চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে মুক্তমঞ্চ হিসেবে। একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি সেগুলো বিকাশ করে দক্ষতা ও সৃজনশীলতা। বিতর্ক, গবেষণা, সাংস্কৃতিক, আবৃত্তি, ক্যারিয়ার, সামাজিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গুণাবলি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে অপার সম্ভাবনা থাকলেও অর্থের অভাব, প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যাও পোহাতে হচ্ছে সংগঠনকর্মীদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধশতাধিক ক্লাব ও সংগঠন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিতর্ক সংগঠন, আবৃত্তি সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ইতিহাস ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, বিভাগভিত্তিক ক্লাবসহ আরও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংগঠন হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ডিবেটার্স অব চিটাগং ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা সোসাইটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ, অঙ্গন শিল্পীগোষ্ঠী ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিমত, বিতর্ক সংগঠন যেমন শিক্ষার্থীদের যুক্তি ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা বাড়াতে সহায়তা করে, তেমনি গবেষণা ও উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ক্যারিয়ার ক্লাবগুলো পেশাগত দিক থেকে প্রস্তুত করতে নানা কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করে, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের উন্নয়নে সহায়ক হয়। এদিকে আবৃত্তি সংগঠন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে ভূমিকা রাখে এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করে আসছে। এ ছাড়া ইতিহাস ক্লাব, পরিবেশ সংসদ এবং চলচ্চিত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে তথ্য ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। এসব সংগঠন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি, যোগাযোগ দক্ষতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। তবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কখনো প্রশাসনের, কখনো রাজনৈতিক দলগুলোর দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়। পড়াশোনার পাশাপশি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা। সেই তুলনায় অনেকে মিডিয়া থেকে সেভাবে আর্থিক সহায়তা পাই না।’
বিতর্ক সংগঠন ডিবেটার্স অব চিটাগং ইউনিভার্সিটির (ডিসিইউ) প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল মাছুম বলেন, ‘মুক্তবুদ্ধি এবং মুক্তচিন্তা চর্চায় বিশ্বাস করে ডিসিইউ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অঙ্গনে বিতর্কচর্চা এবং প্রচার-প্রসার করে আসছে। তবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে ডিসিইউ আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে যৌক্তিক ও মুক্তচিন্তার বিকাশে অবদান রাখতে পারবে।’
চবি ক্যারিয়ার ক্লাবের (সিইউসিসি) সভাপতি সাফায়েত জামিল নওশান জানান, সিইউসিসি চবির শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান পাওয়া যায় না।
চবির অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অঙ্গন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন। কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ সব সময়ই থাকে। এর মধ্যে একটি হলো সংগঠনের নিজস্ব কক্ষ নেই। এ প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পারলে আরও বেশি সাংগঠনিক কাজ বাড়বে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি দরকার যোগ্য ও দক্ষ হওয়া, যা কো-কারিকুলার এক্টিভিটির (পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ) মাধ্যমে অর্জন সম্ভব। এসব কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য বিভাগভিত্তিক বিতর্ক, সাহিত্য সংসদ ক্লাব, ক্রীড়া ক্লাব, মানবাধিকার সংগঠন ইত্যাদি থাকে এবং স্ব-স্ব বিভাগ যদি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করে, তা হলে শিক্ষার্থীরা এসব কার্যক্রমে আরও উৎসাহিত হবে।
এভাবে তারা দক্ষতা অর্জন করে দেশ এবং দেশের বাইরে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যেসব সংগঠন রয়েছে তারা অনুমতি সাপেক্ষে চাকসু ভবনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাসেই তারা এসব কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটি পরিচালনা করুক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন-রাতের পার্থক্য দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি দিন-রাতে সমানভাবে পরিচালনা করতে পারে এ রকম শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস চাই। সবার সহযোগিতায় যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।’