ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কর্তৃপক্ষের ভুলে ৪ বছরের গ্যাড়াকলে পড়ে ধ্বংসের পথে রুবেল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার। বিভাগীয় সভাপতির অসচেতনতা, একাডেমিক শাখার অবহেলা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অদূরদর্শিতা ও হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করায় ইতোমধ্যে ওই শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ৪টি বছর ঝরে গেছে। ক্যারিয়ার বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ঘুরেও নিষ্ফল হয়েছেন রুবেল।
রুবেল ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সিমেস্টার পরীক্ষার সময় বিভাগ থেকে তাকে জানানো হয়, তিনি প্রথমবর্ষে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। পরে এখন পর্যন্ত আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এর ফলে ধ্বংসের পথে তার শিক্ষাজীবন।
রুবেলকে প্রথমবর্ষে অনুত্তীর্ণ দেখানোর পর বিভাগের একাডেমিক কমিটি পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন। ২০২২ সাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি ভর্তি হতে পারেননি। এর আগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে পুনঃভর্তির জন্য বিভাগে রুবেল আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন প্রশাসনিক ভবনে ফাইলেই আটকে আছে। পরের বছর আবারও বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় তাকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সুপারিশ করা হলে একাডেমিক শাখা থেকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ওই শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালের ২৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বশির উল্লাহর বেঞ্চ রুবেলকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পুনঃভর্তি কেন নেওয়া হয়নি, এই ব্যাপারে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেন। প্রায় দেড় বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কারণ দর্শায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষাজীবনে ফেরা এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রুবেলের।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রথম বর্ষে অকৃতকার্য হয়েছিলাম। কিন্তু তা জানতাম না। পরে দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সিমেস্টার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় আমি রেজাল্টও দেখিনি। কিন্তু পরবর্তী সিমিস্টারে পরীক্ষায় আমাকে বলা হয়, আমি ফেল করেছি। তাই আমাকে পুনঃভর্তি হতে হবে। এর পরে বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি। কিন্তু আমাকে আর ভর্তি নেওয়া হয়নি। আমাকে প্রথমেই দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির সময়ে বিষয়টি জানালে আমি তখনই ভর্তি হতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের কাছে আমার শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রথম বর্ষে অনুত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণের সময় তার অনুত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি খেয়াল না করে তাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, যেটা ঠিক হয়নি। এ ঘটনার দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর স্বীকার করছে। তবে বিভাগ থেকে যেহেতু ফরম নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে বিভাগেরও দায় রয়েছে।’
বিভাগটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘অসচেতনতার কারণে সে প্রথম বর্ষের ফল না দেখেই দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে সে যখন বিষয়টি জানতে পারে তখন আমরা তাকে পুনঃভর্তি হতে বলি। তার পুনঃভর্তির বিষয়ে বিভাগ থেকে যত ধরনের সুপারিশ ও সহযোগিতা দরকার আমরা তাকে করেছি।’
একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খান বলেন, ‘প্রথম বর্ষে অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরেও একজন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, এ বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কাজ। একাডেমিক শাখা শুধু একজন শিক্ষার্থীর ভর্তি ও পুনঃভর্তির বিষয়টি দেখে।’