ভবিষ্যতে সাফল্য লাভের প্রত্যাশায় যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার এখনই সময়। এখন যারা তরুণ, তারাই আগামীর ঝাণ্ডা তুলে নেবে হাতে। নিজের জন্য আলাদা সময় রেখে, নিজেকে গড়ে তুলতে, সমাজের উন্নয়নে কর্মী হওয়ার মন্ত্র দিতে চাই তাদের। লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
কর্মী হওয়ার মানে
কর্মী শব্দের অর্থ যিনি কর্ম সম্পাদন করেন। প্রশ্ন হতে পারে, আসলে কোন কাজের কথা বলা হচ্ছে? একটু খুলেই বলি, এই কাজ জীবিকার জন্য নয় বরং জীবনের জন্য। জীবনের জন্য কর্মী হওয়ার মানে যদি ভাবনার অদূরে থাকে, তাহলে বলব, নিজের জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কর্মী হওয়া। এই কর্মী হতে হলে প্রথমে চাই ইচ্ছা। ইচ্ছা থাকলেই সম্ভব ‘কর্মী’ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা।
নিজেকে গড়তে
সমাজের জন্য, পাশের মানুষটির জন্য কিছু করতে চাইলে, সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে যোগ্যতর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। নিজের লেখাপড়া ও নিজের স্বপ্নের পথে হেঁটে চলার কাজটি করতে হবে সবার আগে। বদঅভ্যাস ত্যাগ করে ব্যক্তিগত উন্নয়নের কাজটি করতে হবে। কেউ যখন নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে, তখনই আরেকজনের দুঃখ-কষ্ট, অভাব মোচনে এগিয়ে আসতে পারবে।
সবার ছাত্র
কবি সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতাটি মনে আছে নিশ্চয়ই। কবি বলেন, প্রকৃতির কাছ থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন। আকাশের কাছ থেকে উদারতার শিক্ষা নিয়েছেন। বায়ুর কাছে শিক্ষা পেয়েছেন কর্মী হওয়ার। পাহাড় শিখেয়েছে তার সমান উদার হতে। এভাবে প্রকৃতির প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে শিক্ষা নিয়েছেন কবি। সবাইকে বলছি, প্রতিনিয়ত শিক্ষা নিতে হবে নিজের চারপাশ থেকে। এই শিক্ষা নিতে হলে খোলা রাখতে হবে
মনের চোখ।
উদ্যোক্তা হউন
নিজেকে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে হতে পারেন উদ্যোক্তা। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন অনেকেই। বর্তমান সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ দিয়ে, তাদের পণ্য দিয়ে, তাদের সেবা দিয়ে পুরো বিশ্বকে একই সুতায় গেঁথেছেন, তারা এক সময় সবাই উদ্যোক্তা ছিলেন। নতুন কোনো কাজের উদ্যোগ নিতে হলে চাই ইচ্ছার জোর আর স্বপ্ন দেখার মন। যেকোনো মানুষের যেকোনো উদ্যোগ তখনই সফল হয়, যখন সেটা গণমানুষের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়।
সমাজের দাবি
মানুষের জন্য কাজ করা মানেই সমাজের জন্য কাজ করা। আমাদের চারপাশে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ আছেন, যারা একবেলা খাবার জোগাড় করতে অমানুষিক পরিশ্রম করছেন। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি আমরা। গৃহহীন অনেক মানুষ আছেন, যারা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় অসহনীয় কষ্ট ভোগ করেন। তাদের কষ্ট লাঘবেও এগিয়ে আসতে পারি আমরা নানাভাবে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখতে পাব, আসলেই সমাজের মানুষের জন্য অনেক কিছু করার আছে আমাদের।
প্রতিদিন একটি কাজ
আমরা যে কেউই চাইলে প্রতিদিন একটি কাজ করতে পারি। সেটা হতে পারে ইচ্ছেমতো। সেটা হতে পারে প্রতিদিন একটু একটু করে টাকা জমানো, যেন বছর শেষে কাউকে কোনো কাজে আর্থিক সাহায্য করা যেতে পারে। হতে পারে, রক্তের প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করা। হতে পারে, দিনের মধ্যে অন্তত একবেলা কোনো ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার খাওয়ানো। রাস্তা পার হতে কাউকে সাহায্য করাও একটি কাজ হতে পারে। এভাবে আমরা সবাই যদি প্রতিদিন মানুষের জন্য অন্তত একটি কাজ করে ঘরে ফিরি, তবে সত্যিই সেটা হবে অনেক বড় একটি কাজ।
পরিবার-পরিজন
পরিবারকে সময় দেওয়ার মাধ্যমেও নিজেকে কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। ঘরের কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করা, নিজের কাজগুলো নিজেই শেষ করে ফেলা, পরিবারের ছোটদের ভালোবাসা আর বড়দের সম্মান করা, পরিবারের যেকোনো সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা, এভাবেই আমরা পরিবারকে মূলত সময় দিতে পারি। হাসি-আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারি আমাদের পরিবার।
ভালো বন্ধু
কর্মী হতে হলে প্রয়োজন একদল ভালো বন্ধুর। কারণ, আপনার বন্ধুই যদি না থাকে তবে কীভাবে নিজের কাজ, নিজের চিন্তা, নিজের ভাবনা, নিজের স্বপ্ন অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। সৎসঙ্গ গ্রহণ করে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ না করে বরং তাদের ভালো ও সুন্দর পথের দিকে আহ্বান করুন। এভাবেও বন্ধুদের নিয়ে সবাই মিলে কর্মী হয়ে ওঠা যায়।
কলি