ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

বড় গবেষক হতে চান কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়া জাইমুন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম
বড় গবেষক হতে চান কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়া জাইমুন
জাইমুন ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই লক্ষ্যে চলছিল প্রস্তুতিও। মাঝখানে ছন্দপতন হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল প্রকাশ হলে। প্রত্যাশানুযায়ী ফল করতে না পেরে হয়ে পড়েন হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা না আসায় শুনতে হয় নিন্দুকের সমালোচনাও। এবার সব সমালোচনার জবাব দিয়ে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ময়মনসিংহের জাইমুন ইসলাম।

গত ২৫ অক্টোবর সারাদেশের নয়টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের এই শিক্ষার্থী। জাইমুন ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায়। ২০১৮ সালে বাবাকে হারানোর পর মা আর বড় বোনকে নিয়ে চলে তার জীবন-সংগ্রাম। ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী জাইমুন পড়াশোনা করেছেন গোকুলচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, পয়ারী স্কুলে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন বাকৃবি চত্বরে অবস্থিত কেবি কলেজে। 

এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেলেও ইংরেজিতে ‘এ মাইনাস’ আসায় খুশি হতে পারেননি জাইমুন। কারণ তাকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। হতাশা আর সমালোচনার চাপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে যায়। ফলস্বরূপ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবস্থান করতে পারেননি। এরপর শেষ সময়ে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন জাইমুন। প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের চিন্তায় আবারও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন ভর্তি পরীক্ষার জন্য। মাঝে কিছুটা বাড়তি সময় পেয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সহজ হয়। ফলে কৃষিগুচ্ছের জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন জাইমুন। ভর্তি পরীক্ষাও খুব ভালো দেন এবং চান্স পাওয়া নিয়েও ছিলেন আশাবাদী। পরীক্ষায় ৯৯টি প্রশ্নের উত্তর করেন, যার মধ্যে ৯৭টি সঠিক হয়। এর ফলে ৯৬.৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জনের কৃতিত্ব গড়েন জাইমুন। এখন তার ইচ্ছা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে পড়ার। কৃষি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করা, কৃষি নিয়ে গবেষণা এবং বাংলাদেশের কৃষিতে অবদান রাখার ইচ্ছাও তার।

তার এই সাফল্যের পেছনের গল্প শোনাতে গিয়ে জাইমুন বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার মূলত ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া। কিন্তু এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর আমি ভাবলাম হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগুলো আমি দিতে পারব না। তাই পরবর্তী সময়ে আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রিপারেশন নেইনি। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করি, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি যদি সেই সময়টায় ভালো করে প্রিপারেশন নিতাম, হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগ পেতেও পারতাম। কিন্তু আজকে যে সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করার সাফল্য, সেটা হয়তো আমি কখনোই পেতাম না। আমি আমার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত খুশি।’

জাইমুন তার সাফলতার কৃতিত্ব দিলেন তার দাদা ও শিক্ষকদের। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পড়ালেখা ও আমার পরিবারের যাবতীয় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন আমার দাদা আবু তালেব। তিনি আমার বাবার বড় চাচা। তিনি আমাদের ফুলপুরে একজন ব্যবসায়ী। ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। নিঃস্বার্থভাবে একজন মানুষ এতকিছু করতে পারেন, সেটা বাস্তবিক পক্ষে আমি ওনাকে দেখে জেনেছি। বলা যায় আমার এই কৃতিত্বের পেছনে আসল হিরো হচ্ছেন আমার দাদা। ওনার সাপোর্ট, মোটিভেশন আজকে আমাকে এখানে দাঁড় করিয়েছে। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। শুধু আমার দাদা নয়, আমার চারপাশের যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন- তাদের সবার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’

জাইমুন আরও বলেন, ‘আমাকে যারা গড়ে তুলেছেন আমার সব শিক্ষকের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ সবাই অনেক আন্তরিক ছিলেন। বিশেষ করে কলেজজীবনে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কলেজের শিক্ষকদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ এবং অত্যন্ত উপকারী। গাইডলাইনের ক্ষেত্রে আমার শিক্ষকরা আমার জীবনে অনেক বেশি আবদান রেখেছেন।’


অনুজদের উদ্দেশে জাইমুন বলেন, ‘একটাই কথা বলার থাকবে, জীবনের যেকোনো অবস্থান থেকে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিশ্রম করতে হবে, তবেই সফলতা ধরা দেবে। আর সফলতার কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা কখনোই জীবনে ভালো কিছু দেয় না। দশটা দিন হতাশ হয়ে নষ্ট না করে নতুন করে চেষ্টা করলেও অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। আর সবার মাঝে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে, সেটা সবসময় বিশ্বাস করতে হবে।’

জাইমুনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার কলেজও। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কৃষিগুচ্ছে প্রথম হওয়ার জন্য জাইমুনকে অভিনন্দন জানাই। এই অর্জনের মাধ্যমে সে তার পরিবার ও কলেজের মুখও উজ্জ্বল করেছে। অনেক আগে থেকেই আমাদের কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও কাঠামো অত্যন্ত সুগঠিত। কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছু হয়ে থাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। শিক্ষকরা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে কাউন্সেলিং করে থাকেন। এর ফলে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল, প্রকৌশলসহ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আমি জাইমুনসহ কেবি কলেজের সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।’

হাসান

বেরোবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে বাঁচাতে ছাত্রদল নেতার আবেদন

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
বেরোবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে বাঁচাতে ছাত্রদল নেতার আবেদন
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম আল নাহিদকে বহিষ্কার না করে তার পক্ষ নিয়ে আত্মসমর্পণ আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রদল নেতা মো. তুহিন রানা।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো.হারুন অর রশীদ বরাবর একটি আবেদন পত্র জমা দেন এই ছাত্রদল নেতা। এ সময় সিয়াম আল নাহিদের স্বাক্ষরটাও তুহিন নিজেই করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

জানা যায়, সিয়াম আল নাহিদ ইইই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। এর আগে সিয়াম দুইবার অকৃতকার্য হয়। তাই এবার বহিষ্কার হলে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

সূত্র জানায়, জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ছবি, ভিডিও ফুটেজসহ একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায় ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামের বিরুদ্ধে। এছাড়া সিয়ামের রুম তল্লাশি করে হল কর্তৃপক্ষ হামলায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র এবং মাদক সামগ্রীও পেয়েছিল। 

উল্লেখ্য, সিয়াম আল নাহিদসহ ৭১ জনকে জুলাইয়ে ছাত্র জনতার উপর হামলায় জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেটে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতাকে বাঁচানোর জন্য তার হয়ে (সিয়াম আল নাহিদ) আত্মসমর্পণপত্র জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তুহিন রানা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর তীব্র বিরোধিতা করে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে তীব্র আলোচনা সমালোচনা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র, লাঠি নিয়ে মাঠে নেমেছিল, তারা কখনোই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। অপরাধী যে কেউ হোক না কেন, কোনো ছাড় হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা অন্য কোনো কুচক্রীমহল যদি কোনোভাবে কোনো অপরাধীকে বাচানোর চেষ্টা করে, তা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেব না।’

এ বিষয়ে তুহিন রানা বলেন, ‘আমি মানবিক কারণে তার এই আত্মসমর্পণ পত্রটি তার হয়ে জমা দিয়েছি। কারণ সে এর আগে দুইবার অকৃতকার্য হয়েছে। আর একবার অকৃতকার্য হলে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম না। এই মাত্র জানলাম। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে আমরা খতিয়ে দেখব এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো.হারুন অর রশিদ বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মসমর্পণ আবেদনপত্র জমা দিতেই পারে এটা তার অধিকার। আবেদনপত্রটি শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হবে। 

গাজী আজম হোসেন/মাহফুজ 

 

ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। ছবি: খবরের কাগজ

কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবারও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই হলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আগামী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে নতুন ছাত্রদের সংযুক্তি প্রদানের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

মেরামত কাজের নকশা প্রণয়ন ও পরামর্শ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং এন্ড কনসালটেশনকে

(বিআরটিসি) ইতোমধ্যেই নিযুক্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নতুন একটি ভবন নির্মাণেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জরিপের কাজ সম্পন্ন করেছে প্রকৌশল দপ্তর।

আরিফ জাওয়াদ/নাবিল/

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির একটি সোনালি ইতিহাস রয়েছে। তবে ’৭১-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই বেশি তৎপর ছিল। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর অন্যতম কারণ হলের সিট দখল, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, ক্যাম্পাসে ভিন্ন মতামতকে দমন-পীড়ন ইত্যাদি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জোরাল দাবি ওঠে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এর পক্ষে হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সমাবেশও। তবে সুষ্ঠু ধারার ক্যাম্পাস রাজনীতির পক্ষেও অনেক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে দেশের ক্যাম্পাসগুলোয় বিভিন্ন দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমও দৃশ্যমান। ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাব তুলে ধরতে আমাদের আজকের এ আয়োজন।

শাহরিয়ার আদনান প্রান্ত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ছাত্ররাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়।

অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি এবং সিট দখলের মতো সমস্যার সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করে।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী এবং সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মতো সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এমনকি, কিছু সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীও এখন ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কিছু শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, অন্যরা এর বিরোধিতা করছেন এবং ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা ও সমাধানের প্রয়োজন।

ইমরান হোসাইন আদিব

প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্ররাজনীতিকে আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারি না। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনেকে অপছন্দ করতে পারে কিন্তু অস্বীকার না। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ছাত্ররাজনীতি একটা সাধারণ ও নিয়মিত বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দল, বিপক্ষ দল হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্ররাজনীতি চলে তবে সবার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।

বর্তমান সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনের সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। যার সিংহভাগই বিগত লম্বা একটা সময় ধরে এই সক্রিয়তার সুযোগ পায়নি। তাই সেই স্বাধীনতা পাওয়ার পর তাদের প্রধান ধ্যান ধারণা হওয়া উচিত নিজেদের কর্ম তৎপরতা, সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। তবে বর্তমান সময়ে এর উল্টো চিত্রও দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা প্রদর্শন ও দখলদারত্ব নিয়ে ছাত্র রাজনৈতিক সংঘটনগুলোর মাঝে একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মাঝে কেমন একটা ভারসাম্যহীনতা চোখে পড়ছে। মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনামে দেখতে হয় অমুক সংঘটনের দলীয় ছাত্র কর্তৃক একজন আক্রমণের শিকার হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সামগ্রিক স্বার্থ না চিন্তা করে শুধু দলীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের এই সংস্কৃতি বন্ধ না করতে পারলে ছাত্ররাজনীতি ও সংঘটনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হারাবে।