
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং রোডম্যাপ দাবিতে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৈঠকে রোড ম্যাপের ঘোষণা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা না হলেও অতিসত্বর কিভাবে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা যায়, সেই বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা এবং ডাকসু দাবিতে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ উপাচার্য-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠক চলে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে কোনো ধরনের আশ্বাস দেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যতদ্রুত সম্ভব হয়, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ডাকসুকে ঘিরে বেশ কিছু কার্যপরিধির অগ্রগতি বিজ্ঞপ্তি আকারে জানানো হবে, এমন আশ্বাস দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। পরে এমন আশ্বাস মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীরা বৈঠক শেষ করেন।
বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের নিকট কোনো দাবি নিয়ে আসলে সেটা তারা না মানতে চাইলে আমাদেরকে লাল ফিতার দৌরাত্ম দেখায়। তারা আমাদের বুঝ দেয় আমরা দ্রুত তম সময়ের মধ্যে কাজ করবো। কিন্তু সেটা কতদিনে তারা বাস্তবয়ন করবে তা বলে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে সর্বশেষ বার্তা হিসেবে বলেছেন তারা আগামীতে একটি মিটিং করবেন ডাকসু নিয়ে। মিটিং শেষে আমাদেরকে ডাকসুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হবে।’
গঠনতন্ত্র সংস্কারে শিবিরের প্রস্তাবনা: এদিকে ডাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে ৯প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সোমবার মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা দেন সংগঠনটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত তথ্য উপস্থাপন করেন ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি মো. মহিউদ্দীন।
শিবিরের প্রস্তাবনাগুলো হলো- লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ধারা ২ (ক) সংস্কার; ডাকসুর 'লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য'-এ নিম্নোক্ত ধারাসমূহ সংযুক্ত- (ক) ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ স্বার্থরক্ষা ও অধিকার আদায়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা।
(খ) শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত; ডাকসুর কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা ও গণতন্ত্র চর্চা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের উল্লেখ; সংসদের অনির্বাচিত সভাপতির স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা সীমিত করতে হবে ও কার্যনির্বাহী পরিষদকে শক্তিশালী করা; ডাকসুকে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদকীয় পদের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংযোজন করতে হবে।
এ ছাড়া বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আরোপ; যে কোনো সময়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের যে ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে প্রদান করা হয়েছে সেটির পরিবর্তন করতে হবে এবং ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনের এখতিয়ার ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে প্রদান; নির্বাহী কমিটির সভায় যেকোনো অ্যাজেন্ডা আলোচনা করার জন্য সভাপতির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার; গঠনতন্ত্রের অনুল্লিখিত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে সভাপতির একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে সংসদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য।
আরিফ জাওয়াদ/জোবাইদা/