
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার সম্পূরক খাবার উদ্ভাবন করলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একদল গবেষক।
দেশে কাঁকড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষীদের কাঁকড়ার খাবার ও কাঁকড়ার পোনার জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে কাঁকড়া প্রাকৃতিকভাবে মাছ জাতীয় খাবার খেয়ে বাঁচে। অন্যদিকে ঘেরে বা খাঁচায় কাঁকড়া চাষে স্বল্পমূল্যের শামুক, তেলাপিয়া ও সাগরের অন্যান্য মাছ খাবার হিসেবে দেওয়া হয়।
খাবার হিসেবে মাছের ব্যবহার, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য এবং প্রকৃতির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা প্রকৃতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। এ সংকট নিরসনে তথা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঘেরে বা খাঁচায় চাষের কাঁকড়াদের সম্পূরক খাবার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কী হতে পারে সেই খাবার? এই প্রশ্ন থেকেই অনুসন্ধান শুরু করেন নোবিপ্রবির একদল গবেষক।
আর সেই অনুসন্ধান থেকেই দেশে প্রথমবারের মতো কাঁকড়ার সম্পূরক খাবার উদ্ভাবনে সফলতা পান নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ও তাঁর দল।
উদ্ভাবিত সম্পূরক খাবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামানুসারে ‘এনএসটিইউ ক্র্যাব ফিড’ রাখা হয়।
দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও ভিয়েতনামে কাঁকড়ার এ ধরণের খাবারের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিভিন্ন আকারের কাঁকড়ার জন্য খাওয়ার উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে এই খাবার। তাই ঘেরে কিংবা খাঁচায় উক্য প্রক্রিয়ায় বেড়ে ওঠা কাঁকড়াদের খাবার হিসেবে খাওয়ানো যাচ্ছে এটি। এতে করে চাষীদের প্রকৃতির উপর নির্ভরতা অনেকটা কমেবে এবং পাশাপাশি কাঁকড়ার উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করেন গবেষকরা।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৪ সাল থেকে ছোট-বড় সাইজের নরম খোলসযুক্ত (সফট শেল) কাঁকড়া হিমায়িত করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার দরুণ প্রকৃতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এবং নষ্ট হচ্ছে ইকোসিস্টেম। ছোট ছোট কাঁকড়াও রেহাই পাচ্ছে না রপ্তানি থেকে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২২ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে গবেষণা সহযোগী হিসেবে গ্লোন এগ্রোভেট, ইরওয়ান ট্রেডিং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঘেরে ও খাঁচায় কাঁকড়ার চাষ সম্ভব এবং এদের সম্পূরক খাবার দিলে কাঙ্ক্ষিত পুষ্টিগুণও পাচ্ছে তারা। তাই বর্তমানে চাষীরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং সম্পূরক খাবারের মাধ্যমে কাঁকড়া উৎপাদনে আগ্রহী হতে পারে। নতুন উদ্ভাবিত খাবার কাঁকড়ার জন্য একটি উপযোগী খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গবেষক ড. মামুন আরও জানান, গবেষণার শুরুর দিকে কক্সবাজারে কাঁকড়ার প্রচলিত খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে কক্সবাজার ও সাতক্ষীরার ৮০ জন চাষীকে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত চাষীদের হ্যাচারীতে কাঁকড়ার পোনা, সম্পূরক খাবার ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমে কাঁকড়ার খাবারের বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি মা কাঁকড়ার লালন, স্বজাতি ভক্ষণ প্রতিরোধে শেলটার ব্যবহারকরণ, মজুদ ঘনত্ব ইত্যাদি নিরীক্ষণ করা হয়।
এদিকে বর্তমানে একই বিভাগের সাতজন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কাঁকড়ার আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা শস্য বহুমুখীকরণ বা বিন্যাসকরণ অর্থাৎ ‘কাঁকড়া, চিংড়ি ও সাদা মাছের পলিকালচার’ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গবেষকদল বিভিন্ন উদ্যোক্তা, হ্যাচারি মালিক, ফিড ইন্ডাস্ট্রিসহ সংশ্লিষ্টদের কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত রয়েছেন। আর এটি মৎস্য খাতকে গতিশীল করবে বলে তারা মনে করেন।
তাওফিক/