ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ছবি: খবরের কাগজ

শরীয়তপুরে ৯ দফা দাবি আদায় এবং আটক শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করেন তারা। 

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষকরাও এই মিছিলে যোগ দেন। 

এক পর্যায়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান হাওলাদার ও ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন হিরুর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের সমন্বয়ক রহমত উল্লাহ নেহাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের পুলিশ বাহিনীর নগ্ন হামলায় আমাদের শত শত ভাই নিহত ও আহত হয়েছে। আমরা এসব হামলার বিচারের দাবি করছি। গেল ২৫ জুন প্রথম আলোয় ২২৪ জনের মুখে ও মাথায় গুলির রিপোর্টে প্রকাশিত হয়। যা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। আমাদের প্রতিটি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এসব হামলাকারীদের বিচারের আওতায় না আনলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের আজকের শান্তিপূর্ণ মিছিলকে পণ্ড করতে  আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ভাইদেরকে মারধর করে মিছিলে যোগদানে বাধা দেন। আমাদের সহকারী সমন্বয়ক মো. আফ্রিদি ও মোশাররফকেও মারধর করেন।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন হিরু বলেন, ‘মারধরের বিষটি সত্য নয়। তারা আমাদের নেত্রীকে বাজে কথা বলেছেন। এ ছাড়া তারা ছাত্রলীগকে নিয়েও বাজে মন্তব্য করায় তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আইন বিভাগের শিক্ষক ইমামুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের এই যৌক্তিক দাবিকে আমি সমর্থন করি।’

শরীয়তপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মুশফিকুর রহিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্ররা তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের বাঁধা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

রাজিব/পপি/অমিয়/

যুক্তরাজ্যের গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপে পিএইচডি, এমএসসি করার সুযোগ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
যুক্তরাজ্যের গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপে পিএইচডি, এমএসসি করার সুযোগ

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা ফিতে পিএইচডি, এমএসসি বা এমএলিট বা এক বছরের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়নের সুযোগ দিচ্ছে। ‘গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ’ প্রোগ্রামের আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের এ স্কলারশিপ দেওয়া হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের শেষ তারিখ: কোর্সভেদে আবেদনের শেষ সময় ভিন্ন ভিন্ন তারিখে। কোনো কোর্সের আবেদনের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। আবার কোনো কোর্সের আবেদনের শেষ তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৫।

২০০০ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের গেটস কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ দেওয়া শুরু হয়। এ জন্য মাইক্রোসফটের বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস তাদের ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেন। যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এই অনুদান দিয়েই স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামের আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সব খরচ বহন করা হয়।

বৃত্তির সুযোগ-সুবিধা
সম্পূর্ণ খরচ, টিউশন ফি দেওয়া হবে। সঙ্গে অতিরিক্ত ভাতাও পাওয়া যাবে।

পুরো বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা হিসেবে ২১ হাজার পাউন্ড দেওয়া হবে। (বাংলাদেশি টাকায় ৩৩ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ টাকা)। পিএইচডি স্কলারদের জন্য চার বছর পর্যন্ত বৃত্তি সুবিধা দেওয়া হবে।

বিভিন্ন কনফারেন্স ও কোর্সে যোগ দিতে কোর্সভেদে ৫০০ থেকে ২ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ভাতা সুবিধা দেওয়া হবে।

পারিবারিক ভাতা বাবদ প্রথম সন্তানের জন্য ১১ হাজার ৬০৪ পাউন্ড এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্য ১৬ হাজার ৫৪৮ পাউন্ড ভাতা সুবিধা পাওয়া যাবে

সঙ্গীর জন্য কোনো ধরনের তহবিল দেওয়া হবে না।

পিএইচডির অংশ হিসেবে ফিল্ড ওয়ার্কের সময় খরচ পাওয়া যাবে।

মাতৃত্ব/পিতৃত্ব তহবিল পাওয়া যাবে।

অপ্রত্যাশিত সমস্যার তহবিলও পাওয়া যাবে।

যোগ্যতা

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হতে হবে।

একাডেমিক ফলাফল ভালো হতে হবে।

অসামান্য মেধাক্ষমতা থাকতে হবে।

ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে।

প্রোগ্রামটি পছন্দ করার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।

আবেদন করার ঠিকানা
আগ্রহী শিক্ষার্থীরা https://www.gatescambridge.org এ ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

 

স্কুলটির বয়স শতবর্ষের বেশি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
স্কুলটির বয়স শতবর্ষের বেশি

শত বছরে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সমাজ, রাষ্ট্র- সবকিছুতেই। সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে পুরনো অনেক কিছু। নানান বদলের মধ্য দিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনি এক শতবর্ষী স্কুল দিনাজপুরের ফুলবাড়ী গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চবিদ্যালয়।

১৯২০ সালে ১০ একর জমিতে গোলাম মোস্তফা হাই মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল স্কুলটি। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৮ সালে এটি জিএম উচ্চবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ফুলবাড়ী পৌর শহরের ঢাকা মোড়, রেলস্টেশন এলাকাসংলগ্ন স্থানে গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এর ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য শহীদ মিনার। তার পাশে শতবর্ষ ফলক। বিদ্যালয়ের মাঝখানে রয়েছে পাড়বাঁধা একটি পুকুর। এর চারপাশে বিদ্যালয় ভবন।

পুকুরের পাশ দিয়ে সারি সারি দেবদারুগাছ দাঁড়িয়ে আছে। এসব মহিরুহের ফাঁকে শোভা ছড়াচ্ছে বাহারি ফুলগাছ। পুব পাশে শানবাঁধানো ঘাট এবং ঈদগাহ মাঠ ও মসজিদ। উত্তর পাড়ে বিদ্যালয়ের পুরনো একটি লাল রঙের ভবন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটি এখন অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভারতের হুগলি জেলার বাসিন্দা ছিলেন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা। পেশায় তিনি ছিলেন চিকিৎসক। সৈয়দ গোলাম মোস্তফা ১৯১৯ সালের আগে ইসলাম প্রচার ও সেবার জন্য এই অঞ্চলে আসেন। তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সৈয়দা ফাতেমা খাতুন। তার মেয়ে জোহরা তাজউদ্দীন, যিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের স্ত্রী। ফুলবাড়ী পৌর শহরের পূর্ব গৌরীপাড়ায়, এখন যেটি ঢাকা মোড় শাপলা চত্বর নামে পরিচিত, সপরিবারে বসবাস করতেন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা। বর্তমানে সেখানে তার পরিবারের উত্তরসূরিরা বসবাস করেন। সেই সময় ফুলবাড়ীসহ আশপাশের লোকজনের সেবা দিতে গিয়ে তাদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করতে বাড়ির পাশে নিজ জমিতে গোলাম মোস্তাফা হাই মাদ্রাসা স্থাপন করেন।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, গত এক শতক বিদ্যালয়টি অনেক কীর্তিমান শিক্ষার্থীর জন্ম দিয়েছে। তবে ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টিতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প করে এর রেকর্ডপত্র নষ্ট করে দেয়। তাই এর অনেক ইতিহাস আজও অজানা। তিনি বলেন, শুরুতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শরৎচন্দ্র সরকার। সাতজন প্রধান শিক্ষকের পর বর্তমানে তোজাম্মেল হোসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জানান, এখন বিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার ছাত্রছাত্রী, ৩০ জন শিক্ষকসহ ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। নিভৃত পল্লির শতবর্ষী এ বিদ্যালয় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

১৯৬০ সালে বিদ্যালয়ে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে বছর এসএসসিতে ষষ্ঠ স্ট্যান্ড করেন দানেশ আহম্মেদ। তিনি বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন। একই সঙ্গে এসএসসিতে ওই বছর মো. আ. গফুর নামের একজন অষ্টম স্ট্যান্ড করেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, মানুষ গড়ার এই বিদ্যাপীঠ সমাজে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

২০২০ সালে এর শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। বিদ্যালয়ের হাজার হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী নিয়ে জমকালো আয়োজনে দুই দিনব্যাপী শতবর্ষ উদযাপন করা হয়েছে।

কলি

দল বেঁধে ছবি তুলতে নেই বাধা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
দল বেঁধে ছবি তুলতে নেই বাধা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মার পাড়ে ‘পাস্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র সদস্যরা। ছবি: পাস্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি

পশ্চিম আকাশে তখনো সূর্যের আভা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। চারদিকে শীতল হাওয়া। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রধান ফটকে জড়ো হতে শুরু করেছে কিছু তরুণ। তাদের কারও হাতে ক্যামেরার ব্যাগ, কারও হাতে মোবাইল, কারও হাতে ট্রাইপড। এরা সবাই ‘পাস্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র সদস্য, পড়েন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। তাদের গন্তব্য পাবনার উত্তরের সীমানা ছাড়িয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে, সেখানকার পদ্মার পাড়ে সকালের আবহাওয়ায় কিছু ছবি তুলবেন আর কিছু ছবি তোলা শিখবেন। প্রতি সপ্তাহেই তারা পাবনার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গায় ছবি তোলার জন্য দল বেঁধে ছুটে যান। সেখানে কেউ ছবি তোলেন আবার কেউ ছবি তোলা শেখেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস্ট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (পাস্ট পিএস) ২০১৬ সালে ৯ জন শিক্ষার্থীর হাত যাত্রা শুরু করে। তবে এর প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হয় ২০২০ সালে। বর্তমানে এর তৃতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি চলছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৫০ শিক্ষার্থী সংগঠনটির সঙ্গে নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছেন। তবে এদের বেশির ভাগই পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে ফটোগ্রাফি শেখার জন্য সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফটোগ্রাফির জ্ঞান একেবারে শূন্য থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘পাস্ট পিএস’-এর সঙ্গে কাজ করতে পারেন। নবীন সদস্যদের ফটোগ্রাফির কাজ শেখানোর জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি মাসে যেমন সেশনের আয়োজন করেন তেমনি বিভিন্ন সময় দেশের খ্যাতিমান ফটোগ্রাফারদের ক্যাম্পাসে এনে কর্মশালা করান। সংগঠনটির হিসাবমতে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত তারা ছোট-বড় ১৫টি কর্মশালা করিয়েছেন। যেখানে সংগঠনের সদস্য এবং সদস্যের বাইরে সব মিলিয়ে মোট প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০০ এর অধিক।

শুধু প্রশিক্ষণই নয়, বিভিন্ন সময় ফটোগ্রাফি বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং চিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করে সংগঠনটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘ইমাজিনেশন ইনসাইট ১.০’, ‘ইমাজিনেশন ইনসাইট ২.০’, ‘ইমাজিনেশন ইনসাইট ৩.০’, ‘পিক্সেল পয়েট্রি’।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের পাশাপাশি সংগঠনটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফিক প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে আসছে ভালো ফলাফলও। সংগঠনটির সদস্যদের দীর্ঘ অর্জনের মধ্যে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব নগর ও পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সংগঠনটির সদস্য লিসান আসিব খান প্রথম স্থান লাভ করেন, সংগঠনটির একই সদস্য ২০১৯ সালে স্কলাস্টিকা স্কুল আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফারদের ফেসবুক গ্রুপ ‘থার্ড আই প্রফেশনাল ফটোগ্রাফিক গ্রুপ’ আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় ‘স্ট্রিট ক্যাটাগরি’তে সংগঠনটির সদস্য আরিয়ান হক জয়ের পুরস্কার জিতেন, ২০২২-এ রোভার স্কাউট বাংলাদেশ আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সংগঠনটির সদস্য ইমন হোসেনের প্রথম স্থান সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সংগঠনটির বিষয়ে জানতে চাইলে এর সভাপতি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু মানুষ তৈরির করার চেষ্টা করছি যারা ছবির মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরবে। দীর্ঘ এই পথচলাতে আমাদের সদস্যদের অনেক অর্জন আছে যেগুলো আমাদের সদস্যদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে নিয়ে এনেছে। আমরা আগেও যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জনের জন্য কাজ করেছি, বর্তমানেও তা করছি, ভবিষ্যতেও একই কাজ করে যাব।’

সাধারণ সম্পাদক এশহানুল হক সাকিব বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে আসার জন্য ফটোগ্রাফির প্রতি কোনো শিক্ষার্থীর আগ্রহই যথেষ্ট। ফটোগ্রাফি শেখার জন্য অনেক দামি দামি গেজেট লাগে ব্যাপারটা তা নয়। বর্তমান সময়ে ফটোগ্রাফি শেখার জন্য একটা স্মার্টফোনই যথেষ্ট। আমরা আমাদের ক্লাব থেকে ভালো একজন ফটোগ্রাফার তৈরি করতে চেষ্টা করি যেন ভবিষ্যৎ জীবনেও ফটোগ্রাফি নিয়ে ভালো কিছু করতে পারে।’

কলি

ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে কাওয়ালিসন্ধ্যা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ পিএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে কাওয়ালিসন্ধ্যা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ‘দ্রোহের গান ও কাওয়ালিসন্ধ্য’ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজ নিজ প্রাঙ্গণে কাওয়ালি গানের যেন জোয়ার বইতে শুরু করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদদের স্মরণে ও আধিপত্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এসব ‘কাওয়ালিসন্ধ্যা’ আয়োজিত হচ্ছে। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতি আয়োজনে যেন আরও প্রাণের সঞ্চার জোগাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এই ভাবধারার গানের আসর আয়োজনে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলেও কাওয়ালির নতুন এই জাগরণকে অনেক শিক্ষার্থীই সাংস্কৃতিক বিপ্লব বলে অভিহিত করছেন। কাওয়ালির সুর কোন কোন ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেছে আর কোথায় কোথায় পৌঁছানোর অপেক্ষা এ সবকিছুর বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাহমুদ শাকিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 
বরাবরের মতোই জুলাই ও আগস্ট মাসের গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে কাওয়ালি আসর আয়োজনেও বেশ এগিয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাঁকজমকপূর্ণ এই কাওয়ালি গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়, যার আয়োজক হিসেবে ছিল ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য’। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। আসরে মূলত দুটি ব্যান্ড দল ক্বাসীদা এবং সিলসিলা কাওয়ালি পরিবেশন করে অনুষ্ঠান জমিয়ে তোলেন। সেখানে বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও আরবি কাওয়ালির পাশাপাশি অন্যান্য গান, কবিতা ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে এখন থেকে সব ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা চলবে বলে মত প্রকাশ করেন বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের নেতারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘দ্রোহের গান ও কাওয়ালি সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন আজাদী মঞ্চের উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় চবির কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর একক কবিতা, গান, অভিনয় ও কাওয়ালির পরিবেশন চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। আসরে আজাদী মঞ্চের শিল্পীরা ছাড়াও কর্ণফুলী থিয়েটার, চট্টলা গানের দল ও অনুরণন সংগীত একাডেমি অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক মো. শাহাদাৎ হুসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে এ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। হলগুলো খোলা না থাকায় যদিও উপস্থিতি নিয়ে আমাদের ভয় ছিল কিন্তু দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় দেখে আমরা রীতিমতো অবাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এত সুন্দর আয়োজন, এত উপস্থিতি, গাঁজা, সিগারেটের ধোঁয়া কিংবা ইভটিজিং, হাতাহাতি ছাড়া এত বড় আয়োজন এই প্রথম হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। প্রশংসাগুলো আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করেছে। আজাদী মঞ্চ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মঞ্চ হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা আমাদের।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 
ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হয়ে গেল বিপ্লবী গান, আবৃত্তি ও কাওয়ালি গানের আসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের উদ্যোগে ‘মেহফিল-ই ইনকিলাব’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানটি গত ৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের সেলিম আল-দীন মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হয়। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষ হয় রাত ১০টায়। আসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ ‘ওয়ান এম্পায়ার’ ব্যান্ডের কাওয়ালির সুরের মূর্ছনায় দর্শকরাও মেতে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাভারের আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।

এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দর্শকসারিতে বসে আয়োজনটি উপভোগ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরপ্রবি) গত ৬ সেপ্টেম্বর কাওয়ালি গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে নবনির্মিত ইনকিলাব মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। অতিথি হিসেবে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফাইকুজ্জামান মিয়া। আয়োজন নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ওবায়দুল ইসলাম জানান, ‘আমরা এই আয়োজনের ব্যবস্থা করেছি মূলত গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণের উদ্দেশ্যে এবং সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে। আমরা আশা করছি, আগামীতে যেকোনো আয়োজনে এভাবেই আপনাদের সহযোগিতা পাব।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় 
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ক্যাম্পাসে আয়োজিত কাওয়ালি আসরেও শিক্ষার্থীদের ঢল নেমেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চের উদ্যোগে ৮ সেপ্টেম্বর কাওয়ালি আসরের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে শুরু হওয়া আসরটি সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলমেলায় রূপ নেয়। এ ছাড়া স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকার স্থানীয়দের অংশগ্রহণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চ মুখরিত হয়ে ওঠে। কাওয়ালি সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সিরাত অনুষ্ঠান, কাওয়ালি অনুষ্ঠানের আয়োজন এত দিন বন্ধ ছিল। এর প্রতিবাদ হিসেবেই দেশব্যাপী আমরা কাওয়ালি আসরের আয়োজন দেখছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই আসরও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদেরই অংশ।’ আসরে পরিবেশনায় ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওয়ালি দল সঞ্চারী, শহরেরই দ্রোহের গানের একটি দল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আজাদী মঞ্চ। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অংশগ্রহণে কাওয়ালির আসর আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবি) শামিল হয়েছিল। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এই আসরের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের জন্য ঢাকা থেকে তারেক রহমান কাওয়াল ও ওস্তাদ জুলকারনাঈন কাওয়াল যোগদান করেন। এ দুজনের নেতৃত্বেই শিক্ষার্থীরা কাওয়ালি পরিবেশন করেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় 
কাওয়ালির সুরের মূর্ছনা ছুঁয়ে গেল কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কেও। গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহিদদের স্মরণে এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আজাদী মঞ্চের উদ্যোগে ‘দ্রোহের গান ও কাওয়ালি সন্ধ্যা’ শীর্ষকে কাওয়ালির আসরের আয়োজন করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বর ও মেইন গেটের মধ্যবর্তী জায়গায় বিকেল সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে পরিবেশনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাগ্রত মঞ্চের শিল্পীরা এবং ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক জোট। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আসরের সূচনা করার পর কবিতা, বিদ্রোহী গান ও কাওয়ালি পরিবেশন করে আয়োজনকে মাতিয়ে তোলেন তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ক্যাম্পাসে কাওয়ালি আসরের আয়োজন করে। গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ‘জবিতে কাওয়ালি’ আসরের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কাওয়ালি ব্যান্ড নিমন্ত্রণ এবং সাওয়ারী আসরে গান পরিবেশন করে। আর ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে কাওয়ালি ব্যান্ড সিলসিলা ও প্রখ্যাত কাওয়ালি গায়ক নাদিম কাওয়ালও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলেছেন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা অন্যতম আয়োজক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ২০২২ সালের দিকেও আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালির আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন নানাবিধ কারণে সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ সময়ে এসে হলেও এমন প্রোগ্রাম করতে পারার অনুভূতি আসলে আমার জন্য বর্ণনাতীত।’ ‘জবিতে কাওয়ালি’র আয়োজনে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আবরার হামীম বলেন, ‘আমাদের আয়োজনে অভাবনীয় সাড়া পড়েছে! সহপাঠী ও সিনিয়র-জুনিয়রদের কাছ থেকে পেয়েছি অন্যরকম সহযোগিতা। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও দিয়েছেন উৎসাহ! সবার প্রতিই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় 
জাতীয় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও বুধবার কাওয়ালি গানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘দ্রোহের গান ও কাওয়ালিসন্ধ্যা’র ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও উপস্থিত থাকবেন। এদিন কাওয়ালিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও বিদ্রোহী গানগুলোও পরিবেশন করবে। আসন্ন আয়োজনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ প্রফুল্লতা লক্ষ করা গেছে।

কলি

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া উদ্বাস্তু জীবন

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া উদ্বাস্তু জীবন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। খবরের কাগজ

‘প্রতিদিন রাত হলেই ভাবতে হয় আজকে রাতটা কোথায় কাটাব? কীভাবে কাটাব? পড়াশোনার চিন্তা বাদ দিয়ে এখন থাকা-খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রিপারেশনও নিচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম এ বছরের মধ্যেই স্নাতক শেষ করে ফেলতে পারব। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গত জুলাই এবং আগস্ট মিলিয়ে আমাদের দুবার হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। যার ফলে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’

এভাবেই পড়াশোনা ও বাসস্থান নিয়ে নিজের অনিশ্চয়তার কথা জানাচ্ছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী। গত ২৬ আগস্ট ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরদিন খবরের কাগজে ‘ছাত্রলীগের দোসর’ চিহ্নিত করতে হল ছাড়া শিক্ষার্থীরা, শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে কীভাবে স্থানীয়দের দেওয়া আলটিমেটামের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হয় তার বর্ণনা দেওয়া হয়। এরপর থেকে এসব শিক্ষার্থীদের এক রকম যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতে হচ্ছে। উদ্বাস্তুর মতো বন্ধু অথবা সিনিয়রের মেসে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে শুধুমাত্র রাত্রি যাপনের জন্য। দেশের বন্যা পরিস্থিতি, দূরবর্তী স্থানে যাতায়াত ভোগান্তি এবং টিউশন টিকিয়ে রাখার আশায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের সিলেটেই অবস্থান করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনির মাধ্যমে পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। সিলেট থেকে এখন বাসায় চলে গেলে টিউশনিগুলো চলে যাবে। সারা দিন টিউশনি শেষে রাতে কোথায় থাকব বা কী খাব এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই পরীক্ষা, কিন্তু ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় আমার মতো অনেকেই হয়তো শারীরিক দুর্বলতা বা মানসিক আশান্তিতে ভুগবে।’ 

ছাত্ররা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগেই সেমিস্টার ফাইনাল চলমান ছিল। অনেকের পরীক্ষার সময়সূচি দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলামাত্রই পরীক্ষা শুরু হবে। এ পরিস্থিতিতে একদিকে খাবারের সমস্যা অন্যদিকে থাকার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। হল থেকে বের করে দেওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনের চারটি রুম খুলে দেওয়া হয়। দুই বেডের একেকটা রুমে ৬ থেকে ৭ জন করে থাকতে হচ্ছে। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী থেকে অতিথি ভবনে ২০ থেকে ২৫ জনের জায়গা মিলেছে। অন্য শিক্ষার্থীরা যাযাবরের মতো বাস করছেন।

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসনাতকে সদস্যসচিব করে আবাসিক হলগুলোর সিট বরাদ্দের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কাজ সিট বরাদ্দের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রাথমিক এই নীতিমালা বাস্তবায়ন।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে হলের সিট বণ্টনের নীতিমালা প্রণয়ন করার বিষয়ে একমত হয়েছি। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার জন্য আমরা একটা ফরম দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা শিগগিরই একটা নীতিমালা প্রস্তাব করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হবে। আমরা আশা করছি ছাত্ররা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।’

প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শাবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। গত ২৬ মে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হয়। ছুটি শেষে ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা থাকলেও বন্যার কারণে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের আন্দোলন, পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে এখনো বন্ধ আছে শাবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম।