
এবার অনেকটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বইমেলার আয়োজন করেছি। বইমেলা আয়োজনে নানান ধরনের ঝুঁকি ও সমস্যা ছিল, যা আমরা সাবধানতার সঙ্গে কাটাতে চেয়েছি। নতুন করে অনেক প্রকাশক বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেদিক থেকে মেলার পরিসর অনেক বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে মেলার অবকাঠামো ও অন্যান্য বিষয় ঠিক ছিল। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিক থেকে আরেকটি গেট যেন প্রমিনেন্ট হয়ে ওঠে, সেজন্য আমরা পরিশ্রম করেছি।
বইমেলায় যেখানে লাখ লাখ মানুষের আগমন ঘটে, সেখানে কিছু সমস্যা তো থাকবেই। অনেক সমস্যা থাকে, যা আগে থেকে বোঝা যায় না। মেলার ভেতরে রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামোয় ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ যথাসম্ভব করতে পেরেছি। মেলায় শিশুচত্বর, টয়লেট ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় সুন্দর করতে অর্থ লগ্নী করার একটা বিষয় থাকে। প্রকাশকরা মেলা বাবদ যে পরিমাণ টাকা এক মাসের জন্য দেন তারা সেটাকেই যথেষ্ট বেশি মনে করছেন। টয়লেট ও ওয়াশরুমের সমস্যা হয় বলেই আগের তুলনায় এবার প্রায় দেড় গুণ বাড়ানো হয়েছে। লিটলম্যাগ চত্বরটা অনেক ভালো করেছি। বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে। অন্যত্র হয়তো যতটুকু করা দরকার ততটুকু সম্ভব হয়নি। স্বল্প আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এর বেশি নান্দনিক করা সম্ভব নয়।
বইমেলা নকশা করেই প্ল্যান করা হয়েছে। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সবচেয়ে বেশি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। বইমেলাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মেলার নকশা বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করা হয়েছে এবং অনলাইনে আছে। একটা অ্যাপস আছে, যেখানে প্রকাশকের নাম লিখলে কত নম্বর স্টল এবং কোন জায়গায় তা জানা যাবে। বইমেলায় যারা আসেন তারা ৫-১০ মিনিট সময় ব্যয় করে যে দেখে নেবেন, সেই সময় নেই। তাছাড়া বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র আছে, যেখানে সহজেই তথ্য পাওয়া যাবে। কিছু সমস্যা থাকলেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে বলে মনে করি।
উৎকৃষ্ট বইয়ের ব্যাপারে পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহিত করা যেতে পারে। সম্পাদনা ভালো নয়, এমন কিছু বই হয়তো বাতিল করা যায় কিন্তু তা অত্যন্ত কঠিন। বইটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত কে নেবে? সেই কমিটি কারা? এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বহু পক্ষ ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে কোনো আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলা একাডেমি বা মেলা কমিটির পক্ষে সম্ভব নয়। তদুপরি, এটা বছরব্যাপী একটা কাজ। সরকারের অনেক অংশ বা অঙ্গ আছে, যারা এটা নিয়ে কাজ করে। তাছাড়া সিভিল সমাজে জনপরিসরেও অনেক উদ্যোগ আছে, যারা এগুলো নিয়ে কাজ করে। ফলে ব্যাপকভাবে সচেতন হওয়া ছাড়া এই এক মাসে এসব কাজ করা সম্ভব নয়।
বইমেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খুবই ক্ষমতাসম্পন্ন অফিস এবং বিপুল কর্মী এর সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সফল হতে পারে না। কারণ মেলায় অনেক হকার ঢুকে পড়েছে। মেলার সামনেও অনেক হকার বসে পড়েছে। ব্যাপারটা আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। হকার কিছুটা কমাতে পারলেও শূন্যের কোটায় আনতে পারিনি।
লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মিলনমেলার বিষয়টা আপেক্ষিক। কোনো লেখক হয়তো মেলায় আসেন না। কেউ কেউ হয়তো রাজনৈতিক কারণেও ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে মেলায় আসেননি। এরকম লেখকের সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি হয়েছে। ব্যাপারটা বাংলা একাডেমির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি বা জেনেছি যে, অনেক লেখক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। লেখকরা হয়তো তাদের বই ফেসবুকে প্রচার কম করছেন। আমরা রাজনৈতিক কারণে এখন সবচেয়ে স্পর্শকাতর সময় পার করছি। ফলে মনোযোগ দেওয়ার মতো অন্য বিষয় এত বেশি যে, বইয়ের দিকে মনোযোগ কিছুটা কমে গেছে।
লেখক: মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি
অনুলিখন: সানজিদ সকাল