গবেষণা যখন কেবল গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তার আলো খুব কম মানুষের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু সেই আলো যদি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদপত্রের পাতায়, তখন তা হয়ে ওঠে জনতার সম্পদ। গবেষণার তথ্য যখন সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছায়, তখন কৃষকের চাষাবাদে আসে নতুন দিগন্ত, নীতি-নির্ধারকদের চোখ খুলে যায়, বিজ্ঞানীরা পান অনুপ্রেরণা। আর এই অসাধারণ দায়িত্বই পালন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হান আবিদ।সেই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) কৃষি সাংবাদিকতা পুরস্কার পেলেন তিনি।
তার কলমে উঠে এসেছে গবেষণা ও বাস্তবতার মেলবন্ধন, যেখানে বিজ্ঞান শুধু গবেষণাগারের দেয়ালে বন্দি নয়- তা ছুঁয়ে গেছে মাঠে-ঘাটে, কৃষকের জীবনে। শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফজলুল হক ভূঁইয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় বাউরেসের গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
রায়হান আবিদ জানান, ‘বিজ্ঞান সব সময় সহজ নয়, জটিল সূত্র, কঠিন শব্দ আর গবেষণার সংখ্যাতত্ত্ব, যা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্যই থেকে যায়। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি বিজ্ঞানের ভাষাকে সহজবোধ্য করে মাটির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। তার লেখাতে শুধু গবেষণার ফলাফলই ছিল না, ছিল মাঠপর্যায়ের বাস্তবচিত্র,
গবেষকদের মতামত, কৃষকের অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা।’
আবিদের কলমে ফুটে উঠেছে, উচ্চ ফলনশীল রঙবেরঙের গাজরের দেশের আবহাওয়া উপযোগী করে উৎপাদন, দেশেই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গবাদিপশুর প্রায় নির্ভুল রোগ নির্ণয়, ইঁদুরের ওপর ফোর-জি তরঙ্গের প্রভাব পর্যবেক্ষণ, উচ্চ অ্যান্থোসায়ানিন যুক্ত বিট রুটের উৎপাদন বৃদ্ধি (ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্যকারী), দেশি শিং মাছের জিনোম সিকুয়েন্স আবিষ্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, আমলকী ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রয়লার মুরগির হিট স্ট্রেস কমানো, অপ্রচলিত উদ্ভিদ থেকে উন্নতমানের খাদ্যসামগ্রী তৈরি, পোলট্রির ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের বিরুদ্ধে আদা-রসুনের নির্যাসের কার্যকারিতা, গবাদিপশুর ব্রুসেলোসিসের টিকা তৈরি, দেশে ঘোড়ার দেহে প্রাণঘাতী গ্ল্যান্ডার্স রোগের উপস্থিতি নির্ণয়, বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদনসহ বিভিন্ন কৃষি গবেষণার সংবাদ।
লেখালিখির অনুপ্রেরণার পেছনের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণা ফসলের মাটিতে, কৃষকের হাসিতে, বিজ্ঞানীদের অদম্য প্রচেষ্টায়। আমি চাই, কৃষি গবেষণা শুধু পত্রিকার পাতায় না থেকে বাস্তব জীবনেও পরিবর্তন আনুক, টেকসই উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচন করুক।’
তিনি মনে করেন, সত্যিকারের সাংবাদিকতা কেবল তথ্য পৌঁছে দেওয়া নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। গবেষণাগারে আবদ্ধ জ্ঞান যদি মাঠে-ময়দানে প্রয়োগ না হয়, তবে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই শূন্যতা পূরণ করতে ও বিজ্ঞান আর বাস্তবতার মাঝে সেতুবন্ধন গড়তে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।