অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে করণীয় ছয়টি এবং দীর্ঘমেয়াদে করণীয় ১৩টি প্রাক-প্রস্তাবনা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
শনিবার (১০ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কী চাই?’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব রাখা হয়। প্রস্তাবনার পাশাপাশির বিভিন্ন অংশীজনের প্রস্তাব ও প্রশ্ন গ্রহণ করে সংগঠনটি।
এতে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের মূল দাবি একটাই। সরকারের ঘাড়টা জনগণের দিকে ফেরাতে হবে। তাহলে সব দাবি পালিত হবে। সংবিধানে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ এর অধীনে যে কেউ স্বৈরতন্ত্র হয়ে উঠবে। সরকারের এখন তিন দিক থেকে ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমত, যারা পনেরো বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে, তারা স্বৈরতন্ত্রের সুবিধাভোগী। তাদের দিক থেকে একটি ঝুঁকি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ডিজিএফআই, ডিবির মতো সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি বুরোক্রেসির দিক থেকে ঝুঁকি আসতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক জায়গা থেকে ঝুঁকি আসতে পারে। স্বৈরতন্ত্র তাদের জন্য সুবিধাজনক। এই তিন দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’
এসময় অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা নির্ধারিত হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাইয়ের যে গণহত্যা এবং নৃশংসতা তার বিচারের জন্য সরকারকে আবেদন করতে হবে।’
এতে ছয়টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়৷ সেগুলো হলো– আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা; বিভিন্ন উপাসনালয় ও স্থাপনায় হামলা ঠেকানো এবং বিচার করা; জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ জনগণের ওপর জুলুমের জন্য দায়ীদের জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তদন্ত ও বিচার শুরু করা; কোটা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং নিহতের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করা; সাম্প্রতিক সময়ের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া এবং শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়ে সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে সরকারের করণীয় নিয়ে ১৩টি বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেগুলো হলো– সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়, জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহিদদের তালিকা, স্মৃতিস্তম্ভসহ নানা বিষয় নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার চালু করা; গণমাধ্যমকে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত করা এবং ডিজিটাল বা সাইবার সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া; পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করা এবং কৃষি খাতের বাজার ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধার করা; আমলাতন্ত্র সংশোধন করে জনবান্ধব প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করা এবং জুলাই হত্যাকাণ্ড তদন্তে নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠন নিশ্চিত করা; প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং দলীয় রাজনীতি মুক্ত করা, দেশি-বিদেশি গোপন চুক্তি জনগণের সামনে আনা; বিদ্যমান শিক্ষাক্রম বাতিল করা এবং শিক্ষানীতি নিয়ে একটি ট্রাস্কফোর্স গঠন করা।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রস্তাবনার মধ্যে আরও রয়েছে– সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে একটি নতুন ট্রাস্কফোর্স গঠন করা; প্রবাসীদের জীবনমানকে মূল্য দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; পাহাড়িদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া এবং সব অসম প্রকল্প পুনরায় মূল্যায়ন করা; জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশের শিল্পের বিকাশ নির্ধারণ করা; ব্যাংক থেকে দুর্বৃত্ত চক্র ও নিয়ম ভঙ্গ করে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের আইনের আওতায় আনা; সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জনবৈচিত্রের সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা; সবার জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।
আরিফ জাওয়াদ/এমএ/