
বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য অনেকেই ইংরেজি ভাষার দেশকে পছন্দের প্রথম দিকে রাখেন। অপরিচিত ভাষা শেখার ঝামেলা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নিকট তাই অস্ট্রেলিয়া বেশ প্রিয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত। তা ছাড়া তাদের শিক্ষার মান এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই আজকে থাকছে অস্ট্রেলিয়া গমনেচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিস্তারিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন
প্রথমেই আপনাকে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য। অর্থাৎ আপনি কোন অঞ্চলের কোন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে চাচ্ছেন, তা ঠিক করতে হবে।
নিজের যোগ্যতা মিলিয়ে নিন
ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ স্কিল
আপনি অস্ট্রেলিয়ার যে প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হতে চান না কেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই আপনার কাছে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ স্কিল সম্পর্কে ডকুমেন্ট চাইবে। সুতরাং অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য মনস্থির করার সঙ্গে সঙ্গেই IELTS, TOEFL, GRE, GMAT ইত্যাদি যেকোনো একটি কোর্স করে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করুন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
ক) স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে ন্যূনতম IELTS স্কোর ৬.৫ প্রয়োজন।
খ) অস্ট্রেলিয়ায় IELTS ছাড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে IELTS দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
গ) স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য ও/এ লেভেলের সনদ থাকলে IELTS দরকার হয় না।
অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য আবেদন
প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার পর আপনাকে দুই জায়গায় দুটি আবেদন করতে হবে।
আপনার পছন্দকৃত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে ভিসার আবেদন।
প্রতিষ্ঠানের আবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ স্কিল
পড়াশোনা করার জন্য আপনার ফান্ড আছে কি না তার প্রমাণ
বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা
প্রতিষ্ঠানটি আপনার আবেদন মঞ্জুর করলে আপনাকে একটি অনুমোদনপত্র (eCOE) দেবে।
স্পন্সর জোগাড়
বিষয়ভেদে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা স্পন্সর দেখাতে হয়। ব্যাচেলরের ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ৬ মাসের জন্য স্পন্সর দেখাতে হয়।
স্পন্সর সম্পদমূল্য দেখানো যাবে না, শুধু নগদ টাকা দেখাতে হবে।
কোনো ছাত্রের স্পন্সর দেখানোর জন্য রক্তের সম্পর্কের কেউ হলে ভালো হয়। এর জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মসনদ ইত্যাদির কাগজ জমা দিতে হয়।
ভিসার জন্য আবেদন করবেন যেভাবে
প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার সময় যে ডকুমেন্টগুলো দরকার পড়েছিল, ভিসার জন্যও ওই একই ধরনের ডকুমেন্টগুলো দেখাতে হবে। তবে ভিসার জন্য নতুন করে প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমোদনপত্র লাগবে।
পড়াশোনার খরচ কেমন
পড়াশোনার জন্য টিউশন ফি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম। আপনি যখন শুরুতেই প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবেন, তখনই ওই প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে কোনো বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলে খরচ অনেক কমে আসবে, এমনকি টিউশন ফি ফ্রিও হতে পারে।
থাকা/খাওয়া ও অন্যান্য খরচ নিয়ে আনুমানিক ধারণা
অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে গড়ে কেমন খরচ হতে পারে তা শুরুতেই জানা জরুরি।
বাসস্থানের খরচ
হোস্টেল/গেস্টহাউস- ৮০ থেকে ১৩৫ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
ক্যাম্পাসে- ৮০ থেকে ২৫০ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
ভাড়ায় থাকা- ১০০ থেকে ৪০০ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
বোর্ডিং স্কুলে- ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ ডলার (প্রতি বছরে)
অন্যান্য খরচ
খাওয়া ও দ্রব্যাদি- ৮০ থেকে ২০০ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
ফোন ও ইন্টারনেট- ২০ থেকে ৫০ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
যাতায়াত- ১০ থেকে ৫০ ডলার (প্রতি সপ্তাহে)
স্পাউস (স্বামী/স্ত্রী)
শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্পাউসসহ আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে তার স্ত্রীকে মাস্টারস ডিগ্রি প্রাপ্ত হতে হবে, তার জন্য সে ৫ পয়েন্ট পাবে।
স্কলারশিপ বা বৃত্তি
সাধারণত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্তি পাওয়ার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে আবেদন করতে হবে। সাধারণত স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৫% শিক্ষার্থী যেতে পারে।
পার্টটাইম কাজের সুযোগ
অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা করে পার্টটাইম চাকরির সুযোগ রয়েছে। পার্টটাইম জব করে একজন ছাত্র তার খরচ চালাতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
অন্য রাষ্ট্রের তুলনায় এই দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ বেশ ভালোই। স্নাতক শেষ করার পর একজন প্রার্থী স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল যদি ভালো হয় তা হলে সরকার তাকে স্থায়ী বসবাসের জন্য অনুমতি দিতে পারে।
সূত্র: studyaustralia.gov.au
কলি