সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে কোনো যৌক্তিক সমাধান না পেলে ২০১৯ সালের মতো ‘লাগাও তালা, বাঁচাও ঢাবি’ কর্মসূচি করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী রাইয়ান ফেরদৌস।
এ সময়ের মধ্যে অধিভুক্তি বাতিল করা না হলে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে তালা ঝুলানোর মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত কলেজের বোঝা বহন করতে গিয়ে পড়াশোনা এবং র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। সাত কলেজের দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর বোঝা বহনের সক্ষমতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এই বোঝা কাঁধে নেওয়ার ফলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও মানসম্মত শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে একটা নির্দিষ্ট জায়গা করা হবে, যেখান থেকে তাদের জন্য কার্যক্রম চালানো হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শফিকুল ইসলামের এমন মন্তব্য প্রত্যাখান করে রাইয়ান ফেরদৌস বলেন, ‘এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ঢাবি, কেননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এখানে কী হবে আর কী হবে না তার সিদ্ধান্ত একান্তই ঢাবির। আমরা এমন মন্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি।’
৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে আরেক শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি অধিভুক্তি বাতিল না করা হয় তাহলে ৭৩ ঘণ্টায় গিয়ে মঙ্গলবারে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়া হবে। এরপরও দাবি না মানা হলে ২০১৯ সালের মতো সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলানো হবে।’
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
সাত কলেজ ইস্যুতে বৈঠক করবে ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠককের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তররের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, ‘ সরকারের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতোপূর্বে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারাসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চমহলে আলাপ করেছে। সরকারও বিষয়টির জনগুরুত্ব বিবেচনা করে আন্তরিকতার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (সম্ভাব্য আগামী রবিবার) এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি করে আসছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, সরকারি সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের নিয়ে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এব্যাপারে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।’
/আরিফ জাওয়াদ/সুমন/এমএ/