ঢাকা ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

নতুন ভিসি ও প্রো-ভিসি পেল বশেমুরবিপ্রবি

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৬ পিএম
নতুন ভিসি ও প্রো-ভিসি পেল বশেমুরবিপ্রবি
বশেমুরবিপ্রবিতে নতুন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রো-ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) নতুন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও প্রো-ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানকে প্রো-ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী, ভিসি ও প্রো-ভিসির মেয়াদ হবে যোগ দেওয়ার তারিখ থেকে চার বছর। এই পদের জন্য তারা বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন এবং বিধি অনুযায়ী অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। তাদের সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যেকোনো সময় এই নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন। 

নাবিল/সালমান/

বেরোবির সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ পিএম
বেরোবির সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত
শরিফুল ইসলাম

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৯ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (২) ধারা মোতাবেক তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা পাবেন।

গাজী আজম/জোবাইদা/অমিয়/

বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা, প্রতিবাদে বেরোবিতে বিক্ষোভ

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা, প্রতিবাদে বেরোবিতে বিক্ষোভ
ছবি : খবরের কাগজ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন বাংলাদেশে চালালে তাদের যে আয়তন, সেটা তারা হারাবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রহমত আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন চালালে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সেভেন সিস্টারস বিচ্ছিন্ন করে দেব। তারা ভুলে গেছে এই ভূমি ক্ষুদিরামের, আবু সাঈদের, মুগ্ধের এবং আবরার ফাহাদের। তারা শহিদ হওয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আবরার ফাহাদদের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন থেকে যদি তারা সরে না আসে, তা হলে বাংলাদেশের জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দেবে।’

ভারতকে উদ্দেশ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন বলেন, ‘তাদের দেশে মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরি করছে আর আমাদের সম্প্রীতির কথা শোনায়! আগে নিজের দেশে মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় আগ্রাসন বাংলাদেশে চালালে তাদের যে আয়তন, সেটা তারা হারাতে বসবে। ভারতের রাষ্ট্রনীতি ঠিক করতে হবে। এরপর তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা রাজপথে আছি রাজপথে থাকব, ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিহত করব।’

ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে আমরা নতুন যে বাংলাদেশ পেয়েছি, পূর্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি ছিল। আমরা বর্তমান সরকারের আমলে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি চাই। প্রয়োজনে ১৬ কোটি জনগণ সরকারকে সাহায্য করবে।’

গাজী আজম/জোবাইদা/অমিয়/

খেলার মাঠে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম
খেলার মাঠে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
নিহত মেহেদী হাসান সিয়াম। ছবি: সংগৃহীত

ক্রিকেট খেলার সময় ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হয়ে মেহেদী হাসান সিয়াম নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস।

মেহেদী হাসান সিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রাণীনগর গ্রামে।

মেহেদীর সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা চলাকালে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটার সিয়াম হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করেন। পরে তিনি পানি পান করতে চান। এ সময় তার সতীর্থ খেলোয়াড়রা সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করলে তার অবস্থার অবনতি হয়। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিয়াম নামের এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরিবার ও শিক্ষকদের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। 
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। বাদ এশা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে।’

এস আই সুমন/নাবিল/

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩ ডিসেম্বর- ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস’। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই দিবসটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবন্ধীরা আজও সমাজে অবহেলিত ও নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও হতাশাজনক। সমাজে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিমত তুলে ধরেছেন শাহ্ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

‘সীমাবদ্ধতা মানেই হেরে যাওয়া নয়’

দীপা সাহা প্রিয়া
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ

‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা শুনলেই মানসপটে ভেসে ওঠে সমাজে পিছিয়ে পড়া একাংশের চিত্র, যারা জীবনমান উন্নয়নের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। 
‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১’ অনুসারে, মোট সাত ধরনের প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, যা দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ।
একটি সাদা জামায় তিল পরিমাণ কালির দাগ যেমন সম্পূর্ণ জামাটার দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে কলুষিত করে, সেই রকম প্রতিবন্ধকতার ধরন যাই হোক না কেন, প্রকট কিংবা প্রচ্ছন্ন- তা প্রতিবন্ধী ট্যাগধারী ব্যক্তিটিকে সামাজিক মানদণ্ডের পাল্লায় স্বাভাবিক জগৎ থেকে নির্বাসিত করে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে তাদের করুণার দৃষ্টিতে দেখা হলেও মূলত তারা তাদের অধিকার ও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়। তথাকথিত সামাজিক স্বীকৃতির অভাব ও সৃষ্ট বৈষম্যের কারণে প্রতিবন্ধীদের শৈশব হারিয়ে যায় না, বরং নষ্ট হয়!
সামাজিক বর্জন ও অবহেলা, উপযুক্ত শিক্ষা ও বিকাশের অভাব, কর্মসংস্থানের অপর্যাপ্ততা, ভৌত ও অবকাঠামোগত অপ্রাপ্যতা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসনের অপ্রতুলতা প্রভৃতি তাদের জীবনমান উন্নয়নের অন্তরায়। অবাক করা তেতো সত্য, একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়েও বিপুল জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের অন্যতম কারণ প্রচলিত কুসংস্কার। পদ্মা, যমুনা, মেঘনার বহু পানি গড়িয়েছে- এমনকি উন্নয়নের দরুন নদীগুলোর নাব্য হারিয়ে পানিশূন্য খাল হওয়ার উপক্রম। তবুও এখনো কানা, খোঁড়া, ন্যাংড়া, বোবা, পাগল বলে অভিহিত করে তাদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।
‘সীমাবদ্ধতা মানেই হেরে যাওয়া নয়, বরং ভেতরের অদম্য শক্তি অনুসন্ধানের সুযোগ।’ কাজেই প্রতিবন্ধকতা কোনো অপরাধ নয়; প্রতিবন্ধীরা নয় পাপের ফসল। নিজেকে প্রমাণের উপযুক্ত সুযোগ পেলে তারাও দক্ষ জনশক্তি হয়ে উঠতে পারে, সভ্যতার কল্যাণে স্বাক্ষর রাখতে পারে।

‘তারা করুণা চায় না, চায় সুযোগ’

মো. এমরান হোসেন 
সমাজকর্ম বিভাগ

‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা শুনলে জানি না কেন অধিকাংশ মানুষের একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে। অনেক বিশেষজ্ঞ ও সংস্থা এখন ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দের জায়গায় ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’ ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। এতে কি আদৌ অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন আসে?
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখনো সমাজে অবহেলিত, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু কেন জানি না প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা এলে সবাই চুপ হয়ে যায়। তাদের অধিকার নিয়ে বেশির ভাগ মানুষ কথা বলতে চায় না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিনে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যে নামমাত্র ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এক বস্তা চালও কেনা কঠিন। দেশের যানবাহন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ যথেষ্ট প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। উচ্চশিক্ষার জন্য অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই দৃষ্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য তাদের উপযুক্ত শিক্ষা সরঞ্জাম। দেশের বিশাল বিশাল ভবনের বেশির ভাগে নেই প্রতিবন্ধীদের সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই যথেষ্ট অনুদান ও সাহায্যের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ (ক) অনুচ্ছেদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ এ দেশের সব নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এই অনুচ্ছেদের যথাযথ সমতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৪৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। 
আমাদের প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈষম্যের উৎপত্তি এবং বৈষম্য থেকে জনবিচ্ছিন্নকরণ।
পরিশেষে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও পারে, তাদেরও রয়েছে দেশ ও জাতি গঠনের ক্ষমতা ও প্রতিভা। তাদেরকে যথেষ্ট সুযোগের ব্যবস্থা করে দিন।

প্রতিবন্ধীদের জন্য চাই যুগোপযোগী শিক্ষা

মো. আতিক শাহরিয়ার সিয়াম 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ


জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধীরা প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়। স্কুলজীবন প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এক আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয়। বুলিং থেকে শুরু করে অসংখ্য বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হতে থাকে প্রতিবন্ধী শিশু। অনেক স্কুল তো প্রতিবন্ধীদের ভর্তিই নেয় না।  
প্রতিবন্ধীরা সব নিগ্রহের জবাব নীরবেই দিতে পারত শিক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু আফসোস, প্রতিবন্ধীদের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা দেশে গড়ে ওঠেনি। ইউনিসেফের সহায়তায় করা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ ২০২১’ অনুযায়ী দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের ৬০ শতাংশ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। অথচ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এমপিওভুক্ত স্কুল আছে মাত্র ৭৬টি। সে স্কুলগুলোরও আবার বেহাল। অথচ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৬৯৭টি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন ঝুলে আছে ২০১৯ সাল থেকে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই অবহেলা সব ক্ষেত্রে। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিবন্ধীদের অধিকার- যা জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ২৩ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা স্বীকৃত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর ১৬ নং ধারায় বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংহত করার কথা বলা হয়েছে। 
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গী করে নিতে পারলে আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও গতিশীল অর্থনীতির স্বপ্ন পূরণ সহজতর হবে।
 আমাদের দেশ ও বিশ্ব প্রতিবন্ধীবান্ধব হোক। এটাই এবারের বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের চাওয়া।

প্রতিবন্ধী হওয়াটা লজ্জার নয়

মো. আরিকুজ্জামান
বাংলা বিভাগ

প্রতিবন্ধী শব্দটাকে বর্তমানে সমাজে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়া এক লজ্জার বিষয়।
প্রতিবন্ধীদের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্মান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো চিন্তাধারার উন্নতিসাধন করা। প্রতিবন্ধীদের কোনো সময় বুঝতে দেওয়া যাবে না তাদের সীমাবদ্ধতা। ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’- এ মন্ত্রটি বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে, শ্রেণিকক্ষে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করছে। এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের সঙ্গে সর্বদা সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
সঠিক মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে ‘হেলেন কেলার’ হয়ে উঠেছিলেন ‘অন্ধকারে আলো জ্বালা এক দীপশিখা।’ তার শিক্ষক অ্যানি সুলিভানের স্পর্শ-অনুভূতির মাধ্যমে শিক্ষাদান এটাই প্রমাণ করে, জীবনের চাকা যদি একপাশে থেমে যায়, তবে অন্যপাশে ঘুরিয়ে দিতে হয়। যার সুদূরপ্রসারী প্রতিফলন দেখা যায় দৃষ্টিহীন নাহিয়ান বুশরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিকূলতা জয়ের চ্যালেঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহীন আলম স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটারের সব কাজ করেন। নিজের মতো অন্য যারা প্রতিবন্ধকতার জীবন পার করেছেন তাদের জন্যও যেন তিনি আশীর্বাদ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তুলেছেন। চোখের আলো নেই, এমন প্রায় অর্ধশত দেশি-বিদেশি মানুষ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তার কাছে।

হাসান

বড় গবেষক হতে চান কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়া জাইমুন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম
বড় গবেষক হতে চান কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়া জাইমুন
জাইমুন ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই লক্ষ্যে চলছিল প্রস্তুতিও। মাঝখানে ছন্দপতন হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল প্রকাশ হলে। প্রত্যাশানুযায়ী ফল করতে না পেরে হয়ে পড়েন হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা না আসায় শুনতে হয় নিন্দুকের সমালোচনাও। এবার সব সমালোচনার জবাব দিয়ে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ময়মনসিংহের জাইমুন ইসলাম।

গত ২৫ অক্টোবর সারাদেশের নয়টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের এই শিক্ষার্থী। জাইমুন ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায়। ২০১৮ সালে বাবাকে হারানোর পর মা আর বড় বোনকে নিয়ে চলে তার জীবন-সংগ্রাম। ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী জাইমুন পড়াশোনা করেছেন গোকুলচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, পয়ারী স্কুলে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বাকৃবি চত্বরে অবস্থিত কেবি কলেজে। 

এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেলেও ইংরেজিতে ‘এ মাইনাস’ আসায় খুশি হতে পারেননি জাইমুন। কারণ তাকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। হতাশা আর সমালোচনার চাপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে যায়। ফলস্বরূপ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবস্থান করতে পারেননি। এরপর শেষ সময়ে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন জাইমুন। প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের চিন্তায় আবারও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন ভর্তি পরীক্ষার জন্য। মাঝে কিছুটা বাড়তি সময় পেয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সহজ হয়। ফলে কৃষিগুচ্ছের জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন জাইমুন। ভর্তি পরীক্ষাও খুব ভালো দেন এবং চান্স পাওয়া নিয়েও ছিলেন আশাবাদী। পরীক্ষায় ৯৯টি প্রশ্নের উত্তর করেন, যার মধ্যে ৯৭টি সঠিক হয়। এর ফলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জনের কৃতিত্ব গড়েন জাইমুন। এখন তার ইচ্ছা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে পড়ার। কৃষি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করা, কৃষি নিয়ে গবেষণা এবং বাংলাদেশের কৃষিতে অবদান রাখার ইচ্ছাও তার।

তার এই সাফল্যের পেছনের গল্প শোনাতে গিয়ে জাইমুন বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার মূলত ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া। কিন্তু এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর আমি ভাবলাম হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগুলো আমি দিতে পারব না। তাই পরবর্তী সময়ে আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রিপারেশন নেইনি। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করি, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি যদি সেই সময়টায় ভালো করে প্রিপারেশন নিতাম, হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগ পেতেও পারতাম। কিন্তু আজকে যে সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করার সাফল্য, সেটা হয়তো আমি কখনোই পেতাম না। আমি আমার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত খুশি।’

জাইমুন তার সাফলতার কৃতিত্ব দিলেন তার দাদা ও শিক্ষকদের। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পড়ালেখা ও আমার পরিবারের যাবতীয় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন আমার দাদা আবু তালেব। তিনি আমার বাবার বড় চাচা। তিনি আমাদের ফুলপুরে একজন ব্যবসায়ী। ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। নিঃস্বার্থভাবে একজন মানুষ এতকিছু করতে পারেন, সেটা বাস্তবিক পক্ষে আমি ওনাকে দেখে জেনেছি। বলা যায় আমার এই কৃতিত্বের পেছনে আসল হিরো হচ্ছেন আমার দাদা। ওনার সাপোর্ট, মোটিভেশন আজকে আমাকে এখানে দাঁড় করিয়েছে। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। শুধু আমার দাদা নয়, আমার চারপাশের যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন- তাদের সবার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’

জাইমুন আরও বলেন, ‘আমাকে যারা গড়ে তুলেছেন আমার সব শিক্ষকের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ সবাই অনেক আন্তরিক ছিলেন। বিশেষ করে কলেজজীবনে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কলেজের শিক্ষকদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ এবং অত্যন্ত উপকারী। গাইডলাইনের ক্ষেত্রে আমার শিক্ষকরা আমার জীবনে অনেক বেশি আবদান রেখেছেন।’


অনুজদের উদ্দেশে জাইমুন বলেন, ‘একটাই কথা বলার থাকবে, জীবনের যেকোনো অবস্থান থেকে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিশ্রম করতে হবে, তবেই সফলতা ধরা দেবে। আর সফলতার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা কখনোই জীবনে ভালো কিছু দেয় না। দশটা দিন হতাশ হয়ে নষ্ট না করে নতুন করে চেষ্টা করলেও অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। আর সবার মাঝে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে, সেটা সবসময় বিশ্বাস করতে হবে।’

জাইমুনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার কলেজও। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়ার জন্য জাইমুনকে অভিনন্দন জানাই। এই অর্জনের মাধ্যমে সে তার পরিবার ও কলেজের মুখও উজ্জ্বল করেছে। অনেক আগে থেকেই আমাদের কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও কাঠামো অত্যন্ত সুগঠিত। কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছু হয়ে থাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষকরা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করে থাকেন। এর ফলে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল, প্রকৌশলসহ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আমি জাইমুনসহ কেবি কলেজের সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।’

হাসান