ঢাকা ৩০ পৌষ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

গুচ্ছ থেকে বের হতে কুবি উপাচার্যকে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম
গুচ্ছ থেকে বের হতে কুবি উপাচার্যকে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি
ছবি: খবরের কাগজ

গুচ্ছের সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা স্মারকলিপি প্রদান করে। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘গুচ্ছ একটি জটিল, অস্বচ্ছ এবং বৈষম্যমূলক পদ্ধতি। এ পদ্ধতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের স্বকীয়তা হারাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় নিজস্ব প্রশ্ন কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না বলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈচিত্র্য কমছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত প্রতিটি ব্যাচে সিট ফাঁকা থাকছে, যার হার পূর্ববর্তী যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।’

বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। গুচ্ছের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমগুলো অবনতির দিকে যাচ্ছে তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও কমছে। এই দিকগুলো বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে শুরুতে গুচ্ছতে না থাকার বিষয়ে মতামত জানিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্তত এইবছর যেন গুচ্ছতেই থাকি। আমাদের আসলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বে যাওয়ার সুযোগ নেই। এবছর অন্তত গুচ্ছেই থাকছি। তারপরও আমাদের উপাচার্যদের একটা মিটিং রয়েছে। আমি সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর কথা জানাব। তারপর ফাইনালি সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

আতিকুর রহমান তনয়/মাহফুজ/এমএ/

 

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছেন?
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির একটি সোনালি ইতিহাস রয়েছে। তবে ’৭১-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই বেশি তৎপর ছিল। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্যাম্পাস রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর অন্যতম কারণ হলের সিট দখল, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, ক্যাম্পাসে ভিন্ন মতামতকে দমন-পীড়ন ইত্যাদি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জোরাল দাবি ওঠে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এর পক্ষে হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সমাবেশও। তবে সুষ্ঠু ধারার ক্যাম্পাস রাজনীতির পক্ষেও অনেক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে দেশের ক্যাম্পাসগুলোয় বিভিন্ন দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমও দৃশ্যমান। ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাব তুলে ধরতে আমাদের আজকের এ আয়োজন।

শাহরিয়ার আদনান প্রান্ত 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ছাত্ররাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়।

অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি এবং সিট দখলের মতো সমস্যার সৃষ্টি করে, যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করে।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী এবং সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মতো সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এমনকি, কিছু সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীও এখন ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কিছু শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, অন্যরা এর বিরোধিতা করছেন এবং ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা ও সমাধানের প্রয়োজন।

ইমরান হোসাইন আদিব

প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্ররাজনীতিকে আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারি না। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনেকে অপছন্দ করতে পারে কিন্তু অস্বীকার না। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ছাত্ররাজনীতি একটা সাধারণ ও নিয়মিত বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দল, বিপক্ষ দল হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্ররাজনীতি চলে তবে সবার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।

বর্তমান সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনের সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। যার সিংহভাগই বিগত লম্বা একটা সময় ধরে এই সক্রিয়তার সুযোগ পায়নি। তাই সেই স্বাধীনতা পাওয়ার পর তাদের প্রধান ধ্যান ধারণা হওয়া উচিত নিজেদের কর্ম তৎপরতা, সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। তবে বর্তমান সময়ে এর উল্টো চিত্রও দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা প্রদর্শন ও দখলদারত্ব নিয়ে ছাত্র রাজনৈতিক সংঘটনগুলোর মাঝে একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মাঝে কেমন একটা ভারসাম্যহীনতা চোখে পড়ছে। মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনামে দেখতে হয় অমুক সংঘটনের দলীয় ছাত্র কর্তৃক একজন আক্রমণের শিকার হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সামগ্রিক স্বার্থ না চিন্তা করে শুধু দলীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের এই সংস্কৃতি বন্ধ না করতে পারলে ছাত্ররাজনীতি ও সংঘটনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হারাবে।