ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) যৌন নিপীড়ন সেল পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাধারণ নারী শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সেল পুনর্গঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়ন সেল স্থাপন করা, অভিযোগ দায়ের করার পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করাসহ ১২ দফা জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ওই স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূজিয়া হাসিন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-রুম নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রায়ই শিক্ষক অথবা অন্য শিক্ষার্থী দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই নিপীড়ন কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করেছে। ক্ষমতাতন্ত্রের সঙ্গে পুরুষতন্ত্রের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে তুলেছে আমাদের সামনে। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালতের ১১ দফা নির্দেশনা থাকার পরও কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটির পদক্ষেপ ও কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো কার্যকর প্রতিকারব্যবস্থাই তৈরি করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।’
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা ১২ দফা দাবি উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল পুনর্গঠন করে চালু; প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল স্থাপন, সেলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং সেলটি যেন কেন্দ্রীয় নিপীড়নবিরোধী সেলের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের অভিযোগ সুরাহা করে তা নিশ্চিত করা; অভিযোগ দায়ের করার পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি; অভিযুক্ত কোনো শিক্ষক ঘটনার তদন্ত চলাকালীন একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না; বিগত যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো পুনরায় তদন্ত করা এবং তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্তদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে; যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তৎক্ষণাৎ রেসপন্স করার জন্য প্রক্টোরিয়াল টিমের ‘স্পেশাল ফোর্স’ গঠন করতে হবে। তবে এই ফোর্স যাতে কোনোভাবেই ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া একাডেমিক ভবনগুলোতে নারীদের ওয়াশরুমের সংখ্যা বাড়ানো এবং সেসবের ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া; নারীদের হলে অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে; নারীদের প্রতিটি হলে সিলিং ফ্যান স্থাপন করতে হবে; মেয়েদের হলসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে; ক্লাসরুম ও আবাসিক হলে সব ধরনের স্লাট-শেমিং, নারীবিদ্বেষী মন্তব্য ও পোশাক নিয়ে জেরা করা বন্ধ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশেষ করে হলগুলোর সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।