পর্তুগাল শুধু ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রই নয়, দেশটি এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে অবস্থিত শান্ত, ছিমছাম এই দেশটি এখন উচ্চশিক্ষার এক সম্ভাবনাময় ঠিকানা। কম খরচ, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্তুগাল হতে পারে এক অনন্য সম্ভাবনার দেশ।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের বৈচিত্র্য
পর্তুগালের প্রায় সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রাম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মেডিকেল, অর্থনীতি, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে শুরু করে সোশ্যাল সায়েন্স- প্রায় সব বিষয়েই পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে দেশটিতে। অনেক কোর্সই পর্তুগিজ ভাষায় হলেও, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি মাধ্যমে নানা কোর্স অফার করা হয়।
তবে আবেদন করার আগে আপনার বাছাইকৃত কোর্সটি কোন ভাষায় পড়ানো হয় সেটা অবশ্যই দেখে নেবেন।
যোগ্যতা ও কম খরচে সুযোগ
অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ইউরোপ মানেই আইইএলটিএসের জটিলতা। কিন্তু পর্তুগালে উচ্চশিক্ষার জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলেই যথেষ্ট।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্তুগালে টিউশন ফি অনেক কম। ব্যাচেলর বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে বার্ষিক খরচ মাত্র ৯৫০ থেকে ১২০০ ইউরো। আর পিএইচডির ক্ষেত্রে বছরে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ ইউরোর মতো প্রয়োজন পড়বে। এই ফি অনেক সময় স্কলারশিপ বা বিভিন্ন ডিসকাউন্টের মাধ্যমে আরও কমে আসে।
আবেদন প্রক্রিয়া ও সময়সীমা
প্রতিবছর দুইবার আবেদন গ্রহণ করে পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল থেকে জুলাই। এ দুটি সময়েই ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। আবেদন করতে হয় অনলাইনে এবং কাগজপত্র জমা দিতে হয় ডিজিটালি।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- একাডেমিক সনদপত্র ও নম্বরপত্র
- পাসপোর্ট, ছবি ও সিভি
- মোটিভেশন ও রেফারেন্স লেটার
- ব্যাংক সলভেন্সি ও টিউশন ফি জমার রসিদ
- অ্যাকোমোডেশন ডকুমেন্ট ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স
ভিসা প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে পর্তুগালের এমব্যাসি না থাকায় শিক্ষার্থীদের দিল্লির পর্তুগিজ এমব্যাসিতে আবেদন করতে হয়। এ জন্য সময় লাগতে পারে ৩০ দিন বা তার বেশি। ভিসা আবেদন করার আগে অবশ্যই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
ভিসার জন্য প্রয়োজন পড়বে:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার
- টিউশন ফি জমার প্রমাণ
- আর্থিক সচ্ছলতার দলিল
- স্বাস্থ্যবিমা (কমপক্ষে ১২০ দিন মেয়াদি)
- ফ্লাইট বুকিং টিকিট
গ্যাপ বেশি থাকলে ভিসা পাওয়ায় জটিলতা হতে পারে। তাই শিক্ষাজীবনে বড় বিরতি না রেখে আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করা ভালো।
স্কলারশিপের সুযোগ
পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা ধরনের স্কলারশিপ অফার করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১) ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ: ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতায় এটি ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ।
২) এফসিটি স্কলারশিপ: পিএইচডি ও গবেষণার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ভালো একটি সুযোগ হতে পারে।
৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপ: এসব স্কলারশিপের মাধ্যমে টিউশন ফিতে ৫০%-৭৫% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
খরচ ও খণ্ডকালীন চাকরি
পর্তুগালের জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক কম। মাসে মাত্র ৩৫০ থেকে ৪০০ ইউরোতেই থাকা ও খাওয়ার খরচ মেটানো সম্ভব। শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন চাকরি এবং ছুটিতে ফুল-টাইম কাজ করার অনুমতি থাকে। পর্তুগিজ ভাষা জানলে কাজ পাওয়া সহজ হয়, তবে টিউশন ফি চালাতে খণ্ডকালীন চাকরির টাকা যথেষ্ট নয়।
নাগরিকত্বের সম্ভাবনা
পড়াশোনার পর পর্তুগালে থেকে যাওয়ার সুযোগ আছে। দেশটিতে বৈধভাবে ৫ বছর অবস্থান, ট্যাক্স পরিশোধ ও ভাষাজ্ঞান থাকলে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। তাই ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ী বসবাসের সুযোগও আছে পর্তুগালে।
লেখক: শিক্ষার্থী, এমএম কলেজ, যশোর
/রিয়াজ