
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসন না থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু করতে পারছে না চবি প্রশাসন। স্বায়ত্তশাসিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্থবিরতা বিরাজ করছে।
এদিকে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
তথ্যমতে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে জুনের ১৬ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত আট দিন ছুটি ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ওই মাসের ২৪ তারিখ সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রত্যয় পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি, বর্ষাকালীন ছুটি এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধসহ সবকিছু অচল হয়ে যায়।
সবশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে গত ১০, ১২ ও ১৩ আগস্ট একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি এবং সব আবাসিক হলের প্রভোস্টরা পদত্যাগ করায় প্রশাসনের সব পদ খালি হয়ে যায়। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রবিবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা থাকলে বর্তমানে প্রশাসনহীন অবস্থায় চবির একাডেমিক কার্যক্রম সচল করা যায়নি।
এদিকে উপাচার্য নিয়োগ ছাড়া কোনো কাজই যথার্থভাবে করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম সচল করার জন্য সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আবার সিন্ডিকেট সভা ডাকার অধিকার কেবল উপাচার্যেরই রয়েছে। এমতাবস্থায় উপাচার্য নিয়োগ একমাত্র সমাধান। এর আগে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এ ছাড়া প্রশাসনিক পদগুলো খালি থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হলগুলোর সিট বরাদ্দ কার্যক্রম এবং ১৯ আগস্ট থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও অনিবার্য কারণে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আবাসিক হলগুলো নতুনভাবে আসন বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে না থাকার নির্দেশনা দিয়ে গত ১৮ জুলাই হলগুলো সিলগালা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ছাত্রলীগ সিলগালা ভেঙে হলে অবস্থান করলেও আওয়ামী সরকারের পতনের পরে হল ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা। এ পরিস্থিতিতে হল কবে খুলে দেওয়া হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ থাকায় সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা, আবাসিক হলগুলো না খুলে দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় কবে নাগাদ সচল হবে তারও অনিশ্চয়তায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
ইতোমধ্যে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে অনেকে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আবাসিক হলে না উঠতে পেরে পড়েছেন ভোগান্তিতে। অনেকে আবার ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য অগ্রিম টিকিট কেটেও দোটানায় রয়েছেন। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সব খালি আসনে প্রশাসন নিয়োগ দিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, অন্তত আসন বরাদ্দ দিয়ে যেন হলগুলো খুলে দেওয়া হয়।
দ্রুত সময়ে প্রশাসন গঠন ও সার্বিক পরিস্থিতি সচল করার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, আমরা উপাচার্য নিয়োগের পরে তার সঙ্গে আলোচনায় বসে পরবর্তীতে ক্যাম্পাসকে সুশৃঙ্খল, ছাত্রবান্ধব করা যায় সেদিকে এগোব। উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে আজকেও উপদেষ্টা আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন শিক্ষার্থী-গবেষণাবান্ধব যোগ্য একজন উপাচার্য নিয়োগ করা যায় সে ব্যাপারে তারা সচেতনভাবে আগাচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপাচার্যের জন্য শিক্ষকদের অনেক নামের তালিকা তাদের কাছে পৌঁছেছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য আসবেন।
মাহফুজ শুভ্র/জোবাইদা/অমিয়/