিনে পড়তে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে অসংখ্য বই ফ্রিতেও ডাউনলোড করা যাবে। একবার ডাউনলোড করা হয়ে গেলে যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়ে বইপ্রেমীরা পড়ার স্বাদ পাবেন।’
রকমারির মতো মেলায় অনুরূপ প্রতিষ্ঠান বইটই। রকমারির মতো তাদেরও নির্ধারিত কোনো সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ নেই। পাঠক সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো মূল্যের বই কিনে পড়তে পারবেন, যদিও ৩৫০টি বই বিনামূল্যে রেখেছে। প্রত্যেক দিন শতাধিক ব্যবহারকারী বইটইয়ে সময় ব্যয় করেন বলে জানান বইটইয়ের বিক্রয়কর্মী জান্নাতুন ফেরদৌস। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের মূলত ই-বুকের পাশাপাশি অডিও বুক রয়েছে, যদিও সেই সংখ্যা মাত্র ৪০টি। তবে অডিও বুকের তুলনায় ই-বুকের সংখ্যা ১২ হাজার। আমাদের কোনো সাবস্ক্রিশন মডিউল না থাকায় এখানে প্রতিটি বই কিনে পড়তে হয়। যদিও সেটা আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে। বর্তমানে আমাদের ৩০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন।’
অডিও বুক ও বই সম্পর্কিত অডিও কনটেন্ট মিলে তিন হাজারের বেশি বই রয়েছে কাব্যিক নামে আরেকটি অডিও বুকের প্রকাশনার। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবার ওপরে। ৭০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী কাব্যিকের রয়েছে। কাব্যিকের সঙ্গে জড়িত রুবাইয়াত ইসলাম রাহাত বলেন, ‘আমাদের সাবস্ক্রিশন মডিউল থাকায় বর্তমানে ১৫ হাজারের মতো সক্রিয় পাঠক রয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বই শুনতে অ্যাকসেস করতে পারবেন। তবে দেশের বাইরে বলতে মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে পাঠক বেশি রয়েছেন। আমাদের সব ধরনের বই রয়েছে, তবে ধর্মীয়, আত্মোন্নয়নমূলক ও বাংলা ক্লাসিক, বেশি পাঠ করা হয়।’
বইমেলা ঘিরে এসব বইয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠক আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন অফার ও গিফটও রেখেছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন- জানতে চাইলে কাব্যিকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেলা ঘিরে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। যেহেতু মেলায় আমরা বড় আকারে বইপ্রেমীদের কাছে পৌঁছাতে পারি। গত বছরের তুলনায় বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’
গতকাল রবিবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা: প্রিভিলেজের দায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। রেহনুমা আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাওলী মাহবুব। এদিকে লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং গবেষক তাহমিদাল জামি।