যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ১০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আওয়ামী লীগের ‘স্বৈরাচারী দোসর’ আখ্যা দিয়ে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যবিপ্রবিতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে তাদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণাও সংবাদ সম্মেলন থেকে দেওয়া হয়।
যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এমদাদুল হক, উপ-রেজিস্ট্রার (স্ট্রেট শাখা) জাহাঙ্গীর আলম, উপপরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন) ড. আব্দুর রউফ, জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ অর্ণব, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সী মনিরুজ্জামান, সেকশন অফিসার সাইফুর রহমান, সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সরদার ফরিদ আহমেদ, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শওকত হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আরিফুজ্জামান সোহাগ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, সেই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন যবিপ্রবির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তারা কোনো রাজনীতি করতে পারবেন না। তার পরেও সাবেক ভিসির ইন্ধনে নীল দল, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ নামে স্বৈরাচারী সরকারের দুর্নীতিবাজরা তাঁবেদারি করে গেছেন। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সেই দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এমন অবস্থায় ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে এসব দোসরকে অবিলম্বে বিচার ও অপসারণের দাবি জানান।
ফিশারিশ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখন বলেন, ‘গত দেড় দশক ধরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, তেমনি এই যবিপ্রতিতে কিছু দোসর ধ্বংস করার পাঁয়তারা করেছেন। যারা বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টা ধ্বংস করার জন্য লিপ্ত ছিলেন, তারা এখনো তাদের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই যবিপ্রবি এখনো সংস্কার হয়নি। বিগত সরকারের যেসব দোসর অপকর্ম করেছেন তারা এখনো স্বপদে দায়িত্বে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দোসরদের ক্ষমতায় রেখে কোনোভাবেই যবিপ্রবি সংস্কার করা যাবে না। তাই সেই সব দোসরকে অপসারণ ও তাদের সব অপকর্ম তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমরা বিগত সময়ের ১০ জন দোসরের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দিয়েছি। তারা যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব দোসরকে অপসারণ ও আইনের আওতায় না আনে; তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে নামবেন।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিব আহমেদ শান, ফিজিও থেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসান, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের আল মামুন লিখন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের হান্নান হোসেন, সজীব হোসেন প্রমুখ।
যবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের তালিকা ও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাদের তালিকাটি গ্রহণ করেছি। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’