ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি বাসচাপায় নিহত ইবি শিক্ষার্থীর পরিবার

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম
১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি বাসচাপায় নিহত ইবি শিক্ষার্থীর পরিবার
ক্ষতিপূরণ ও বিচার দাবিতে নিহত ইবি শিক্ষার্থী টিটুর পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: খবরের কাগজ

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাড়িচাপা পড়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটু। এই ঘটনার ১০ বছর পার হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ ও বিচার পায়নি তার পরিবার।

তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেওয়ার এবং তার নামে একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

এদিকে টিটুর পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিটুর ছোট ভাই তারেক আজিজ। এ সময় তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়ীকরণ করা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

টিটুর পরিবার জানায়, এই দশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও টিটুর পারিবারিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ পেশায় একজন কৃষক। বর্তমানে ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তার ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাই তার বাবার নিজের চিকিৎসার খরচই যেখানে জোগাতে পারছেন না সেখানে পরিবার এবং সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য দু:সাধ্য ব্যাপার। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। ১০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে বার বার দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এ দিকে পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় তৎকালীন প্রশাসন কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি ও তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

তবে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে থোক বরাদ্দে (চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী চাকরি) নিযুক্ত করলেও চাকরিতে যোগদানের আট বছর পার হলেও এ চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি।

এ ছাড়া ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।’

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠার চেষ্টা করেন। এ সময় বাস চালক হঠাৎ দ্রুত চালালে তিনি বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে পেছন থেকে অপর একটি বাস (সাগর পরিবহন) দ্রুত বেগে তার গলার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসসহ প্রায় ৪০টি বাস পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৩০-এরও বেশি শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় চার মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। 

গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তারা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আমার কাছে আসুক। আমি সবার কথা শুনব, সবার অধিকার নিয়েই  কাজ করব।’

নিয়ামত উল্লাহ/নাবিল/এমএ/

৩ দাবিতে ইউজিসিতে অবস্থান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
৩ দাবিতে ইউজিসিতে অবস্থান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
আগারগাঁও ইউজিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ছবি :সংগৃহীত

তিন দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আগারগাঁও ইউজিসির কার্যালয়ের সামনে তারা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা তিনটি দাবি উত্থাপন করে। 

দাবিগুলো হল- বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা, দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক একটা সিমেস্টার ফি ধার্য করা।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ইউজিসির কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। আগামী ২০ জানুয়ারি ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সঙ্গে আবার সভা হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তালহা হাবিব খবরের কাগজকে বলেন, ২০ তারিখ আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ দাবি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ মিটিং হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সব প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একাডেমিক সব কাজকর্ম থেকে আমরা বিরত থাকব।

কবির/মাহফুজ

বেরোবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে বাঁচাতে ছাত্রদল নেতার আবেদন

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
বেরোবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে বাঁচাতে ছাত্রদল নেতার আবেদন
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম আল নাহিদকে বহিষ্কার না করে তার পক্ষ নিয়ে আত্মসমর্পণ আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রদল নেতা মো. তুহিন রানা।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো.হারুন অর রশীদ বরাবর একটি আবেদন পত্র জমা দেন এই ছাত্রদল নেতা। এ সময় সিয়াম আল নাহিদের স্বাক্ষরটাও তুহিন নিজেই করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

জানা যায়, সিয়াম আল নাহিদ ইইই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। এর আগে সিয়াম দুইবার অকৃতকার্য হয়। তাই এবার বহিষ্কার হলে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

সূত্র জানায়, জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ছবি, ভিডিও ফুটেজসহ একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায় ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামের বিরুদ্ধে। এছাড়া সিয়ামের রুম তল্লাশি করে হল কর্তৃপক্ষ হামলায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র এবং মাদক সামগ্রীও পেয়েছিল। 

উল্লেখ্য, সিয়াম আল নাহিদসহ ৭১ জনকে জুলাইয়ে ছাত্র জনতার উপর হামলায় জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেটে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতাকে বাঁচানোর জন্য তার হয়ে (সিয়াম আল নাহিদ) আত্মসমর্পণপত্র জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তুহিন রানা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর তীব্র বিরোধিতা করে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে তীব্র আলোচনা সমালোচনা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র, লাঠি নিয়ে মাঠে নেমেছিল, তারা কখনোই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। অপরাধী যে কেউ হোক না কেন, কোনো ছাড় হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা অন্য কোনো কুচক্রীমহল যদি কোনোভাবে কোনো অপরাধীকে বাচানোর চেষ্টা করে, তা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেব না।’

এ বিষয়ে তুহিন রানা বলেন, ‘আমি মানবিক কারণে তার এই আত্মসমর্পণ পত্রটি তার হয়ে জমা দিয়েছি। কারণ সে এর আগে দুইবার অকৃতকার্য হয়েছে। আর একবার অকৃতকার্য হলে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতাম না। এই মাত্র জানলাম। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে আমরা খতিয়ে দেখব এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো.হারুন অর রশিদ বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মসমর্পণ আবেদনপত্র জমা দিতেই পারে এটা তার অধিকার। আবেদনপত্রটি শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হবে। 

গাজী আজম হোসেন/মাহফুজ 

 

ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। ছবি: খবরের কাগজ

কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবারও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সিট বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই হলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আগামী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে নতুন ছাত্রদের সংযুক্তি প্রদানের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

মেরামত কাজের নকশা প্রণয়ন ও পরামর্শ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং এন্ড কনসালটেশনকে

(বিআরটিসি) ইতোমধ্যেই নিযুক্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নতুন একটি ভবন নির্মাণেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জরিপের কাজ সম্পন্ন করেছে প্রকৌশল দপ্তর।

আরিফ জাওয়াদ/নাবিল/

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির একটি সোনালি ইতিহাস রয়েছে। তবে ’৭১-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই বেশি তৎপর ছিল। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর অন্যতম কারণ হলের সিট দখল, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, ক্যাম্পাসে ভিন্ন মতামতকে দমন-পীড়ন ইত্যাদি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জোরাল দাবি ওঠে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এর পক্ষে হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সমাবেশও। তবে সুষ্ঠু ধারার ক্যাম্পাস রাজনীতির পক্ষেও অনেক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে দেশের ক্যাম্পাসগুলোয় বিভিন্ন দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমও দৃশ্যমান। ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাব তুলে ধরতে আমাদের আজকের এ আয়োজন।

শাহরিয়ার আদনান প্রান্ত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ছাত্ররাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়।

অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি এবং সিট দখলের মতো সমস্যার সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করে।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী এবং সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মতো সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এমনকি, কিছু সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীও এখন ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কিছু শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, অন্যরা এর বিরোধিতা করছেন এবং ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা ও সমাধানের প্রয়োজন।

ইমরান হোসাইন আদিব

প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্ররাজনীতিকে আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারি না। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনেকে অপছন্দ করতে পারে কিন্তু অস্বীকার না। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ছাত্ররাজনীতি একটা সাধারণ ও নিয়মিত বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দল, বিপক্ষ দল হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্ররাজনীতি চলে তবে সবার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।

বর্তমান সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনের সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। যার সিংহভাগই বিগত লম্বা একটা সময় ধরে এই সক্রিয়তার সুযোগ পায়নি। তাই সেই স্বাধীনতা পাওয়ার পর তাদের প্রধান ধ্যান ধারণা হওয়া উচিত নিজেদের কর্ম তৎপরতা, সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। তবে বর্তমান সময়ে এর উল্টো চিত্রও দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা প্রদর্শন ও দখলদারত্ব নিয়ে ছাত্র রাজনৈতিক সংঘটনগুলোর মাঝে একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মাঝে কেমন একটা ভারসাম্যহীনতা চোখে পড়ছে। মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনামে দেখতে হয় অমুক সংঘটনের দলীয় ছাত্র কর্তৃক একজন আক্রমণের শিকার হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সামগ্রিক স্বার্থ না চিন্তা করে শুধু দলীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের এই সংস্কৃতি বন্ধ না করতে পারলে ছাত্ররাজনীতি ও সংঘটনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হারাবে।