জন্মের পর থেকে ডান হাত নেই তার। এমন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েও থেমে থাকেননি তিনি, বন্ধ করেননি স্বপ্ন দেখা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ব জয়ের। তার নাম নয়ন অধিকারী। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
নয়ন বর্তমানে জাতীয় প্যারা ব্যাডমিন্টন দলের সদস্য। সেই সঙ্গে বিসিবির নিয়ন্ত্রণাধীন কুমিল্লার ইউনিসেফ ডিজেবল ক্রিকেট টিমের অলরাউন্ডার হিসেবেও যুক্ত রয়েছেন। এক হাতে কীভাবে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন, কোথা থেকে পেলেন অনুপ্রেরণা- এসব বিষয়ে জানতে কথা হলো নয়ন অধিকারীর সঙ্গে।
ব্যাডমিন্টন খেলার অনুপ্রেরণা নয়ন মূলত পেয়েছিলেন তার বাবার কাছ থেকে। ছোটবেলায় যখন ঢাকায় থাকতেন, তখন বাবার সঙ্গে গলিতে অনেক ব্যাডমিন্টন খেলেছেন। তখন থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলার প্রতি আলাদা একটা ভালো লাগা জন্মে নয়নের। এশিয়ান ও অলিম্পিকে পদকজয়ী ভারতের পলক কোহলির খেলা দেখে ব্যাডমিন্টনের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। পলকের সমস্যাটাও ছিল নয়নের মতো। পার্থক্য শুধু পলকের বাঁ হাত নেই আর নয়নের নেই ডান হাত।
বরিশালের অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নয়ন অধিকারী উপজেলা পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। সেখানে তিনি একজনের নজর কাড়েন। তিনিই প্রথম নয়নকে পরামর্শ দেন জাতীয় প্যারা ব্যাডমিন্টন দলে খেলার জন্য চেষ্টা করতে। সঙ্গে কোচ এনায়েত উল্লাহ খানের মোবাইল ফোন নম্বরও দেন তিনি। এনায়েত উল্লাহ খান এখন নয়নের কোচ এবং বাংলাদেশের জাতীয় প্যারা অলিম্পিক কমিটির সদস্য ও প্যারা ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। নয়নের এই পথচলার পেছনে তার পরিবারের পাশাপাশি এনায়েত উল্লাহ খানের ব্যাপক ভূমিকা আছে।
এনায়েত উল্লাহ খানের পরামর্শে কুমিল্লা ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে সপ্তাহে তিন দিন কোচিং করছেন নয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ধ্যা ৬টায় গিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত খেলার অনুশীলন করেন তিনি। কুমিল্লা ব্যাডমিন্টন একাডেমির কোচ রকিব এখন নয়নকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেকেই পিছপা হন জীবন থেকে, তাদের লালিত স্বপ্ন থেকে। কিন্তু নয়ন সেটা করেননি বলেই ব্যতিক্রম। তিনি স্বপ্ন দেখেন বিশ্ব জয়ের। সেই লক্ষ্যেই একটু একটু করে এগিয়ে চলেছেন।
নয়নের বাবার স্বপ্ন ২০২৮ সালে আমেরিকায় অনুষ্ঠেয় প্যারা অলিম্পিকে খেলবেন নয়ন। সেই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জাতীয় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হলে নয়ন দেশের বাইরে খেলার সুযোগ পাবেন। সে লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাইরেও বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জন করা উচিত বলে মনে করেন নয়ন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্যারা অলিম্পিকের খেলোয়াড়দের দিকে তাকালে দেখতে পাব তারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবিলা করে বিশ্বদরবারে নিজেকে উপস্থাপন করে বহুদূর এগিয়ে গেছেন।’
তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা যেন ঘরে বসে না থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করেন, নয়ন অধিকারীর চাওয়া সেটাই।
কলি