
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গত চার শিক্ষাবর্ষ (২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪) ধরে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালটির শিক্ষার্থীরা এ প্রক্রিয়ার প্রশ্নের মান, স্বচ্ছতা, জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আগের মতো স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছেন। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে অভিমত শিক্ষকদেরও।
সম্প্রতি স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৫ নভেম্বর শাবিপ্রবিকে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবিতে তারা মানববন্ধন করে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, ‘শাবিপ্রবি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা মনে করি, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং মানসম্মত শিক্ষার্থী বাছাইয়ে সীমাবদ্ধতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এরই মধ্যে সেশনজট সৃষ্টি করেছে, এ ধরনের অনেক সীমাবদ্ধতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র ভর্তি প্রক্রিয়ার দাবি যৌক্তিক। এ বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছি।’
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো গুচ্ছে পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন শুয়াইব আহমদ চৌধুরী। তিনি এখন স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শাবিপ্রবি গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, শাবিপ্রবি গুচ্ছের মধ্যে আসার পর থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নিজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারেনি। গুচ্ছের কারণে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান কমেছে। বহুবার মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হওয়ার পরও সিট ফাঁকা থাকার নজির দেখা যাচ্ছে। শাবিপ্রবি গুচ্ছ থেকে বের হলে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য, পলিসি ও লিগ্যাসি ধরে রাখতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে চাই, কারণ গুচ্ছের কারণে প্রশ্নের মান এবং ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া আমাদের জন্য সুবিধাজনক হচ্ছে না। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় সব সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে নির্ধারণ করা হয়। ফলে আমরা চাইলেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না এবং ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে পারি না। পাশাপাশি গুচ্ছের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে যে মানের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো, এখন তার থেকে তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। এতে আমরা আমাদের পড়াশোনার মান ধরে রাখতে পারছি না। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমি মনে করি আমাদের গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।’
এ ব্যাপারে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের মান ধরে রাখার জন্য আমি মনে করি শাবিপ্রবিকে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। শাবিপ্রবি যদি গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসে তাহলে আমরা বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করব।’
প্রতিবছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভোগান্তি কমাতে ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।