আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনীতিতে নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে সমাবেশ করেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীক দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি জানান।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে কোন রাজনীতি হবে না উল্লেখ করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি হবে না। নামে-বেনামে আওয়ামী লীগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সেটা যেখান থেকেই হোক। এর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশকে আমরা আরও একটি গণহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারি না।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলে, ‘আমরা যখন গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছি, তখন একটা ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাও মুখ খোলেননি। তাদের রিফাইন্ড করে আওয়ামী লীগ ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। ৫ আগস্টের পর ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেটি হয়নি। আমরা আগস্টে যেভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনো তেমনই আছি। যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হয়, ততদিন আমরা মাঠে থাকব।’
এদিকে একই সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ও সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের ওপর গণহত্যা চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ইনকিলাব মঞ্চ। জুমার নামাজের পর তারাও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মিছিলের সমাপ্তি টানে।
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘এবার লীগকে সুযোগ দেওয়া হলে তারা অল্প কয়টা আসন নিয়ে বিরোধী দলে থেকে যাবে। আর তারা বিরোধী দলে থেকে কূটকচাল চালবে। তাদের কারণে বিএনপি তিন বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’
এ ছাড়া সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কাজ ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে বাংলাদেশের মানুষ রায় দেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে কোন রাজনীতি করতে পারবে না।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চের পক্ষে থেকে শনিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্ম
তিনি বলেন, ‘শনিবার (২২ মার্চ) বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে ইফতার ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে এ মঞ্চ। আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চান তাহলে এ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হোন।’
শুক্রবার মধ্যরাত ২টায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য প্রত্যাখান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে মিছিল বের করে একদল শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়।
আরিফ জাওয়াদ/সুমন/